somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল্লাহ মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা নন (?)

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এই যে মহাবিশ্ব! নিখুত শিল্প নৈপূন্য ও মনোহারী কারুকার্য সহাকারে দাঁড়িয়ে আছে। যার ব্যাবস্থাপনা হচ্ছে ভূতপূর্ব-সুদৃঢ় নিয়মে সুন্দর ও সুশৃঙখলরুপে। তার গঠন যেসব অভিনব পদ্ধতি ও রহস্যের উপর নির্ভরশীল। একজন ন্যায়পরায়ণ লোক সেগুল অবলোকন করলে স্বতঃসিদ্ধ নিশ্চিত জ্ঞানে বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে যে, এর একজন স্রষ্টা রয়েছে। যিনি সর্বদিক দিয়ে পূর্ণাঙ্গ গুণে গুণান্বিত।
.
কিন্তু বর্তমানে কিছু 'স্রষ্টা বিদ্বেষি' লোকের উৎপাট ঘটেছে যারা নিজেদের 'বিদ্যানুরাগী' (?) বলে দাবি করে। এর প্রমাণ হিসেবে কথায় কথায় 'ময়মনসিংহের ময়লাকান্দা' থেকে উৎপাদিত রেফারেন্সের 'ভূতা তির' নিক্ষেপ করে।
এই 'মহা-অজ্ঞানী'দের কাজ-ই হল নিজের দাবি প্রমাণে যুক্তির জিলাপি ভাজা। এদের যুক্তি দেখলে মনে হবে 'আরব দেশের ছাগল'। স্বচ্ছ ও পরিস্কার লজিক থেকে 'শত হস্তেন দুরেত্ব'।
মাঝে মাঝে বড়ই হাস্যকর ব্যাপার ঘটে যখন এই 'বুদ্ধি ব্যাপারী'রা কুরআন-হাদিসের উদ্ধৃতি টেনে নিজেদের মতের স্বপক্ষে দলিল দেয়। অথচ দাবি ও দলিলের মাঝে কোন সামঞ্জস্য নেই।
যিনি বলেছেন সমুচিৎ বলেছেন- আসলে এদের জ্ঞানির স্তরে গণ্য করাই উচিৎ না। বরং এরা হল ইসলাম বিদ্বেষিদের অন্ধানুসারি। থুথু চাটার স্তরের লোক। এই 'বিশেষ-অজ্ঞ'রা নিজেদের বিদ্বেষের দুর্গন্ধ ছড়াতে ইসলাম বিদ্বেষিদের লেখার ট্রান্সলেট করে মাত্র।
.
এই লেখাটিতেও একজন নাস্তিকের 'ল্যাংড়া যুক্তির' উত্তর দেব। এই লিখাটি লিখতে আমার লজ্জাবোধ হচ্ছে। এত সহজ সাবলীল একটা বিষয়ে মানুষ কিভাবে অবুঝ হয়? শুরু করা যাক তাহলে।
এক অসুর (নাস্তিক) দাবি করে বসল, আল্লাহ পাক মহাবিশ্বের স্রষ্ঠা নন। প্রমানঃ আল্লাহ নিজেই সুরা ইখলাসে বলেছেন- لم يلد ولم يولد তিনি আয়াতের অর্থ লিখলেন 'তিনি আল্লাহ কাউকে সৃষ্টি করেন নি এবং তিনিও কারও থেকে সৃজিত হন নি।
সুতরাং বুঝা গেল আল্লাহ এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা নন।

হাসবো? না কাদব?
চলেন কান্দি... হে হে হে হুয়া হুয়া হুয়া....
জ্ঞানের দৈন্যতা দেখে রোদন করা ছাড়া উপায় নেই।
.
এবার খন্ডন ও উত্তর প্রদানে প্রবিত্ত হচ্ছি-
আমার বুঝে আসছে না يلد এর অর্থ 'সৃষ্টি করা' হল কেমনে? যাই হোক তারা যেহুতু নিজেদের 'বিদ্যানুরাগী' (?) বলে দাবি করে তাই ভাবলাম হতে পারে কোথাও হয়ত يلد এর অর্থ 'সৃষ্টি করা' লিখেছে। এক গ্লাস দুধ খেয়ে অনুসন্ধানে নামলাম। দুধের 'ক্রিয়া' শেষ হয়ে মাথা ধরে গেল কিন্তু ফলাফল শুন্য। পাঠক! একটি কথা স্মরণে রাখবেন। কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে তাই একে বুঝতে হলেও আরবি জ্ঞানের প্রয়োজন। আরব ভাষাবিদগণ যে শব্দ যেভাবে প্রয়োগ করেছেন আমাদেরও ঠিক সেভাবেই অর্থ করতে হবে। অযথা পন্ডিৎগিরী দেখাতে গেলে লজ্জার গেরাকলে আটকা পরতে হবে।
.
