লাশ নিয়ে বড়ইডাঙ্গায় ঢুকতেই, যেন পুরো গ্রাম হুমড়ি খেয়ে পরল। ভিক্টিমের আত্মীয় স্বজনের আহাজারি দেখে, জমীরউদ্দীন ভাবল আজকে কারো জবানবন্দী নেয়া সম্ভব না। আজকে থাক। থানায় গিয়ে স্যারের সাথে পরামর্শ করে দুই একদিন পরে আসা যাবে।
ফেরার পথে গ্রামের মেম্বারের সাথে দেখা। ইনি ই সেই লোক যেঁ, গতকাল থানায় ফোন দিয়ে খুনের কথা জানিয়েছিলো। মেম্বার একজন কে সান্তনা দিচ্ছে। ইনি হচ্ছে ভিক্টিমের ভাশুর। ছোট ভাইয়ের বউয়ের মৃত্যুতে বেশ কষ্ট পেয়েছে সেটা চেহারাই বলে দিচ্ছে। জমীরউদ্দীন ভাবল ভিক্টিমের মেয়ের সাথে তো আপাতত কথা বলা যাচ্ছে না তাহলে এই দুইজনকে দিয়েই শুরু করা যাক। গ্রামের মেম্বাররা তো তার পাড়া প্রতিবেশীর ভালমন্দ খোঁজ খবর রাখে। কথায় কথায় কোন সুত্র পাওয়া গেলেও যাইতে পারে। এইযে মেম্বার সাহেব যে,“কি খবর?”
“স্যার খবর আর কি কমু। নিজের পাড়া প্রতিবেশি এভাবে খুন হয়ে গেলো। এরপর আর কোন খবর থাকে কেমনে। বড় ভালা মানুষ আছিলো হাঁসির মায়। আর স্যার খারাপ লাগে মাইয়াটার জন্য। বাপ বিদেশে, মা টা এভাবে খুন হইয়া গেল।“
জমীরউদ্দীন মেম্বারকে জিগ্যেস করল,”কি মনে হয়। কেন খুন করতে পারে?”
“হেইডা কেমনে কই স্যার। ডাকাত গো কাম হইবার পারে।“ শুনছে হাঁসির বাপ বিদেশ থাকে এই জন্য হয়ত আইছিলো ডাকাতি করতে।“
জমীরউদ্দীন বলল,”হ্যাঁ ঠিক বলেছেন এমনও হইতে পারে।“ আচ্ছা এই পরিবারের সাথে গ্রামে অন্য কারো কোন ঝগড়াবিবাদ ছিলো বা জমি জমা নিয়ে কোন বিরোধ?
“না স্যার তেমন কিছু আমার জানা নাই। ওগো ফ্যামিলিডা বড় ভালা ফ্যামিলি স্যার। হাঁসির বাপটা মাটির মানুষ স্যার আর ওর মায়ও ভালা আছিলো। গ্রামে কারো সাথে কখন ঝগড়া করছে শুনি নাই স্যার।“
“ওদের বাড়ির অন্য কারো সাথে কোন ঝামেলা টামেলা ছিলো কিনা জানেন?”
“না স্যার অমন কিছু থাকলে তো শুনতাম। ছোট একটা গ্রাম বড়ইডাঙ্গা এখানে সবাই সবার হাড়ির খবর রাখে।“
ভিক্টিমের ভাশুরকে জিগ্যেস করলাম,”কখন গ্রামে কারো সাথে কোন কিছু নিয়ে কোন বিরোধ হইছিলো আপনাদের?”
“না স্যার আমগো গ্রামে আসলে ঝগড়া বিবাদ খুব একটা হয় না। কিন্তু স্যার বছর কয়েক আগে ছোট একটা ঘটনা হইছিলো কিন্তু তাতেও আমগো কোন হাত আছিল না।“
আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে জিগ্যেস করলাম,”কি ঘটনা?”
