শিরনামে মুসলিম ব্যবহার করলাম কেন! এজন্য অনেকেই আমার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করবেন। বলবেন, এখানে মানবতা নেই আছে ইসলাম ও মুসলিম প্রীতি।
অনেকে আমাকে চৌদ্দশ বছর আগের ইতিহাস ভাল করে চোখ খুলে অধ্যায়ন করতে বলবেন। তাদের মতে মুসলিমদের মধ্যে ভালোর কোনা বালাই নেই। এরা হল অশিক্ষিত, বর্বর। উচ্চ শিক্ষিত কাউকে নামাজ পড়তে দেখলে বলবেন, হায় হায়, আপনি এটা কী করছেন! আপনাকে ভেবেছিলাম ভাল মানুষ। কিন্তু আপনি দেখছি নামাজ পড়েন। একটা শ্রেণি তো ভাল এবং মন্দের পার্থক্য এটাই ধরে নিয়েছে।
ব্লগে অনেক ধরণের মানুষ আছে। ব্লগটা সবার। কিন্তু একটা শ্রেণির মনোভাব এমন যে, ব্লগটা যেন তার পৈতৃক সম্পদ। এখানে আল্লাহ রাসুলকে নিয়ে কিছু বলা যাবে না। আল্লাহ রাসুলকে নিয়ে বলতে আসলে যুক্তিবিচারের আগেই তাকে সাইড করে রাখা হবে। তাকে আঘাত করা হবে। ইসলামে কটাক্ষ করে কিছু বললে তাকে সমর্থন অন্যথায় না।
ব্লগটা শুধু গল্পের জন্যই উপযোগী। একটা সময় আমার মতো আরও অনেক মানুষ এমনটা জ্ঞান করবেন। ব্লগ নিয়ে আমার আরও অনেক মতামত এবং অনেক কিছু বলার আছে। কারণ ব্লগটা আমাদের, আমার। এখানে সবাই থাকবে, সবার মনের কথা বলবে। মুক্তবাক্যে’র চর্চা হবে, চর্চা হবে বাকস্বাধিনতার। আল্লাহ না করুক, সামু যেন কোনদিন তার আবেদন এবং আসল উদ্দেশ্য হারিয়ে না ফেলে!প্রাসঙ্গিক কিছু কথা আমাকে বলতেই হল। কথাগুলো বলা একান্ত দরকার মনে হয়েছে তাই বললাম। যাইহোক যা বলতে এসেছি এবার সেগুলো বলি।
ছবি: তুরস্কের সঙ্গে সিরিয়ার যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধের ময়দানে শত্রুদের সন্তান ও নারীদের সাহার্য করছে খোদ তুর্কি সেনারা।
মানুষের সঙ্গে মানুষের কলহ, ঝগড়া, দ্বন্দ্ব বা শত্রুতা থাকতেই পারে। তাই বলে ছোট্ট বাচ্চারা কেন তার বলি হবে। ঘরের নিরপরাধ ও নির্দোষ নারীরা কেন আক্রোশর শিকার হবে। এটা হতে পারে নাম।
আমার নিজের শিশু যেমন নিষ্পাপ, তেমনি শত্রুর শিশুটিও নিষ্পাপ, সে নির্দোষ। আমাদের বড়দের ভেতর শত্রুতা থাকার কারণে তাদের নির্যাতন করা মোটেও ঠিক হবে না। আমাদের হৃদয়ে যেন সব শিশুদের জন্য থাকে সমান ভালবাসা। জানের দুশমন। যুদ্ধের মাঠে পেলে তাকে শেষ করে দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবে একজন তুর্কি সেনা। শুধু তুর্কি সেনা নয়, সবদেশের সেনারা একই ভূমিকা পালন করবেন। কিন্তু তুর্কি এই সেনাদের মতো শত্রুদের বাচ্চা সন্তানদের আদর করবে ক’জন।
বিষয়টি আমার ভাল লেগেছে, আমাকে অভিভূত করেছে। -একটি শিশুকে কাছে এল। তাকে কোলে তুলে নিল তুর্কি সেনা। আদর করল। মুখ টিপে দিল। এর আগে আমি যুদ্ধের অনেক ভিডিও দেখেছি কিন্তু এমন ভিডিও আর দেখিনি। মার্কিন সেনাদের দেখেছি, রাশিয়ার সেনাদের দেখেছি, বড় বড় শক্তিধর দেশগুলোর সেনাদের দেখেছি। কিন্তু তাদের বেলায় এর ছিটেফোঁটাও আমার চোখে পড়েনি। কিন্তু মানবতার বাজার তারাই ভাঙিয়ে খাচ্ছে। তারাই ঠিক করে দিচ্ছে, ভাল মন্দের পার্থক্য, তারা সভ্য অসভ্যের সংজ্ঞা তৈরি করে দিচ্ছে। তারা আমাদের মতো ছোট দেশ ও দেশের নাগরিককে গালি দেয়। ভাল চোখে দেখে না। কিন্তু কখনও এসব সভ্য দেশের মানুষেরা এমন কাজ করে যা দেখে আমাদের মতো অসভ্যরাও ঘিন্নায় মরে যাই, ছিঃ ছিঃ করে। হুমায়ুন আহমেদ তার আমেরিকার সফরনামায় এই সভ্যদের নিয়ে অনেক কিছু লিখেছে, নিজের মেয়েকে জবাই দিয়ে রান্না করে খাওয়ার একটি নৃশংস কাহিনীও আছে তাতে। একটা নয় এমন অনেক কাহিনী আছে। এরাই গালি দেয় মধ্যযুগের মানুষদের। কিন্তু বাস্তবতা আর ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে চরম নির্বোধও বুঝবে তাদের সভ্যতা ইসলাম পূর্ব যুগের জাহেলিদের হার মানায়।
এতোকিছুর পরও উঁচু উঁচু দালান-কোঠা দেখে আমাকে বলতেই তারা হবে ‘সভ্য।’ সভ্যতা যেন টাকা দিয়ে কেনা যায়। যার যতো বেশি সম্পদ সে তত বেশি সভ্য। তত বেশি মানবিক। তত বেশি হৃদয়বান। ক্যাসিনো কাণ্ডে যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের ছেড়ে দেওয়া উচিত। এসব সভ্য, ভাল আর মানবতাবাদিদের জেলে থাকা মানায় না!
