আজ আবার লিখতে ইচ্ছে করলো।বেশ কিছু দিন হয়ে গেল ব্লগ পাড়ায় আসা হয় না।সবাই আশা করি ভালই আছেন।আমার নিজের দেশটা ও আশা করি ভালই আছে।যদি ও জানি দেশটা ভাল নেই,দেশের মানুষগুলো ও ভাল নেই।তারপর ও স্বপ্ন দেখি,কারন এটা দেখতে টাকা লাগে না আর সরকার চাইলেই এখানে ভ্যাট বসাতে পারে না।
আমি বরাবর ই মনে হয় একটু বেশি বুঝি।এটা আমার দোস্তদের দেয়া মতবাদ।বন্ধু শব্দটা বসলাম না কারন,বন্ধু আর দোস্ত এ দুটি শব্দের মাঝে ও আমি ভিন্নতা খুঁজে পাই।পাগলের প্রলাপ বন্ধ করে আসুন মূল গল্পে যাওয়া যাক।
গল্প-০১
গতকাল মা দিবস ছিল মনে হয়।মনে হয় লিখলাম কারন এসব দিবস নিয়ে আমি কোন দিন ও চিন্তা করি নাই।দেশে যখন ছিলাম তখন ব্যাংক জবগুলোর পরীক্ষা দেবার জন্য রাত জেগে বিভিন্ন দিবসের তারিখ নিয়ে যুদ্ধ করতে হতো।এখন আর সেই দিন নাই,দিন বদলাইছে।
হলিউড,বলিউড,টালিউড থেকে শুরু করে এ বাংলার ছিনেমা পাড়া থেকে শুরু করে নাটক পাড়া পর্যন্ত অনেক বড় বড় মহাতারকাদের দেখলাম মায়ের সাথে কালার নয়তো বা সাদা-কালো ছবি দিয়ে সে ছবির সাথে আবার আবেগগন বার্তা।আমাদের দেশের খেলোয়াড়রা ও পিছিয়ে নেই।আর ফেসবুকের প্রোফাইল পিকে তো মায়ের জন্য ভালবাসায় ভরপুর।মায়ের জন্য আমাদের এতো ভালবাসা,তারপর ও বছর বছর কেন বৃদ্ধা আশ্রমগুলোর সংখ্যা বাড়ছে?প্রশ্নটা ব্লগারদের নিকট।এক মেয়ে তার মায়ের ছবি দিয়ে লিখেছে,''মা তোমাকে অনেক বেশি ভালবাসি কিন্তু দয়া করে আমার কাছে বেশি কিছু আশা করো না,জানি দিতে পারবো না।"আমরা আজকাল সব কিছুতেই দিবস চিন্তা করি। প্রিয়তমার জন্য সারা বছরের ভালবাসা জমিয়ে রাখি 'ভালবাসা' দিবসের জন্য।কারনটা জানি অন্যদিন মানা করলে ও আজ লিটনের ফ্লাটে সে যাবেই।ভালবাসা বলে কথা।একদিনের বাঙ্গালী সাজি পহেলা বৈশাখে কিন্তু জানি না এ বছর বাংলা সন টা কতো।তারপর দেশপ্রেম নিয়ে তো আবার বিশাল ব্যাপার।কে আগে ফুল দেবে তা নিয়ে মারামারি-কাটাকাটি।সবুজে চারিদিক ভরে যায়।ব্লগপাড়ার প্রোফাইল ছবি থেকে শুরু করে সব কিছু।আর ভাষা দিবস নিয়ে যা হয় তা যদি সালাম বা রফিকরা দেখতে পারতো তাহলে মনে হয় গুলি ছাড়াই মারা যেত।দিবসটা নিয়ে আলোচনার শেষ নেই কিন্তু 'ফ' এর পরের বর্ণটা কি?সেটা জানতে চাইলে এমন ভাব করবে যেন কোন কালে সে এসব পড়েই নাই।আমরা এখন দিবসের জাতি হয়ে গিয়েছি।শত চেষ্টা করলে ও কি এ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো?যদি দেখতে পেতাম বা পত্রিকায় শুনতে পেতাম বাবা অথবা মা দিবসে বাবা-মায়ের ভালবাসার কথা মনে করে কোন সন্তান তার বাবা নয়তো মাকে বৃদ্ধা আশ্রম থেকে নিয়ে এসেছে তাহলে মনে হতো।আসলেই এ দিবসগুলোর দরকার।আসলে এ দিবসগুলোতে আমাদের ভন্ডামীর মুখোশটা ভালভাবে প্রকাশ পায়।নিজেকে সবার সামনে ভন্ড হিসেবে দেখাতে ভালই লাগে।
