somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এনেকডোটস অফ আওরঙ্গজেব-২

১৬ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৬৬৯ সালের এপ্রিলে রাজকীয় আদেশের মাদ্ধমে আওরংজেব তার গভর্নরদের কাফিরদের স্কুল এবং তাদের মন্দির ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন এবং তাদের যে কোন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান শক্ত হাতে দমনের আদেশ দেন।এসময়ে মুঘল পুলিশবাহিনীর হাতে হিন্দু সন্যাসী উদ্ধভ বৈরাগী আটক হন এবং তাকে জেলে পুরে রাখা হয়।সেপ্টেম্বর ১৬৬৯ সালে ভারতের ঐতিহাসিক নিদর্শন সোমনাথ মন্দির ভেঙ্গে ফেলা হয়।বুন্দেলার রাজা বিরসিং দেব কতৃক নির্মিত ভারতের সম্পদ,সমৃদ্ধি ও জাকজমক এর প্রতীক মথুরার কেশব রায় এর মন্দির মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয় সেই জায়গায় মসজিদ নির্মান করা হয় এবং এর মুর্তিগুলো আগ্রায় জাহানারার মসজিদ এর সিড়ির নিচে মাটি চাপা দেয়া হয় যেন সেগুলো নামাযিদের পায়ের নিচে পিষ্ঠ হতে পারে।প্রায় একই সময় কাথিয়াওয়াড় অববাহিকায় নতুন(?) সোমনাথ মন্দিরটিও ভেঙ্গে ফেলা হয় এবং সেই যায়গায় সমস্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করা হয়।১৬৭৯-৮০ সালের রাজপুত যুদ্ধের সময় শুধু মেওয়ারেই ১৭৫ টা মন্দির ভেঙ্গে ফেলা হয় যার মদ্ধে রয়েছে হিন্দুধর্মের অন্যতম পবিত্র নিদর্শন সোমেশ্বর মন্দির এবং উদয়পুরের বিখ্যাত বহুতল বিশিষ্ট তিনটি মন্দিরও ভেঙ্গে ফেলা হয়।


২রা এপ্রিল ১৬৭৯ সালে সম্রাট আকবরের জিজিয়া কর রহিত করার প্রায় ১০০ বছর পর আওরংজেব আবার জিজিয়া কর পুনঃপ্রবর্তন করেন।এর প্রতিবাদে তার হিন্দু প্রজারা তার জুম্মার নামাযে যাবার সময় রাস্তায় শুয়ে তার পথ আটকালে তিনি তাদের উয়পর হাতি ঊঠিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেন।১৬৯৫ সালে এক সরকারি ফরমানের মাধ্যমে রাজপুত ব্যাতীত সকল হিন্দুদের অস্ত্র বহন,হাতি এবং আরবী ঘোড়ায় চড়া নিষিদ্ধ করেন।একই সময়ে তা কলমের এক খোচায় হিন্দুদের সমস্ত উচ্চপদ থেকে বরখাস্ত করা হয় এবং মুসলিম ব্যাবসায়ীদের খাজনা অর্ধেকেরও কমিয়ে দেয়া হয় এবং হিন্দুদের ক্ষেত্রে তা দ্বিগুণ করে দেয়া হয়।

সম্রাটের এই বৈষম্যমুলক আচরন অচিরেই সম্রজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহের সুচনা করে।সম্পদশালী জাট কৃষক সম্প্রদায় বিক্ষোভে ফুসে ওঠে,শান্তিপ্রীয় নির্বিবাদী সৎনামী সম্রদায় সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে।শিখ গুরু টেগ বাহাদুর এর শিরোচ্ছেদ করা হয় আওরংজেব এর নির্দেশে(১৬৭৫),প্রতিবাদে শান্তিপ্রিয় শিখ সম্রদায় অস্ত্র তুলে নেয়,পরবর্তী ১০০ বছর ধরে শিখ মুঘল একে অপরের রক্ত ঝড়িয়েছে।

