বার্ধক্য জীবনের শেষ পর্যায়ের স্বাভাবিক পালাবদল। সাধারণত চল্লিশোর্ধ্ব বয়স থেকে শরীরের ক্ষতিপূরণের ক্ষমতা কমতে থাকে। ধীরে ধীরে যথেষ্ট ক্ষতিপূরণের অভাবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে স্থায়ী পরিবর্তন চলে আসে। এ পরিবর্তনের নাম বার্ধক্য। আমাদের দেশে প্রবীণদের বয়সসীমা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। তবে ৬০ বা তার ঊর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তিকে সাধারণত প্রবীণ হিসেবে গণ্য করা হয়। আমাদের দেশে অবশ্য ৬০ বছর বয়সের আগেই বুড়িয়ে যান বেশিরভাগ মানুষ। তাই এই বয়সের কিছু রোগ যা থেকে সতর্ক থাকা উচিত-
বাত
বিভিন্ন ধরনের বাত যেমন ফাইব্রোসাইটিস, মাইওসাইটিস, নিউরাইটিস, গাউট, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, সপনডাইলোসিস সাধারণত একটু বেশি বয়সেরই রোগ।
এই ধরনের অসুখ বার্ধক্যের সবচেয়ে বেশি কষ্টদায়ক, স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে একেবারে ব্যাহত করে দেয়।
হাড়ের ক্ষয়
হাড়ের ক্ষয়রোগ একটি নীরব ঘাতক, যা মানুষকে আস্তে আস্তে ক্ষতিগ্রস্ত ও পঙ্গু করে এবং মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। তীব্র ব্যথা, বেঁকে যাওয়া এবং হাড় না ভাঙা পর্যন্ত বোঝা যায় হাড়ে মরণব্যাধি ক্ষয়রোগ হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কোনো সুনির্দিষ্ট চিহ্ন ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে নীরবে এ রোগ শরীরে থাকে।
উচ্চ রক্তচাপ
উচ্চ রক্তচাপ সাধারণত কোনো লক্ষণ সৃষ্টি করে না কিন্তু তা থেকে তৈরি জটিলতা সৃষ্টি করে তাই আশ্চর্য হবেন না যদি আপনার ডাক্তার বলেন, আপনার উচ্চ রক্তচাপ আছে কিন্তু আপনি নিজে বুঝতে না পারেন। এই অসুখ এতটাই স্বাভাবিক যে, প্রত্যেক ব্যক্তিই ৬ মাস অন্তর রক্তচাপ পরীক্ষা করানো উচিত। উচ্চ রক্তচাপের চিকিত্সা সারাজীবন চলে যদিও ওষুধের মাত্রা কম করা যেতে পারে কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন যে রক্তচাপ একবার কমালে চিকিসার প্রয়োজন নেই। হয়তো অসুস্থ বোধ করবেন না কিন্তু হাইপারটেনশন খুব গুরুতর শারীরিক সমস্যা এবং তার চিকিত্সা দরকার। রক্তচাপ ওষুধের মাধ্যমে কমানো যায় এবং ওষুধ না খেলে আবার বেড়ে যেতে পারে।
স্ট্রোক
স্ট্রোক হলো ভ্যাস্কুলার কারণে দ্রুত বিকাশ হওয়া মস্তিষ্কের অসুখ, যার লক্ষণ ২৪ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে থাকে এবং মৃত্যু হতে পারে। সাধারণ স্ট্রোকের লক্ষণগুলো হলো জ্ঞান হারানো এবং পেশির পক্ষাঘাত ২৪ ঘণ্টার কম সময়ে ধরে থাকা ঘটনা। বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি স্নায়ুগত বৈষম্য স্ট্রোকই হয় এটি মৃত্যুর প্রথম তিনটি কারণের মধ্যে পড়ে।
মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা
মানসিক পরিবর্তন-যেমন দুর্বল স্মৃতিশক্তি, অনমনীয় ও কঠোর নিয়মানুবর্তিতাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, কোনো ধরনের কোনো পরিবর্তনে অনীহা এই জাতীয় ধ্যান-ধারণা দেখা দেয় বার্ধক্যে। অবসর গ্রহণের পর আয়ও কমে যায়, তাতে প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার মান খানিকটা পড়ে যেতে বাধ্য, সেই কারণে মানসিক ও সামাজিকভাবে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা অবশ্যম্ভাবী।
আলঝেইমার
কোন রোগটা নিয়ে মানুষের সবচেয়ে বেশি ভয়? একবাক্যেই বলতে হবে, ক্যান্সার। তার পরের স্থানে রয়েছে যে-ব্যাধি তার নাম আলঝেইমার। এটা এক অদ্ভুত রোগ যা মস্তিষ্ককে দুর্বল করে দেয়, ভুলিয়ে দেয় চারপাশের পরিবেশ। স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে যায় মানুষ। সাধারণত বুড়ো বয়সে এটা বেশি হয়।
বিভিন্ন সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে দেখা গেছে, লক্ষণগুলো স্পষ্ট হওয়ার অন্তত এক দশক আগে এ রোগ বাসা বাঁধতে শুরু করে। বিজ্ঞানীদের অনেকেই তাই মনে করেন, আগেভাগে পরীক্ষা করিয়ে নিলে তা পরবর্তী সময়ে চিকিত্সার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। সামনের গুরুতর চাপের জন্য প্রস্তুত হতে পারবে পরিবারের লোকজন।
অস্টিওআর্থ্রাইটিস
বয়স্ক রোগীদের হাড়ের ব্যথা বা অস্থিমজ্জার ব্যথা খুব হয়। প্রথমেই চিকিত্সকের শরণাপন্ন হয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যথার স্থান ও কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হোন। বয়স্ক রোগীদের প্রায়ই কিডনির সমস্যা থাকে। তাই আর্থ্রাইটিস বা এ রকম ব্যথার জন্য তাদের বেশি ব্যথার ওষুধ না খাওয়াই ভালো। বরং ওষুধের পরিবর্তে ব্যায়াম বা ফিজিওথেরাপি বেশি কার্যকর।
(সংগৃহীত)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১:২৬