হাতের সিগারেটটা পেলে দেয় অমল।বড় রাস্তার দুপাশে চোখ বুলায়।সন্ধ্যা নেমে আসছে। মানুষজন তেমন নেই।যেই দেয়ালটার সামনে সে দাড়িয়ে ব্যাচেলরদের রুমমেট আবশ্যক টু-লেটে তা পুরোপুরি ঠাশা।
‘পড়াতে চাই’ উল্লেখ করেও কয়েকটি কাগজের টুকরো দূরত্ব বজায় রেখে এখানে-ওখানে লাগানো।তার নিচে ফোন নাম্বার দেয়া।
অমল মৃদু হাসে।পকেট থেকে কলম বাহির করে।ঐ নাম্বারটার নিচে তার নিজের নাম্বারটাও লিখে দিবে এই ভেবে।পকেটের যে আকাল পড়েছে ঐ ধরনের রঙ-চঙে পোষ্টার তৈরি করার মত টাকাও তার কাছে নেই।পিছন থেকে বাচ্চা কন্ঠে কে যেন ডাকলো-
:-ভাইজান?
অমল পিছনে তাকায়।ছোট একটা মেয়ে।গায়ে হালকা জামা।খালি পা।মাথার চুল গুলো অযত্নে প্যাকাশে হয়ে আছে।গায়ের রঙটাও মলিন হয়ে যাচ্ছে দিন দিন।কনকনে শীত চারপাশে।
:-দুইটা টা দেন।কিছু খামু।
:—কি খাবি?
:-পেয়াজু খামু।
:—দাড়া।
অমল পাশের পেয়াজু দোকানে যায়।মানি ব্যাগ বের করে পাঁচ টাকার নড়বড়ে নোট টা শেষ বারের জন্য দেখে নেয়।একমাত্র যেই নোটটা গত দু দিন সাথে নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছে সে।
চার টাকায় দুটো পেয়াজু কিনে।হেটে গিয়ে পেয়াজু আর তার সাথে বেচে যাওয়া ১ টাকার কয়েনটি মেয়েটির হাতে দেয়।তারপর হাটা শুরু করে অমল।বাসায় যেতে হবে।
কিছুদূর যেতেই মেয়েটি ডাকদিল।
:-ভাইজান।
অমল পিছন পিরল।মেয়েটা আস্তে আস্তে হেটে এসে,এক টাকার কয়েনটা আর একটা পেয়াজু অমলের হাতে দিয়ে ছোট ছোট পায়ে হেটে চলে গেলো।
ল্যামপোষ্টের আলোয় কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে ভিড়ের মাঝে মেয়েটির হারিয়ে যাওয়া দেখল অমল।অমলের গাল ভর্তি পেয়াজু।আর চোখ ভর্তি পানি।পেয়াজুর আদলে ছোট বোনের অকৃত্তিম ভালোবাসা চিবুচ্চে সে।তার প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে।কিন্তু পেয়াজুটা গলা দিয়ে নামছে না।দলা পেকে যাচ্ছে।ভালোবাসার কি অদ্ভুত ক্ষমতা।
অমল হাটা শুরু করল।চোখ ভর্তি জল নিয়ে আর কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকবে সে…
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:০২