স্যার, আমগো পড়শি জব্বার মিয়ার পোলা, রমিজ্জা আমার ভাজতিরে একবার বালাৎকার করার চেস্টা করে।
“বলেন কি! ঘটনার বিতান্ত কি?” জমীরউদ্দীন বেশ আগ্রহ নিয়ে শুধায়।
“স্যার হাঁসি বাড়ি থেকে এক্টূ দূরে পুস্কুনিতে গোসল করতে যাওয়ার সময়, রমিজ্জা নাকি হাঁসিরে টাইনা ঝোপের মধ্যে নিয়া যাইতেছিল। তখন দুপুর ছিলো তেমন লোকজনও ছিলো না। কিন্তু কারা যেন ঐ সময় ওইখান দিয়ে যাচ্ছিলো, তারা হাঁসির চিৎকার শুনে যাইয়া ওরে উদ্ধার করে। রমিজ্জা তখন পলাইয়া যায়। পরে মাসখানেক পরে রমিজ্জা গ্রামে ফিরা আইলে, গ্রামের সালিসে রমিজ্জার বিচার করা হয়। তখন বিচারের মধ্যে হাঁসির মায় ওরে জুতা দিয়া পিটায়। আর ওরে পুরা গ্রাম জুতার মালা পরাইয়া ঘুরানো হয়। এরপর অবশ্য রমিজ্জা অনেক দিন গ্রামে ছিলো না। শুনছি সদরে নাকি কি কাম করে। মাস ছয়েক আগে গ্রামে ফিরা আইছে।“
জমীরউদ্দীন ভাবল বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা তথ্য পাওয়া গেসে। আচ্ছা রমিজ এখন কি করে? বাড়িতে আছে না?”
“হ স্যার বাড়িতেই আছে। কি করবো, টুকটাক চাষবাস করে কোনরকম চলে আর কি। বুড়ো বাপের জন্য নাকি ও ফিরা আইছে। নইলে নাকি কখনও এই বড়ইডাঙ্গায় আসতো না।“
জমীরউদ্দীন মনে মনে বলল, বুড়ো বাপ নাকি অপমানের বদলা নিতে আসছে।“ হাঁসির চাচা আর মেম্বারকে ধন্যবাদ জানিয়ে গাড়িতে উঠে বলল,”আগামী দুই একদিনের মধ্যে আসবো। বাড়িতে জানিয়ে রাখবেন। মেয়েটার সাথে কথা বলতে হবে। আর প্রতিবেশি যারা আছে তাঁদের সাথেও কথা বলা দরকার। হয়ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু পাওয়া গেলে ও যাইতে পারে। মেম্বার চা খাওয়ার অনুরোধ করলেও তা রাখা সম্ভব হল না। কারণ এর মধ্যেই বেশ বেলা হয়ে গেসে।
থানায় এসে জমীরউদ্দীন দেখে দারোগা সাহেব নাই। জমীরউদ্দীন ভাবল সারাদিন বেশ ধকল গেসে একটু সুস্থির হওয়া দরকার। নইলে চিন্তা গুলোকে মেলানো যাচ্ছে না। প্রথম যেঁ সুত্রটা পাওয়া গেসে সেটা নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করা যাক। দেখা যাচ্ছে রমিজ মিয়ার সাথে পুরানো একটা বিবাদ আছে। রমিজ মিয়া পূর্বে ভিক্টিমের মেয়েকে একবার বালাৎকার করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। বিচার স্বরুপ তাকে জুতার মালা পড়িয়ে গ্রামে ঘুরানো হয়। সেই অপমানের প্রতিশোধ নিতেও রমিজ মিয়া খুন টা, করলেও করতে পারে। অপমান জিনিসটা বড়ই খারাপ। মানুষ সব ভুলতে পারলেও অপমানের কথা ভুলতে পারে না।
ভাবনায় ছেদ পরল দারোগা সাহেবকে থানায় ঢুকতে দেখে। দারোগা সাহেব রুমে ঢুকতেই, জমীরউদ্দীন পই পই করে তার রুমে গিয়ে হাজির।
“কি মোল্লা সাহেব খুব উত্তেজিত মনে হচ্ছে।“
“স্যার গুরুত্বপূর্ণ সুত্র পাওয়া গেসে মনে হচ্ছে। সুরৎহাল রিপোর্টের ভিক্টিমের মৃত্যুর কারণ শুনে দারাগো ও যেন একটু অবাক হল। জমীরউদ্দীন ফরেনসিকের দেয়া কৌটা টা দারোগার সামনে রেখে বলল,”স্যার, ভিক্টিমের হাতের মুঠোয় ছিলো।“
দারোগা সাহেব বলে উঠলো,”বাহ! ভিক্টিম অন্তত আমাদের জন্য একটা সুত্র রেখে গেসে।“
চলবে....।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:০১