আমাদের সমাজের বড়ই করুণ অবস্থা। সব অদ্ভুত অদ্ভুত নিয়ম আমরা নিজ হাতে তৈরি করছি এবং অন্যকে পিষে মারছি। যাদের হাতে নিয়মের তৈরি তারাই আবার এসবের কোনো তোয়াক্কা করে না। আমাদের নেত্রিত্ব দানকারীদের ওপর কখনও ঝায়-ঝামেলা, বিপদ-আপদ আসে না। যতো ধরণের বিপদ আপদ সব গরীব, অসহায়, নিঃস্বদের ওপর এসে পড়ে। আজ অবদি কেউ দেখাতে পারবে কখনো উঁচু তলার সাহেবের কোনো ক্ষতি হয়েছে। অথচ তাদের কারণে কী পরিমান খেটে খাওয়া মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছে আমার সাধ্য নেই তার হিসেব কষি।
দেশ বিদেশ থেকে অসহায়দের জন্য প্রচুর অর্থ সহায়তা আসে। জানিনা আমাদের গরীব পরিবারের হাতে তার কতো অংশ পৌঁছায়। উন্নতির মহাসড়কে আমাদের দেশ ভেসে যাচ্ছে, এসব আমাদের মতো নিম্ন পরিবারগুলো জানতে চায় না, দেখতেও চায় না। তারা চায় দু’মুঠো খেয়ে-পরে যেন বাঁচতে পারি। এতো এতো সম্পাদের মালিকও তারা হতে চায় না। অনেক কথাই বলতে মন চাই কিন্তু বলতে পারি না। আমাদের মুখে তালা এঁটে দেয়া হয়েছে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
নির্বাচনের আগে অনেকেই ইশতেহারে বলছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। এখন পুরোপুরি দেশে গণতন্ত্র পতিষ্ঠিত তাই মুখ খুলে কোনো কথা বলতে পারি না। সাধারণ একটা পত্রিকায় কাজ করি। সত্য কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা সব পত্রিকার কর্মকর্তারা বলে কিন্তু কয়জন সেটা পারে কে জানে। আজকাল মানুষেরা সাংবাদিকদের ওপর খুব চটে আছে। হাতে কিছু বলতে না পারলেও মুখে কেউ ছাড়ে না আমাদের। কিছু বলতে গেলে মনেও জোড় পাই না। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জেল-জুলুম হলে কেউ মিটিং মিছিল করবে না। জেলেই পঁচে মরতে হবে। কেউ জানবেও না একজন গরীবের বন্ধু এই করুণ অবস্থা। আমার মতো অনেকেই এ কারণে মুখ খুলেন না। কারণ তাদের কিছু হলে কাউকে পাশে যাবে না। আর পেলেও হবেটা কী? যে মুখ খুলবে তার পক্ষে তার পরিনামও একই রকম হবে।
আমরা বরবর যুগের কথা বলি কিন্তু আমরা কি তার চেয়েও বেশি বরবর না? আমি অবসর পেলেই ঢাকার অলিগলিতে ঘুরে বেড়ায়, বস্তিগুলোতে যাই। দেখি আমার মতো গরীব, অসহায়দের অবস্থা। কতো কঠিন ও করুণ জীবন যাপন করছে তারা। কতোবার এসব অসহায় মানুষের চোখে পানি দেখে আমি মুষড়ে পড়েছি তা নিজেও জানিনা। যে কোনো দিন তাদের অবস্থা দেখার উদ্দেশ্যে বের হয়েছি কারও না কারও চোখে জল আমার হৃদয়ে কঠিন আঘাত করেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলার মতো একজন মানুষও নেই। আমি যেয়ে তাদের সঙ্গে নিজের পরিচয় দিয়ে কথা বলার সময়ও অনেকের চোখে পানি গড়াতে দেখেছি। অনেকেই কেঁদেছে একজন সাংবাদিক এই প্রথম তাদের দেখতে যাওয়ার গেল। অবার অনেকে কথাই বলতে চায় না। হয়ত এটা তাদের মনের কষ্টের কারণ...।
আমি এসব গরীবদের বলি যে, আমি আপনাদের মতোই একজন গরীব ঘরের সন্তান। শুধু পোশাকের ভিন্নতা ছাড়া আর কোনো ভিন্নতা নেই আমাদের। যখন কোনো বস্তি থেকে ফিরেছি, অনেক কেঁদেছি। কতো মলিন, শীর্ণ শরীর বিশিষ্ট্য মহিলারা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে, তাদের কাপড়ের ময়লা আমার পোশাক নষ্ট করে ফেলেছে কিন্তু কখনও খারাপ লাগেনি। আরো গর্ববোধ হয় এতে আমার।
অনেকে ভাবছেন একটু ভাল কাজ করে কেন ঢোল পিটিয়ে বেড়াচ্ছি? হ্যাঁ ঢোল পিটিয়ে বেড়াচ্ছি। কারণ আমি তাদের কাছে গিয়ে যতোটুুকু বুঝেছি এভাবে তাদের কাছে কেউ কখনও যায় না। প্রিয় পাঠক, আমার ভাই! তুমিও সুযোগ হলে একবার যেও তাদের খোঁজ নিতে। দেখো তোমার সঙ্গে তারা কেমন ব্যবহার করে। তোমার দিল যদি শক্তও হয় চোখে পানি চলে আসবে। আমার চোখে কখনও পানি আসে না। কিন্তু তাদের কাছ থেকে ফিরে আসার সময় আমি চোখের পানি লুকোতে পারি না।
মানবতা কাকে বলে? কিসের নাম মানবতা? সারাদেশে আজ জুলুম, অত্যাচার, অনাচারে ভরে গেছে। সমসাময়িক কিছু ঘটনা বিশ্লেষণ করলে তা স্পষ্ট বুঝে আসবে। কিন্তু এখন আর এসব আলোচনা না করলেও হয়। যথেষ্ঠ হয়েছে। দেশের দিকে চোখ তুলে তাকালে যদি নূন্যতম আকল কারও থাকে তার স্পষ্ট বুঝে আসবে। আমরা কোন দেশে বাস করছি। সোনার বাংলার মলিন চেহারা খুব কাঁদায় আমাকে। আমার মতো হাজারও মানুষকে, যারা ভালবাসে জীর্ণ শীর্ণ মলিন এই বাংলাকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৮