পাঠক! কি আর লেখব? শরম লাগছে। তারপরও কিছু লিখি। তিনি যে লিখেছেন يلد এর অর্থ সৃষ্টি করা। এটা কি এই শব্দের প্রকৃত অর্থ না রুপক অর্থ?
অবশ্যই প্রকৃত অর্থ না। কারণ এর অর্থ হল 'সন্তান প্রসব করা, জন্ম দেয়া, ভুমিষ্ঠ হওয়া'। এই শব্দের অর্থ আপনি যেভাবেই করেন না কেন! সাথে অবশ্যই সদ্যভূমিষ্ট একটি বাচ্চার ঘ্রাণ লাগাতে হবে। তবেই এর প্রকৃত অর্থ পূর্ণতা পাবে।
তাহলে কি يلد এর রুপকার্থ সৃষ্টি করা?
না কশ্চিনকালেও না।
কারণ 'সৃষ্টি করা' এই অর্থ বুঝানোর জন্য خلق শব্দ নির্ধারিত আছে। সুতরাং يلد এর অর্থ যদি সৃষ্টি করাই হত তাহলে অবশ্যই يلد শব্দটি خلق এর প্রতিশব্দ হত। অথচ আমরা আরবি অভিধানের গোষ্ঠি উদ্ধার করেও এমনটি দেখতে পাই নি। يلد দ্বারা রুপকার্থ 'সৃষ্টি করা' বুঝাতে হলে আরো একটি পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে-
[ক] يلد এবং خلق এর মাঝে শাব্দিক অর্থের মিল থাকা
[খ] উভয়টির মাঝে পারিভাষিক অর্থের মিল থাকা।
কিন্তু আমরা উভয় ক্ষেত্রেই হতাশ।
কারণ يلد এর অর্থ হল 'জন্ম গ্রহণ করা, ভুমিষ্ট হয়া ইত্যাদী' আর خلق এর অর্থ হল সৃষ্টি করা।
আর يلد এর পারিভাষিক অর্থ হল- কোন সত্ত্বা হতে যৌগিক কিছু উপকরণ বেরিয়ে যাওয়া। خلق এর অর্থ হল- পুর্ব ডিজাইন ও উপকরণ ছাড়া কিছু বানানো।
স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে দুই শব্দের মাঝে কোন ভাবেই মিল নেই।
(দেখুনঃ ১. মুফরাদাতুল কুরআন - হুসাইন রাগিব ইস্ফাহানী, [আরবি] পৃ ২৯৬ ও ৮৮৩ [উর্দু] খন্ড ১, পৃ ৩৩৯ ও খন্ড ২, পৃ ৫৭৫
২. উমদাতুল হুফফাজ - আহমাদ বিন ইউসুফ হালাবী, খন্ড ১ পৃ ৫২৬ ও খন্ড ৪ পৃ ৩৩৯
৩. রুহুল মাআনী - মাহমুদ আলূসী বাগদাদী, খন্ড ৩০, পৃ ২৭৫)
.
আচ্ছা আমরা যদি সেই 'মেধা বিকলঙ্গের' কথা মেনেও নেই যে, يلد শব্দটি এখানে প্রকৃত অর্থে না হলেও রুপকার্থে ব্যাবহৃত হয়েছে (!) তাহলে দেখা যাক কি হয়।
পাঠক! কথার কথা يلد এর রুপকার্থ সৃষ্টি করা (!) তবুও কি তার কথাটি সঠিক হবে?
