somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জাহিদুল হক শোভন
এই শহরে অনেক হাজার হাজার ছেলে আছে যারা চুপচাপ থাকে, কথা কম বলে। পৃথিবীতে তারা বোকা, লাজুক, হাঁদারাম নামে পরিচিত। আমাকে এর সাথে তুলনা করলে তেমন একটা ভুল হবে না। নিজের ব্যাপারে বলাটা অনেক কঠিন। তবে নিজেকে মাঝে মাঝে অনিকেত প্রান্তর ভাবি।

গল্প: লাস্ট পেইজ

১০ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটির কথা।

চরম মেজাজ খারাপ নিয়ে আমি চুপ করে বসে আছি। এমন কোন ছেলে মেয়ে নেই যারা মায়ের কাছ থেকে ঠিক মত পড়ালেখা না করার জন্য বকা শুনেছে। কিন্তু আমার বেলায় তার উল্টো। মনে হয় দুনিয়ায় আমার মা-ই হলো একমাত্র মা যে কিনা পড়ালেখা কম করার জন্য আমাকে বকা দেয়। ঘন্টা খানেক আগেও যখন আমি পড়তে বসেছিলাম তার কিছুক্ষন পর আমার সেই প্রাণ প্রিয় মা আমার পিছনে এসে আমার লম্বা চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো “নীলশিয়া কি করিস মা?” আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে লাজুক একটা হাসি দিয়ে বলি “পড়ি আম্মু, তুমি কি আজকাল চোখে কম দেখতে পাও? বাবাকে কি একটা চশমা আনতে বলবো?” আমার মা হাসতে হাসতে আমার থুতনির নিচের তিল বরারবর আলতো করে ধরে বলে “ওরে আমার দুষ্টু মেয়ে দুষ্টামি শিখো গিয়েছো তাই না?” আমার আম্মুর এমন রসে ভরা কথা শুনে মনে মনে প্রশ্তুতি নিলাম কিছু শোনার জন্য। কারন আমি বেশ ভালো করেই জানি আমার আম্মু কেমন। আমার মাথার চুলে পুনরায় হাত বুলাতে বুলাতে চেহারায় রাগী টাইপের ভাব এনে বললো “হতচ্ছাড়ী সারাদিন বইয়ের ভিতর মুখ দিয়ে রাখলে চলবে? দিন দিন বুড়ি হইতেছিস, কিছুদিন পর পরের বাড়ি যাবি সে খেয়াল কি আছে? রান্নার ধারে কাছেই তো যাও না। স্বামীর বাড়ি গেলে যখন দেখবে কিছু পারো না, দুটো লাথি দিয়ে আবার আমার কাছে পাঠায় দিবে তখন বুঝবা তোমার এই মা ভালোর জন্য বলে নাকি খারাপের জন্য বলে। রান্না ঘরে অনেক কাজ পরে আছে আমি একা একা পারতেছিনা তাড়াতাড়ি আয়।” আমি চেহারায় মেজাজ খারাপের আভা নিয়ে চুপচাপ বই বন্ধ করে আম্মুর পিছন পিছন যাই।

