somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Orhan Pamuk এর My Name is Red(অনুবাদ) ধারাবাহিক

১৫ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৩:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৩) আমি তোমার প্রিয় মাতুল

আমি ব্ল্যাকের মামা,তার এনিষ্টে,অন্যান্য অনেকেই আমাকে এনিষ্টে বলেই ডাকে।ব্ল্যাকের মা তাকে উৎসাহ দিত,আমাকে ‘এনিষ্টে এফেন্দী’, নামে ডাকার জন্যে,এখন শুধু কয়েকজন ছাড়া মোটামুটি সবাই আমাকে সেই নামে ডাকে।বছর তিরিশ আগে আমাদের পাশের বাদাম আর পাইন গাছ ছেড়ে,,আকসারাই এর এলাকাটা এই অন্ধকার আর স্যাঁতস্যাঁতে এলাকায় আসার পর,ব্ল্যাক প্রায়ই আসতো এ বাসায়।গরমকালে আমার সময়টা কাটতো মাহমুদ পাশার সাথে গল্পগুজবে,সে সময় ব্ল্যাক মার সাথে আমাদের বাসায় থাকা আরম্ভ করলো।
ব্ল্যাকের মা,আল্লাহ তার আত্মাকে যেন শান্তি দেয়,আমার স্বর্গীয় স্ত্রীর বড় বোন।অনেক শীতের সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরে দেখতাম,আমার প্রিয় বৌ বোনের সাথে গলা জড়াজড়ি করে সুখদুঃখের গল্প করে,একজন আরেকজনকে সান্তনা,আশ্বাস দিচ্ছে।ব্ল্যাকের বাবা তার মাতাল ব্যাবহারের জন্যে,গ্রামের স্কুল মাষ্টারের চাকরীটা ধরে রাখতে পারে নি।ব্ল্যাক তখন বছর ছয়েকের,মায়ের সাথে তার দুঃখে কাঁদতো,আবার মায়ের কান্না থামানোর জন্যেও ছুটে যেত,আর আমাকে-‘এনিষ্টেকে’ ভাবতো তাদের একমাত্র সুখদুঃখের সঙ্গী।

এটা আমার আনন্দের কথা,তাকে দেখে আমার কোন,সন্দেহ ছিল না সুপুরুষ স্বাস্থ্যবান,
ব্যাক্তিক্ত ভরা চেহারার এক মানুষ হবে আমার ভাগ্নে।তার যথাযথ সম্মান দেখানো,আদর করে হাতে চুমু দিয়ে,হাতটা কপালে দোয়ায় ছুঁয়ে নেয়ার ধরণ,সেটা দেখলে ছুয়ে যেত যে কোন মানুষের মন।আমার হাতে সে মঙ্গোলীয়ান রং এর পাত্রটা দিয়ে বিনয়ী সুরে যে ভাবে বললো, ‘শুধু লাল রং এর জন্যে’,কোন সন্দেহ ছিল না ভব্যিষতে একটা কিছু হবে ছেলেটা,
আর তার মুরুব্বী হিসাবে আমার গর্বটাও কম ছিল না।

দেখতে অনেকটা তার বাবার মত,যাকে আমি বার দুয়েক দেখেছি,খুব বেশী হলে।বেশ লম্বা,পাতলা একটা চেহারা,বিচলিত হয়ে পড়ে হাতের ভঙ্গীতে কথা বলার সময়।কথা শোনার সময় হাতদুটো হাঁটুতে রেখে যে ভাবে মাথা নাড়ায়,চোখের ভঙ্গীতে বোঝা যায় কথার গভীরতা আন্দাজ করে নেয়।এ বয়সে আমার এটুকু জানা,যে সম্মান দেখানো শুধু অন্তর থেকে আসে না,তার সাথে আছে নিয়মকানুন,যথাযথ শ্রদ্ধাপর্ব।

ব্ল্যাককে তার মা,এই বাসায় প্রায়ই নিয়ে আসতো,মা এর মনে এই যদি আশা আমাদের সঙ্গ,উপদেশের প্রভাবে তার সন্তান ভব্যিষতে অন্তত যেন সম্মানজনক কিছু একটা করতে পারে।ব্ল্যাক বই পড়াশোনা,বেশ পচ্ছন্দ করতো সেই কমবয়সেই,সেটাই আমাদের দুজনকে কাছাকাছি নিয়ে গেল।,সে হয়ে গেল,আমার একজন অনুগত শিষ্য।