গল্প-০২
সারা দেশে চেয়ারম্যান নির্বাচন হয়ে গেল।এবার ই প্রথম মনে হয় দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলো।দেশ নতুন একটা জিনিস উপহার পেল।আমাদের ইউনিয়নের নির্বাচন হয়ে গেল গত ৭ই মে।আল্লাহর অনেক রহমত আর হযরত শাহ জালালের (রঃ) পূন্য ভুমিতে এতোটা মারামারি বা হানাহানি হয়নি।আল্লাহকে ধন্যবাদ আমার এলাকায় কোন মায়ের বুক খালি হয়নি।পেপারে পড়লাম ৪ দফা নির্বাচনে মোট ৮০ জন মারা গিয়েছে,আসলে ৮০ জন খুন হয়েছে।দলীয় নির্বাচন বলে কথা।একটা দলীয় গন্ধ না থাকলে চলে।এ মানুষগুলো খুন হওয়ার পেছনে কে দায়ী।যারা এ ব্যবস্তা চালু করলো তারা,নাকি নির্বাচন কমিশন?
গল্প-০৩
অনেক দিন পর আবার দেশে আসবো।আগামী মাসের ৩ তারিখে যখন কাতার এয়ারওয়েজ এর বিমানটা বাংলার মাটি স্পর্শ করবে তখন কি পরিমান আনন্দ লাগবে তা কেবল আমাদের মতো প্রবাসিরা বলতে পারে।আমরা দেশটাকে দেখি অনেক দূর থেকে কিন্তু দেশটাকে অনুভব করি একদম মনের গভীর থেকে।আমরা এদেশের খেটে খাওয়া মানুষ।আমাদের একটাই স্বপ্ন।দেশটা ভাল থাকুক,দেশে থাকা মানুষগুলো ভাল থাকুক।পরিবার-পরিজন থেকে হাজার হাজার মাইল দুরে থেকে দিন রাত কঠোর কাজ করার পর যখন মাস শেষে ১৩০০ ইউরো হাতে আসে তখন সব কিছু আমরা ভূলে যাই।ভূলে যাই এ কারনে যে আমাদের কারনেই আমাদের পরিবার ভাল আছে,আমাদের প্রবাসীদের রেমিটেন্সে দেশের উন্নতির চাকা সচল থাকে।তারপর ও আমরা খুশি।আমরা নিজেদের বড়লোক আর ধনী মনে করতে পারি।আমরা পারি না দেশ নেত্রীর সোনার ছেলের মতো এক কোটি ষাট লাখ টাকা বেতন পেয়ে ও সবার সামনে বড় গলায় বলতে আমি আসলে একজন গরীব বা ফকির মানুষ।কারন আমরা ভন্ডামি জানি না,আমরা মিথ্যা বলতে জানি না।কারন আমরা এ দেশের খেটে খাওয়া দিন-মজুরের সন্তান।দেশের টাকা চুরি করা বা দেশের সম্পদ লুন্ঠন করাকোন নামধারী নেতা বা নেত্রীর মিথ্যাবাদি ভন্ড সন্তান নই।
যারা কষ্ট করে পাগলের মনের গল্পগুলো পড়লেন তাদের সবাইকে মন থেকে ধন্যবাদ।আর দোয়া করবেন যেন ভালভাবে দেশে এসে পৌছাতে পারি।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:৩২