somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অচেনা বালিকার সনে প্রেম ছিল কিনা জানি না

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টং দোকানে চা খেয়ে আগের মত আরাম পাওয়া যায় না। কলেজের সামনের দোকানগুলোর মধ্যে এই একটা দোকানেই সারা বছর ভীড় লেগে থাকে শুধুমাত্র এক কাপ সুন্দর চায়ের জন্য।

একদিন চা খেতে খেতে আলফাজ বলল, চৌধুরী শোন্! কলেজে তো উঠলাম, এবার একটা প্রেম আমি করমুই করমু। বাপ-মা'র ভয়ে তো এতদিন কিছু করতে পারলাম না। এখন বাসা থেকে মোবাইল ফোন যখন পাইসি প্রেমটাও জুত করে করা যাবে, কি বলিস?

শুনে আমি হাসি। তবে অস্বীকার করব না, মনে মনে যে কলেজে উঠার একটা আনন্দ কাজ করছিল সেটা যেন আলফাজের কথায় পূর্ণতা পেল।

একটা বন্ধু সার্কেলের মধ্যে নানান ধরণের বন্ধু থাকে। প্রত্যেকে কিছু কিছু ব্যাপারে ভিন্ন, কিন্তু শেষ কথাটা সবারই একই হয় যেখান থেকে বন্ধুত্ব সম্পর্কটা গড়ে উঠে। গালিব নামের এক বন্ধু ছিল। তার কাছে কম করে হলেও পঞ্চাশটা মেয়ের ফোন নাম্বার থাকত আর তা প্রতিনিয়তই নতুন নতুন মেয়ের নাম্বারে আপডেট হত। কিন্তু দুঃখের বিষয় বেচারাকে কোনদিন কোন মেয়ের সাথে ডেটিংয়ে যেতে দেখিনি।

একদিন ক্লাশ বিরতি চলছিল। গালিব, আলফাজ আর আমি চায়ের দোকানে সিঙ্গারার সাথে কাপে চুমুক দিতে থাকি। আলফাজ গালিবকে বলে, দোস্ত পাইছিস্ যেমনটা বলসিলাম?

গালিব বলে, তা পাইসি। তয় কোন ছেলের সাথে ফোনে কথা বলে কিনা নিশ্চিত নই। নাম্বারটা নে, কথা বইলা দেখ্।

আমি বুঝতে পেরে হেসে জিজ্ঞাস করি, তা আলফাজ কি বলেছিল রে তোকে, গালিব?

আলফাজ নিজেই বলে, আরে বুঝিসই তো! প্রেম তো করমু একখান, দেইখা শুইনা করা লাগব না? আজকাল অনেক মাইয়্যাই তো হয় রিজেক্টেড নয়ত একাধিক প্রেমিক থাকে।

গালিব মোবাইল ফোনে নাম্বার বের করে এগিয়ে দিয়ে বলে, নে সেভ কর।

আলফাজ বলে, সেভ করব মানে? তুই তো নিশ্চিত না যে মাইয়্যা অন্য পোলার লগে কথা বলে না। এইটা নিমু না। তুই খাঁটি মাইয়্যার নাম্বার দিবি।

গালিব দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। কি মনে করে আমার দিকে ফিরে বলে, তুই নিবি? আমি নাম্বারটা সেভ করে নিই। জানি কখনও ফোন করা হবে না, তাও গালিবকে নিরাশ করলাম না।

সপ্তাহ্ খানেক পর কলেজের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে বাসায় সময় কাটছিল না। কি মনে হতে মোবাইলটা হাতে নিলাম। কন্টাক্টস্ লিস্টে গালিবের দেয়া নাম্বারটা বের করে দেখতে লাগলাম। এইরে মেয়েটার নাম তো গালিবকে জিজ্ঞাসই করা হয়নি। থাক নাম দিয়ে কি হবে? আমি তো ফোন করব না। ভাবতে ভাবতে একটা মিস্ কল দিয়ে দিলাম নাম্বারে। এটা কি হল? সাথে সাথে মিস্ কল ব্যাক পেলাম। একটু সাহস বাড়ল। আমি মিস্ কল দিই আর সাথে সাথে ব্যাক পাই। এভাবে চলতে থাকল দুইদিন।

একদিন রাত দেড়টার দিকে ফোন পেলাম। রিসিভ করে কথা বললাম। জানতে পারলাম মেয়েটা একটা স্কুলে প‌ড়ে ক্লাশ নাইনে। নাম তিশা। এরপর প্রতিদিনই কথা হতে লাগল। সেই ফোন করত, ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলত। মাঝে মাঝে ভদ্রতার খাতিরে আমাকেও ফোন করতে হয়েছিল।