মুঘল সম্রাজ্যের শক্তির অন্যতম ভিত্তি বিশ্বস্ত রাজপুতদের প্রতিও আওরংজেব এর আচরন ছিলো অত্যন্ত নোংরা,যোধপুরের মহারাজা জসওয়ান্ত সিং মুঘল সেনাবাহিনীর হয়ে লড়াইরত অবস্থায় পেশোয়ারে মৃত্যু বরন করেন।আওরংজেব প্রায় সাথে সাথেই সৈন্য পাথিয়ে যোধপুরের দখল নেন। ।এমনকি জসওয়ান্ত এর দুই গর্ভবতী স্ত্রীকেও আওরংজেব নিজের দরবারে বন্দী করে আনতে সৈন্য পাঠান,কিন্তু দুর্গের রক্ষক রাঠোর রাজপুত সৈন্যরা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে রানীকে মেওয়ার পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। সমগ্র রাজপুতানা এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফুসে ওঠে।বিশেষ করে উদয়পুর এর মহারানা রাজ সিং আরাবল্লীর পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে মহাকাব্যিক এক বিদ্রোহ শুরু করেন,এই বিদ্রোহ দমনে আওরংজেব তার ছেলে শাহজাদা আকবরকে পাঠান যিনি নিজেই রাজপুতানা পৌছে আওরংজেবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসেন।রাজপুতরাও তাকে সর্বাত্নক সমর্থন দেয়।তবে চতুর আওরংজেব এই পরিস্থিতি সামাল দেন অত্যন্ত কৌশলে,তিনি রাজপুত নেতাদের একটা চিঠি পৌছে দেন যেখানে তিনি আকবরকে অভিনন্দন জানান রাজপুতদের আরাবল্লী পাহাড় থেকে বের করে খোলা ময়দানে মুঘল কামানের সামনে নিয়ে আসার জন্য।এই চিঠি পাবার পর রাজপুত সেনাবাহিনী রিতিমত হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।কর্পদকশুন্য বন্ধু মিত্রহীন আকবর পালিয়ে মারাঠা শিবিরে যেয়ে আশ্রয় নেন।যদিও সেই বছরই(১৬৮১) আওরংজেব এবং রাজসিং নিজেদের মদ্ধে সন্ধি করে নেন তবে মুঘল রাজপুত সম্পর্ক আর কখনোই স্বাভাবিক হয় নই।জয়পুর এবং বুন্দেলা ছাড়া অন্য কোন রাজপুত গোষ্ঠী আর কখনোই মুঘলদের পুর্ন সমর্থন দেয় নি।রাঠোর রাজপুতরা আওরংজেব এর মৃত্যুর আগ পর্্যষন্ত লড়াই চালিয়ে যায়।
তবে রাজপুতদের প্রতি আওরঙ্গজেব এর ঘৃণা শিয়াদের প্রতি তার ঘৃণা কে অতিক্রম করে যেতে পারে নি। শিয়া সম্প্রদায় কে তিনি রাফসি নাম দেন।বিশেষ ধরনের ছোরার নাম দেন ‘রাফসি কুশ’ বা শিয়া হত্যাকারী।শিয়াদের তিনি অভিহিত করতেন ‘গুল ঈ বায়াবানি’ বা শবখেকো শয়তান এবং ‘বাতিল মাশাবান’ বা ভন্ডের অনুসারী নামে,যদিও আওরঙ্গজেব এর সবচেয়ে বিশ্বস্ত সেনাপতি এবং সম্রাজ্যের সবচেয়ে চৌকষ আমলাদের বেশীরভাগই ছিলো সাফাভিদ সম্রাজ্য থেকে আগত শিয়া মুসলিম।মুঘল সম্রাজ্যের শায়খুল হাদীস আওরংজেবের এসব ধর্মান্ধ গোড়ামীপুর্ন বিভ্রান্তিকর আচরনের তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং তার দরবার ত্যাগ করেন এবং আওরংজেব এর শত অনুরোধেও তিনি আর কখনোই দরবারে ফেরত আসেন নি।

এই প্রবন্ধটি স্যার যদুনাথ সরকার লিখিত হিস্ট্রি অফ আওরংজেব এর দ্বিতীয় ভলিউম এর সংক্ষিপ্ত অনুবাদ, অনুবাদক আমি নিজেই।
প্রথম পর্বের লিংক
এনেকডোটস অফ আওরঙ্গজেব

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১২:৫১
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×