somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষোভ-বিক্ষোভ এবং উন্মত্ত জনতা (ছোটগল্প)

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা দল বেধে রওনা দিলাম পুব-পাড়ার রাস্তা দিয়ে যখন একেবারে ভরদুপুর। সকালের নাস্তা খেয়ে না-খেয়ে আমরা নেমে পরেছি প্রতিবাদ জানানোর জন্য, তাই সকলের হাতে হাতে ইয়া মোটা মোটা গজারি গাছের লাঠি আর ভাঙ্গা লোহার পাইপ। কিছু চ্যাংড়া পোলাপান কোথা থেকে যেন হকি স্টিক আর আর কয়েকটা ককটেল জোগাড় করে ফেলেছে, মাত্র এক রাতের মধ্যে এসব কিভাবে পেল তা আমরা একবারও ভেবে দেখার সময় পাই নি। আমাদের দলটা বেশ বড়, এবং প্রতিমূহুর্তে আরো বড় হচ্ছে।

পথের মধ্যে মনির মিয়ার সাথে দেখা। এই লোক বড় ঝামেলা বাজ, একে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। কিন্তু কিছু পোলাপান তাকে দেখে দাঁড়িয়ে পরে, যদিও ওদের দৃষ্টি খুব একটা ভালো ঠেকে না, মনে হয় আজ কিছু একটা হবে। মনির মিয়ার সাথে প্রবীন কলিম মিয়ার কথা হয়।

- কই যাও মিয়ারা?
- কেন, মনির মিয়া, আমাগো নেতারে যে ফাসী দিছে জানো না?
- তাই নাকি? তো ফাসী যদি দিয়া থাকে তারে তো ফেরত আনতে পারবা না।
- আমরা প্রতিবাদ জানামু! এই জালেম সরকাররে হটাইতে হবে। যদি মুমিন মুসলমান হইয়া থাক তয় আমাদের সাথে আইসো।
- কিন্তু তোমরা প্রতিবাদ কেমনে করবা বইলা ঠিক করছ?
- যেমনেই করি, তুমি আসলে আসো, নাইলে সইরা খাড়াও, আমাগো দেরী করাইয়া দিবা না।
- তোমাগো দেইখা তো মনে হয় তোমরা প্রতিবাদ না, ডাকাতি করতে যাইতাছো।

নাহ, মনির মিয়ার কথা সহ্য হচ্ছে না, চ্যাংড়া পোলাপানগুলো ক্ষেপে উঠছে বোঝা যায়। হঠাৎ দু-তিনজন লাঠি হাতে মনির মিয়ার উপর চড়াও হয়। না, শালাকে তাড়ানো র জন্য নয়, তাহলে আগেই তাড়িয়ে দেয়া যেত। মুহুর্তেই আমরা দেখলাম মনির মিয়ার মাথা থেতলে যাচ্ছে, জবাই করা মোরগের মত বার বার রক্ত ছিটছে, আরো দু-চারটা আঘাতেই মাথার ঘিলু বার হয়ে যায়। মনির মিয়ার দিন শেষ!


***
ক্ষেত-খামাড় পেরিয়ে মেইন রোডে উঠে গেছি, আমাদের লক্ষ্য হল সরকার দলের অফিসটা। যা ভেবেছি তাই, অফিস তালাবদ্ধ। কিন্তু আমরা তো এসেছি প্রতিবাদ করতে, তাই পিছিয়ে যাব কেন? আমরা তালা ভেঙ্গে ফেললাম, ভিতরে ডুকে আসবাব-পত্র, কম্পিউটার, সরকারি নেতার ছবি, পোস্টার, জাতীয় পতাকাসব ছুড়ে ফেললাম আর পেট্রল ডেলে দিলাম। পাশাপাশি খেয়াল রাখলাম মূল্যবান কিছু মেলে কিনা। যেমন বিদেশী দেয়াল ঘড়িটা কালু তার ঝোলার ভিতর ডুকালো, সনু মিয়া একটা চেয়ার ঘাড়ে করে নিয়ে দৌড় দিল, সামান্য কিছু টাকা আর বিড়ি পাওয়া গেছে, সেটা নিয়ে কাড়াকাড়ি চলল, এরকম আরো কত জনে কত কি সাইড করে ফেলল। তারপর আমরা আগুন জ্বালিয়ে দিলাম।

কিন্তু প্রতিবাদ কর্মসূচী থেকে আমাদের খুব একটা লাভ হল না, আমাদের আরো কিছু দরকার ছিল। কি করা যায় ভাবতে ভাবতে চোখ গেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটা দিকে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র সরকার বছর দুই আগে উদ্বোধন করে গেছে। এখানে কিছু না কিছু পাওয়া যাবেই। যেই ভাবা সেই কাজ, আমরা "নারায়ে তাকবীর" বলে রওনা দিলাম।


***
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতিবাদ কর্মসূচীটা অত সহজ ছিল না। আমাদের সব ককটেল ফুরিয়ে তারপর ডুকতে পারলাম। কিন্তু একবার যখন ডুকেছি তখন আর আমাদের পায় কে? আমরা আজ যে প্রতিবাদ জানাবো তা বাংলার ইতিহাসে লেখা থাকবে, সরকার ভয় পেয়ে একেবারে হেগে দেবে।

