(কালকে এইটা লিখা ফেসবুক নোটে পোস্টাইছিলাম। আইজকা এক্টা ওয়র্ডপ্রেস ব্লগ কইরা সেইখানে রাইখা দিলাম। ar সামু-তে প্রায় ৩ বছর পর কোন পোস্ট দিতাছি।)
প্রথম আলোতে মিলন-এর গণপিটুনিতে হত্যা সংক্রান্ত খবরে এই মুহূর্তে মন্তব্য আছে ৩৯১টা । তার মধ্যে কয়েকটা পড়ি আসেন। (http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-08-08/news/176504 )
‘পুলিশের এমন আচরণ অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত । ‘
‘যে দেশে আইন নাই আর সরকার নাই সে দেশেই এমন ঘটনা ঘটে। আমাদের পুলিশ বাহিনী এমন পিচাষ যে টাকার লোভে মানুষকে পশু পাখির মত হত্যা করে। কোন দেশে আমরা আছি।’
‘পুলিশরা শুরু করেছি কি ? একের পর এক ঘটনা ঘটিয়েই যাচ্ছে পুলিশ অথচ সরকার আর জনগন নিশ্চুপ ! দেশে কি আইন নাই ?’
‘এটাই কি আমাদের স্বাধীনতা ! জনগনের কাছে আনুরধ পুলিশ নামক এই শইতানদের বিরুদ্ধে আন্দলন করুন। যারা এই ঘটনার সাথে জরিত তাদের ফাসি দেওয়া হোক। ‘
‘পুলিশ নামক যে শইতান গুলা এই ঘটনার সাথে জরিত তাদেকে একই ভাবে মারতে হবে। তাহলে অন্য পুলিশরা ভবিষতে এমন কাজ করতে ভয় পাবে। ‘
‘খুব ইচ্ছা করছে যদি পারতাম কিছু পুলিশকে এইভাবে খালিহাতে পিটিয়ে মারতাম!’
‘ও কার কোন কিছু চুরি করেনি তবুও পুলিশ তাকে জন্তর হাতে তুলে দিল তাকে খুন করার জন্য , এই খুনের আসামি পাবলিক নয় পুলিশ । পুলিশকে এখনই কন্ট্রল করুন না হয় দেশে সিভিল ওয়ার হয়ার সম্ভবনা আছে , আমি এই পুলিশ সদস্যদের ফাঁসি চাই । ‘
‘পুলিশের সাম্প্রতিক কর্মকান্ডে আমি বেশ হতাশ। কিন্তু এই ঘটনাটা নিয়ে কোন অভিযোগ নাই আমার। কারণ, এখানে ঘটনার পেছনে ঘটনা আছে। নোয়াখালির ঐ অঞ্চলগুলোতে ডাকাতি এত ভয়াবহ আকারে রুপ নিয়েছে যে এটাই সবচাইতে ভাল ট্রিটমেন্ট।’
‘ঐপুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয় নয় একই পদ্ধতিতে জনতার পিটুনিতে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করা উচিত।’
সুতরাং দেখা যাইতেছে দোষ হইল পুলিশের আর সরকারের। কারন কি? কারন পুলিশ মিলনরে জনগনের হাতে তুলে দিছে। এবং এই অপরাধে এই পুলিশদেরও গণপিটুনি দেয়া জায়েয আছে। বেশিরভাগ কমেন্টের মূল সুর এইটাই। আর কমেন্টগুলা যারা দিছে তাদের আর যারা দল বাইন্ধা এই ছেলেটাকে মারলো, ইট দিয়া মাথা ছেঁচলো তারা আসলে একই লোক, কোন প্রভেদ নাই।
পুলিশ, হাছিনা, সাহারারে মেলা গালিগালাজ করা হইছে, নাউ লেট’স ফেস দ্য ট্রুথ।
বাংলাদেশ একটা প্রাগৈতিহাসিক দেশ, যেই দেশের জনগন হিংস্র, ইতর একপাল শুয়োর। এই শুয়োরের দলের এই চাইতে ভালো কোন শাসন ব্যবস্থা প্রাপ্য না। “‘যে দেশে আইন নাই আর সরকার নাই সে দেশেই এমন ঘটনা ঘটে” বলাটা হাস্যকর, আপনে তো আইনের শাসন আর কল্যানমুখী সরকার-এর যোগ্যই না। শুয়োরের পালের দলনেতা শুয়োরই হয়।
“এই ঘটনাটা নিয়ে কোন অভিযোগ নাই আমার। কারণ, এখানে ঘটনার পেছনে ঘটনা আছে। নোয়াখালির ঐ অঞ্চলগুলোতে ডাকাতি এত ভয়াবহ আকারে রুপ নিয়েছে যে এটাই সবচাইতে ভাল ট্রিটমেন্ট”- মায়রে বাপ লজিক পুরা। ‘ট্রিটমেন্ট’??? মানুষ পিটায়া মাইরা ফেলা হইল ‘সবচাইতে ভাল ট্রিটমেন্ট’? ট্রিটমেন্ট শব্দটার বাংলা জানতাম রোগ সারাবার প্রক্রিয়া। এই কমেন্টদাতা যে মানসিক বৈকল্যের প্রতিনিধিত্ব করে সেই রোগ কেম্নে সারবে?
