পেট অনেকক্ষণ ধরে মোচড়াচ্ছে। ভিতরে যেন একটি বাইম মাছ ঢুকেছে। সে পেট চিড়ে বের হতে চাইছে।
রইসুদ্দিন আজ খুব অসহায়বোধ করছে। প্রতিদিন কম করে হলেও ২০ টাকা ইনকাম হয়। কিন্তু আজ একটাকাও সে ইনকাম করতে পারে নি। পিচ-ঢালা রাস্তা সূর্যের তাপে তপ্ত হয়ে গেছে। খালি পায়ে হাঁটতে হাঁটতে তার পায়ে ফোসকা পড়ে গেছে, এখন তার হাঁটার সময় মনে হচ্ছে এক মণ ওজনের কোন পাথর বেধে দেওয়া হয়েছে তার পায়ে।
একটি গাছের ছায়ায় সে দাঁড়ায়। গাছটি বিশাল। সমস্থ রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে। পেটের ক্ষুধা তো আর গাছের ছায়া খেলে কমবে না। তাই সে এদিক-সেদিক তাকি-তুকি করছে। একজন ভদ্রলোককে দেখতে পেয়ে তার মুখ নিমিষেই উজ্জ্বল হয়ে উঠে, সে ধীরে ধীরে তার দিকে যায়।
ভাইজান, সে বলে, কয়টা টাকা দ্যান, হারাদিন কিছুই খাই নাই।
ভদ্রলোক তার দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকায়। কিছু বলে না। পাশ কাটিয়ে চলে যায়। রইসুদ্দিনের মুখ শুকিয়ে যায়। সে আবার অপেক্ষা করে।
প্রায় ঘন্টা খানেক পরে সে ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করে। খানিক দূরেই একটি ডাস্টবিন। একটি বাচ্চা ছেলে পাশের এক দোকান থেকে একটি রুটি কিনে। সে দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে। কিন্তু বাচ্চা ছেলের কাছ থেকে তো কিছু চাওয়া যাবে না। তাই সে অপেক্ষা করে, অন্য কারও জন্য। বাচ্চা ছেলে রুটিতে কামড় দেয়, তখন তার জিভে জল আসে। অনেক দূরে থেকেও সে রুটি’র সুঘ্রাণ পায় নাকে। সেই ঘ্রাণ নাক থেকে ধীরে ধীরে খাদ্য নালী হয়ে পাকস্থলীতে পৌছায়।
বাচ্চা ছেলেটি কয়েকটা কামড় দিয়েই, রুটিটি ডাস্টবিন লক্ষ্য করে ছুড়ে দেয়।
রইসুদ্দিনের মনটা খারাপ হয়ে যায়। সে ভাবে, খাইতে পারতেছি না, আর ও ফালাই দিল। সে ডাস্টবিনের দিকে এগোয়। কাছাকাছি গিয়ে বুঝতে পারে, রুটি ভাল জায়গায় পড়েছে। কিন্তু একটু ভিতরে। মানুষজন না গেলে বের করা যাবে না। তাই সে অপেক্ষা করে।
কিন্তু ভিড় কমে না। দোকানে অনেকে বসে তার দিকে বাঁকা দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। সে পাত্তা দেয় না। কিন্তু রুটি তুলতেও পারে না।
বাচ্চা ছেলেটি এবার আরেকটি রুটি কিনে। তারপর হয়ত বাসার দিকে চলে যায়।
সে লক্ষ্য করে, একটি কুকুর। কুকুরটি মাটি শুকতে শুকতে ডাস্টবিনের দিকেই আসছে। তার শরীর কাঁপতে থাকে। চোখে কিছু দেখতে পায় না। কুকুরের সাথে প্রতিযোগিতায় যোগ দেয়। কিন্তু কুকুরটি তার থেকে দ্রুত। সে এতক্ষণ চক্ষু লজ্জায় যে কাজটি করতে পারে নি, কুকুর এসে ক্যাচাল বাধায়, তাকে সে কাজ করতে হয়ত বাধ্য করবে।
কিন্তু কুকুর হঠাৎ করে দ্রুত ডাস্টবিনের দিকে এগোয়। এবার সেও থেমে থাকে না। ডাস্টবিনের কাছাকাছি চলে যায়। কুকুরও চলে এসেছে। সে হাত বাড়ায় রুটিটি আনতে। রুটিটি খপ করে ধরে, তারপর বের করে আনে ডাস্টবিন থেকে। মনে মনে তৃপ্তি পায়।
কুকুর তার হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে, লেজ নাড়ায়। জিহ্বা বের লালা নিঃসরণ করে। সারা শরীর নাড়াতে থাকে। সে হয়ত রুটি ধরতে না পেরে হতাশ।
রইসুদ্দিন রুটি মুখে দিতে যাবে, এমন সময় কুকুরটি একটি দীর্ঘ লাফ দিয়ে ছিনিয়ে নেয় রুটিটি। রুটি কামড়ে ধরে সে এক দৌড়ে চলে যায় ডাস্টবিন ছাড়িয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:০৬