বিজ্ঞান আশির্বাদ না, অভিশাপ। আমরা সরকারের দেয়া এই অভিশাপকে আস্ত রাখব না। আমরা লাঠি দিয়ে ভবনের প্রতিটা জানলা আর দরজা ভেঙ্গে ফেলি, সব কর্মচারীকে মারধোর করে মাথা ফাটিয়ে ভাগিয়ে দেই। ভিতরের যত মেশিন পত্র ভেঙ্গে ফেলি আর আগুন দেই। মুহুর্তেই আমাদের গ্রাম বিদ্যুতের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে পরে।

কিন্তু শালা সরকারী কর্মচারীগুলো আরেক কাঠি সরেস। কোথা থেকে যেন ওরা লাঠি-সোটা নিয়ে আমাদের উপর হামলে পরার চেষ্টা করে, কাছেই ওদের কোয়ার্টার কি না! কিন্তু শালারা আমাদের আসল রূপ তো এখনো দেখেনি। আমরা দুনিয়াবি কাউকে ভয় করি না, জানে না ওরা সেটা?

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আঙ্গিনায়, এবং পরে বাইরে আমাদের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। টিকতে না পেরে বাছাধনেরা পালিয়ে যায়। কিন্তু আমরা কি অত সহজে ছেড়ে দেবার পাত্র? আমরা এর পর ওদের কোয়ার্টারে হামলা করি। ওখানে ওরা বাল-বাচ্চা নিয়েই থাকে।

প্রথমে একটা বাড়িতেই ডুকতেই এক শালার বউকে পেয়ে যাই। সরকারী কর্মচারীর বউয়েরা বড় খুবসুরাৎ হয়। এই মেয়েটাকে পেয়ে যেন আমরা আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম। সাথে সাথে কয়েকটা চ্যাংড়া যুবক ওর উপর হামলে পরে। তা পরুক, এখনই তো ওদের ফুর্তি করার দিন! কিন্তু ওই ম*টাও কম যায় না, বটি নিয়ে হুমকি দেয়। কিন্তু কতক্ষণ আর তেজ ধরে রাখবে? আমাদের শক্তির কাছে পরাস্ত হতেই হয়, কারণ মেয়েদের স্থান তো পুরুষের নিচে!

এই অবসরে আমরা অন্য বাড়িগুলোতেও হামলা চালাই। বেশিরভাগই ভিতর থেকে দরজা লাগানো। আবার কেউবা সময় পেয়ে চম্পট দিয়েছে। আমরা যাদের যাদের পাই, তাদের বউকে ধরে নিয়ে আসি, আর দশ-বারো বছরের মেয়ে পেলে তাদেরও ধরে নিয়ে আসি। আমাদের প্রতিবাদ বাংলার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। হলফ করে বলতে পারি এমন প্রতিবাদ আর কখনো হয়নি।

এর মধ্যে কয়েকজন সিন্ধুক ভেঙ্গে টাকা নিয়ে চম্পট দিচ্ছে। তা দিক, সরকারের তাকা তো জনগণেরই। সাথে গয়না, জামা-কাপড়, রেডিও, মোবাইল, বহনযোগ্য আসবাব, ধান-চাউল, মাংসের পোটলা, ইত্যাদি নেয়া হয়ে গেছে।

এদিকে নারী মাংসের স্বাদ পেয়ে যুবকেরা সব উন্মাদ হয়ে গেছে। দিশেহারা হয়ে ওরা দেখলাম গ্রামের এনজিও'র দিকে ছুটে গেল, ওইখানকার ম*গুলা বড় অনেক স্বাস্থ্যবতী। দেখলাম তাদের মধ্যে তিন বিয়ে করা রহিমের পোলাটাও আছে।

আর তখনি আমরা লিডারের দেখা পাই। ইয়া বড় সাদা-শুভ্র দাড়ি লিডারের মাথায় ছাতা ধরে আছে আমাদের আসলাম। আমাদের দেখে লিডার সে এক মায়াবী হাসি দিয়ে বলে, - থামলা কেন মিয়ারা? চালাইয়া যাও। খালি পুলিশের ঝামেলা হইলে আমি আছি। তোমরা নিশ্চিন্তো থাহো।


***
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমেছে। আজ গ্রামখানা বিদ্যুতের অভিশাপ থেকে মুক্ত। কাছে কোথাও আজকের চ্যাংড়াগুলো তালের রস খেয়ে মাতলামি করছে। করুক, এটাই তো ওদের ফুর্তি করার সময়য়। আজকে ওরা না থাকলে কিছুই করা যেত না। আমরা আকাশের দিকে তাকিয়ে অসংখ্য তারার কারুকার্য দেখি। কি সুন্দর! এই তারার মাঝখানে যদি একবার আমাদের নেতার মুখখানা দেখতে পারতাম, তাহলে জীবনখানা স্বার্থক হতে পারত। এ সময় বেরসিক পিচ্চিটা এসে কারেন্ট না থাকায় পড়তে পারছে বলে ঘ্যান ঘ্যান শুরু করল, মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, তাই দিলাম একটা চড়।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×