somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে কুমোন (Kumon)

০৭ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ সকালে খবরে দেখলাম যে জাপানের বিখ্যাত কুমোন পদ্ধতি এর বাচ্চাদের টিউটরিং সেন্টার বাংলাদেশে তাদের 'কোচিং সেন্টার' এর কাজ আরম্ভ করেছে। BRAC Center এর সাথে তাদের চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশে তাদের অপারেশন চালানোর জন্য।


কুমোন নিয়ে আমার উৎসাহ অনেকদিনের। এই কুমোন আমাদের পরিবারে যে পজিটিভ ইমপেক্ট রেখেছে তার কিছুটা বলার জন্যই এই পোস্ট....এখানে আমি কুমোন এর বিজ্ঞাপন করছি না কিন্তু আমি সব সময় তাদের পদ্ধতির এক জন স্ট্রং সাপোর্টার হিসাবে অন্যদের কে পরিচয় করে দিতে চাচ্ছি যাতে এর থেকে আমরা যে সুফল পেয়েছি, অন্যারা ও সেই সুফল টা পেতে পারেন।

আজ থেকে ৭-৮ বছর আগে আমি একবার জাপানে তাদের প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করি বাংলাদেশে এর প্রচার কিংবা সেন্টার খোলার জন্য কিন্তু তাদের উত্তর ছিল যে বাংলাদেশে তাদের পদ্ধতি এর কপিরাইট কেউ মানবে না, তাই তারা ইন্টারেস্টেড না (তারা মনে করে যে তাদের পড়ানোর ওয়ার্ক সিট- ফটোকপি করে অন্যরা অন্য নামে এই ব্যবসা করবে - কুমোন হয়ত সুমন নাম দিয়ে ব্যবসা আরম্ভ করবে অথবা অভিভাবক রা অংকের ওয়ার্কসিট কে ফটোকপি করে নিজেদের মাঝে বিলি করবে- কেউ সেন্টারে তার বাচ্চা কে দিবে না)।
এখন কিভাবে তারা তাদের কপিরাইট রক্ষা করবে জানি না তবে রক্ষা করা জরুরী কেননা এর দেশ ব্যাপি পরিসর বাড়ানো একান্ত জরূরী।

যদিও এখন কিছু সাইট ইললিগ্যালি কুমোন এর ওয়ার্কসিট এর পিডিএফ সলিউশন বুক সহ আপলোড করা আছে। কিন্তু আমি দেখেছি, অনলাইন এর পিডিএফ অথবা অন্য পেরেন্ট এর থেকে ফটোকপি করে নিজের বাচ্চার জন্য ইউজ করার জন্য অনেকেই চেস্টা করেছে এবং করছেন কিন্তু নিজে নিজে রুটিন করে ওয়ার্কসিট কমপ্লিট হয় না..। যখন সেন্টার এ ভর্তি করা হয়, তখন একটা দায়বদ্ধতা থেকে ই রুটিন করে ওয়ার্কসিট কমপ্লিট করা হয় কেননা একটা লেভেল পর্যন্ত্য কমপ্লিট না করলে পরের লেভেলেই যাওয়া যায় না।

যদিও এটা একটা টিউটরিং সেন্টার, এখানে কোন টিউটর থাকে না...সব স্টুডেন্ট দের প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট করে অংক/ইংরেজীর ৭-৮ পাতার ওয়ার্ক সিট কমপ্লিট করতে হয়। প্রতিদিন করতে হয়। সপ্তাহে একদিন সেন্টারে গিয়ে সেই ওয়ার্কসিট জমা দিয়ে সেখানে কোন ভুল থাকলে তা চেক করে পরের সপ্তাহের ওয়ার্ক সিট আনতে হয়...এভাবেই ৩ বছর এর বাচ্চারা আরম্ভ করে 1 +1 =2; 2+ 2 = 4; 2+1=3 এরকম সিম্পল অংক দিয়ে
৫ থেকে ৬ সপ্তাহ ধরে এই একই যোগ অংক করতে হয় প্রতি দিন অনেক বাচ্চা হাপিয়ে উঠে এবং ছেড়ে দেয় পরের লেভেল এ আর যায় না। কিন্তু যারা লেগে থাকে তারা জানে যে এই একই জিনিস বার বার করতে করতে যে ব্রেইন যেভাবে সার্প হচ্ছে সেটা একদিনে কেউ বুঝতে পারে না ...আর রুটিন করে প্রতিদিন ৩০ মিনিট ধরে ওয়ার্কসিট কমপ্লিট করতে করতে পড়ালিখার যে একটা অভ্যাস হয়ে যায় সেটা পরবর্তি জীবনে ভীষন ভাবে উপকারি অভ্যাসে পরিনত হয়।

