টায়ার আবিস্কারের কথা......
জেনে অবাক হবেন- টায়ার আবিস্কার করেছিলেন একজন বিখ্যাত পশু চিকিৎসক!
জীবনের সবচেয়ে ভালো সময় হলো দুরন্ত কৈশোর। এই কৈশোরে সব ছেলের স্বপ্নের বাহন হলো একটি বাইসাইকেল। এখন সব বাইসাইকেলের চাকায় থাকে রাবারের টায়ার। শুধু বাইসাইকেল কেন প্রায় সব স্থলযানবাহনের চাকায় থাকে রাবারের টায়ার। কিন্তু ১৮৮৭ সালের আগে চাকার উপর থাকত না এমন টায়ার।
জন বয়েড ডানলপ। একজন ভেটেনারিয়ান চিকিৎসক। তিনিই আবার “ডানলপ টায়ার” কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতা। ৫ই ফেব্রুয়ারী ১৮৪০ সালে স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহন করেন। ভেটেরিনারি সার্জন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ভেটেরিনারি মেডিসিন বিষয়ে পড়তে এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন।
ডিভিএম ডিগ্রী অর্জনের পর নিজের ক্যারিয়ার শুরু করতে ১৮৬৭ সালে তিনি স্কটল্যান্ড থেকে আয়ারল্যান্ডে চলে আসেন। সেখানে তিনি তার ভাই জেমস্ ডানলপের সাথে মিলে “ডওনি ভেটেরিনারী ক্লিনিক” প্রতিষ্ঠা করেন। এই ক্লিনিকেই তিনি ভেটেরিনারি প্রাক্টিস শুরু করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে প্রসিদ্ধ ভেটেরিনারিয়ান হিসেবে পরিচিতি পান। তৎকালীন আয়ারল্যান্ডে ভেটেরিনারিয়ানদের মাঝে তিনি অন্যতম প্রসিদ্ধ ভেটেরিনারি প্যাক্টিশনার ছিলেন।
১০ বছর বয়সী ছেলের স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে বাবা তার ছেলেকে নিয়মিত সাইকেল চালাতে নিয়ে যেতেন। সেখানে ছেলে দেখল শুধু চাকাসহ যে সাইকেল এগুলো চালাতে অনেক সমস্যা হচ্ছে । কিন্তু সেই চাকার উপর যদি রাবারের আস্তরন দেওয়া যায় তবে সাইকেল চালানো অনেক সহজ হয়ে যায়। এরপর এই ছেলেই পরবর্তীতে অনেক গবেষনা করে।
তবে চাকার চারিদিকে লোহার বেড় পরানোর সূচনা হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দের দিকে, সেল্টিক ঘোড়ার গাড়িতে। কিন্তু সেই থেকে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত চাকার ইতিহাসে তেমন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিই হয়নি। তবে ১৮০২ সালে এই খরা কাটান জি এফ বাউয়ার। তিনিই প্রথম পেটেন্ট নেন ধাতব তার সমৃদ্ধ স্পোকের। তবে আরও অনেক বছরের প্রচেষ্টার পর, গোলাকার ধাতব তারের স্পোক একটি ভদ্রস্থ পর্যায়ে পৌঁছায়। এখনো সাধারণ বাইসাইকেলে এই স্পোকের চাকাই ব্যবহৃত হয়।
ধাতব তারের স্পোকের পরবর্তী ধাপ ছিল নিউম্যাটিক টায়ার, অর্থাৎ যেসব টায়ারের ভিতরে বায়ু প্রবেশের মাধ্যমে স্ফীত করা হয়। ১৮৪৫ সালে আর ডব্লিউ থম্পসন এধরনের টায়ারের পেটেন্টের জন্য নিবন্ধন করেন।
আর এই টায়ারকে আরও উন্নত করে তোলেন জন ডানলপ। সে সময়ে ব্যবহৃত শক্ত রাবারের বদলে তিনি তার নিজের তৈরি নিউম্যাটিক টায়ার ব্যবহার করেন এবং সেটির পেটেন্ট নেন।
তিনি ১৮৮৭ সালে প্রথম নিউমেটিক টায়ার প্রস্তুত করেন (যদিও আর. ডাব্লিউ. থমসনকে প্রথম আবিষ্কারক বলা হয় কিন্তু তিনি এটি বাস্তবিক ও বানিজ্যিকভাবে প্রস্তুত করতে অসফল হন)। ৭ ই ডিসেম্বর ১৮৮৮ সালে তিনি তার তৈরী নিউমেটিক টায়ারের স্বত্ত্ব লাভ করেন। ধীরে ধীরে তার সৃষ্টি টায়ার জনপ্রিয় হতে থাকে। একবার এক সাইকেল প্রতিযোগীতায় জন বয়েড ডানলপের সৃস্টি নিউমেটিক টায়ার ব্যবহার করে এক সাইক্লিস্ট প্রথম হয়ে যায়। এরপরেই এই টায়ারের জনপ্রিয়তা গগনচুম্বী হয়ে পরে।
দীর্ঘ ২৫ বছর প্রানী চিকিৎসা করার পর ১৮৯২ সালে তিনি অবসর নেন এবং তার এক সহকর্মীর সাথে টায়ার প্রস্তুতকারক কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন।
(টায়ার উইকিপিডিয়া থেকে ভাবান্তর)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:৪৪