১)
এক রিপোর্টারের সলিল সমাধি শব্দটা খুব পছন্দ ছিল, হামেশাই ব্যবহার করত। এতে বক্তব্যের ভার কিছুটা বাড়ে বলে তার ধারণা।বিশেষ কোন শব্দের প্রতি অতি মাত্রায় মমতা থাকলে যা হয়, একবার এক রোড এক্সিডেন্টের রিপোর্ট লিখতে গিয়ে হেডিং করে ফেলল ট্রাকের নীচে এক ব্যাক্তির সলিল সমাধি। যাহোক মৌলবাদি শব্দটা আমাদের শৈশবে কৈশোরে দেখিনি বা শুনিনি, রবি ঠাকুর, শরৎ, উলটে পালটে দেখার বদ অভ্যাস আছে, সেখানেও পাইনি। তাই এটা ইদানিংকার শব্দ এটা বুঝে নিতে কষ্ট হয়না।নুতন নুতন শব্দ ভাষায় আসবে, বাহুল্য যেটা সেটা ঝরে যাবে, এটাই হওয়া উচিত। সে হিসাবে নুতন শব্দ মৌলবাদির আগমন হলে আমার বলার কিছু ছিলনা । তবে যখন ওটা বুশ ব্লেয়ারের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নিরন্তর যুদ্ধের স্লোগানের এক অতি চর্বিত ইংরাজী শব্দ ফান্ডামেন্টালিস্ট এর বাংলা প্রতিশব্দ হিসাবে সরাসরি মৌলবাদি অনুদিত হয়ে বাংলায় ঢুকার জন্য ঝাপাঝাপি করে তখন বেশ অস্বস্তি হয়। মনে হয় প্রভুকে আগাগোড়া অনুকরণ করতে গিয়ে অনুবাদটা যেন খুব বেশী আক্ষরিক হয়ে গেল, কিন্তু বাংলা তো এতো দরিদ্র নয়! দুঃখের কথা, ইংরাজ জাতি তার ভাষায় যা বুঝাতে চাচ্ছে, মৌলবাদি বাংলায় সে একই আবেদন সৃষ্টি করতে পারছেনা, সঙ্গে টিকা টিপ্পনি হিসাবে কিছু ব্যাখা বিশ্লেষনও সাপ্লায় করতে হচ্ছে গা বাঁচানোর জন্য। হার্ডডিস্ক এর অনুবাদ বাংলায় শক্তচাকতি হয়ে গেঁড়ে বসতে চাইলে যেমন তামাশা মনে হয় ঐরকম এক অবস্থা।নুন খাওয়া অপরাধ না, তবে নুন খেয়ে যারা এই শব্দ আমদানি করল তারা অনুকরণ করতে গিয়ে এতো কাঁচা কাজ করল কেন ভাবলে বেশ অবাক লাগে। যাহোক এই ভূ-ভারতে মৌলবাদি না বলে উগ্র-হিন্দু বা উগ্র-মুসলিম শব্দটা আমার কাছে অনেক বেশি যথার্থ এবং বাংলায় গ্রহণযোগ্য মনে হয়।এতে প্রভুর ফান্ডামেন্টালিস্ট শব্দের সতিত্ব হুবহু হয়তো বাংলায় রক্ষা হলোনা, তবে যা প্রভু বোঝাতে চান সেটার ঘাটতিটা হয়তো কিছুটা কাটানো গেল।
২)
মোহাম্মদ সম্পর্কে যার যা বুঝ বা ধারনা তা তার ব্যক্তিগত বিষয় বলেই আমি ধরে নিচ্ছি, আমার বলা না বলাতে সেটা পাল্টাবেনা। ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতকে অস্বীকার করে ,সেটা পাঠ না করে আধো আলোছায়ার মাঝে রেখে, সমসাময়িক প্রেক্ষাপট থেকে কাউকে বিচ্ছিন্ন করে এনে আজকের বিচারে তাকে ভিলেন বানানোতে কোন প্রতিভার দরকার পড়েনা, যৎকিঞ্চিত বিদ্বেষ থাকলেই পারা যায়। তবে উনাকে ব্যক্তি আক্রমণ করে এভাবে এক সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ালে সেটার প্রতিক্রিয়া হয় মারাত্মক। স্থায়ী ঘৃণার বীজ বপন হয় তাতে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়, সমাজের আন্তঃবিনুনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই ফলশ্রুতিতে অপরপক্ষ বলে বসবে, যে ধর্মে ব্রহ্মা স্বয়ং তার মেয়ে পার্বতীর প্রতি সুতীব্র যৌন আকর্ষন বোধ করে আর পিতার লোলুপ দৃষ্টি থকে মেয়ে পালিয়ে গিয়েও শেষ রক্ষা পায়না, সে ধর্মের ক্রেডিবিলিটি কি। তখন কথার পিঠে কথা বাড়বে। নাস্তিকতার মুখোশের আড়ালে শেষ রক্ষা হবেনা। মাঝা মাঝি কোন শ্রেনী থাকবেনা। সরাসরি একে অপরের দিকে অঙ্গুলি নির্দেষ করে অস্ত্রে সান দিবে। সাম্প্রদায়িক ঘৃণার বিষবাস্প তৈরী হবে। সবাইকে একছাতার নীচে নিয়ে এদেশের ভেতর ও বাইরের শত্রুর সাথে আমাদের যে লড়াই তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, শত্রু লাভবান হবে এধরনের বিবাদে।
৩)
বড় হয়ে গেল, সংক্ষেপ শেষ করি। ধর্মকে আধুনিক সমাজ কিভাবে মোকাবিলা করবে তার একটা গাইডলাইন ১৯২২ সালের ২ রা মার্চ লেলিন দিয়ে গেছেন। সময় পেলে পড়ে নিবেন। কোটেশনে আমার অরুচি আছে তাই দিলামনা। কোটেশন নয় এই আর্টিকেলটা আমাদের মন মগজ লাগিয়ে বুঝতে হবে।আজকের প্রগতিশীলতার দাবিদারদের কর্মকান্ডের সঙ্গে লেলিনের সেই চিন্তা চেতনার তফাৎ কেন ১৮০ ডিগ্রী সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। বুশ ব্লেয়ার আর ভারতের সাউথ ব্লকের নুন খেয়ে প্রগতিশীলতার ঝান্ডা হাতে নিলেই কেবল এই বৈপরিত্য সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস করি।
(পূর্বের এক পোস্টে আমার কমেন্ট থেকে নেয়া, কিছুটা পরিবর্তীত)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১:৫৪