কাজ শেষ করে খাটের কোনার দিকটায় চুপ করে এসে বসলাম। রাগে আমার শরীর এখনো গিজগিজ করছে। কিছু ভেবে না পেয়ে আদনানকে ফোন দিয়ে বলতে লাগলাম “পড়তে বসলেও দোষ পড়তে না বসলেও দোষ। বসবো না আর পড়তে। না পড়লে কি করবা?” সে এহেম এহেম করে বললো “না আমার কিছু করার নেই। তোমাকে নিশ্চয় এখন কেউ বকেছে?” আমি আরো একটু রেগে বললাম “কে বকবে আমাকে? কেউ বকে নি।” এইটা বলে চুপ করে রইলাম। সে যেন আমার কথা শুনে একটু হাসলো। তার হাসির অর্থের কোন কিছুই বুঝেনি। কিন্তু আমার যখন কোন কিছু নিয়ে রাগ হয় বা কেউ যদি কোন কিছু বলে আমি আদনানকে ফোন দেই। সেই রাগটা তার উপর ঝেড়ে দেই। কিন্তু বেচারা কোন কিছুই মনে করে না কিংবা এর প্রতিবাদ জানায়না। আসলে মনে করে কি করে না আমার জানা নেই। আমি তাকে বললাম “স্যরি বলো” সে স্বাভাবিক ভাবেই স্যরি বললো। আমি একটা স্বস্থির নিশ্বাস নিয়ে চুপ করে থাকি। মাঝে মাঝে নিজেকে বাচ্চা মেয়ে মনে হয়। বাচ্চা না হলে এইরকম কেউ করে? আমি তাকে বললাম “তুমি স্যরি বলেছো কেন?” সে বলে “তুমি বলতে বলেছো তাই” আমি বারান্দার গ্রিলের কাছে গিয়ে তাকে বলি “আমি বলতে বললেই বলবা?” সে হুম সূচক একটা শব্দ শুনিয়ে দেয় যার অর্থ তোমার জন্য আমি অনেক কিছু করতে পারি। হঠাৎ করে নিজের প্রতি ভালো লাগা কাজ করে। তার সাথে যখন রেগে কথা বলি তার একটু পরেই আমি কেমন যেন স্বাভাবিক হয়ে যাই। পরে নিজেকে কেমন যেন অপরাধী মনে হয়। আমি তাকে ইতস্ততার সহিত বললাম “আম্মু বকা দিয়েছে। এত্তোগুলো কাজ করিয়েছে আমাকে দিয়ে। চাল, লাল শাক ধুয়ে দিয়েছি, আলু, পেয়াজ কুচি কুচি করে কেটে দিয়েছি। এতো গুলো কাজ একসাথে করলে কার না মেজাজ খারাপ হবে বলো” সে আমার কথায় একটু হেসে বলে “পরে কথা বলবো কেমন?”

জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে সামনের জাম গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকি। একটা নিরবতা আমাকে ছুয়ে যায়। আমি আদনানকে নিয়ে অনুধাবন করি। কেমন যেন বোকা সোজা ছেলেদের মত। তবুও অপ্রাপ্তির বিশালতার মাঝে পূর্ণতার আশ্রয়ের ছায়া খুঁজে পাই এই বোকা ছেলেটার মাঝে। কয়েকমাস আগে তখনো শীতের দেখা মিলেনি। আকাশের কালো মেঘগুলো জমাট বাধে। মেঘগুলো ছুটাছুটি করে এদিক ওদিক। তাকে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বলেছিলাম “তুমি বৃষ্টিতে ভিজতে কেমন ভাবপ্রবণ করো?” সে খানিকটা চুপ করে থেকে বলে “এই অনুভূতিটা কখনো আমার জাগেনি। হ্যাঁ ভিজেছি ফুটবল খেলার সময় তবে একা একা বা কারো সাথে ভিজা হয়নি। যদি ভিজি তখন না হয় বলবো।” তারপরের দিনই সারাদিন কি বৃষ্টি। আমি ঘর থেকে বের হতে পারি না। আমার জানালার সন্নিকটে বসে বসে বৃষ্টি দেখি তাকে ছুয়ে দি। জাম গাছটার মাঝে ভিজা কাকেরা আশ্রয় নেয়। আমার ভালো লাগছিলনা। শূন্যতা ভর করে মনের ভিতর। কি মনে করে একটা ছাতা মাথায় দিয়ে আদনানদের বাসার সামনে গিয়ে তাকে নিচে নামতে বলি। তখন বিকাল ছুই ছুই। রাস্তায় তেমন মানুষের আনাগোনা নেই। টুপটুপ বৃষ্টির ফোটাগুলো যেন সবাইকে ঘর বন্দি করে রেখেছে। ওদের বাসার দিকটাও অনেকটা নিরবতা ঘিরে থাকে সব সময়। সে আমাকে দেখে অবাক হয়ে বলে “তুমি এখানে কি করো?” আমি তার দিকে তাকিয়ে বলি “ভিজতে এসেছি, ভিজবা?।” সে কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আমাকে জানায় তুমি কি ভুদ্ধিভ্রষ্ট বা পাগল?”