‘পুলিশ নামক যে শইতান গুলা এই ঘটনার সাথে জরিত তাদেকে একই ভাবে মারতে হবে। তাহলে অন্য পুলিশরা ভবিষতে এমন কাজ করতে ভয় পাবে।’ এই লজিকটা খুব মজার। মোবাইল চুরির অপরাধ বা অপরাধের অভিযোগেও একজনরে মাইরা ফেলাটা জাস্টিফাই করা হয় এই যুক্তি দিয়া- চুরি করুক আর না করুক, যারা চুরি করতে পারে তারা এই পরিণতি দেইখা ভয় পাবে! কি চমৎকার যুক্তি। অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর উপযুক্ত যুক্তি বটে।
বিদেশ থাকি বইলা দেশের সমস্যা নিয়া কিছু বলতে গেলে নিজেরে হিপোক্রিট মনে হয়। এই কমপ্লেক্স থেইকা আমার মুক্তি ঘটছে। আমি আর এই দেশের সম্মিলিত নৃশংসতার ভাগীদার হইতে রাজি না। কালকে রাতেও এই খবরটা যখন ফেসবুকে দিছিলাম উপরে লেখা ছিল- ‘এতোটা নৃশংস আমরা’.. ‘আমরা’ লিখছিলাম, নিজেরেও গোণায় ধইরা । কিন্তু আর এই হিংস্রতা আমি নিতে পারবো না। আমি এই বর্বরের দলভুক্ত হইতে চাই না। এখন কইতে চাই- ‘এতোটা নৃশংস আপনারা!’
এই আপনারা হইলেন সেইসব লোক, যারা ১৬ বছরের একটা ছেলেরে হাসতে হাসতে মাইরা ফেলতে পারেন।
আপনারা সেইসব কমেন্টকারি যারা গণপিটুনিরে বৈধতা দেন, মনে করেন একটা স্বাভাবিক ঘটনা ।
পিটায়া মাইরা ফেলানো আপনাদের চোখে অপরাধ না, পুলিশ মিলনরে জনগণের থেকে নিরাপত্তা দিতে পারে নাই এইটা অপরাধ। আরে বান্চোতের দল, যেই দেশের সাধারণ জনগণের মাঝে দাঁড়ায়া একটা বাচ্চা ছেলের জীবন বিপন্ন হয়া উঠে সেই দেশের পুলিশের আবার ব্যর্থতা কি?
জনগণের থেকে একটা ছেলেরে কেন পুলিশের নিরাপত্তা দিতে হবে? এমনকি যদি সে অপরাধীও হয় তারে মাইরা ফেলা কি বৈধতা পায়?
অভিযোগ উত্থাপন আর শাস্তি প্রদানের মধ্যে আর কোন প্রক্রিয়ার দরকার নাই আপনাদের। সেই শাস্তিও মৃত্যুদণ্ড। ‘মোবাইল চুরির অভিযোগ’-এর শাস্তি মৃত্যু, ‘পকেটমারার অভিযোগ’-এর শাস্তি মৃত্যু, ‘গাঁজা খাওয়ার অভিযোগ’-এর শাস্তি মৃত্যু … এই দেশে মানুষরে কয়েকজন মিলায়া পিটানো হইলো ঈদ আর পূজার চাইতে বড়ো আনন্দের উপলক্ষ্য।
আপনারা চোখের বদলে চোখ নেয়া ছাড়া আর কিছু শিখেন নাই। এই জন্য এখন পুলিশরে পিটায়া মারার প্রস্তাব উঠে।
যেকোন নৃশংস অপরাধের পরেই দেখি প্রস্তাব উঠে একই নৃশংসতা অপরাধকারীর উপর প্রয়োগ করার। এই মানসিকতাই এই পুরা দেশবাসীরে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে। এবং বারবার এইটা প্রমান হয় যে এই দেশের মেজরিটি আসলে ক্রিমিনাল- গণপিটুনির ঘটনায়, পত্রিকায় করা মন্তব্যে, ব্লগ পোস্টে, ফেসবুক পেজ-এ।