একদিন বলল, আমাকে কিস্ কর। আমি আকাশ থেকে পরলাম। বলে কি এই মেয়ে! দেখলাম সে সত্যি সত্যি ফোনে কিস্ করতে লাগল। সেদিনের আগ পর্যন্ত আমি জানতাম না, ফোনে কিস্ করাটা এতটা নোংরা শোনায়।

গালিবকে সব কথা খুলে বললাম। সে হেসে খুন। সে ভাবেনি আমার সাথে এমন কিছু ঘটতে পারে। আর সে কিছুই জানে না মেয়ে সম্পর্কে।

একদিন সকালে ঘুম ভাঙল রিংটোনের শব্দে। তিশার ফোন! রিসিভ করলাম। ওপাশ থেকে বলল, হ্যালো তুমি কে? পুরুষের কন্ঠ! আমার কলজে শুকিয়ে কাঠ। আমি কোনমতে আমার নাম বললাম। তারপর কোথায় পড়ি, কোথায় থাকি তাও জানতে চাইল। আমি নির্দিষ্ট করে না বলে, শুধু কলেজের নাম বললাম। তারপর আমাকে যথারীতি হুমকি দেয়া হল এভাবে, যদি আর কোনদিন আমার বোনের সাথে কথা বলতে দেখি তোমার খবর আছে!
যাইহোক, খুশি লাগল যে অন্ততঃ তুমি করে বলেছে। আমি কিছু বলার আগেই লাইন কেটে গেল।

সেদিন রাতে আবার ফোন আসল। আমি রিসিভ করে বুঝার চেষ্টা করলাম কে কথা বলে নারী নাকি পুরুষ! নাহ্ নারী। তিশা বলল, এই তোমাকে ভাইয়া কি বলেছে? আমি পুরো কথোপকথন বর্ণনা করলাম। সে খুব দুঃখিত হল। বলল, আমার কারণেই তোমার এই অবস্থা তাই না?

এর পর হঠাৎই তার ফোন আসা বন্ধ হয়ে গেল কেন জানি না। আমি ফোন করেও মোবাইল বন্ধ পেলাম।

তিন মাস পর নতুন নাম্বার থেকে ফোন। রিসিভ করতেই মেয়েলী কন্ঠ, হ্যালো আমি তিশা বলতেসি।

আমি যেন তাকে ভুলে গিয়েছি, কোন তিশা?

- তুমি আমাকে চিনতে পারছ না?

- ও হ্যাঁ! তিইইইশা। কোথায় ছিলে এতদিন?

- আর বলো না। আমার মোবাইল ছিল না। বাসা থেকে নিয়ে নিয়েছিল।

- ও আচ্ছা।

- এই আমি এখন কাতালগঞ্জ মোড়ে আছি। তুমি কি আসবা?

- এখনই? আমার বাসা ভর্তি মেহমান। এখন তো যাওয়া যাবে না!

- প্লিজ আসো না। আমি ঘন্টা খানেক থাকব। (পাশে বান্ধবীদের কথা শুনতে পাচ্ছিলাম।)

- শুনো, কোনভাবেই সম্ভব না।

- প্লিজ আসো না একবার। কষ্ট করে আসলে কি হয়?

- বুঝতে চেষ্টা কর একবার, আমার সমস্যা হবে।

- ও আচ্ছা। ঠিক আছে, রাতে কথা হবে। ভালো থেকো।

এরপর আর কোনদিন তার সাথে কথা হয়নি। তার মোবাইল বন্ধ পেতাম। তার ঠিকানা বের করা গেল না। গালিবের কাছ থেকে তার নতুন কোন নাম্বার পাওয়া গেল না। তখন কেমন যেন খারাপ লেগেছিল। পাঁচ মাস পর আমিও নাম্বার পাল্টালাম। একদিন মোবাইল হারিয়ে তার নাম্বার সব হারিয়ে ফেললাম।

ঘটনা পাঁচ বছর আগের। জানি না কে ছিল এই বালিকা? জানার আগেই হারিয়ে গেল। কোনদিন জানতেও পারব না। এখন মনে হয় সবই ছিল অপ্রাপ্তবয়স্কা মেয়ের পাগলামী। অথবা হয়ত একটা ফালতু মেয়ে ছিল সে। তবুও তার জন্য হৃদয়ের এক কোণে এতটুকু ভালবাসা কি তৈরি হয়েছিল? যার কারণে এখনও মাঝে মাঝে রাত দেড়টার দিকে মনে হয় এই বুঝি তার ফোন আসবে। কিন্তু না, সেটা তো হওয়ার নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৮:০১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×