আমি তাকে বলতাম সিরাজের চারুশিল্পীরা কি ভাবে নতুন নিয়মে,বই এর পাতার চারপাশটা মেঘ আকাশের ছবি দিয়ে বর্নাঢ্য করে তুলতো অভাবনীয় ছোঁয়াচে।শুধু তাই না সবাই যখন মজনুর প্রেমের হতাশার ছবিটা আঁকতো,তুলে ধরা মরুভূমিতে তার পাগলের মত ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য দিয়ে-কিন্ত চারুশিল্পী ওস্তাদ বিহজাদ সেখানে ছবিটার নতুন আরেকটা রুপ দিল,যেখানে মজনু মেয়েদের সাথে রান্নাবান্না করছে,কাঠে আগুন জ্বালাচ্ছে,কোন কোন সময় ঘুরে বেড়াচ্ছে এক তাঁবু থেকে আরেক তাঁবুতে।আমি তাকে বুঝিয়ে বললাম,যেমন হুসরেভের আঁকা মাঝরাতে চাঁদের আলোয় শিরিনের গোসল দৃশ্য,প্রেমিকদের নগ্ন শরীর,পাশের ঘোড়াগুলো রং এ সাজিয়ে দেয়া,দেখে বোঝা যায় নিজামীর কাব্য পড়া হয়নি তার,চারুশিল্পীর বিস্তারিত না বুঝে ছবি আঁকায় লোভ ছাড়া আর কোন অনুপ্রেরনা নেই।

ব্ল্যাকের আরেকটা ভাল গু্নের কথা বলতে হয়ঃ চারুশিল্পের হতাশার ইতিহাস পড়ে সে এতটুকু জানতো,আর যাই হউক শুধু ছবি আঁকার উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা যায় না।যতই প্রতিভা থাকুক না,মানুষের জীবনে টাকাপয়সা উপার্জনের অন্য আরেকটা কোন উপায় থাকা উচিত,সবসময় তো চারুশিল্পীর ছবির যথাযথ মুল্যায়ন হয় না।

ব্ল্যাক আলাপ করছিল কি ভাবে তার তাব্রিজের নামকরা চারুশিল্পীদের সাথে যোগাযোগ হলো,যখন সে পাশা,ইস্তাম্বুলের ধনী লোকজনদের জন্য কাজ করতো।ঐ চারুশিল্পীরা দারিদ্র আর হতাশায় জীবনটা কাটিয়েছে,তাদের বেশীর ভাগ জীবনটাই।শুধু তাব্রিজে না,এমন কি মাশদাদ,আলেপ্পোতেও অনেক চারুশিল্পীরা বই এর কাজ করা ছেড়ে দিয়ে এক পাতার ছবি,এমন কি অশ্লীল নোংরা ছবি এঁকেও জীবন চালাতে দ্বিধা করেনি,ইউরোপীয়ান টুরিষ্টদের কাছে ঐ ছবিগুলো ছিল খুবই পচ্ছন্দের।এটাও গুজবে শোনা,শাহ আব্বাসের আঁকা আর অলঙ্কার করা বই,আমাদের সুলতানকে তাব্রিজ ভ্রমনের যেটা উপহার দেয়া,সেটা খুলে খুলে এখন অন্যান্য বই এর জন্য ব্যাবহার করা হচ্ছে।হিন্দুস্তানের সম্রাট আকবর,এত টাকাপয়সা দিচ্ছিল তার এক বই এর জন্য যে তাব্রিজ,কাজভিনের চারুশিল্পীরা তাদের কাজ ছেড়ে দিয়ে সবাই ছুটে যাচ্ছিল দিল্লীর দিকে,তার প্রাসাদে।

ব্ল্যাক আমাকে বলছিল,অন্যান্য গল্পের সাথে,মেহেদীর নকল ছবির গল্প,আবার উজবেকরা কি ভাবে ক্ষেপে গিয়েছিল যখন সাফাবিদদের পাঠানো জিম্মি নির্বোধ রাজকুমার তাদের কাছে পৌঁছানোর তিনদিনের মধ্যে অসুস্থ হয়ে মারা গেল।তবে তার মুখের চেহারায় বুঝলাম,যে সমস্যাটা শুধু আমাদের দুজনার মাথায় ঘোরাঘুরি করছে,আজও সেটার সমাধান হয়নি।

আর যে কোন তরুনের মতই ব্ল্যাক আর অন্যান্য যারা আমাদের বাসায় আসা যাওয়া করতো,তাদের কারও অজানা ছিল না,আমার সুন্দরী মেয়ে সেকুরের কথা,প্রেমে ব্ল্যাক তখন হাবুডুবু খাচ্ছিল।অবশ্য এটা তেমন বিশেষ কোন ঘটনা না,কেন না যারাই আমার মেয়েকে দেখেছে মোটামুটি সবাই প্রেমে পড়ে যায় তার।ব্ল্যাকের প্রেমটা যৌবনের সেই জোয়ার,সেকুরের সৌন্দর্যে ছিল সেটা একেবারেই বেসামাল।সবচেয়ে বড় ভুলটা করলো সে সেকুরের কাছে তার মনের কথাগুলো বলে,খোলামেলা প্রেম নিবেদন করে।

আর কি তারপর,আমাদের বাসায় তার যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেল।

