somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'কনফেশনাল' কবি ও কবিতা

৩০ শে জুন, ২০১৫ রাত ৩:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৫০ এর দশকে আমেরিকায় এক নতুন কবিগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটে যাদেরকে নামকরণ করা হয় “ কনফেশনাল পোয়েট”।যা কিছুই সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ,বা একান্ত ব্যক্তিগত নিবিড় আবেগ ও আচরণের বিষয় তা-কেই তারা কবিতার বিষয়বস্তু করে তুললেন। এ কবি গোষ্ঠীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত Sylvia Plath ,Robert Lowell, Anne Sexton, W. D. Snodgrass,John Berryman, Randall Jarrel প্রমুখ।রবার্ট লাওয়েলের “Life Studies” কাব্যগ্রন্থ আলোচনাকালে সমালোচক আর এল রোজেন্থাল(R.L Rosenthal) সর্বপ্রথম “ Confessional poet” শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেন। আমেরিকায় এই কনফেশনাল কাব্যধারার সূত্রপাত ঘটে W. D. Snodgrass এর Heart's Needle কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের মধ্য দিয়ে।এটির জন্য তিনি Pulitzer Prize পুরুস্কারও পেয়েছিলেন 1960 সালে। স্নোডগ্র্যাসের স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর তার একমাত্র কণ্যার সাথেও তার বিচ্ছেদের তীব্র অনুভুতি নিয়ে রচিত হয় এই কাব্যগ্রন্থটি। তার কন্যার প্রতি নানা মনোদৈহিক স্নেহ ও স্মৃ্তির কাব্যিক রূপায়ন এ গ্রন্থ।এই বিষয়টি কাব্যাঙ্গনে আনার ফলে সমালোচকদের বিপুল সমালোচনার মুখোমুখি হন তিনি হন।তার Heart's Needle কবিতাটি থেকে কয়েকছত্র উদ্ধৃত করছিঃ

No one can tell you why
the season will not wait;
the night I told you I
must leave, you wept a fearful rate
to stay up late.

Now that it's turning Fan,
we go to take our walk
among municipal
flowers, to steal one off its stalk,
to try and talk.

We huff like windy giants
scattering with our breath
gray-headed dandelions;
Spring is the cold wind's aftermath.
The poet saith.

রবার্ট লাওয়েল ছিলেন স্নোডগ্রাসের কাব্যিক পরামর্শদাতা; তিনি নিজেও স্নোডগ্র্যাসের কাব্যের ‘ব্যক্তিগত জীবনের অন্তরঙ্গ অনুভুতি প্রকাশ’এর এই শৈলীকে ব্যবহার করা শুরু করেন।রবার্ট লাওয়েলের কবিতা স্বীকারোক্তিমুলক এই কাব্যধারার খ্যাতি ও প্রতিপত্তির কারণ হয়ে উঠেছিল বিশ্বময়।

confessional কবিতাগুলো বেশীরভাগই আত্নজৈবনিক;তবে এই আত্নজীবনীর সাথে যুক্ত হয়েছে প্রবল আত্নকরুণা ও আত্নঘৃণা। এই কবিতা গুলোর মধ্যে চিৎকার করে উঠে ব্যক্তিগত কলঙ্ক ও বিকৃতির কথা,নিজস্ব ক্ষতের কথা।তারা মনে করতেন,আমরা বসবাস করি বিপুল আত্নজৈবনিক বিশ্বে। মানবপ্রকৃতি সম্পর্কে সাধারণ সত্যে বিশ্বাসের পরিবর্তে তারা বিশ্বাসী হয়ে উঠেন ব্যক্তিগত মন্ময় সত্যে।এ ধারার কবিতার আরেকটি বৈশিস্ট হচ্ছে,প্রবল ইডিপীয় চেতনার(Oedipal consciousness) এর বহিঃপ্রকাশ।সিলভিয়া প্লাথ ও অ্যানি সেক্সটনের কবিতায় আমরা খোঁজ পাই পিতার প্রতি তাদের অদ্ভুত ভালোবাসা ও ঘৃণার;পিতার অকাল প্রয়ানে ক্ষোভ ও দুঃখ;পিতার সাথে তাদের তরুণী বেলার স্মৃতির কথকতা। পশ্চিমা নারীর ফাদার- ফিক্সেশানের ব্যাক্তিগত স্বীকারোক্তির উদাহারণ হিসেবে দেখা যেতে পারে সিলভিয়া প্লাথের ‘Daddy’ আর অ্যানি সেক্সটনের ‘how we danced’ কবিতাদ্বয়।মানসিক অসুস্থতাও ঐক্যসুত্র স্থাপন করে এই কবিদের মধ্যে ।এই কবিদের প্রায় সবাই মানসিক হাসপাতালে ছিলেন, জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে।প্রবল মানসিক কষ্ট এই কাব্যধারার কমপক্ষ্যে তিনজন কবিকে ঠেলে দিয়েছিল আত্নহত্যার দিকে--- সিল্ভিয়া প্লাথ, অ্যানি সেক্সটন ও জন ব্যারিম্যান। কনফেশনাল কবিতাগুলো যেন নিষ্পেষিত আত্নার হৃদয়চেরা চিৎকার।পৃথিবীকে শেষ বিদায় জানানোর পুর্বে এই কবিতাগুলো যেন নিষ্ঠুর পৃথিবীর প্রতি এই কবিদের শেষ সাক্ষ্য ও প্রণতি। কনফেশনাল কবিগণ যেন তাদের কবিতায় প্রবল বেদনায় নতজানু হয়ে দুইহাতের করতলে ধরে আছেন তাদের রক্তাক্ত ও বিক্ষত হৃদয় আর অস্ফুট আত্নমগ্ন ও মন্ত্রতাড়িত স্বরে যেন স্বীকার করে চলেন তাদের পাপ-পঙ্কিলতা-অপরাধ আর অন্যায়ের কথা, নিজেরই কাছে। এ কবিতাগুলোতে যা কিছুই ঘৃণ্য,গুপ্ত,প্রকাশঅযোগ্য বা লজ্জাকর তা-ই চিৎকৃত হয়ে উঠে সতস্ফুর্ততায়।

