somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জাদিদ
তুমি আমার রাতবন্দিনী। ধূসর স্বপ্নের অমসৃণ সুউচ্চ দেয়াল তুলে তোমাকে আমি বন্দী করেছি আমার প্রিয় কালোর রাজত্বে। ঘুটঘুটে কালোর এই রাজত্বে কোন আলো নেই। তোমার চোখ থেকে বের হওয়া তীব্র আলো, আমার হৃদয়ে প্রতিফলিত হয়ে সৃষ্টি করে এক অপার্থিব জ্যোৎস্না।

যাপিত জীবনঃ সালাম এবং জান্নাতি পুরুষ।

৩১ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৫:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।

মুসলিম প্রধান দেশ হিসাবে বাংলাদেশে দৈনন্দিন সম্ভাষনে 'সালাম' সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। স্থানীয় সমাজ ব্যবস্থা অনুসারে সালাম নিম্ন থেকে উর্ধগামী অর্থাৎ সবাই ছোটদের কাছ থেকে সালাম প্রত্যাশা করে। এখানে বয়সের চাইতে গুরুত্বপূর্ন সামাজিক অবস্থান, আর্থিক অবস্থা, পদবী ইত্যাদি এবং সব শেষে বয়স। যেমন অফিসের দারোয়ান সবাইকে আগেই সালাম দেন কিন্তু অনেক সময় তিনি বয়সে বড় হলেও আগে সালাম পান না। কেউ ভাবেও না যে একে সালাম দেয়ার প্রয়োজন আছে।

আমরা অনেক সময় বলি যে ধর্মের পরিবর্তন ঘটে না। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ধর্মে নিষেধ থাকলেও মানুষ তার নিজস্ব প্রয়োজনে (সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার কারনে) ধর্মের নিয়ম নীতির পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলে। যেমন সালাম দেয়ার এই রীতিনীতি আমাদের সমাজে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। এমন কি সালামের সম্ভাষন পর্যন্ত বিকৃতি ঘটিয়েছে। ফলে দেখবেন যে, উপমহাদেশে বহু মানুষ আসসালামু আলাইকুম বলার পরিবর্তে স্লামালাইকুম শব্দটি বলে। এখানে আস শব্দটি সালাম শব্দটির সাথে মিশে গিয়ে 'স্লামা' তে পরিবর্তিত হয়েছে।

সাধারনত পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দেয়ার বিধান রয়েছে। অর্থাৎ ইসলামিক সংস্কৃতি অনুসারে একে অন্যকে দেখলেই সালাম দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আমরা এখন সাধারনত রাস্তায় পরিচিত ছাড়া অন্য কাউকে সালাম দিই না বললেই চলে। আমার বাসার খুব কাছাকাছি মোঘল আমলের অন্যতম সেরা একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা রয়েছে যা ক্ষেত্র বিশেষে বাংলাদেশের পরিচিত কিছু ল্যান্ডমার্কের মধ্যে অন্যতম। এখানে খুব ভোর বেলা স্থানীয় মানুষজন প্রাতঃভ্রমনে আসেন। এই স্থাপনার পাশেই একটি বিখ্যাত মাদ্রাসা রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা প্রাতঃভ্রমনের সময় সবাইকে সালাম দেন। সেই সময়ে আপনি সেখানে হাটতে গেলে দেখবেন চারিদিকে শুধু সালামের শব্দ। ব্যাপারটা আমার বেশ ভালো লাগে। তবে ইদানিং দেখি তাঁরাও পিছিয়ে এসেছেন, নিজেদের পরিচিত শিক্ষক ও ছাত্রদেরকেই তারা সালাম দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাদের দেখাদেখি আমিও অপরিচিত কিছু ব্যক্তিকে সালাম দেয়ার পর দেখলাম সবাই বেশ অবাক হয়ে আমাকে দেখছেন। কিন্তু সালামের জবাব দিতে দিতে ততক্ষনে আমি তাদেরকে হেঁটে পার করে এসেছি।

আরেকবার, আমি একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে সালাম দেয়া পর তিনি প্রচন্ড অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তাঁর চোখ মুখের সন্দেহজনক অভিব্যক্তি দেখে মনে হলো তাঁকে সালাম দেয়ার কারনটি তিনি বুঝার চেষ্টা করছেন। তার পিছনেই তার স্ত্রী এবং কন্যাদ্বয় হাটছিলেন। আমার সালাম দেয়া দেখে তিনি একবার স্ত্রী এবং আরেকবার তাঁর বোরকাচ্ছাদিত কন্যাদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে ঘটনা বুঝার চেষ্টা করছিলেন। আমি ততক্ষনে যা বুঝার বুঝে গেছি, ফলে দ্রুত পা চালিয়ে সেখান থেকে আরো দূরে সরে গেলাম।

তবে সালাম নিয়ে সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হচ্ছে - ভিন্ন ধর্মের লোকদের সালাম দেয়া যাবে না। এটি চুড়ান্ত মিথ্যে কথা এবং ধর্মের নামে জালিয়াতি। এই ধরনের হীণমন্যতা ইসলাম ধর্মে নেই। বরং ব্যক্তি স্বার্থ এবং রাজনৈতিক কারনে এক শ্রেনীর কাঠমোল্লা ( অর্থাৎ যাদের ধর্মীয় ব্যাপারে উপযুক্ত পড়াশোনা নেই এবং নিজের জ্ঞানের উপর অযাচিত গোয়ার্তুমি করে) হাদীসের অপব্যাখার মাধ্যমে এই সব ফতোয়া জারি করেছে।

