somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শৈশব ভ্রমন-১

৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের পর্ব
জেদ্দাহ বিমান বন্দরে আমরা যখন বোর্ডিং করব তখন এক বিশাল দেহী সৌদি কর্মকর্তা এলো সবার টিকেট আর পাসপোর্ট যাচাই করতে, আমরা সবাই যারা নাইজেরিয়ার পথে সবাই এক জায়গাতে বসা ছিলাম। যা হোক সবার টিকেট নিয়ে লোকটা যাবার সময় দূর্ঘটনাটা ঘটলো......। সেই এরাবিয়ান কুমড়ো পটাশ সবার টিকেট নিয়ে হোচট খেয়ে ধপাশ হল সবার সামনে আর তার হাতে থাকা টিকেটগুলো ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে। সবাই হেল্প করে গুছিয়ে দিতে সে সেগুলি নিয়ে চলে গেলো বোর্ডিংএ। কিন্তু টিকেট ফেরৎ দেবার সময় দেখা গেলো আম্মার টিকেট নেই। আম্মা ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেও বেচারা নাছোড়বান্দা--- তার কথা হলো আম্মাই টিকেট ছাড়াই বিমানবন্দরে এসেছে। ওদিকে শিডিউল ফ্লাইট মিস......অবশ্য সেই বাংলাদেশি আন্টি রয়ে গেলেন আমাদের সাথে। আম্মার সাথে উনিও সবাইকে বুঝানোর চেষ্টা করতে লাগলেন তবে কে শুনে কার কথা? যে কোন যায়গায় গেলেই ওদের কথা, “ ও ফ্রম বাংলাদেশ...... মিসকিন!” আরে অবাক করা কথা বাংলাদেশ থেকে দু চারজন মিসকিন আসছে বলেই কি সারা বাংলাদেশ মিসকিন হয়ে গেল নাকি? তবে আল্লাহ সুবহানাহুতা’লা যেমন বিপদ দেন তেমন বিপদ থেকে উদ্ধারের পথও তৈরি করে দেন। আম্মা এয়ারপোর্টের এক কেয়ারটেকার মহিলা পেয়ে গেলেন আপাদ মস্তক কালো বোরখতে ঢাকা! আমরা দু ভাই হৈ চৈ আর ছুটা ছুটি করে খেলছিলাম তাই মহিলা ভিষন বকা দিয়েছিলেন আমাদের। তবে বকা দিলেও মহিলা যে ভিষন পরোপকারী তা পরে বুঝেছিলাম...... মার কাছ থেকে আমাদের সব বৃতান্ত শুনেই আমাদের নিয়ে গেলেন এক উচ্চপদস্থ লোকের কাছে। আপাদ্মস্তক এরাবিয়ান পোষাকে ঢাকা লোকটি আমাদের কোন মিসকিন উপাধিও দিল না বরং আম্মাকে নিজের বোন হিসাবে সম্মোধন করে আমাদের সমস্ত বৃতান্ত শুনলেন। তারপর সেই কুমড়ো পটাশকে ডেকে জিগ্নেস করলেন এবং আম্মার জন্য নতুন টিকেটের ব্যবস্থাও করে দিলেন। প্রিয় নবীর বংশধরদের মধ্যে নবীর স্বভাবের মানুষ থাকবে না তা কি হয়। যা হোক আমরা পরবর্তি যাত্রার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন ভাইয়া আমাকে ডাক দিলো, “এই দেখে যা!”। বিমানবন্দরের বাথরুমগুলো ছিলো খুব পরিস্কার আর সুন্দর। ভিতরে যে টয়লেট টিস্যু গুলি থাকত ফুলের ছবি আর সুগন্ধ যুক্ত। বলতে লজ্জা নেই আমরা দু-ভাই বিভিন্ন রঙ্গের এই টিস্যু গুলি সংগ্রহ করে পকেটে পুরে রাখতাম আর মাঝে মাঝে সুবাস নিতাম। ভাবলাম ভাইয়া বুঝি এমন কোন নতুন টিস্যু আবিস্কার করে আমাকে দেখতে ডাকছে। কিন্তু যা দেখলাম তাতে মোটামুটি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। এক চাইনিজ (বা চাইনা ঘরনার কেউ) বাথরুমে তার প্রাতঃহিক কর্ম সাধনে ব্যস্ত আর আরেকজন তার এ অবস্থাতেও তার সাথে গল্প চালিয়ে যাচ্ছে! কি তাজ্জব ব্যপার বটে। আমাদের যে কাজটি আমরা অতি সংগোপনে লোক চক্ষুর আড়ালে করতে চাই আর সেই কাজের সময় গল্প করা সত্যই চাইনিজদের পক্ষেই সম্ভব। আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য। এবার বিমানে উঠার আগে বোর্ডিং এ দেখলাম আনেক কালো চেহারার নিগ্রদের আধিক্য। তবে তাঁদের অধিকাংশের মধ্যে এক ধরেনের অস্থিরতা লক্ষ্য করা যচ্ছিল। আমরা সাধারণত বিমানে বোর্ডিঙ্গের সময়ই বিমানে সিট নাম্বার পেয়ে যেতাম তাই বিমানে আগে পরে কে গেল তা নিয়ে কারো চিন্তা করতে হতো না...... সিট ত টিকেটেই দেওয়া আছে। আর বিমানেও উঠেছিও টারমাকের মধ্য দিয়ে আর সেবার নাইজেরিয়ার জন্য গালফ এয়রের বিমানটা দাঁড়িয়েছিলো সিড়ি লাগিয়ে। বোর্ডিং এর আনাওন্সমেন শেষ হতে সেই নিগ্রো পুরুষ মহিলারা এইসা দৌড় বিমানের উদ্দেশ্যে...... কিছু মহিলা আবার বাচ্চাদের পিঠে কাপড় দিয়ে বেধে নিয়েছে। বাচ্চা গু্লো পিঠে বসেই ইতি-উতি তাকাচ্ছে বারে বারে। আমরা অবশ্য ওদের মত না দৌড়ে আস্তে আস্তে সবার শেষেয় বিমানে উঠলাম। কিন্তু যেয়ে দেখি সিট দখল...... বিশাল দেহী এক নিগ্রো তার ফ্যমেলি নিয়ে আমাদের ও সেই চাচির পাশাপাশি সিট সব দখল করে বসে আছে। মুখে একটাই কথা “নো নো”। শেষে এয়ার হোস্টেজও হাল ছেড়ে আমাদের পিছনের সিটেই বসিয়ে দিলো। বুঝলাম বোর্ডিং শেষে তারা কেন এইসা দৌড় দিছিলো! যখন নাইজেরিয়া এয়ারপোর্টে নামলাম তখন আনেক মুখের মধ্যে আব্বার চিন্তিত মুখখানি দেখতে পেলাম। আমাদের দেখেই মুখখানি হাসিতে উদ্ভাসিত হোল...... শুনলাম এই দেড় দুইটা দিন আব্বা আমাদের অপেক্ষায় এয়ারপোর্টেই কাটিয়েছেন। প্রিয়জনের সাথে বহুদিন পর সাক্ষাৎ কতই না মধুর!!!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৪৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×