মনে হয় ব্ল্যাক নিশ্চয় জানে,তার ইস্তাম্বুল ছেড়ে যাওয়ার বছর তিনেক পরে,আমার মেয়ে স্পাহী এক সিপাহীকে বিয়ে করে।দুটো ছেলে আর বৌকে রেখে সিপাহী তৃতীয় বারের মত যুদ্ধে যাওয়ার পর,আর ফিরে আসেনি।চার বছর পরেও আজও তার খোঁজ খবর পায়নি কেউ।মনে হয় এ খবরটা জানা ব্ল্যাকেরও,ইস্তাম্বুলে খবর ছড়াতে তেমন একটা সময় লাগে না,তা ছাড়া আমাদের নিস্তব্ধতার সুরে এ কথাটা হয়তো বুঝতে তার অসুবিধা হয় নি।তবে ভাবভঙ্গীতে মনে হলো ঘটনাটা তার জানা বেশ কিছুদিন আগেই।এই যে এই মুহুর্তে, ‘আত্মা কাহিনী’,বইটার দিকে যদিও সে তাকিয়ে আছে,তবু তার মনটা ছুটে বেড়াচ্ছে বাড়ীর অন্যদিকে ছেলেমেয়েদের দৌড়াদৌড়ি আর হৈচৈ এ।সে তো জানেই আমার মেয়ে এখন এ বাসায় আমাদের সাথে থাকে।

আমি হয়তো বলতে ভুলে গেছি,ব্ল্যাকের চলে যাওয়ার পর আমার এই নতুন বাড়ীটা তৈরী করা।
ব্ল্যাক,যার সব সময় আকাঙ্খা ছিল খ্যাতি প্রতিপত্তির,তার কাছে এ নিয়ে গর্ব,আলাপ আলোচনা করাটা অশোভনীয়ই হবে।তবুও তাকে গর্ব করে বললাম,বাড়ীর দোতলায় গরম অনেকটা কম,যদিও আমি বেশ লজ্জিত বোধ করছিলাম,তারপর।আমার চেয়ে কম টাকাপয়সা যাদের,এমন কি স্পাহীর সিপাহী তাদের অল্প বেতনেই এ ধরণের দোতালা বাড়ী তৈরী করতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না।

একটা ঘরে হেঁটে গেলাম আমরা দুজন,যার দরজাটা নীল,শীতের সময় কাজকর্মের জন্যে এ ঘরটা ব্যাবহার করি,ব্ল্যাক যেন বুঝতে পারছিল পাশের ঘরে সেকুরের কথা।আমি তাকে বললাম,আমার তাব্রিজে পাঠানো চিঠির কথা,আর তাকে ইস্তাম্বুলে আসার আমন্ত্রণও জানালাম।

‘ঠিক তুমি যে ভাবে তাব্রিজের চারুশিল্পী,কালিগ্রাফী শিল্পীদের সাথে কাজ করেছ,অনেকটা সে ভাবেই আমি ছবি,কালিগ্রাফী সহ একটা বই প্রকাশ করার প্রস্ততি নিচ্ছি’, ‘সত্যি কথা বলতে কি আমার মক্কেল আর কেউ না,আমাদের সুলতান,আর বইটা হলো সুলতানের সাম্রাজ্যের ইতিহাস।যেহেতু বইটা গোপনে করা হচ্ছে,তাই সুলতান খাজাঞ্চীদের না জানিয়েই আমাকে খরচ দি্চ্ছে।এ সুবাদে আমার জানাশোনার সূযোগ হয়েছে সুলতানের সবচেয়ে খ্যাতনামা চারুশিল্পী,কালিগ্রাফী শিল্পীদের সাথে।বই এর কাজগুলো সবাইকে ভাগ করে দেয়ার দায়িত্ব আমার হাতেই,-যেমন একজনকে দিলাম কুকুর আঁকার জন্যে,একজনকে গাছ আঁকার জন্যে,আমার কাজ হলো বই এর পাতার ডিজাইন আর ভেসে যাওয়া মেঘের ছবি টেনে আকাঁর,আরেকজন আঁকছে ঘোড়ার ছবিটা।আমার ইচ্ছা ছিল সুলতানের সমস্ত পৃথিবী,অনেকটা ভেনিসের ওস্তাদ শিল্পীদের মত তুলে ধরার জন্যে।তবে ভেনিসের শিল্পীরা যা করেনি,আমার ছবি ছাড়িয়ে যাবে সেটা,স্কেচগুলো শুধু জাগতিক দৃশ্যটা তুলে ধরবে না,তুলে ধরবে অন্তর্নিহিত দৃশ্য,সুলতানের রাজত্বের শুধু হাসিটা না,কান্নাটাও।আমি ছবিতে সোনার মোহরও দিয়েছি,জীবনে টাকাপয়সার তুচ্ছতা তুলে ধরার জন্যে,মৃত্যু,শয়তানের ছবি আমাদের লুকানো ভঁয়ের ছবিটার তুলে জন্যে।জানিনা চারপাশে ছড়ানো গুজবগুলো কি নিয়ে,গাছের সজীবতা,
ঘোড়ার প্রানবন্ত রুপ,কুকুরের হিংস্রতা,সবকিছু দিয়ে আমাদের মহামান্য সুলতানের পৃথিবীর চেহারাটা তুলে ধরা।এটাও আমার ইচ্ছা ছিল আমাদের মত চারুশিল্পী যারা,যাদের কাউকে কেউ ডাকে ‘লেইলেক(বক)’, ‘জেইতিন(জলপাই)’,‘কেলেবেক(প্রজাপতি)’,এ সব বিভিন্ন নামে,যেন তারা তাদের পচ্ছন্দের কোন একটা ছবি এঁকে দেয়ার জন্যে।প্রচন্ড শীতে এই চারুশিল্পীরা গোপনে নিয়ে আসতো বই এর ছবিগুলো আমাকে দেখানোর জন্যে।