৭০ এর দশকে আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পোয়েট্রি থেরাপি’ শিরোনামে একটি কোর্স চালু হয়েছিল। কবিতায় ব্যক্তিগত অনুতাপের স্বীকারোক্তির ভেতরে আছে অনুভূতির ক্যাথারসিস বা বিমোক্ষণ। মনে করা হছিলো,কাব্যের আছে নিরাময়ের শক্তি। আনি সেক্সটনের কবিতা রচনায় অনুপ্রেরণার ক্ষেত্রে অন্যতম ভুমিকা ছিল তার মনোচিকিৎসকের পরামর্শ।
এ কাব্যধারা বাংলা কবিতাকেও প্রভাবিত করেছিল যদিও আমাদের মনোকাঠামোতে এ কব্যধাঁচের স্থায়ী প্রভাব সম্ভব নয়। যদিও শামসুর রাহমানের ‘দুঃসময়ের মুখোমুখি’ কাব্যগ্রন্থের নামকবিতাটি ও ‘ক্ষমাপ্রার্থী’ কবিতা কনফেসনাল ধাঁচের।শামসুর রাহমান নিজেই বার বার তার কবিতার বিষয়বস্তু হয়েছেন,কখনো স্বনামে আর কখনোবা ছদ্মনামে যদিও তিনি তার ব্যক্তিগত জীবনের গোপন অন্ধকারকে কবিতার বিষয় করে তোলেননি তিনি কখনো ।confessional কবিতার প্রায় সবগুলো বৈশিস্ট যার কবিতায় উচ্চকিত হয়েছে সবচেয়ে প্রবল্ভাবে তিনি আবুল হাসান। আবুল হাসানের ‘রাজা যায় রাজা আসে’, ‘পৃথক পালঙ্ক’ , ‘যে তুমি হরণ কর’--- তিনটি কাব্যগ্রন্থেই প্রকাশিত হয়েছে প্রচণ্ড আত্নকরুনা,আত্নঘৃনা,তীব্র ব্যক্তিগত অসহায়ত্ব,নপুংসতা ও অনুতাপ-অনুসোচনা।‘অনুতাপ’, ‘পাতকি সংলাপ’ বাংলাদেশে কনফেশনাল কবিতার উজ্জ্বলতম নমুনা। নির্মলেন্দু গুণের “কবিতা, অমীমাংসিত রমণী” কাব্য গ্রন্থের ‘রাজদ্রোহী’, ‘সর্বগ্রাসী,হে নাগিনী’ ও ‘নৈশপ্রতিকৃতি’ কবিতাগুলোয় দগদগে যৌনকাঙ্ক্ষা,পতিতাপল্লীতে যৌন অভিজ্ঞতা,পাপমগ্নতার কথা প্রকাশিত হয়েছে অনুতাপ,ক্ষোভ ও স্বীকারোক্তির ভঙ্গীতে।ষাটের দশকে বাংলাদেশে এ ধারায় বেশকিছু কবিতা রচিত হয়েছিল।যদিও বাংলা কবিতায় ভিনদেশী প্রভাব খোঁজা সবসময় কাজের কথা না।আমরা খুজছিও না।শুধু ইংরেজি কবিতার নয়,বিশ্বকবিতার বৃহত্তর পরিসরের সঙ্গে বাংলা কবিতার সম্পর্ক বহুমাত্রিক।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৫ রাত ৩:৪০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×