বৈশ্বিক ক্রান্তিলগ্নে জাতির সূর্যসন্তানদের এমন আচরণ কাম্য নয়। হ্যাঁ, আমি জাতির সূর্য সন্তান হিসেবে আখ্যা দিচ্ছি তাদেরকে যারা উচ্চ শিক্ষার সাথে সংযুক্ত। এটা পিছন না ফিরে এগিয়ে যাওয়ার বয়স, অন্যায়ের প্রতিবাদ করার বয়স, নিজে না খেয়ে ভাইয়ের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার বয়স, জীবন বাজি রেখে বোনের সম্ভ্রম রক্ষা করার বয়স!
কিন্তু এই বয়সে উপনীত হয়েও যখন আমরা স্রেফ বিনোদনের নাম করে শত্রুভাবাপন্ন মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছি.....
~অনেকেই বলতে পারেন যে, এখন অফ ক্যাম্পাসে আছে বলে সময় কাটানোর জন্য নতুন কোনো ট্রেন্ড না আসায় নিজেরা এটার মুখাপেক্ষী হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অন ক্যাম্পাসে থাকাকালীন ও প্রতিনিয়ত এসব দেখা যাচ্ছে/যাবে, যেগুলো এখন স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা অনুকরণ করা শুরু করছে/করবে, নিজেদের স্কুল কলেজের বিষয়াবলী নিয়ে। আমি স্কুল কলেজ পড়ুয়াদের দোষ দিচ্ছিনা।
অনলাইনের প্রসারের কারণে যেখানে বিশ্বের এক প্রান্তে থেকে আরেক প্রান্তের খোজ নেওয়া যাচ্ছে সেখানে ভার্চুয়াল জগতে বড় ভাইদের লেইম কথাবার্তাকে আইডল ভেবে নিজেকে আরেকটু স্মার্ট হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য তাদেরকে অনুকরণ করা মোটেই দোষনীয় নয়।
~অধিকাংশ সময় এসবের সূত্রপাত হয় বিভিন্ন ক্যাম্পাসের পেজে অন্যের ক্যাম্পাস নিয়ে ক্রিটিসাইজ করা ট্রলের মাধ্যমে কিংবা ক্লোজড গ্রুপে অন্যের ক্যাম্পাস নিয়ে করা বিদ্রুপাত্মক পোস্ট / কমেন্ট লিকের মাধ্যমে। সাধারণত এসব তারাই করে যারা বাপ-দাদার হোটেলে বসে খায় আর করার মতো কোনো কাজ পায় না। কিন্তু যখন নিজের ক্যাম্পাসের নামে সমালোচনা দেখে তখন কেউ ই সেটা সহ্য করতে পারে না।
প্রত্যেকের কাছে তার ক্যাম্পাস অনন্য, ক্যাম্পাস প্রাণের স্পন্দন। নিজের ক্যাম্পাস যেমনই হোক সেটা নিয়ে অন্যের ক্রিটিসাইজ করা সমালোচনা কেউ সহ্য করতে পারে না। ফলস্বরূপ, সে দেয় একটা পোস্ট, তারটা দেখে দেয় আরেকজন পোস্ট। মুহুর্তের মধ্যেই ভার্চুয়াল জগত রেষারেষিতে ছেয়ে যায়।
~প্রাইভেটে সব বড় লোকের মেধাহীন বাচ্চারা পড়ে আর পাবলিকে সব ফকিন্নির মেধাবী ছেলে-মেয়েরা পড়ে এমন একটা ধারণা বদ্ধমূল হয়ে যায় এসব ক্রিটিসিজম দেখলে। কিন্তু বাস্তবে এমন অনেক দেখা যায় যে-
ক্যাম্পাসের ওয়েভার আর টিউশন করিয়ে আয় করা টাকা দিয়ে টিউশন ফী দেওয়া অনেক গরীব ঘরের মেধাবী ছেলে-মেয়েরা পড়ছে আবার নিজের শহর ছেড়ে বাবা-মা যেতে না দেওয়ায় দূরের পাবলিকে ভালো সাবজেক্টে চান্স পাওয়ার পরও বাধ্য হয়েই টাকা খরচ করে প্রাইভেটে পড়তে হচ্ছে। পাবলিকেও অহরহ ধনিক শ্রেণীর এমন ছেলে-মেয়েদের দেখা যায় যারা গাড়িতে চড়া ব্যাতিত কখনো দু'কদম হাটেনি, তারা মেধার পরিচয় দিয়েই পাবলিকে এবং ভালো সাবজেক্টেই পড়ছে।
~কোনো একটা নতুন কনসেপ্ট নিয়ে কোনো গ্রুপ খোলা হলে প্রথম কিছুদিন সবার মধ্যে একতা দেখা যায়। তারপর একদিন হঠাৎ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এডমিন/মডারেটর) মালিকদের স্বজনপ্রীতির কারণে কিংবা মজা করে অন্যের ক্যাম্পাসের কোনো বিষয় নিয়ে ক্রিটিসাইজ করার পর মুহুর্তের মধ্যে হুরহুর করে পাবলিক, প্রাইভেট, কলেজ (অনার্স লেভেল) আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান যেভাবে বিভাজন করা যায় বিভাজন করে নতুন গ্রুপ খুলে একে অপরের বিদ্বেষ চর্চা করা শুরু করে।
তবে জুনিয়ররা (স্কুল/কলেজের) সব গ্রুপে থেকেই সব মজা নেয়, আর অচেতন মনে প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করা সেই বিদ্বেষ লালন করে। এতো হাজার হাজার গ্রুপ পরিচালনা করেই তো পারা যাচ্ছেনা, পড়াশোনা করবে কখন!
যেখানে ভার্চুয়াল জগতে আমরা এক হতে পারি না, সেখানে বাস্তবিক জীবনে একতা প্রত্যাশা করা নেহায়াতই বোকামি।
~প্রতিটি ক্যাম্পাসের অতীত ইতিহাসে যেমন গৌরব করার মতো ঐতিহ্য আছে তেমনি জীবন বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড ও পরিচালিত হয়েছে। আমরা কি কখনো এটা ভেবে দেখিনা যে, যে অতীতকে ধারণ করে বুক ফুলিয়ে চলে নিজেরদের (বিকৃত মস্তিষ্কের) চরিতার্থ করছি আমরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করলে আগত অতিথিদের জন্য কোন অতীত রেখে যাচ্ছি!
~পাবলিক মানেই সব না, প্রাইভেট মানেই কোনো ব্র্যান্ড না, কলেজ মানেই ক্ষ্যাত না। বিভাজন কখনোর জন্যই কাম্য নয়। একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলেয়ে নিজের, দেশের ও দশের মঙ্গলের জন্য কাজ করাই হলো শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য।
~ক্যাম্পাস আত্মপরিচয়ের বাহক হলেও এটাই কিন্তু একমাত্র আইডেন্টিটি না। দিনশেষে শিক্ষায় যে এগিয়ে যাবে সেই মানুষ হিসেবে নিজের আত্মপরিচয় তুলে ধরবে।
একটা কথা খুব ভালো করে মনে রাখা উচিৎ-
যে ঘৃণার বীজ আজ আমরা বপন করছি সেটা পরম্পরায় চলতেই থাকবে যদি না শুরুতেই এর মূলোৎপাটন করা না যায়।
আফসোস হয় জাতির সূর্য সন্তানদের নিয়ে, যারা ক্যাম্পাস নিয়ে এখনো পরে আছে, (এরা) দেশের হাল ধরবে কখন!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০২০ দুপুর ১:০০