‘কি ধরণের ছবি আঁকছি?কেনই বা আমরা ছবিগুলো ঐ ভাবে আঁকছিলাম?ঠিক এ মূহুর্তে তোমাকে ঐ উত্তরগুলো দেয়া সম্ভব হবে না।অবশ্য কারণ এটা না যে তোমার কাছ থেকে সেটা লুকিয়ে রাখছি,এটাও না যে তোমাকে সেটা কোনভাবেই বলা সম্ভব না।আসলে আমি নিজেও জানি না,ছবিগুলোর আসলে কি বলে দেয়।তবে আমি এটুকু জানি কি ধরণের হবে ছবিগুলো’।
ব্ল্যাককে চিঠি পাঠানোর মাস চারেক পরে বাড়ীর রাস্তার নাপিতের কাছ থেকে জানলাম,ব্ল্যাক ইস্তাম্বুলে ফিরে এসেছে,তাকে বাসায় আসবার জন্যে আমন্ত্রন জানালাম।এটা জানাই ছিল,
দুজনার জীবনের গল্পের দুঃখ,কষ্টের যাত্রার কাহিনী,আরও কাছে নিয়ে আসবে,দুজনকে।

‘প্রতিটা ছবিতে সাজানো আছে একটা গল্প’, আমি বললাম।আমাদের পড়া বই এর কাহিনীর সৌন্দর্য তুলে ধরে ছবিগুলো।যেমন প্রেমিক প্রথম দেখায় একটা পিশাচ বা দানবকে হত্যা করছে-রুস্তমের মনের কান্না যখন সে জানতে পারলো,তার সামনে শুয়ে থাকা বিধ্বস্ত যোদ্ধা আর কেউ না,তার ছেলে-ভালবাসায় উন্মাদ মজনু যখন পাগলের মত ঘুরে বেড়াচ্ছে বাঘ,সিংহ,হায়েনা,হরিনদের দলের মাঝে-আলেকজান্দারের মানসিক অবস্থা যখন জঙ্গলে দেখলো উড়ে আসা এক বাজপাখীর হাতে তার পাখীর টুকরো টুকরো ছিন্ন ভিন্ন অবস্থাটা।

আমাদের চোখ যখন কাহিনীর পাতায় যেতে যেতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে,ছবিগুলো কল্পনার সাথে মিশে আমাদের মনে স্বস্তি নিয়ে আসে বেশ কিছুটা।ছবিগুলো কাহিনীতে এনে দেয় অজানা একটা রুপ,আবার এই ছবিগুলোর গল্প ছাড়া অস্তিত্বটাও একেবারে অসম্ভব।

‘অন্তত আমার তো তাই,মনে হয়’,কিছুটা হতাশার সাথে ব্ল্যাককে বললাম।বছর দুই আগে আমি যখন ভেনিসে,মহামান্য সুলতানের দূত হিসাবে,দেখার সূযোগ হয়েছিল ভেনিসের ওস্তাদ চারুশিল্পীর আঁকা ছবি।ছবিগুলো কোন বিশেষ দৃশ্য বা গল্প ছাড়াই,বুঝতে বেশ কষ্টই হচ্ছিল।তবে প্রাসাদের দেয়ালে ঝোলানো একটা ছবি দেখে আমি সত্যিই অভিভুত হয়ে গেলাম।

‘সবচেয়ে বড় কথা ছবিটা একজন পুরুষের,আমার মতই একজন বয়সের একজন মানুষ,যদিও একজন অবিশ্বাসী মানুষের।ছবিটা দেখে মনে হলো ওটা যেন আমারই ছবি,যদিও আমার সাথে ছবিটার কোন মিলই ছিল না।ঐ মুখটা ছিল গোল আর আমার সুন্দর থুতনির কোন অস্তিত্ব ছিল না,ওর চেহারায়।যদিও ছবিটার সাথে আমার চেহারার কোন সাদৃশ্য ছিল না,তবুও যতই দেখছিলাম মনে হচ্ছিল ছবিটা যেন আমারই’।