হ্যাঁ আমি ঐদিনের জন্য উন্মাদ ছিলাম। কতটা উন্মাদ হলে একটা মেয়ে হয়েও এই কাজ করতে পারে? তার সাথে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম। আশে পাশের ইট পাথরের তৈরি দালানের মাঝে বসবাসরত মানুষেরা হয়ত জানালায় উকি দিয়ে আমাদের দিকে বড় বড় চোখ নিয়ে তাকিয়েছিল। আমি চোখ বন্ধ অবস্থায় আকাশের দিকে মুখ করে বৃষ্টিতে জিজে তাকে বলেছিলাম “আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে তোমার ভালো লাগছে?” সে চুপ করে থাকে কিছু বলে না। কোন শব্দ না পেয়ে ওর দিকে তাকাতেই সে তার ভেজা চুল সিথি করে হ্যাঁ সুচক ইশারা দেয়। সেদিন তার কেমন ভালো লেগেছিল আমার ধারনা নেই। তবে সে সময়টুকু আমার স্মৃতির পাতায় বন্ধি হয়ে আছে। এটা আমার সব সময় মনে থাকবে।

ক্যান্টিনে এমন একটা ঘটনা ঘটে যাবে আমার সাথে, এটা যদি আগে থেকে জানতাম তাহলে আজকে আসতামই না। গতকাল বিন্তি ভার্সিটিতে আসতে না পারায় আমার নোট খাতা ওকে দিতেই বললো “নীলশিয়া তোরে আজকে প্রাণ হট টমেটো সস্ দিয়ে গরম গরম সিঙ্গারা খাওয়াবো চল।” রীতিমত তার কথা শুনে আমি সিঙ্গারা খেতে আসি। আমাদের ক্যান্টিনের সিঙ্গারার টেস্টের কথা না বললেই নয়। ঝিরা, আলু, গাজর, বুটের ডাল, আর মাংস দিয়ে তৈরি। এমনিতেই খাবারের প্রতি আমার একটু লোভ আছে। ক্লাসে কেউ অনুপস্থিত থাকলে কিংবা কোন প্রেজেন্টেশন থাকলে অনেকেই আমাকে এত্তো এত্তো চকোলেট দিয়ে বলে “দোস্ত আমারটা করে দিস প্লিজ।” আমি না করতে পারিনা তবে সবারগুলো করা সম্ভব হয়না বলে কাউকে কাউকে ফিরিয়ে দেই। ক্যান্টিনে বসে যখন সিঙ্গারা খাচ্ছিলাম চতুর্থ বর্ষের একজন ছেলে এসে বললো “এই যে তুমি নাকি চকোলেট, আইসক্রিম, পছন্দ করো।” আমি উনার দিকে তাকিয়ে কোন কিছুই বলিনি। আমার চুপ থাকা দেখে আবার বলতে লাগলো “তোমাকে আমি অনেক অনেক চকোলেট আইসক্রিম দিব আমার সাথে প্রেম করবে?” এইটা বলেই হাসতে লাগলো। আমি সাথে সাথেই বসা থেকে উঠে চলে আসি। ইচ্ছে হচ্ছিল তার গালে কষে দুটো থাপ্পড় লাগাই। কিন্তু ঝামেলা হবে বলে আমি কোন কিছুই বলার সাহস পাইনি।

রাতে পড়তে পড়তে যখন বিরক্তর নামক জিনিসটা মাথায় চাপলো মশারি টানিয়ে বিছানায় যেই পিঠ লাগালাম এমন সময় আদনান টেক্সট পাঠায়….

“এই যে কি করা হচ্ছে?
“মাত্র শুইলাম, তুমি কি করো?
“রাতের অন্ধকার দেখি দেখবা?

