somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেয়র মেয়র !!

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়র সাহেব অনেক ক্ষণ ধরে পত্রিকার রিপোর্টটা দেখলেন। দেখতে দেখতে তার ভ্রু কুচকে গেল। তারপর এক সময় গলা শুকিয়ে এল। এক গ্লাস পানি খেলেন নিলেন ঢকঢক করে। তারপর আবার রিপোর্টে মনোযোগ দিলেন। এক সময় সেক্রেটারীকে ঢাকলেন।

সেক্রেটারী এলে তাকে পত্রিকা দেখিয়ে বললেন, - এইসব কি দেখছি?

সেক্রেটারী দেখে পরে হেসে বলল, - এইটা আর নতুন কি স্যার? একটু বৃষ্টি হলে রাস্তায় পানি জমেই। এমনি-ই চলে যাবে। এমন অহরহই হয়।

-কিন্তু তাই বলে এইভাবে?

সেক্রেটারী আরেকবার রিপোর্টটা দেখল। পরে আগের মতই হাসি মুখে বলে, - মিডিয়া তো একটু বাড়িয়েই বলে স্যার। আসলে দেখবেন ঘটনা অত গুরুতর না।

মেয়র সাহেব আরেকবার রিপোর্টের সাথে ছবিটা দেখলেন। শহরের একটা ব্যস্ত সড়ক ঘোলা পানিতে পুরাই টুইটম্বুর! গাড়ির চাকা প্রায় পুরোটাই ডুবে আছে। পথচারীরা ফুটপাতের উপর জবুথবু হয়ে আছে, কেউ হাটু পানি ডিঙ্গিয়ে বাসে চড়ার সাহস করছে না।



চেয়ারে হেলান দিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলেন মেয়র। শেষে ঠিক করলেন, - আজকে নগর পরিদর্শনে বের হব।



***
নগর পরিদর্শনে বের হয়ে মেয়র বড়ই হতাশ হলেন। রাজপথ খটখটে শুকনো, কোথাও একটুও পানি জমে নেই। পিচডালা পথ, ফুটপাত, দোকান-পাট, এমনকি রাস্তার পাশের ড্রেন সব চকচক করছে। যানজট প্রায় নেই, এক-আধটা গাড়ি যায় শুধু। এইসব দেখে পত্রিকার ছবিখানা তার কাছে ভীনগ্রহের মনে হয়।

এ সময় কিছু রিপোর্টার এসে ভীড় করে। পিছনে বিভিন্ন চ্যানেলের ক্যামেরাম্যান তার মুখের দিকে তাক করতে মরিয়া। সবাই হইচই করে জানতে চায় শহরের এমন জলাবদ্ধতা আর পয়ঃনিস্কানের বেহাল দশায় তার অনুভূতি কি।

মেয়র সাহেব এমনিতেই কনফিউজড্‌ বলে প্রথমে ভেবে পান না কি বলবেন। হুট করেই বলে বসেন, - শহরে তো জলাবদ্ধতা নেই। বলেই বুঝতে পারেন ভুল করেছেন। তাই একটু সুর পাল্টে বললেন, - ইদানিং অতিবৃষ্টির কারণে কোথাও কোথাও একটু পানি জমছে, তবে সেটা সাময়িক। বৃষ্টি থেমে গেলেই পানি চলে যাচ্ছে। আর এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আপনি দেখেন বেশিরভাগ জায়গায় কিন্তু পানি জমছে না। আগামীতে কোথাও পানি জমে থাকবে না, আমি কথা দিচ্ছি।

সেদিন মেয়রের কথা কোট করে পত্রিকায় দুটো হেডিং এল। একটা হল “শহরে কোন জলাবদ্ধতা নেই” আর “পানি জমে থাকাটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা”। রিপোর্টগুলো পুরোটা পড়ে তার তার মাথা গরম হয়ে গেল, তার ইচ্ছে হল পত্রিকাগুলো ছিড়ে কুটি কুটি করেন। কিন্তু বয়স হয়েছে তো, আগের মত জোর নেই হাতে, তাই আর পারলেন না। তখন মাথা ঠান্ডা করতে ফেসবুকে ডু মারলেন। ও, মেয়র সাহেব আবার ফেসবুকে খুব এক্টিভ কি না!

