somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই পড়ার আপডেট: নভেম্বর ২০১০

২৪ শে নভেম্বর, ২০১০ সকাল ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাঝে বই পড়া একটু কমে গিয়েছিলো। একটা চাইনিজ মোবাইলে বই পড়তাম। পরে অন্য একটা মোবাইল (নোকিয়া) কিনলাম যেখানে ইবুক রিডার বা পিডিএফ রিডার ছিলোনা। 'অভি' ষ্টোর থেকে একটা ফ্রি ইবুক রিডার নামানোর পর এখন আবার মোবাইলে বই পড়তে পারছি। কারেন্ট চলে গেলেই বারান্দায় বসে যাই মোবাইল নিয়ে, সেই সাথে বাসে-ট্রেনে-ট্রাফিক জ্যামে তো আছেই। সব মিলে বই পড়ার গতি এখন আগের চেয়ে অনেক ফাস্ট।

পিলারস অব দ্যা আর্থ
কেন ফলেটের লেখা এই বই এখন ওয়ার্ল্ড ক্লাসিকের মর্যাদা পেয়ে গেছে। বৃটেনে পরিচালিত এক জরিপে সেরা ১০০ বইয়ের মধ্য এই বইয়ের স্থান ৩০তম। চলুন দেখি কী এমন আছে এই বইটিতে?

প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠার এই বই যেন মানব জীবনের এক বিশাল ক্যানভাস। জন্ম, মৃত্যু, প্রেম, ভালবাসা, স্নেহ, বিশ্বাসঘাতকতা, হিংস্রতা, বেঈমানী- সব কিছুই আছে এই উপন্যাসে। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এর চরিত্রগুলো। প্রায় প্রতিটা চরিত্রই এত শক্তিশালী আর এত বিস্তারিত ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে মনে হয় তারা রক্ত মাংসের মানুষ, চোখের সামনেই তাদের দেখছি।

বিশাল আর লম্বা শরীরের টম বিল্ডার তার পরিবার নিয়ে যাযাবরের মত শহরে শহরে ঘুরে বেড়ায়। নানা ধরণের ঘর-বাড়ি বানায় সে। কিন্তু তার জীবনের স্বপ্ন একদিন সে একটা ক্যাথেড্রাল বানাবে। আর তাই কোন একটা জায়গায় থিতু না হয়ে সে বেছে নিয়েছে যাযাবরের জীবন।

মাত্র ৬ বছরে যুদ্ধে বাবা-মা হারানো ফিলিপ মানুষ হয় গীর্যার পাদ্রীদের কাছে। বড় হয়ে সে-ও বেছে নেয় পাদ্রীর জীবন। তাকে প্রতিপালন কারী ফাদার সব সময়ই বলেন ঈশ্বরের তাকে নিয়ে বড় কোন পরিকল্পনা আছে। একদিন সে ওয়েলশ থেকে পাড়ি জমায় ইংল্যান্ডের বড় শহর কিংসব্রীজে।

ইংল্যান্ডের খুব প্রভাবশালী আর্লের মেয়ে অ্যালিয়ানা, বাবার বিশাল দূর্গে বড় হয়েছে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে হঠাৎ তার বাবার জমিদারী চলে যায়, দূর্গ বেদখল হয়ে যায় আর রাজদ্রোহীতার অভিযোগে বাবা বার্থলেমিউ বন্দী হন। এরপর শুরু হয় অ্যালিয়ানার কঠিন সংগ্রামী জীবন।

আউটল মায়ের অবৈধ সন্তান জ্যাক। জন্মের আগেই জন্মদাতা বাবা মারা যান। তারপর লোকালয় থেকে দূরে জঙ্গলে মায়ের কাছে বড় হওয়া। হঠাৎ একদিন টম বিল্ডারের আর তার পরিবারের সাথে দেখা হলো তার মা ইলেনের। তারপর টমের স্ত্রী মারা যাবার পর ইলেনের সাথে টমের বিয়ে হলো। দুটি পরিবার এক হলো আর জ্যাকের জীবনে নতুন আরেকটি অধ্যায়ের শুরু হলো। সবকিছুর মাঝেও জ্যাক তার হারিয়ে যাওয়া জন্মদাতার ইতিহাস খুঁজে বেড়ায় কিন্তু মা ইলেন এ ব্যাপারে নিশ্চুপ।

উচ্চাভিলাষী এক নাইটের সন্তান উইলিয়াম। হঠাৎ করে পেয়ে যায় একটা গোপন খবর, আর্ল বার্থলিমিউ এর বিদ্রোহের খবর। সাহসিকতার সাথে সে বার্থলিমিউর দূর্গ দখলে নেতৃত্ব দেয় এবং তার বাবার পরবর্তী আর্ল হওয়া নিশ্চিত করে। এরপর সুযোগ বুঝে একদিন সে বন্দী বার্থলিমিউর অসহায় মেয়ে অ্যালিয়ানাকে ধর্ষণ করে। সাহস আর নিষ্ঠুরতা দিয়ে জীবনের সাফল্যের সিঁড়িগুলো বেয়ে উপরে উঠতে থাকে উইলিয়াম।

দ্বাদশ শতকের ইংল্যান্ড এই উপন্যাসের পটভূমি। তবে কাহিনীর প্রয়োজনে আমাদের যেতে হবে ফ্রান্স আর স্পেনের টলেডো পর্যন্ত। তৎকালীন ইউরোপে স্পেনের মুসলমানদের প্রভাব সম্পর্কেও হালকা ধারণা হবে। সব মিলিয়ে এক অসাধারণ কাহিনী যা আপনার চিন্তা চেতনার উপর গভীর ছাপ রেখে যাবে। আর হ্যাঁ, বইটা পড়ার পর এর সিক্যুয়েল তথা 'ওয়ার্ল্ড উইদাউট এন্ড' পড়তে ভুলবেন না।

বইটির কাহিনী নিয়ে একটা টিভি সিরিজও নির্মীত হয়েছে। ইউ টিউবে সার্চ দিলেই পাবেন।

ইদানিং ভ্রমণ কাহিনী পড়ার দিকে খুব ঝোঁক চেপেছে। এখন পড়ছি সুনীলের 'পায়ের তলায় সর্ষে'। এই ব্যাপারে কারো কোন সাজেশন থাকলে জানানোর অনুরোধ থাকলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:১৫
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×