‘ভেনিসের ভদ্রলোক যার বাড়ীর ছবি্টা,তার কাছে জানলাম ছবিটা তার কোন এক বন্ধুর।বন্ধুর জীবনের বিস্তারিত সবকিছুই আছে,ছবিটাতেঃপেছনে একটা জানালা যেখান থেকে দেখা যায় খামার,ছোট্ট একটা গ্রাম,রংএর ছোঁয়ায় জেগে ওঠা একটা জঙ্গল।
আর পোট্রটের মানুষটার সামনে টেবিলে ঘড়ি,কটা বই।সময়,জীবন,কালিগ্রাফীর কলম,একটা ম্যাপ,কম্পাস,বাক্সের মধ্যে সোনার মোহর,এটা ওটা আরও অনেক কিছু।যদিও অনেক কিছুই খুব একটা স্পষ্ট না,তবুও বোঝা যাচ্ছিল ছবিতে জিন আর শয়তানের উপস্থিতি,লোকটার পাশে দাঁড়ানো তার সুন্দরী মেয়ে’।

‘এই ছবির বিশ্লেষনে যা কিছু তুলে ধরা,তাতে কি ফুটে উঠে?ছবিটা দেখে বোঝা গেল,ওটার আর কোন ভাষা নেই,ছবির ভাষাটাই বক্তব্যের ভাষা’।

‘ঐ ছবিটা আমার মনটাকে এতই নাড়া দিয়েছিল,আজও ভুলিনি সেটা।ভেনিসের ভদ্রলোকের প্রাসাদ থেকে বাসায় ফিরে শুধু ভেসে বেড়াচ্ছিল আমার মনের খাতায়,ঐ ছবিটা।আমারও ইচ্ছা হচ্ছিল,ঐ ভাবে একটা ছবিতে নিজেকে দেখার,কিন্ত জানি ওটা তো যথাযথ নয়,একমাত্র আমাদের সুলতানের ছবিটাই ওভাবে আঁকা যায়।তার ক্ষমতা প্রতিপত্তি মানানসই হবে এ ধরণের ছবি,যা তুলে ধরবে পৃথিবীর ক্ষমতাশালী মানুষটার চেহার।এ ভাবেই একটা বই এর চিন্তা আসলো আমার মাথায়।

‘ভেনিসের ওস্তাদ চারুশিল্পী এমন ভাবে ধনী লোকটার ছবি একেছে,তাকে চিনতে কারও কষ্ট হবে না,চেনা না হলেও অচেনা হাজারো মুখের মধ্যে তাকে খুঁজে নিতে একটুঁও কষ্ট হবে না কারও।ভেনিসের ওস্তাদের তুলির ছোঁয়া জানে মানুষের বিশেষত্বটা তুলে ধরতে,একজনের সাথে আরেকজনের পার্থক্যটা কোন না কোন ভাবে তুলে ধরা-শুধু পোষাকআষাক না,চেহারার বিশেষত্বেও।এটাই কারও, ‘পোট্রেট’, আঁকার বিশেষত্ব।

‘তোমার ছবি যদি এ ভাবে আঁকা হ্য়,কেউ ভুলতে পারবে না,সেটা কোনদিন,তোমার ছবি যদি একবার দেখে,তুমি হাজার যোজন দূরে থাকলেও,মনে হবে তার তুমি যেন পাশেই কোথাও।যারা তোমাকে জীবিত অবস্থায় দেখেনি কোনদিন,তোমার মৃত্যুর অনেক বছর পরেও মনে হবে তাদের,তুমি দাঁড়ানো সামনে’।

আমরা দুজনে চুপচাপ বেশ কিছুটা সময়,বরফে ঢাকা পৃথিবীর শৈত্যতা দুজনের মাঝে।বরফের ওপর ছিটকে পড়া আলোর ছটা তখন কিছুটা ঘরে,ঘরের জানালাটা রাস্তার দিকে তাকিয়ে,এই জানালাটা কোন সময়ে খোলা হয় না,তার ওপর ঝোলানো নতুন একটা পর্দা।

‘একজন চারুশিল্পীর কথা বলছি’,বললাম,এখানে আসতো সুলতানের বই এর জন্য,দুজনে আমরা সারারাত জেগে কাজ করেছি অনেকদিন।পাতার অলঙ্কার সাজানোর দক্ষতাটা তার অতুলনীয়।হতভাগা এলেগান্ট এফেন্দী এখান থেকে কাজ সেরে ফিরে যাওয়ার পর আর বাড়ী পৌঁছাতে পারে নি।আমার মনে হয় তাকে কেউ তাকে খুন করেছে,অভাগা অলঙ্কার শিল্পী আমার’।



