somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সত্যি নয়, গল্প

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আর মাত্র এক ঘন্টা। অর্থাৎ চারটা বাজতে আর মাত্র এক ঘন্টা বাকি। তারপরই তারা আসাবে। তারা প্রায়ই আসে। তারপর চলে যায়, কিন্তু কিছুই হয় না তাদের। যেভাবে আছে, সেভাবেই থেকে যায় সে। মাঝখান দিয়ে সময়টা এগিয়ে যায়। সে নিজের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে ঘরির দিকে তাকায় সেখানে সেকেন্ডের কাটাটি টিকটিক করে এগিয়ে চলে। সে মনে মনে বলে উঠে, হে সেকেন্ডের কাটা, তোকে কি ভূতে তারা করেছে যে, তুই দৌড়াচ্ছিস। তোর কি একটিবার বিশ্রামের দরকার পড়ে না? একটিবার! অন্তত আজ বিশ্রাম নিয়ে নে। ঘুমিয়ে পড়। ওই ঘন্টার কাটাটিকে কিছুতেই চারের ঘরে আসতে দিস না। লক্ষ্মী ভাইটি আমার! ...কিন্তু সেকেন্ডের যে বড়ই নিষ্ঠুর। সে তার নির্দিষ্ট গতিতে এগিয়ে চলে। টিকটিক ...টিক...টিক।
তার খুব করে ইচ্ছে করে, আজকে তারা না আসতে পারে। পথিমধ্যে তারা যেন কোনো নিকট আত্মীয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনতে পায়। অথবা এক েেত্র আরো নিষ্ঠুর হয়ে সে ভাবে। তাদের যেন কোনো দুর্ঘটনা ঘটে। নয়তো তাদের কেউ যেন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে যাতে তারা এখানে না এসে সরাসরি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হয়। তাতে হয়তোবা বেশি কিছু হবে না। না হোক, অন্তত আজকের জন্য তো সে বেঁচে যায়! অতন্ত আজকের জন্য তো তাকে আর অপমানিত হতে হয় না! অথচ এ সমাজটা কি না তৈরি হয়েছে তাকে অপমান করার জন্যই। সমাজের ভাগ্য ভাল। তার মতা নেই। মতা থাকলে সে ওই একচোখা সমাজকে ধুমরে-মুচড়ে ফেলতো। কি দরকার এই সমাজের? মানুষ নিজেই কি নিজের জন্য যথেষ্ট নয়? সমাজ তো শুঘু উপদেশ দিতে পারে। এটা করো না, ওটা করো না। এভাবে থেকে, ওভাবে থাকতে নেই। এটা থেকনা। তোমাদের একা থাকতে নেই। ওরা যদি একা থাকতে পারে। সে কেন, বা তারা কেন একা থাকতে পারবে না! হায় ঈশ্বর, তুমি তো সবাইকে সমাজ ভালবাসা। তবে সমাজ কেন ভাসে না! তোমার কাছে তো সব রংই সমান। তবে মানুষের কাছে কেন নয়। আর তুমি রং যতই সৃষ্টি করলেই তবে সবাইকে এক রঙের অধিকারী করলে না কেন? তবে কি তোমার মধ্যেও এ সমাজের ছায়া আছে?
সে আবারও তার নিজের দিকে তাকায়। ভাল করে নিজেরকে পর্যবেণ করে। এভাবে আস্তা খুঁজে পেতে চায়। পায় না। অথচ আজ কি না সে বিউটি পার্লার থেকে নিজেকে সাজিয়ে নিয়ে এসেছে। সেই ছোট বেলা থেকেই বিউটি পার্লারে যাওয়ার শখ তার। কিন্তু অতটা টাকা খরচ করে বাবাকে মাসের শেষে অর্থকষ্টে ফেলতে চাইনি বলেই তার সে ইচ্ছে এতদিন পূরণ হয়নি। আর আজ কি না বাবা নিজেরই এসে বিউটি পার্লারে যাওয়ার কথা বললেন! কি লজ্জা! কি লজ্জা!!

বাবাও নিশ্চয়ই লজ্জাবোধ করেছিলেন। তিনি কথাটি বলেছিলেন মাটির দিকে তাকিয়ে। সত্যি এরকম একটা পরিস্থিতিতে পড়ার আগে মৃত্যু হলেই সে বেঁচে যেত! সে তখন বলতে চেয়েছিল, বাবা, তুমি আমাকে জন্মদিলে কেন? কি দরকার ছিল অহেতুক নিজের জ্বালা বাঁড়ানোর? তোমরা দু’জন কি কোনো মতে জীবনটা চালিয়ে নিতে পারতে না? জীবনে বেঁচে থাকার জন্য সন্তান কি খুব প্রয়োজন? সন্তানহীন কেউ কি বেঁচে নেই এ জগতে? আজ জন্ম দিলেই যখন, আমার গায়ের রং দেখার পর আমাকে উঁচু পাহাড় থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিলে না কেন? এক সময় ঘন্টার কাঁটাটি চারের ঘর অতিক্রম করলো। আরো পরে যখন ঘণ্টার কাঁটাটি পাঁচ ছুঁই ছুঁই করছিল তখন আমাদের গল্পের প্রধান চরিত্র সাদিয়ার মনে হলো, আজ বোধ হয় ঈশ্বর তাকে কৃপা করলেন। আজ বোধ হয় তারা আসবে না। সে স্বস্তির নিঃশ্বাস পেল।... কিন্তু না। আমাদের ঈশ্বর এতটা দয়ালু নয়। তিনি ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি করে তাদের আসার সময়টাকেই কেবল দীর্ঘায়িত করেছিলেন। তাদের কোনো দুর্ঘটনার কবলে ফেলেননি। তাই যখন সাদিয়া তার পরনের যৎসামান্য গয়নাগাটি খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখনই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো এবং পূর্বপরিকল্পনা মাফিক, বরাবরের মতো, সে দরজার দিকে ধীর কম্পিত পায়ে এগুতে লাগলো।...
ঈশ্বর যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×