ধাপে ধাপে বাচ্চারা উপরের লেভেলে এর অংক করতে থাকে, আপনি যদি ৩ বছর এর বাচ্চা কে কুমোন এ ভর্তি করেন, তাহলে লেভেল অনুযায়ী অস্টম শ্রেনীর আগেই ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস এর ওয়ার্কসিট করবে। নিচে বাচ্চাদের একটা ওয়ার্কসিট এর ছবি দিলাম



আমরা যখন আমেরিকায় আসি পড়ালিখা করার জন্য, বাসা ভাড়া , বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি ইত্যাদি দিতে পারতাম না সময় মত কিন্তু বাচচাদের কুমোন এর ১৪৫ ডলার এর ফি আমরা কখনই বন্ধ করে নাই শত কস্ট করে হলেই মাস শেষে ফি টা ঠিকই জমা দিতাম। ....আর তার সুফল হল, আমাদের মেয়ে এবং ছেলেই দুজনই বর্তমানে পৃথিবীর সেরা দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির চান্স পেয়েছে, সেই ড্রিম বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ভর্তি হওয়া তো দুরের কথা, ভর্তি এর অ্যাপ্লিকেশন করার ই সাহস ও 'যোগ্যতা' ছিল না।

এই কুমোন এর শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে হাইস্কুলে থাকতেই সব এপি (AP= Advanced Placement) কোর্স এ ৫/৫ নিয়ে শেষ করে। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলি হাই স্কুল (গ্রেড ১২) এর এপি কোর্স গুলিতে যদি ৫/৫ থাকে, তাহলে ক্রেডিট ট্রান্সফার করতে দেয়, এই সুযোগ এ এক বছর এর সমান বিশ্ববিদ্যালয় এর ক্রেডিট হাই স্কুল থেকেই ট্রান্সফার হয়ে যাওয়াতে ৪ বছর এর প্রোগ্রাম তিন বছরেই শেষ করা যাচ্ছে, তাতে এক বছর টিউশন ফি এবং হলের খরচ বেচে যাচ্ছে।

আমাদের বাচ্চাদের দেখে আশেপাশের অনেক বাংগালী পরিবার তাদের বাচ্চাদেরও কে কুমোন এ দিয়েছিল, কিন্তু যে ডেডিকেশন, কমিটমেন্ট, এবং ডিসিপ্লিন লাগে এটাতে লেগে থাকতে, তার বড়ই অভাব.....৭ -৮ মাস যাওয়ার পরই প্রায় সবাই খ্যান্ত দিয়েছে।

যত ছোট বয়স থেকে এই রুটিন ওয়ার্ক এর টিউটরিং এ আপনার সন্তান কে দিবেন, তত বেশী ই আপনার সন্তান গড়ে উঠবে মডেল স্টুডেন্ট হিসাবে...আমি আশা করি বাংলাদেশ কুমোন শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক না হয়ে সমস্ত দেশে ছড়িয়ে পড়ে....তবে তাদের ফি টা বাংলাদেশের অবস্হা অনুযায়ী নির্ধারন করা উচিত যাতে শুধু মাত্র ধনীদের সন্তান রাই না, সবার ই সন্তান রা যাতে এই সেন্টারে তাদের শিশুদের পড়ানো এর এবিলিটি অর্জন করতে পারে।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৩৮
১৭টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×