আমি কি রিপ্লে দিব বুঝিনা। ও আমার সামনে কত চুপচাপ থাকে কিন্তু যখন মেসেজে টেক্সট পাঠায় আমাকে এই শহরের গল্প বলে। সময়ের রং পরিবর্তনের কথা বলে। এই গুলা নিয়ে তাকে সামনা সামনি কিছু বলি না। আমি তাকে রিপ্লে দিলাম…“দেখতে পারি যদি আইসক্রিম দাও” সে আমাকে আইস্ক্রিমের স্টিকার পাঠিয়ে বলে “আমি ছাদে যাচ্ছি তুমি আসো” আমি তাকে রিপ্লে দেই “কই আমি তো আসছি তোমাকে দেখছি না।”… আমরা কথা বলি গল্প বলি, রাত দেখি, হলুদ ল্যাম্পোষ্টের আলোতে মাঝে মাঝে রাতের শহরে হাটি, কখনো কখনো ও পাঞ্জাবী আর আমি শাড়ি পড়ে অজানা পথে পারি দেই। কি অদ্ভুত কল্পনাগুলো। মানুষের অনুভুতি গুলো কাছাকাছি পূরন করতে না পেরেও কল্পনায় কি সুন্দর করে প্রকাশ করে। কিন্তু এই ছেলেটা কি বুঝে না আমি সত্যি সত্যিই তার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ হতে চাই। চোখের কাছাকাছি হয়ে অনুভুতি গুলো ছড়াতে চাই। আমি একটা মেয়ে হয়ে কিভাবে আমার ভালো লাগার কথা বলি? আমি তো একটা মেয়ে তার তো এটা বুঝার উচিৎ। তবুও এই শহরের চারপাশে আবদ্ধ হয়ে আমি আশায় থাকি একদিন ও আমাকে বলবে ওর ভালো লাগার কথা…

ছেলেটির কথা।

“পড়তে বসলেও দোষ পড়তে না বসলেও দোষ। বসবো না আর পড়তে। না পড়লে কি করবা?”

নীলশিয়ার এমন কথা শুনে আমি চুপ করে থাকি। আমার কি বলা উচিৎ আমি তা ভেবে পাইনা। মাঝে মাঝে খুব অবাক হই কেন সে আমায় এইগুলা বলে। তার কথার কারনটা বুঝতে না পারলেও আমি ঠিকি অনুমান করলাম নিশ্চয় তাকে কেউ এখন বকেছে। সাধারণত তার সাথে কেউ রেগে কথা বললে বা কেউ বকা দিলে সেই মাত্রাটা আমার ঘাড়ে এসে পরে। আমিও কিছু বলি না, কেন হঠাৎ ফোন দিয়ে উল্টা পাল্টা কথা বলো। কিংবা আমি ধমক দিয়ে বলি না, কার না কার সাথে রাগ দেখিয়ে এখন আমাকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করছো। আমাকে কি পাগল মনে হয়? আমি এইসবের কিছুই বলি না। বরং আমার কেমন যেন ভালো লাগে। আমি একটু হেসে স্বাভাবিক ভাবে জানাই “আমার কিছু করার নেই। তোমাকে কি কেউ বকেছে?” আমার কথা শুনে সে চুপ করে থাকে। ফোনের এপাশে আমি তার বড় বড় নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। সে আরো রেগে আমাকে বলে “কে বকবে আমাকে? কেউ বকেনি।” আমি চুপ করে থাকি। তাকে কি বলে শান্ত করবো বা আমার কি বলা উচিৎ আমি অনুধাবন করি। নীলশিয়াদের বাসায় একটা বিড়াল আছে। আদর করে তাকে শাফা ডাকে। তার বিড়াল নাকি অনেকটা শাফা কবিরের মত । সেই শাফা কবিরকে নাকি গতপর্শু সকালে আদর করে ভার্সিটি চলে এসেছিল। ভার্সিটি শেষে বাসায় গিয়ে বিকালের নাগাদ আমাকে ফোন দিয়ে বলে “আমার শাফাকে আমি খুঁজি পাচ্ছি না।” আমি তাকে বললাম “কোথাও হয়তো গেছে, খাট/আলমেরির নিচে শুয়ে আছে চিন্তার কারন নেই ক্ষিধা লাগলে এমনি তোমার কাছে চলে আসবে।” আমি মনে করেছিলাম যাক অন্তত তাকে শান্তনা দিতে পেরেছি। কিন্তু রাতে নয়টার নাগাত আমাকে ফের ফোন দিয়ে চিল্লায় চিল্লায় বলতে লাগলো “আমি ওরে আর বাসায় জায়গা দিব না। ওর জন্য আমার ঘরের দরজা বন্ধ। চিরতরের জন্য বন্ধ।” আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। কাকে জায়গা দিবে না বা কার জন্য দরজা চিরতরের জন্য বন্ধ। আমি তাকে যেই জিজ্ঞেস করবো কি হয়েছে খুলে বলো কিন্তু তার আগেই বললো “সেই শাফা বেয়াদবটা কি করেছো জানো? যাকে আমি এতোদিন নিজের কাছে রাখলাম, আম্মুর কত বকা শুনেছি ওর জন্য তবুও ওকে চুরি করে খাইয়েছি আর সেই কিনা রাস্তার একটা বিড়ালের কাছে চলে গেছে। আমি কিছুক্ষন আগে তাকে দেখেছি।” ওর কথা শুনে কি উত্তর দিব আমার মাথায় আসে না। যদি ও আমার হাসি পাচ্ছিল তবুও আমি তাকে বললাম “বয়স হয়েছে তো, তোমার শাফাতো এখন সাবালিকা, তার ও ইচ্ছা করে কারো সাথে হাটতে, কাউকে ভালবাসতে, বৃষ্টিতে ভিজতে, কাউকে ম্যাও বলে ডাকতে, হোক না সে রাস্তার বিড়াল।”