নিশ্চয় না। কারণ কোন শব্দের প্রকৃত অর্থ ছেড়ে রুপক অর্থ নিতে হলে 'শব্দ সংশ্লিষ্ট বিশেষ ইঙ্গিত' থাকতে হয়।
(দেখুনঃ নুরুল আনওয়ার শরহে কাশফুল আসরার - মূল্লা জিওয়ান সিদ্দিকী, খন্ড ১, পৃ ২৬৬ [মাকতাবা বুশরা])
সে যখন বাক্যটি উচ্চারণ করছে, কোন প্রেক্ষিতে সে বাক্যটি বলছে। এই প্রেক্ষাপটই হল সব চেয়ে বড় ইঙ্গিত। এবার দেখি আয়াতটির প্রেক্ষাপট কি বলে!
"একবার মুশরিকরা এসে বলল, হে মুহাম্মদ! আপনি যে খোদার অনুসারি দাবি করছেন তার বংশ পারম্পরা বর্নণা করুন"
(দেখুনঃ তাফসীরু কুরআনিল আজীম - ইবনে কাসীর, খন্ড ৪, পৃ ৫১৮)
এবার পাঠকই বলুন আয়াতের প্রেক্ষাপট 'সৃষ্টির প্রতি ইঙ্গিত দেয় নাকি জন্ম দানের প্রতি ইঙ্গিত দেয়?'
.
যাই হোক কোন ভাবেই আমরা 'অসুরের' সাথে একমত হতে পারছি না। তিনি এধরণের উদ্ভট অর্থ করার দুঃসাহস কোথায় পেলেন তা আমার জানা নেই।
এই 'হাবলুরা' ইসলামকে কটাক্ষ করার জন্য যে সমস্ত উদ্ধৃতিকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে এগুলো কি দলিল হওয়ার যোগ্যতা রাখে? আমি বলব অধিকাংশই যোগ্য নয়। ইসলামের কোন বিধান উৎখাত ও সাব্যস্ত করতে হলে অবশ্যই মৌলিক কোন গ্রন্থের উদ্ধৃতির মাধ্যমে চেষ্টা করতে হবে। এটা তাদের বুঝাবে কে? তাদের মুর্খামিতে স্বয়ং মুর্খেরও হাসি পায়।
.
তাদের একটা কুঅভ্যাস হল 'দাবিকে দলিল হিসেবে পেশ করা' অর্থাৎ তারা যে বিষয়টি দলিল হিসেবে পেশ করছে এটা আসলেই সে বিষয়ের দলিল কি না এটা প্রমাণিত হওয়ার জন্য আরেকটি দলিলের প্রয়োজন। যেমন উপরের 'অসুরের' হাস্যকর দাবির মাধ্যমে বিষয়টি বুঝা যাচ্ছে। অথচ এটা তর্ক শাস্ত্রের মূলনীতি অনুযায়ী এটা বাতিল।
(দেখুনঃ কিতাবুত তা'রিফাত - সায়্যিদ জুরজানী, পৃ ২৭৭)
এবিষয়ে বিস্তর আলোচনা করা দরকার। সামনে আরেকটি লেখায় বিষয়টি দৃষ্টান্ত সহ উপস্থাপন করব ইংশাআল্লাহ।
.
এবার আমি দুইটা যুক্তি দিচ্ছি। একদম পরিষ্কার।
আল্লাহ পাকের জন্ম দেয়া ও জন্ম গ্রহণ করা অসম্ভব কেন?
যুক্তি- যা জন্মে তা অবশ্যই মরে।
আর আল্লাহ যেহুতু 'হাই' চিরঞ্জীব তাই তার জন্ম নেয়া অসম্ভব।
যুক্তি- যে জন্ম দেয় তার উত্তরাধিকারি সৃষ্টি হয়।
আর আল্লাহ যেহুতু স্বীয় ক্ষমতায় একক। তার কোন উত্তরাধিকারী নেই তাই তিনি জন্ম দেন না। কারণ জন্ম দিলেই তার ক্ষমতার উত্তরাধিকারী সৃষ্টি হবে অথচ এটা অসম্ভব।
.
আমি উপরে যে দুইটি লজিক দিয়েছি তা ভ্রান্ত প্রমাণ করুন। তারপর তর্কে আসুন। বিষয়বস্তু পাল্টাবেন না।
আল্লাহ পাক আমাদের বুঝার তৌফিক দান করুন।
আরেকটা কথা! ব্লগ কর্তপক্ষকে ধন্যবাদ আমাকে ফ্রন্ট পেইজ এক্সেস দেয়ার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৪
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×