আমি অর্হান

ব্ল্যাক জিজ্ঞাসা করলো, ‘সত্যি সত্যিই তাকে মেরে ফেলেছে’?
এই ব্ল্যাক হলো বেশ পাতলা,লম্বা,কেমন জানি ভঁয়ের চেহারার মানুষ।আমি তাদের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলাম,দোতালার ঘরে যেখানে বসে ওরা কথা বলছিল।আমার নানা বললো, ‘মনে হয় ওকে কেউ মেরে ফেলেছে’।তার পর আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘তুমি এখানে কি করছো’।
তার চোখের ভাষাটা এমন ছিল,আমি উঠে বসে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করলাম-কিন্ত নানা আমাকে জোর করে বসিয়ে দিল।
‘ব্ল্যাকের হাতে একটা চুমু দাও’,নানা বললো।
আমি ব্ল্যাকের হাতের পেছন দিকে একটা চুমু দিয়ে মাথায় ছুঁয়ে নিলাম,কোন গন্ধ ছিল না হাতে।
‘খুব ভাল ছেলে’,বলে ব্ল্যাক আমার গালে একটা চুমু দিল।‘এক দিন খুব সাহসী,সুপুরুষ হবে’।
‘এ হলো অর্হান,ছয় বছর বয়স।এর চেয়ে বড় আর একজন আছে,সেভকেত,তার বয়স সাত।ও খুবই জেদী ছেলে’।
‘আজকে,আমি আকসারায়ের পুরোনো রাস্তাটায় গিয়েছিলাম’,বললো ব্ল্যাক, ‘প্রচন্ড শীত,আর সারা রাস্তা বরফে ঢাকা,মনে হলো তবু বদলায়নি কিছুই’।
‘হায়,হায় কি বলছো,সবকিছুই বদলে গেছে,সব কিছুই তো ছুটে যাচ্ছে অবনতির দিকে’,
নানা বললো, ‘প্রচন্ড অবনতি’।আমার দিকে তাকিয়ে নানা বললো, ‘তোমার ভাই কোথায়’?
‘ও ওস্তাদের সাথে,বই বাঁধাই করছে’।
‘তা হলে তুমি এখানে বসে কি করছো’?
‘ওস্তাদ বললো, “চমৎকার কাজ হয়েছে তোমার কাজ,যেতে পার এখন”।
‘তা হলে তুমি খুঁজে খুঁজে এখানেই চলে এলে’,নানা বললো, ‘তোমার বড় ভাই এর সাথে আসা উচিত ছিল’,তারপর ব্ল্যাকের দিকে ঘুরে বললো, ‘আমার এক বন্ধু আছে যে বই বাঁধাই এর কাজ করে,ওরা দুভাই কোরান স্কুলের পরে ওখানে কাজ করে।বই বাঁধাই এর কাজ শিখছে’।
‘তুমি কি তোমার নানার মত ছবি আঁকতে পার’,জিজ্ঞাসা করলো ব্ল্যাক।
তাকে কোন উত্তর দেইনি,আমি।
‘ঠিক আছে তা হলে তুমি এখন যাও,আমাদের কিছু আলাপ আলোচনা আছে’,নানা বললো।