তারপর সে স্বাভাবিক হয়েগিয়েছিল। আমি এখনো চুপ করে আছি। সে কেন আর পড়তে বসবে না তার কারন আমি জানি না। আমার চুপ থাকা শুনে সে বলে “স্যরি বলো” আমি স্বাভাবিক ভাবেই তাকে স্যরি বলি। একটু পর সে আমাকে খুব মলিন হয়ে বললো “তুমি কেন স্যরি বলেছো?” আমি বুঝতে পারলাম তার রাগ কমেছে। আমি তাকে জানাই “তুমি বলতে বলেছো বলেই বলেছি।” সে বলে “আমি বলতে বললেই বললা।” আমি আবার চুপ করে থাকি কিছু বলি না। সব কথা বলতে নেই। কিছু কিছু কথার সময়ে চুপ করে থাকা লাগে। শুধু মনে মনে বললাম মেয়ে তুমি কি জানো তোমাকে আমার কতটা ভালো লাগে? সে তার পড়তে না বসার বা রাগ করার কারন জানায়। সে অনেক কাজ করেছে। আমি একটু হেসে বললাম “পরে কথা বলবো কেমন?” এইটা বলেই ফোনটা রেখে দেই।

দুর্বার গতিতে সময় যখন এগিয়ে যায় নির্জন শহরটাকে আমি আলোড়নের ভিতর অনুভব করি ঠিক তখন আমার দেয়ালের মাঝে অজানা ছায়ার আগমন হয়। শহরের ভিতরে আরেক শহরের উৎপত্তি হয়। নিজেকে উৎসর্গ করি এই শহরের কেন্দ্রবিন্দুর মাঝে। আমি সেই কেন্দ্রবিন্দুর নাম দিয়েছি নীলশিয়া। সেই নীলশিয়ার ছায়াই আমার দেয়ালে ছায়া হয়ে আসে। শহরের মাঝে নীলশিয়া নামক আরেক শহর উৎপত্তি হয়। আমি সেই শহরে তাকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজি। একবার ও যখন আমায় বলেছিল “তোমার বৃষ্টিতে ভিজতে কেমন ভাবপ্রবণ হয়?” আমি ওর দিকে তাকিয়েছিলাম। আকাশের অবস্থা ভালো ছিলনা। অনুভুতির গভীরে এই শহরের মাঝে একটা বিশুদ্ধ গন্ধ নিশব্দ হয়ে আমার চারপাশে ঘুরপাক খায়। আমি তাকে ইতস্তত হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বলি “এই অনুভুতিটা আমার কখনো জাগেনি। হ্যাঁ ফুটবল খেলার সময় ভিজেছি তবে একা একা নয় বা কারো সাথে আলাদা হয়ে ভিজিনি।” সে চুপ করে থাকে আমিও চুপ করে থাকি। প্রকৃতিও নিরব হয়ে আকাশে কালো মেঘের দৃশ্য সবার মাঝে তুলে ধরে। বলতে চেয়েছিলাম আমার সাথে ভিজবে? এই সামান্য কথাটুকু বলার সাহস হয়নি আমার। কিন্তু সত্যি সত্যি ওর সাথে আমি বৃষ্টিতে ভিজেছি। যে সাহস টুকু আমার দেখানো উচিৎ ছিল সে সাহস টুকু সে আমাকে দেখিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিল এভাবে বোকা থেকো না। চুপ করে বসে থাকলে কোন কিছুই পাওয়া যায় না। কিছু পেতে হলে হাতটা বাড়াতে হয়,সামনে এগোতে হয়। আমি যখন বাসার ভিতর শুয়ে ছিলাম তখন সে আমাকে ফোন দিয়ে বলে “একটু নিচে আসবা?” আকাশ থেকে তখন বৃষ্টিরা ঝিরিঝিরি করে পরছে। আমি নিচে গিয়ে অনেকটা অবাক হয়ে বলি “এখানে কি করো?” সে বলে “বৃষ্টিতে ভিজতে এসেছি ভিজবা?” আমার তখন কিছুই বলার ছিল না। যেখানে আমি ওর বাসার সামনে গিয়ে উচিৎ ছিল এই কথাটা বলার। আমি তাকে পাগল বলে সম্মেধন করি। তবুও তার সাথে আমি বৃষ্টিতে ভিজি। তীব্র ভালো লাগা নিয়ে বৃষ্টির মাঝে তাকে দেখি। হৃদয়ের গভীরে এক নতুন গল্পের সৃষ্টি হয়। আমার কল্পনার ঘরে নির্ভুল মানবী প্রবেশ করে। বৃষ্টির ফোটা গুলো তার শরীরকে ছুয়ে দেয়। তার লম্বা চুল বেয়ে বিন্দু বিন্দু ফোটা মাটিতে চুয়ে পরে। আমার খুব ইচ্ছা করছিল তার ভিজা চুল কানে গুজে দিয়ে এক পশলা বৃষ্টি তার মুখে ছিটিয়ে দিতে। কিন্তু তাকে আমি অনুভব করি, তার ভেজা শরীরে গন্ধ আমায় পুলকিত করে। আমি হারিয়ে যাই সেই নীলশিয়া নামক শহরে।

