একটু আগে একটা পোস্ট পড়ে আসলাম। আপনাকে একদিনের জন্য যদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবার সুযোগ দেওয়া হয়, কোন কাজগুলি আগে করবেন বা করা উচিত বলে মনে করেন??? সেরা উত্তরদাতাকে একদিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী করা হবে!
সেটার কমেন্ট লিখতে গিয়ে এত বড় হয়ে গেল যে ভাবলাম আলাদা একটা পোস্টই লিখে ফেলি।
একদিনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা করাটা সিনেমাতেই সম্ভব। বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী হলে যা করতাম তা হল রাজনীতির আগা-গোঁড়া একটা সংস্কারের চেষ্টা করতাম দেশের তরুণদের নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী হতে পারলে দেশের সংবিধান পরিবর্তন করতাম (লীগ, বিম্পি করে, আমিও করুম)। নতুন সংবিধানে থাকত ৪৫ বছর বয়সের উপর কেউ মন্ত্রিত্বে থাকতে পারবে না। মন্ত্রীদের বয়স হবে ৩০-৪৫ এর মধ্যে। কারণ নেতৃত্ব দেওয়ার বা পরিবর্তন আনার এইটাই সবচেয়ে ভাল সময়। এই বয়সে তারুণ্য ও পরিপক্বতার একটা ভারসাম্য থাকে বলেই এই বয়সটা বেছে নিচ্ছি। তাই বলে দেশের জন্য এতদিন যারা রাজনীতি করে চুল পাকিয়ে ফেলেছেন তাদের ছুঁড়ে ফেলে দিবনা। মন্ত্রণালয়ের কাঠামো হবে এরকম-
>>> ** প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়েরই একজন সিনিয়র উপদেষ্টা(তারা নির্বাচিত হবেন সংশ্লিষ্ট সেক্টরে তাদের অভিজ্ঞতার বিচার করে) থাকবেন, যার কাজ হবে শুধুমাত্র মন্ত্রীকে উপদেশ দেওয়া, মন্ত্রীর ভুল ধরিয়ে দেওয়া, একটি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে তার ভাল-মন্দ দিকগুলো দেখিয়ে দেয়া। তবে তারা কোনভাবেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর উপর জোর খাটাতে পারবেন না। এইটাকে এভাবেও দেখা যায়- যেসব নেতা দেশের জন্য এতকিছু করলেন তাদের অপমান না করে সম্মানজনক একটা পুণর্বাসন করা ও একই সাথে জাতি যেন তাদের মেধার নিঃস্বার্থ ফলটা ভোগ করতে পারে সেটা নিশ্চিৎ করা। এইক্ষেত্রে সাবেক মন্ত্রীদের পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে দেশে যারা নিজেদের মেধা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন (যেমন অর্থনীতিতে ডঃ ইউনুস, প্রযুক্তি/ শিক্ষাক্ষেত্রে ডঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যার) তাদেরও উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেয়া যায়। এক কথায় বললে যে ক্ষেত্রে যিনি সবচেয়ে যোগ্য।
**>>> মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিয়োগ হবে এমন একজনকে যিনি এই ব্যাপারে সাম্প্রতিক সময়ে কাছে থেকে কাজ করেছেন। যেহেতু তিনি বয়সে অনেকটাই তরুণ হবেন, সে হিসাবে বলা যায় এই পদে সংশ্লিষ্ট সেক্টরে দেশের সম্ভাব্য সবচেয়ে মেধাবী ব্যাক্তিটিকেই বেছে নিতে হবে। বেছে নেওয়ার পদ্ধতিটাও পরিবর্তিত হওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি। আমার হিসাবে এমপি'রা মন্ত্রী হওয়ার প্রক্রিয়াটি বাতিল হওয়া উচিৎ। একজন এমপির পক্ষে ঠিকভাবে কাজ করলে তার নিজের এলাকাই সামাল দিতে পারার কথা না, তার উপর আবার মন্ত্রিত্ব! কাগজে -কলমে সম্ভব হলেও বাস্তবে এর ফল কি হয় তা তো আমরা সবাই দেখছিই। আমেরিকার ক্যাবিনেটের কাঠামোটাই দেখুন। তারা কিন্তু বেশিরভাগ সেক্টরেই প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা (যা আমাদের মন্ত্রী পদের সমতুল্য) নিয়োগ করে নন-সিনেটরদের। তাই আমার মতে নির্বাচিত সংসদ-সদস্যবর্গ প্রতিটি সেক্টরে প্রস্তাবিত কয়েকটি নাম থেকে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেকের মাধ্যমে একজন মন্ত্রী নির্বাচন করবেন। যেই নামগুলো মন্ত্রিত্বের জন্য বিবেচিত হুবে,তাদের পূর্ব-ইতিহাস হতে হবে মেধাবী (পুঁথিগত বিদ্যা মুখস্ত করে ভাল রেজাল্ট করা না,সাথে তার গবেষণা/ মাঠপর্যায়ের কাজও বিবেচনা করতে হবে), বিবেচ্য সেক্টরে মোটামুটি ভাল রকমের কাজ করার অভিজ্ঞতা, আপোষহীন দেশপ্রেম, সৃজনশীল এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক প্রজ্ঞাসম্পন্ন তবে অবশ্যই ছাত্ররাজনীতির কলঙ্কমুক্ত (বর্তমান ছাত্ররা কারা কেন রাজনীতি করে তা কি বলে বুঝাতে হবে? মেধার রাজনীতি ডিঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি-হল দখল- ছাত্রী ধর্ষন-ইভটিজিং এর রাজনীতি থেকে উঠে এসে মন্ত্রিত্বের দাবী কেউ করলে তাকে কষে থাপ্পড় লাগানো দরকার)।
তরুণ হওয়ায় এবং নির্বাচিত মন্ত্রীর কাজের পরিধি সম্পর্কে যেহেতু আমরা ধরে নিচ্ছি তার ভাল ধারনা আছে, সেহেতু তার চিন্তাভাবনা এবং সিদ্ধান্তগুলোও দেশের জন্য বেশ খানিকটা প্রগতিশীল হবে আশা করা যায়। দেশের টেকনিক্যাল মন্ত্রণালয়গুলো(যেমন জ্বালানী, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও প্রযুক্তি) এর থেকে ভাল ফল পাবে বলে আমার বিশ্বাস। আর কোন কোন ক্ষেত্রে যদি তরুণ মন্ত্রীর একার পক্ষে সিদ্ধান্ত বা কর্মপরিধি নির্ধারণ সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে সে তার মন্ত্রণালয়ের বয়োবৃদ্ধ উপদেষ্টার সাহায্য নিবে। তবে দিনের শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব কিন্তু পুরোপুরি মন্ত্রীর, উপদেষ্টার নয়।
**>>> মন্ত্রীর পর থেকে সচিব ও মন্ত্রণালয়ের বাদবাকি কাঠামো আগের মতই থাকবে। আমার মতে এই পরিবর্তনটুকু আনতে পারলেই দেশ ১৫-২০বছরের মধ্যে সত্যিকারের বাংলাদেশ হয়ে উঠবে।
আমার এই কাঠামোতে অনেক ফাঁক আছে আমি জানি, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ফাঁকগুলো আমি নিজেই বলে দিচ্ছিঃ
- প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন
- মন্ত্রীর অভিজ্ঞতার অভাব
- মন্ত্রী নির্বাচনের সময় সম্ভাব্য মন্ত্রীর নাম কারা প্রস্তাব করবে?
- যেহেতু এমপিরা হবেন জাতীয় ভোটে নির্বাচিত, তারা অবশ্যই রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হবেন। মন্ত্রী নির্বাচনের সময় এই পক্ষপাত কিভাবে মিনিমাইজ করা যায়?
এই খুঁতগুলো ছাড়াও আপনাদের চোখে আরো প্রশ্ন জাগতে পারে, নির্দ্বিধায় জানান। চিন্তাভাবনা করে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। আর আমি ভাই সামান্য ছাত্র মানুষ; সমাজবিজ্ঞান, পলিটিকাল সায়েন্সের ও ছাত্র না যে এই বিষয়ের খুঁৎগুলো সহজে ধরতে পারবো। আশা করি আপনারাই ভুল ধরিয়ে দিবেন।