সালাম প্রথমত একটি সম্ভাষন। সাধারন দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করলে সালামের অর্থ শুভ সকাল বা শুভ দুপুর বা গুড লাকের চাইতে সেরা। সালাম অর্থ শান্তি। ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে আসসালামু আলাইকুম মানে আপনি ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহর শান্তি বর্ষনের ইচ্ছা পোষন করেন এবং পাশাপাশি আপনার তরফ থেকেও শান্তি এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। এটাই সালামের মূল ব্যাখ্যা। ইসলাম প্রচার এবং প্রসার হয়েছে উদারতা এবং মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। রাসুল সাঃ শেষ ভাষন হিসাবে যা স্বীকৃতি পেয়েছে সেখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে সাম্যবাদের কথা, সকলের সমান অধিকারের কথা। ফলে একজন নন মুসলিমকে সালাম দেয়া যাবে না - এটা শতভাগ ভুল এবং হাদীসের ভুল ব্যাখ্যার অন্যতম দৃষ্টান্ত।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সালামের মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্য এবং মহত্ব প্রকাশ পায়। যেখানে একজন মুসলিম অমুসলিম সবাইর উপর আল্লাহর শান্তি বর্ষনের আহবান জানানো হয়। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কেউই সঠিক পথে আসতে পারেন না। একজন মানুষ তখনই প্রকৃত শান্তি লাভ করবেন যখন তিনি মানবিক দোষত্রুটি কাটিয়ে উঠবেন এবং সৃষ্টিকর্তার রহমত পাবেন। আমি কোন ধর্মীয় পোস্ট হিসাবে এই লেখাটা লিখছি না। যদি ধর্মীয় পোস্ট হিসাবে লিখতাম তাহলে এখানে আরো অনেক রেফারেন্স যুক্ত করতাম।

আল্লাহ হচ্ছেন সর্বশেষ্ঠ দয়ালু। তিনি দয়া করতে ভালোবাসেন এবং যারা দয়া করে তাদেরকেও তিনি ভালোবাসেন। ফলে কেউ যদি আমার খারাপও চায়, তাঁকে ক্ষমা করে দিয়ে তার শান্তির জন্য দোয়া করার মধ্যেই লুকিয়ে আছে মানবিকতা এবং মহানুভবতা। যা মূলত ইসলামের অন্যতম ভিত্তি।

সালাম সম্পর্কে লিখতে গিয়ে ব্লগার জটিল ভাইয়ের কথা মনে হলো। তিনি ব্লগে পাঠকদের উদ্দেশ্যে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে সালাম দিয়ে পোস্ট শুরু করেন এবং আরো বেশি নেকি পাওয়ার লক্ষ্যে তিনি আরবীতেও লিখছেন। B-) =p~
আশা করি, ব্যাপারটি কে কৌতুক হিসাবে দেখবেন, সিরিয়াস হিসাবে দেখার প্রয়োজন নাই।

২।
একটি সভায় 'জান্নাতি' মানুষ নিয়ে আলাপ হচ্ছিলো। জান্নাতি মানুষরা দেখতে কেমন, কি পরিধান করবে বা কি কি সুবিধা পাবেন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে আমি বেশ দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে বললাম, আমি প্রায়ই একজন জান্নাতি পুরুষের সাথে মুসাবিদা করি।
উপস্থিত সভ্যরা প্রচন্ড অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, মাশাল্লাহ! কে এই শায়খ? কে এই পীর?
আমি কিছুটা বিব্রত হয়ে বললাম- না রে ভাই উনি পীর ও না উনি শায়খও না।
সবাই সমস্বরে চিৎকার দিয়ে বলল, তাহলে কে উনি? আর আপনি কিভাবেই জানেন তিনি যে একজন জান্নাতি পুরুষ?

আমি কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে বললাম, ভদ্রলোক আমাদের এক প্রতিবেশি মহিলার স্বামী। ভদ্রমহিলা ২৪ ঘন্টাই কারো না কারো সাথে প্রচন্ড উচ্চস্বরে ঝগড়াঝাটি, চেঁচামেচি বা হৈচৈ এর উপরে থাকেন। এমন কি উনার স্বাভাবিক কথা বার্তাও ঝগড়ার মত করে শোনায়। আমার বিশ্বাস করি, তিনি ঘুমের মধ্যেও স্বপ্ন দেখেন যে তিনি কারো না কারো সাথে ঝগড়া করছেন।

তো আমার বিশ্বাস, ২৪ ঘন্টা এই ধরনের আজাব পৃথিবীতে সহ্য করার পর কোন ব্যক্তিকে মহান আল্লাহতালা নিশ্চয়ই জাহান্নাম দিবেন না। তার জন্য অবশ্যই বেহেশত বরাদ্দ হয়ে আছে। শুধুমাত্র মারা গেলেই তিনি পৌঁছে যাবেন চুড়ান্ত ডেস্টিনেশনে। তাই ভদ্রলোকের সাথে দেখা হলেই আমি সালাম ও মুসাবিদা ও আতর আদান প্রদান করি। আমার যদিও উচিত তাঁর কপালে চুমু খাওয়া। কিন্তু চুমু টুমুর বিষয়ে আমার স্ত্রী খুবই রক্ষনশীল ও প্রাচীনপন্থী দেখে আমি আর এই বিষয়ে কোন আগ্রহ প্রকাশ করি নাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ১:০৯
৩০টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×