"ঐ দেখা যায় তালগাছ/ঐ আমাদের গাঁ/ঐ খানেতে বাস করে কানা বগির ছা...।"
কিম্বা -
"তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে/সব গাছ ছাড়িয়ে/ উঁকি মারে আকাশে..।"- ছোটবেলায় তালগাছ নিয়ে লেখা এরকম নানা ছড়া ও কবিতা আমরা পড়ে আসছি। পরিচিত হয়েছি লম্বা দেহের অধিকারী তাল বৃক্ষের সঙ্গে। বাংলা সাহিত্যে তালগাছ নিয়ে রয়েছে আরও নানা গল্প, কবিতা।
'চির-উন্নত শির'....
সেই ছেলে বেলা থেকেই আমি কোথাও তালগাছ আর ঘোড়া দেখলেই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখি এবং সুযোগ থাকলে ছবি তুলি। কারণ, তালগাছ আর ঘোড়ার তেজস্বীতা, এদের ঔদ্ধত্য, 'চির-উন্নত শির' আমার প্রেরণা। অভ্যাসটা এখনো আছে।
তালগাছ পাম গোত্রের অন্যতম দীর্ঘ গাছ, যা উচ্চতায় ৩০/৪০ ফুট পযর্ন্ত হয়ে থাকে। একটি তালগাছ সাধারণত ১শ বছর পযর্ন্ত জীবিত থাকে। তাল গ্রীষ্মকালীন ফল। তালের বীজ ও ফল উভয়ই খাওয়া যায়। তালবীজ বা শাঁস খেতে খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। তালে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ও সি। এছাড়া আয়রন, পটাসিয়াম, জিংক ও ক্যালসিয়ামসহ নানা খনিজ উপাদান। তালের রস দিয়ে গুড়, মিছরি ও তাড়ি তৈরি করা হয়। পাকা তালের মিষ্টি গন্ধে অনেকেরই ভরে ওঠে মন। তালের তৈরি পিঠা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। যদিও আমি পাকা তালের ঘ্রাণ এবং পিঠা পছন্দ করি না।
এছাড়া গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে শীতল পরশ বুলায় তাল পাতার হাত পাখা। তালপাতা দিয়ে ঘরের ছাউনিও তৈরি করা হয়। তালগাছ দিয়ে তৈরি হয় ঘর ও নৌকা।
বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে তালগাছের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষজ্ঞদের মতে, তালগাছ উঁচু হওয়ায় বজ্রপাত তালগাছের ওপর পড়ায় মানুষের জানমাল রক্ষা পায়।
আগে বসতবাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তার ধারে ও ফসলের ক্ষেতে তালগাছ ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু বতর্মানে তালগাছ আর তেমন চোখে পড়ে না। বহু উপকারী এ বৃক্ষটি প্রকৃতির মাঝ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে।
আমি আমাদের গ্রামের বাড়িতে এবং সাভারের একটা আবাসিক প্লটের রাস্তায় তালগাছ লাগিয়েছি। অন্যের যায়গায়ও সুযোগ পেলেই তালগাছ(বীজ) রোপণ করেছি অনেক। উত্তরাধিকার সূত্রে এবং নিজে তালবীজ লাগিয়ে অনেক তালগাছের মালিক হয়েছি কিন্তু একটা অপূর্ণতা রয়েই গেছে....
অনেক বছর আগে, আমার 'প্রিয় বন্ধু' আমাকে বলেছিল, "আমার জন্য দুটো তালগাছ লাগিও....."- আমি তার কথা রেখেছি। তারজন্য দুটি নয়, অনেক গুলো তালগাছ লাগিয়েছিলাম.... এখনো তারজন্য তালগাছ লাগাই- যদিও প্রিয় বন্ধু কথা রাখেনি....
তারপর?
দীর্ঘ পিপাসিত বুক নিয়ে জেনেছি নির্বিকার "ফড়িং- এর বোধ" চিরন্তন কাব্য হয়ে ওঠে।
চৈত্রের রৌদ্রমাখা দুপুরের মতই খাঁ খাঁ করে সেই বোধ!
তুমি নেই, আমি নেই, কেউ নেই, কোত্থাও কেউ থাকে না।
তারপর থেকে আমি চুপ হয়ে গেছি,
শুধু স্বপ্ন এঁকেছি, স্বপ্ন দেখেছি, অপ্রেম মেখেছি;
আমি চুপ করে গেছি।
আমি চুপ হয়ে গেছি!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:৪৪