ছবি: তুর্কি সেনাদের দেখে দৌড়ে এসেছে সিরিয়ার শিশুরা। সেনারা পরম আদর আর যত্ন করে শত্রু দেশের সন্তানদের হাতে চকলেট তুচ্ছেন দিচ্ছিন।
ছবি: ছবিটি দেখে কখনও কী আপনার মনে হয়েছে এটি যুদ্ধের মাঠ। আমাদের বাংলাদেশের সঙ্গে ছবিটির অনেক মিল রয়েছে। অনেক দিন পর গ্রামে গেলে নিজের ঘরের বাচ্চারা ঠিক এভাবেই তাদের বাবা, ভাই, মামা বা আপন কাউকে ঘিরে ধরে। ঠিক সেরকমই লাগছে।
ছবি: বাচ্চা আসতে লজ্জা পাচ্ছে। তার শঙ্কোচে ভুগছে, তাই সঙ্গে মাকে নিয়ে এসেছে। বাচ্চাটি নিতে চাচ্ছে না, কিন্তু তার মন চাচ্ছে নিতে, পাশ থেকে মা বলছেন, নাও মা নাও।
ছবি: বাচ্চাদের দৌড়াদৌড়ি দেখে মনে হচ্ছে তাদের ঈদ এসেছে। যুদ্ধ করছে কিন্তু সাধারণ নাগরিকদের কোনও ক্ষতি হচ্ছে না। মার্কিনদের যুদ্ধ বা অভিযানের পর দেখা যায় বিপুল পরিমান সাধারণ সাগরিক এবং শিশু মারা যায়।
২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিলের খবর, সিরিয়ার ঘৌওতা অঞ্চলে ২ সপ্তাহ ধরে চলা অভিযান -হামলা অন্তত ৬৭৪ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। দ্য সিরিয়ান সিভিল ডিফেন্স নামের একটি সংস্থা এ দাবি করেছে। ‘হোয়াইট হেলমেটস’ নামে পরিচিত এই সংস্থার তথ্যের বরাতে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে এই তথ্য দেওয়া হয়।
বিভিন্ন সময়ে মার্কিনদের হামলায় সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কী পরিমান বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না। নেটে সার্চ করলেই এমন নিউজ অহরহ পাওয়া যাবে। কিন্তু এর উল্টো পাওয়া যাবে না। এর কারণ একটাই- তারা মানবতাবাদি, উন্নত রাষ্ট্র, তাদের চামড়া সাদা। আরও অনেক কারণ পাবেন একশ্রেণির মানুষ।
ছবি: তুর্কি সেনার হাত থেকে চকলেট নিচ্ছে একটি বালিকা।
শুধু সিরিয়া নয়, পুরো বিশ্বের বালিকা ও শিশুরা থাকুক নিরাপদে। আমাদের বাংলাদেশের শিশুরা রক্ষা পাক ধর্ষণের হাত থেকে। শিশুর সরল হাসি সবসময় থাকুক। বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক কিছু বলার আছে। আরেকদিন বলবো। এবং উল্লেখিত বিষয় নিয়েও অনেককিছু বলার ছিল, কিন্তু বলতে গেলে লিখা অনেক বড় হয়ে যাবে। অবশ্য তাসলিমা নাসরিন এবং হুমায়ুন আহমেদ এবং অন্যকিছু ভাল লেখকের দেখা ইউরোপ আমেরিকা নিয়ে কিছু বলার ইচ্ছা আছে।
ইদানীং প্রচুর ডিপ্রেশনে ভুগছি। দয়াকরে কেউ কটু কমেন্ট করবেন না। বিতর্ক তৈরি করবেন না। আমার কাছে যেটা বাস্তব মনে হয়েছে, আমি যেটা দেখেছি, যেটা রিয়েলাইস করেছি সেটাই বলেছি। হুমায়ুন আহমেদ স্যারের আমেরিকা সফরের সেই বিক্ষাত বইটির রিভিউ একদিন দিবো। সবাই ভাল থাকবেন, সুখে খাকবেন। কাছের মানুষটিকে কখনও কষ্ট দিবেন। হুটহাট কিছু করবেন না। ভেবেচিন্তে ডিসিশন নিবেন। ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:৫১