কিন্তু লগ-ইন করতেই চোখের সামনে পরল নগরীর একটা গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ছবি, আজ যেখানে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন সেখান থেকে মাত্র আধ কিলোমিটার দূরে ওই জায়গাটা। রাস্তায় প্রায় হাটু পানি! রিক্সার ইয়া বড় চাকা পানিতে প্রায় অর্ধেক ডুবে ফোয়াড়া তুলেছে। ক্যাপশনে লেখা, - মেয়র সাহেব, জায়গাটা চিনতে পারছেন তো? এইটা কিন্তু বিচ্ছিন্ন ঘটনা না।

হঠাৎ আতকে উঠে মেয়র তিনি আবার সেক্রেটারীকে ডাকলেন। কিন্তু সেক্রেটারী কোন পাত্তাই দিল না। উলটো মেয়রকে জ্ঞান ঝাড়ল, -আপনি স্যার ফেসবুকের এইসব ফটো বিশ্বাস করেন? আরে এগুলা তো সব ফটোশপ। সরকারের তো শ্ত্রুর অভাব নাই, ওরাই এইসব করে ভাবমূর্তি নষ্ট করে বুঝলেন। এইসবে কান দেবেন না।

-কিন্তু ফটোশপে কি এটাও সম্ভব?

-কেন সম্ভব না? এমনকি ভিডিও বানানোও সম্ভব। বিদেশী সিনেমা কেম্নে বানায় দেখেন না? নেটে খুজলেই পাবেন। আমার তো মনে হয় টিভিতে যেইসব নিউজ দেখায় প্রতিদিন সেগুলাও ফটোশপ!!

সেক্রেটারীর কথা শুনে মেয়র সাহেব সেদিন অনেক ক্ষণ নেট ঘেটে দেখলেন কিভাবে ভিডিও এডিটিং করে, ভিএফএক্স, সিজিয়াই ব্যবহার করে কি দৃশ্যকে কি বানিয়ে ফেলা হচ্ছে! দেখতে দেখতে তার মাথা ঘুরতে থাকল। তখন তিনি চোখ বন্ধ করে শুয়ে ঘুমিয়ে পরলেন।

ঘুমের মধ্যে তিনি ভিডিও এডিটিং-এর স্বপ্ন দেখলেন। তিনি দেখলেন নগরীর এক ব্যস্ত রাস্তার পাশে কোন এক নিউজ চ্যানেলের লোকেরা ভিডিও শুট করছে। তারা প্রথমে বিশাল বড় একটা সবুজ পর্দা টানাতে শুরু করল। টানাতে গিয়ে তাদের কি যে কষ্ট হল দেখে মেয়র সাহেবের খুব কষ্ট লাগল। কাজটা শেষ হলে পরে ক্যামেরা বসানো শুরু হল। আগের মতই অনেক কসরতের পর বিশেষ এঙ্গেলে ফোকাস করা হল। তারপর মাইক্রোফোন হাতে এক রিপোর্টার ক্যামরার সামনে মুখ করে দাড়ালো, তার প্যান্ট প্রায় হাটু পর্যন্ত গুটানো এবং একটু একটু ভেজা চিহ্ন নজরে পরে। কেউ একজন উচু স্বরে বলল, - অ্যাকশন! সাথে সাথে রিপোর্টার বলতে শুরু করল। এক সময় শুটিং শেষ হলে পরে সেই ভিডিও চলে গেল এক্সপার্টের কাছে। সেখানে সফটওয়্যার দিয়ে সবুজ ব্যাকগ্রাউন্ডের জাগায় পানি বসানো শুরু করল। মুহুর্তেই দেখা গেল রিপোর্টারের পা অনেকখানি পানির নিচে চলে গেছে। পানির সাথে টলমলে এফেক্টও দেয়া হল। দুই একটা গাড়ি যাওয়ার সময় তাদের চাকার পাশে ফোয়াড়ার এফেক্ট দেয়া হল। এত নিখুত কাজ যে ঘুমের মধ্যেও এডিট করছে যেই ছেলেটা তার প্রশংসায় চোখে পানি চলে এল। তার মনে হল এই ছেলেটার মত একটা সন্তান যদি তার থাকত!!



