somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রেন সফর

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ট্রেনে চড়তে খুব ভাল লাগে আমার। মনে হয় লম্বা একটা সাপের পেটের ভেতর বসে আছি। ট্রেনের আবিস্কার হয়ত সাপ থেকেই হয়েছে। সারাধণ পরিবারের মেয়ে, অতো পড়াশুনো নেই, আসলটা বলতে পারবো না। আমাদের মতো অনপড়রা শুধু ধারণা করে, ধারণা থেকেই অনেককিছু বলে ফেলে। কখনও তাদের ধারণা সত্যি হয়, কখনও হয় না। আমি জানিনা আমার ধারণা সত্যি নাকি মিথ্যে।
ট্রেনের একটা কেবিনে চার জন থাকার কথা, এই মুহূর্তে শুধু আমি আছি। ঘুম পাচ্ছে খুব। কিন্তু ভয় লাগে যদি ব্যাগ লুট হয়ে যায়। সেবার কক্সবাজার যাওয়ার সময় আমার সমস্তকিছু চুরি গেল। খুব বিপাকে পড়েছিলাম। পুরো আনন্দ মাটি হল। এবার আমি ঝগড়া করে বেরিয়েছি, কোথায় যাব, কী করবো কিছুই জানিনা। টিকিট না কেটেই উঠে পড়েছি। একটা কপট বুদ্ধি বার বার মাথায় চাপছে। টিটি যদি অবিবাহিত হয় তার ঘারে ঝুলে পড়বো, বিবাহিত হলেও প্রেমের অভিনয় করা যাবে। তাতে ভাড়ার ঝামেলা দিব্যি চুকে যাবে। আমার বুদ্ধি কতটুকু কাজে দিবে বলতে পারি না। যদি কাজে লাগে ভাল হবে। বাংলাদেশটা ঘুরে দেখার ভাল একটা সুযোগ এই মুহূর্তে আমার হাতের নাগালে। গলা সুকিয়ে আসছে। কাছে পানি নেই। খোলা জানালা দিয়ে ধূসর মাঠ, গাছপালা, সবুজ ছড়ানো ধান ক্ষেত চোখে পড়ছে। কোথাও রাস্তার পাশে পড়ন্ত বিকেলে মেয়েছেলেরা কানামাছি, গল্লাছুট, আরো নানান ধরণের গ্রাম্য খেলায় মেতেছে। এসব দেখতে দেখতে অনেকটা পথ কেটে গেল। এক সময় সন্ধ্যা নেমে এল। গরু, ছাগল, ভ্যাড়া ইত্যাদি জন্তু বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছে। গালা বাড়িয়ে উড়ে যাচ্ছে সাদা বক। ক্ষুদ্র পাখিরা দল বেঁধে ফিরছে নীড়ে। পানির পিপাসা তৃষ্ণা একসঙ্গে দুটোই পেলে আমার। এক বার ভাবলাম নেমে পড়ব সামনের স্টিশনে। আর কত দূর স্টিশনটা? কেউ একজনের কাছে শোনা দরকার। কার কাছে শুনি, কেউ তো নেই পাশে।
পরনে সাদা পোশাক, বেশ লম্বা, সুঠাম দেহ, হাতে পানির একটা বোতল, একে আমি চিনি, নাম জানিনা তবে তার একটা নাম আমার জানা- টিটি। টিটি নামে আমার খুব হাসি পায়। নিজের অজান্তেই হেসে ফেলি, এখন হাসবার সময় নয়, তবু হাসি পাচ্ছে খুব। হাসিটা অনেক কষ্টে ঠোঁটের তলে চাপা দিই। আপনার টিকেট দিন। ভদ্রতার ছাপ পুরো বাক্যটি জুড়ে। আমি বোতলটির দিকে হাত বাড়াই। টিটি বোতল সরিয়ে নেয়। আজব তো পানির তৃষ্ণা পেয়েছে খুব, একটু পানি দিন না। এতে পানি নেই, টিটির স্পষ্ট উত্তর। তো কী আছে ওতে? দিন, আমি পান করব। না বরং আপনি একটু অপেক্ষা করুন, আমি পানি নিয়ে আসছি। আমি ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করি নি, টিটি আমার জন্য পানির জোগাড় করতে ছুটে যাবে। এটা হয়ত আমার রুপের গুণে। যাইহোক বোতলটা রেখে গেল টিটি। তৃষ্ণায় কাতর আমি বাংলা মদ পান করে ফেললাম ডকঢক করে। টিটি এল মিনিট দশেক পর। তখন আমার প্রচন্ড মাথা ঘুরছে। পানির পিপাসা নিবারণ হয়েছে অনেকটা। খুব শক্ত করে ধরেছি জানালার শিক। মনে হচ্ছে পড়ে যাব। আমার চুলগুলো এলোমেলো, বাড়ি থেকে আসবার সময় একটুও পরিপাটি হতে পারিনি। এলো চুলে আমাকে হয়ত পাগল পাগল লাগছে। টিটি অমন করে কী দেখছে আমার দিকে চেয়ে? সে কী ভাবছে কে জানে। মেয়েদের দেখে তো ছেলেরা কতকিছুই না ভাবে, সব কি আর আমল দিতে হয়?? না, হয় না। ছেলেরা কী এমন পাগল হওয়ার জন্য নিশা করে? হয়তবা করতেও পারে। ছেলেদের যদি আমাদের মতো বড় চুল থাকতো, নিশ্চয় খুব বাজে তেখাতে, যেমন আমাকে লাগছে। আমার পাশে একটা দেহের অনুভব হল। টিটি চলে গেছে। যাক বাবা বাঁচা গেল। হতচ্ছাড়া বেটা দূর হয়েছে এটাই অনেক। আপনার নাম কী?? কে এই লোকটা? যে আমার নাম জিজ্ঞেস করছে। এখন নাম জিজ্ঞস করছে, একটু পর হয়ত শুনবে বিবাহিত না অবিবাহিত। পুরুষদের কাছে হয়ত নারীদের এটা একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার কণ্ঠ বদলে গেছে। অনেচা লাগছে নিজের কাছেই। এই অচেনা কণ্ঠ দিয়েই বললাম, দিতা। দিতা আমার নাম। এই অদ্ভুত নামটা রেখেছিল আমার নানু। উনি মারা গেছেন আজ ন'দিন। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি। ট্রেন চলছে না থেমে আছে বুঝতে পারছি না। লোকটা আমার পাশে এখনো বসে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:১৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×