সেই নীলশিয়া নামক শহরে যখন কালো ছায়া এসে জমাট বাধে বা ধুলো এসে জমা পরে তখন আমার চোখে ঘুমেরা প্রবেশ করে না। নির্জন রাত্রিতে আমার অস্থিরতা বেড়ে উঠে। ক্ষিপ্ত মনোভাবের আভা ফুটে উঠে আমাদের দেয়ালে প্রতিটা কোনায়। আজ ভার্সিটিতে চতুর্থ বর্ষের ছেলের ঘটনাটা যখন বিন্তির কাছ থেকে শুনলাম তখন আমার মস্তিস্কে একটা যন্ত্রনার শব্দ ভর করে। আমি অনুধাবন করলাম যতক্ষন না পর্যন্ত যন্ত্রনার শব্দটা আমার মাথা থেকে সরাতে পারবো না ততক্ষন পর্যন্ত আমার মস্তিষ্ক আমাকে শান্তি দিবে না। ক্লাসের অনেকে নীলশিয়া চকোলেট দিয়ে অনেক প্রেজেন্টেশন করিয়ে নেয়। এতে আমি কিছুই মনে করি না। তার এইসব কারনের জন্য মাঝে মাঝে তাকে আমি চকোলেট গার্ল বলে ডাকি। কিন্তু আজকের বিষয়টা আমাকে খুব ভাবায়।

চতুর্থ বর্ষের ছেলেটার নাম রাশেদ। সেদিনের পর খোঁজ নিয়ে জানলাম তার গার্লফ্রেন্ডের নাম সিনথিয়া। আমি সেই সিনথিয়ার বাসায় সিনথিয়ার নিকট একজন টোকাই এর মাধ্যমে একটা চিঠি দেই…

প্রিয় সিনথিয়া
তুমি যেমন রাশেদকে ভালোবাসো আমিও তাকে ভালোবাসি। রাশেদও আমাকে ভালোবাসে। আমি চাইনা একটা ভালোবাসার মাঝে তিনটা জীবন আটকে থাকুক। তুমি তো জানোই একটা ভালোবাসার মাঝে দুটো জীবন থাকে, তিনটা নয়। আমি যেমন রাশেদের মাঝে মিশে আছি ঠিক তেমনি রাশেদও আমার মাঝে মিশে আছে। আমি চাই না তুমি আমাদের মাঝে কাটা হয়ে বাধা দাও। তাই অনুরোধ করছি তুমি নিশব্দে সরে দাঁড়াও।