***
পরদিন মেয়র সাহেবকে খুব চাঙ্গা হয়ে ঘুম থেকে উঠলেন। তিনি এইবার বুঝে গেছেন যে পত্রিকায় প্রকাশ করা সব ছবি, নিউজ চ্যানেলের ফুটেজ সব ভুয়া! সব ষড়যন্ত্র!! তিনি এইসব রুখে দাড়াবেন। ভাবতেই তার মধ্যে একটা জোস এসে গেল। এখন আর সাংবাদিকদের সামনে আমতা আমতা করবেন না। সুতরাং, সেক্রেটারীকে জানিয়ে দিলেন আজও তিনি নগর পরিদর্শনে বের হবেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি বেড়িয়ে পরলেন নগরীর গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্টের উদ্দেশ্যে। রাস্তা তখন একেবারেই পরিস্কার, এক্টুও ফাটল কিংবা পানির চিহ্ন নেই।

যথারীতি রিপোর্টাররা মাইক্রোফোন হাতে ভীড় করা শুরু করল। তিনিও প্রস্তুত, আজ একটা এস্পার-উস্পার হয়েই যাবে। কিন্তু তখনই, ঠিক তখনই অদূরে শহুরে দালানের সারির দিকে তার চোখ পরল। তিনি কিছুক্ষণ অবাক চোখে চেয়ে থাকলেন। সাংবাদিকেরা যখন জানতে চাইল তার অনুভূতি কি, তিনি শুন্তেই পেলেন না। হিন্দি সিরিয়ালের স্লো মোশনের মত তিনি চেয়েই থাকলেন। তার কেবলই মনে হল কোথায় যেন কি ঠিক নেই।

তারপর এক রকম ঘোরের মধ্যেই মেয়র সাহেব সেদিকে হাটা দিলেন। সাথে সাথে সেক্রেটারী আর চ্যালা-চামুন্ড্যারা আঁতকে উঠল। তারা বলতে থাকল,

-স্যার, ওইদিকে যাবেন না...

-ওইদিকে কিছু নেই....

-ওইদিকে সাপ আছে....

-জঙ্গিরা হামলা করবে....

-ওইদিকে স্বাধীনতা-বিরোধী শক্তি বসবাস করে....

-ওইদিকে বিরোধী দলের কার্যালয়.....

-ওইখানে ভীনদেশী প্রেতাত্মা আছে....

-ওইদিকে রেইনবো থাকে....

মেয়র কারো কথাই শুনলেন না। তিনি যেতে থাকলেন। যেতে যেত দালানগুলো আরো অস্পষ্ট হল। এমন বৈপরীত্বের কারণ তিনি বুঝলেন না। তিনি আরো এগোতে থাকলেন। একেবারে কাছে গেলে ব্যাপারটা ভালোমত পরিস্কার হয়।

তিনি দেখেন এক মস্তবড় সাদা পর্দা, যেন আকাশ ছুই ছুই। সেই পর্দার উপর কোথা থেকে যেন প্রজেক্টর দিয়ে আলো ফেলা হয়েছে। দূর থেকে মনে হয় দালানের সারি, আসলে এগুলো সব ভুয়া, সব প্রজেক্টরের কারসাজি। জিনিসটাকে আরো বাস্তব আর জীবন্ত করার জন্য হালকা ধোয়াও ছড়ানো হয়েছে। খুবই নিখুত হাতের কাজ।

আর সেই বিপুল আকৃতির পর্দার আড়ালে ঢাকা পরেছে পিছনের সবকিছু। অদ্ভূত এই আবিষ্কারে মেয়র সাহেব এইবার তৃপ্তির হাসি হাসলেন।

পিছনে মেয়রের সেক্রেটারী, তোষামোদ-কারী আর সাংবাদিকেরা দেখল মেয়র সাহেব বিশাল পর্দার খানিকটা সরিয়ে ওইপাশে হারিয়ে গেলেন। মেয়র সাহেব কোথায় চললেন?



সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৫
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×