তামার পাত্র থেকে আগুনের তাপ বেশ গরম করে রাখছে ঘরটা,বেশ আরামদায়ক,
ছেড়ে যেতে ইচ্ছা হচ্ছিল না আমার,তবু উপায় কি।আঠা আর রং এর গন্ধে বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম,কফির গন্ধটাও আমার নাক এড়ায়নি।
‘নতুন ভাবে ছবি আঁকার পদ্ধতি মানুষের দেখার ভঙ্গীটাও বদলে দেয়’,নানা বলল, ‘এ কারণেই তারা ঐ চারূশিল্পীকে খুন করলো,যদিও সে ছবি আঁকতো সেই পুরোনো পদ্ধতিতে।
অবশ্য আমি একেবারে নিশ্চিত না যে তাকে খুন করা হয়েছে,হ্য়তো তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।ওরা একটা স্মরণিকা বের করছিল,আমাদের সুলতানের জীবনের কীর্তি সাজিয়ে,ওস্তাদ চারুশিল্পী ওসমানের নির্দেশমত।সব চারুশিল্পীরাই নিজেদের বাড়িতে কাজ করতো,আর ওস্তাদ ওসমান ব্যাস্ত থাকতো সুলতানের প্রাসাদের ছবি আঁকার ঘরটায়।আমি বলতে চাই পারলে তুমি ওখানে যেয়ে সবকিছু একটুঁ পর্যবেক্ষন করো,চারুশিল্পীদের ব্যাবহার আচার না হলে খুব শীঘ্রিই সবাই খুনাখুনি করে শেষ হয়ে যাবে।তারপর অন্যান্য চারুশিল্পীদের ষ্টুডিও তে যেও,ওস্তাদ ওসমানের অনেকদিন আগেই,‘লেইলেক(বক),
জেইতিন(জলপাই),কেলেবেক(প্রজাপতি্)‌…’,এ নামগুলো দেয়া।ওদের বাড়ীতে কাজকর্মগুলোও একটু পর্যবেক্ষন করে দেখো’।
নীচের তালায় না গিয়ে আমি ঘুরে অন্যদিকে চলে গেলাম পাশের ঘরের দেয়াল আলমারী থেকে একটা শব্দ আসছিল,যেখানে হারিইয়ে ঘুমিয়ে থাকে।ঢুকে দেখি হারিইয়ে নেই,শুধু আমার মা বসে আছে,একা।মা আমাকে দেখে কিছুটা বিব্রতই হলো।
‘কোথায় ছিলি এতক্ষন’,জিজ্ঞাসা করলো আমাকে।
কিন্ত মার তো জানাই আমি কোথায় ছিলাম,দেয়ালে আলমারিতে ছোট্ট একটা ছিদ্র যেখান থেকে পাশের আমার নানার কাজের ঘর,দরজা,এমনকি সিড়িটাও দেখা যায়, অবশ্য ঘরের
দরজাটা যদি খোলা থাকে।
‘আমি তো নানার ঘরে ছিলাম,কিন্ত মা তুমি এখানে কি করছো’,আমি জিজ্ঞাসা করলাম।
ধমক দিয়ে মা বললো, ‘তোকে আমি বলিনি,তোর নানার কাছে অনেক লোকজন আসে,তাকে বিরক্ত করিস না’,একটুঁ নীচু স্বরে মা বললো,যেন অন্য কারও কানে না পৌঁছায়।
বেশ মিষ্টি সুরে মা এবার জিজ্ঞাসা করলো, ‘কি দেখলি তুই’?
‘ওরা বসে বসে আলাপ আলোচনা করছিল,তবে ছবির রং এর নিয়ে না,নানা কথা বলছিল,
অন্য কিছু নিয়ে আর আরেকজন শুনছিল’।
‘কি ভাবে বসে ছিল,ওরা’?
আমি মেঝে বসে মাকে দেখালাম,তারপর মুখের ভঙ্গী করে দেখানো আরম্ভ করলাম,কোন সময় নানাকে অনুকরণ করে,আর কোন মাথা নেড়ে আসা অতিথির মত ভঙ্গী করে।
‘যা নীচে যা,আর হাইরিয়েকে ডেকে নিয়ে আয়’।