ইতি
রাশেদের কিউট ডিব্বা।

এর পরের দিনই ভার্সিটিতে রাশেদের অবস্থা আমি ভালো দেখিনি।সিনথিয়া বিষয়টা কিভাবে দেখেছিল সেটা রাশেদের অবস্থা দেখেই বুঝেছিলাম। বেচারা রাশেদ।


শুনেছি রাতেই মানুষের অনুভুতি গুলো অনেক গুন বেড়ে যায়। আমার বেলাও তা বিদ্যমান। আমি নীলশিয়াকে মেসেজ পাঠাই
"এই যে কি করো?

আমি তার মেসেজের রিপ্লের জন্য অপেক্ষা করি। অপেক্ষা করি অনুভুতি গুলো প্রকাশ করার জন্য। যে অনুভুতিতে একজন আরেকজনকে ছুয়ে দিব। কিছুক্ষন পরেই সে রিপ্লে দেয় "মাত্র শুইওলাম। তুমি কি করো" আমি তীব্র ভালো লাগা নিয়ে দ্রুত রিপ্লে দিলাম "রাতের অন্ধকার দেখি, দেখবা?" কয়েকমিনিট ধরে কোন রিপ্লে আসে না। কি মনে করলো আমি তা নিয়ে অনুধাবন করতে লাগলাম। কিন্তু আমি প্রায় মেসেজে ওকে রাতের শহরের কথা বলি, দুজনে অনেক দুর পর্যন্ত পারি দেই। কখনো কখনো রাত পার হয়ে সকালের আলোর কাছাকাছি চলে এসেছি মেসেজে কথা বলতে বলতে। যখন একটা বিষন্নতা আমাকে ছুয়ে দেয় এর একটু পরেই সে রিপ্লে দেয় "আগে আইস্ক্রিম এনে দাও" আমি একটা স্বস্থির নিশ্বাস নিয়ে তাকে আইস্ক্রিমের স্টিকার পাঠাই। তারপর বলি "তুমি ছাদে আসো, ছাদে যাচ্ছি।" সে রিপ্লে দেয় " এই কই তুমি, তোমাকে দেখছি নাতো"

আমার ভিতরে অদ্ভুত ভালো লাগা ছুয়ে যায়। মানুষের অনুভুতি প্রকাশের আরেক নাম কল্পনা। বাস্তবে যা পারা যায় না, কল্পনায় তা ঠিকি পারা যায়। আচ্ছা নীলশিয়াকি একবারো বুঝে না আমি কেন ওকে এইগুলা বলি, কেন ওকে নিয়ে হারাই। শুনেছি মেয়েরা একটা ছেলের আচার আচারণ দেখেই বুঝে ফেলতে পারে ছেলেটা কি চায়? ও কি একবারো বুঝতে চেষ্টা করেনি আমি ওকে কতটা চাই? এবার যাই হোক খুব শিঘ্রই আমার ভালোলাগার কথা তার লাস্ট পেইজে প্রকাশ করবো। সে পৃষ্টায় আমার অনুভুতি গুলো তুলে ধরবো।

পরিশিষ্ট

যে ভালোবাসায় আশা করা যায়, হারানোর ভয় থাকে না, জানালার সন্নিকটে চোখ বন্দ করে অনুভুতি গুলো ছড়িয়ে দেয়া যায় সে ভালোবাসায় কালো মেঘের ছায়া জমাট বাধে না। আদনান নিশ্চয় একদিন তার অনুভুতি গুলো নীলশিয়ার লাস্ট পেইজে প্রকাশ করবে। সেই পেইজ যে পেইজ বা পৃষ্টার প্রতিটা বাক্য নিখুত হয়। কারন শেষ ভালো যার সব ভালো তার। নিশ্চয় নতুন বছরের শুরুতে আদনান কল্পনায় নয় বাস্তবে নীলশিয়াকে এই শহরের গল্প বলবে, বাস্তবে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করবে। ভালো থাকুক আদনান আর নীলশিয়া নামক শহর...
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:৩৩
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×