মা ছোট্ট একটা কাগজ হাতে নিয়ে লেখা আরম্ভ করলো।
‘মা,কি লিখছ,তুমি’?
‘কি বললাম তোকে,যা তাড়াতাড়ি হাইরিয়েকে ডেকে নিয়ে আয়’।
আমি রান্নাঘরে গিয়ে দেখি,আমার ভাই সেভকেত বসে আছে।হাইরিয়ে তাকে একটা থালায় মেহমানের জন্য রান্না করা পোলাও এর কিছুটা খেতেও দিয়েছে।
‘হাইরিয়ে,মা তোমাকে ডাকছে’।
‘দাঁড়া আমার খাওয়া শেষ হলে,তোকে এমন ধোলাই দেব,যে জীবনে কোনদিন ভুলবি না,তোর এই মিথ্যা কথার জন্যে’,আমার ভাই বললো।
হাইরিয়ে যাওয়ার পর পরই,সে পোলাও শেষ না করেই আমার দিকে ছুটে হাতটা ধরে মোচড় দেয়া আরম্ভ করলো।
‘সেভকেত,থাম থাম,প্রচন্ড ব্যাথা লাগছে,কিন্ত’।
‘আর কোনদিন এভাবে নিজের কাজ ছেড়ে দিয়ে আসবি’?
‘না,আমি আর কোনদিন কাজ না শেষ না করে আসবো না’।
‘কসম খা’।
‘কসম খা’।
‘কোরানের নাম ধরে কসম খা’।
‘...কোরানের নামে’।
আমার হাতটা তবুও সে ছেড়ে দেয়নি,বড় খাবারের টেবিলের কাছে জোর করে আমাকে হাঁটু গেড়ে আটকে রাখলো।এর মধ্যেই সে একহাত দিয়ে তার পোলাও খাওয়াও চালিয়ে যাচ্ছিল।
হাইরিয়ে ফিরে এসে আমার অবস্থা দেখে বললো,‘তোমার ভাইকে অত্যাচার করা থামাও এখনই,ডাকাত ছেলে’।হেজাব মাথায় সে বাইরে কোথাও যাচ্ছিল।
‘নিজের চরকায় তেল দাও,ক্রীতদাসী’,আমার ভাই সেভকেত বললো, ‘কোথায় যাচ্ছ এখন’?
‘লেবু কিনতে’,হাইরিয়ে বললো।
‘প্রচন্ড মিথ্যাবাদী,তুমি,ঝুড়িভঁরা লেবু আছে এখানে,আবার লেবু কিনতে যাচ্ছ’, আমার ভাই বললো।
সেভকেত আমার হাতটা একটুঁ ঢিলা দিলে আমি হাতটা ঝাড়া দিয়ে খুলে নিলাম।আমি তাকে লাথি মারা আরম্ভ করলাম,হাতে ছিল মোমবাতীদানী।কিন্ত আমার ভাই আমাকে মাটিতে জোর করে ধরে ধ্বসাধ্বসি করার সময় মোমবাতীদানী,আর তামার খাবার সাজানো থালাটা মাটিতে পড়ে গেল।
‘তোদের মত দুটা শয়তানকে আল্লাহ পাঠালো,আমার কাছেই’,মা বললো,গলার স্বরটা বেশ নীচু,যেন মেহমানের কানে কিছু না যায়।কি ভাবে মা,বারান্দা দিয়ে মেহমানের চোখ এড়িয়ে যে রান্না ঘরে এলো,বুঝতে পারলাম না।
আমাদের দুজনকে আলাদা করে মা বললো, ‘আর কতকাল তোরা দুজন এভাবে আমাকে লজ্জায় ফেলবি’?
‘অর্হান ওস্তাদের কাছে মিথ্যা কথা বলে চলে আসলো আজকে,আমাকে একলা সব কাজ সেরে আসতে হলো’,সেভকেতকে মার কাছে অভিযোগ করলো।
‘আর একটাও কথা বলবি,না’,মা সেভকেতকে একটা চড় মেরে বললো।
আমাকেও দিল হাল্কা একটা থাপ্পড়,সেভকেত তবুও কাঁদেনি।‘আমি বাবার কাছে যেতে চাই,বাবা আসলে হাসান চাচার পাথর লাগানো চাকুটা নিয়ে,আমি হাসান চাচার বাসায় চলে যাব’,আমার ভাই বলে যাচ্ছিল নিজে নিজেই।
‘একদম চুপ কর,একটাও কথা বলবি না আর’,হঠাৎ মা বেশ ক্ষেপে গেল।তারপর সেভকেতের হাতটা টেনে ধরে আঙ্গিনার অন্যদিকের ঘরটাতে নিয়ে গেল।আমিও গেলাম পেছনে,মা বললো, ‘দুজনে ঘরের ভেতরে ঢোক’।
আমি বললাম, ‘আমি তো কিছু করিনি’,তবু আর বাদানুবাদ না করে চুপচাপ ঘরের ভেতরে গেলাম।যদিও ভেতরটা একেবারে অন্ধকারে ছিল না,তবে বেদানা গাছের ফাঁকে হাল্কা একটু আলো ছাড়া আর কোন আলো ছিল না।দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে মা চলে গেল।
কিছুক্ষন পর আমি চীৎকার করা আরম্ভ করলাম, ‘মা দরজা খোল,খুব ঠান্ডা এখানে’।
‘ভীতু কাপুরুষ,চুপ কর’,সেভকেত বললো আমাকে।
কিছুক্ষন পর মা দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে বললো, ‘তোরা দুজনে এখন ঠিকমত ব্যাবহার করবি,অন্তত মেহমান না যাওয়া পর্যন্ত,রান্নাঘরের পাশে বসে থাক।ব্ল্যাক চলে না যাওয়া পর্যন্ত উপরে
যাবি না,ঠিক আছে’।
‘আমরা বসে বসে কি করবো,হারিইয়ে কোথায় গেল’?
‘সকলের ব্যাপারে নাক গলানো বন্ধ কর’,মা রেগে বললো।
আস্তাবল থেকে ঘোড়ার চীৎকারের শব্দ আসছিল,তবে ওটা আমার নানার ঘোড়ার শব্দ না,
ব্ল্যাকের।ঘোড়ার এত শব্দ করার তেমন কোন কারণ ছিল না,আবহাওয়াটা তো বেশ ভালই।আমার মা হাসছিল যেন আমাদের হাসি মুখ আনার জন্যে।দরজাটা খুলে বের হয়ে মা আস্তাবলের দরজাটা খুললো।
‘হাস,হাস’ আস্তাবলের ঘোড়াকে চুপ করতে বললো।
তারপর আমাদের নিয়ে গেল হারিয়েইর ময়লা,ইঁদুর ভরা রান্নাঘরে।আমাদের বসতে বলে,মা বলে দিল, ‘কোন কারণে উঠে বসার চেষ্টা করবি না,লোকে যেন না ভাবে তোমরা একেবারেই বখে গেছ’।

‘মা,আমি একটা কথা বলতে ভুলে গেছি,কারা যেন নানার বই এর একজন শিল্পীকে মেরে ফেলেছে’।



০০০০০০০০০০০
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৩:১৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×