somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

EXPENDABLES 2 : বয়স DOESN’T MATTER; SHOOTING গুল্লি !!

১৩ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ৮:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নেপালের মরুভূমি (!!)। সেইখানকার জনৈক সেনা ক্যাম্প। যেখানে চলছে আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ। বেদ্দপ সৈনিক’রা মাতলামি করছে, মেয়েদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে আর মাটির নিচের এক অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বস্তাবন্দী এক বন্দীকে চুন চুন করে মারতে মারতে বাপ ডাকানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু বন্দী বান্দা কঠিন চিজ। নো টকিং।

দূর দিগন্তে কালো ধোয়া উড়তে দেখা গেল। তীব্র গতিতে ধেয়ে আসছে তিন কিম্ভুতদর্শন গাড়ী। চলমান ওল্ড হোম। আসছে বৃদ্ধরা…

ওল্ড ইজ ওল্ড
সওয়ারী বৃদ্ধদের নেতৃত্বে আছেন স্থিতি জড়তায় আক্রান্ত; লিজেন্ডারী সিলভেস্টার স্ট্যালোন। যিনি মুখ না নাড়িয়ে কথা বলায় বিশেষ দক্ষ।


মেশিনগান নিয়ে প্রস্তুত ড্যাশিং টাকলু; ক্যারিশমাটিক জেসন স্ট্যাথাম। অরিজিনাল লেদার প্রোডাক্টসের মত যত দিন যাচ্ছে ততই তিনি স্টাইলিস্ট হচ্ছেন।


ডলফ লুন্ডগ্রান। বয়সের সাথে সাথে তিনি হয়ে উঠেছেন আরো পরিণত অ-অভিনেতা। বর্তমানে ভিক্টর ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের হাতে গড়া দানব’ও তার থেকে সুদর্শন।


চৌকষ জেট লি। সাইজে পিচ্চি এই মার্শাল আর্টিস্টের চোখ ধাধানো একশন আর সাবলীল অভিনয়; মুগ্ধতা ছড়ায় এখনো।


টেরি ক্রুস আর রেন্ডী কোচার। এই দুইজন কিভাবে এই হেবিওয়েট দের দলে ভিড়ে গেল তা বোধগম্য নয়। সম্ভবত সস্তায় পাওয়া গেছে তাই।



যাকে উদ্ধার করতে এই ধুন্দুমার একশন, জেট লি’র হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমব্যাট আর প্রচন্ড ধ্বংসযজ্ঞ; কে এই বন্দী? বস্তামুক্ত হয়ে মুখ তুললেন তিনি,
বস - দ্য ওয়ান এন্ড অনলি; আর্নল্ড সোয়ার্জেনিগার!


এবার পলায়ন। নায়কদের মতই আদ্দিকালের এক এরোপ্লেন। সামনেই ব্রিজ, গিজগিজ করছে গুলিবর্ষনরত সৈনিকে। এরোপ্লেনের নাক থেকে ফুক্কি দিয়ে মুখ বের করলেন স্ট্যাথাম। উড়ন্ত প্লেনের প্রচন্ড বাতাসের তোড়ে যেখানে তার টাক মাথা থেকে বাকি চুলগুলোও উড়ে চলে যাবার কথা সেখানে নির্বিকার চিত্তে তিনি গুলিবৃষ্টি করে শত্রুদের ভিজিয়ে দিলেন।

এই বুড়ো, বুড়ো নয়, আরো বুড়ো আছে…

খুচরা টিমের জন্য উদ্ভট এক এসাইনমেন্ট নিয়ে ঘুপচি ঘরে নাজিল হলেন ডাই হার্ড লিজেন্ড, ব্রুস উইলিস!

কিছু রাশিয়ান খবিশ পাচ টন প্লুটোনিয়াম বেজড অস্ত্র মজুদ করে রেখেছিল এক গোপন খনি’র ভেতর। এতই গোপন যে, তারা নিজেরাও ভুলে গেছে কি রেখেছে, কোথায় রেখেছে, কেন রেখেছে। কিন্তু আজাবের ফেরেশতার মত সচ্চরিত্রবান ও মানবসেবায় নিবেদিত আমেরিকানরা এই মারেফতের বাতেনী খবর গায়েবী সূত্রে প্রাপ্ত হয় এবং মহাজাগতিক কল্যাণের স্বার্থে নিজেদের কব্জায় নিতে চায় এই অস্ত্র। কিন্তু বাধ সাধে হলিউডের তামিল নায়ক জ্যা ক্লদ ভ্যানড্যাম; যিনি শুধু মারেন; সালাম দিলেও মারেন, না দিলেও মারেন, খুব স্টাইল করে মারেন।


খরচের খাতায় খুচরা টিম
এত মুরুব্বীদের মাঝে একটাই কচি, থরের ছোট ভাই; লিয়াম হেমসওর্থ

যিনি আসলেন, স্নাইপার রাইফেল দিয়ে কয়েকটি গুলি করলেন, আবেগী কিছু ডায়লগ দিলেন এবং ভিলেন ভ্যানড্যাম ’এর স্টাইলিশ ক্যারিশমাটিক ট্রেডমার্ক লাথি খেয়ে মৃত্যু বরণ করলেন।

ভন্ডুল হওয়া এসাইনমেন্টের খাতা পুনরুদ্ধার করতে ও কচি বিলি’র অকাল মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে Rab’ এর ডগ স্কোয়াডের মত গন্ধ শুকতে শুকতে এক্সপেন্ডেবলস টিম হাজির হয়ে গেল শত্রুর এলাকায়।
ভিলেনের নৃশংসতা বুঝাতে খনিতে প্লুটোনিয়াম উত্তোলনরত কিছু অর্বাচীন বুড়োদের আনাগোনা দেখা গেল। তারা কাজ করতে করতে টায়ার্ড হয়ে গেল এবং ভবিতব্য অনুযায়ী গুলি খেয়ে অক্কা পেল। তা দেখে গ্রাম থেকে ধরে আনা আবাল, অবিশিষ্ট বৃদ্ধ, বনিতা সবাই জীবন দিয়ে কাজ করতে লাগল।


বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রকেট লাঞ্চার

জনমানবশূণ্য এক এলাকায় রাত কাটিয়ে মুরুব্বীরা যখন খোশ মেজাজে প্রাতঃরাশ করছিলেন তখনই শত্রুপক্ষ ব্যাপক গোলমাল, মায় ট্যাঙ্ক হামলা পর্যন্ত করে বসলো। আক্রমনে দিশেহারা হয়ে তারা যখন ভাবছে, “আহা! গাও গেরামের বৃদ্ধ নিবাস কত শান্তিময় ছিল।” তখনই হঠাত শুরু হোল বুলেটের সুনামি। অবিশ্বাস্যভাবে একযোগে সঅঅব শত্রু একিসাথে গুলি খেয়ে খিচতে খিচতে মরে গেল। তারপর আসমান থেকে এক মিসাইল এসে ট্যাঙ্ক’টাকে উড়িয়ে দিল। সবাই অবাক! কেমনে কি? এ যেন রজনীকান্তের খেলা !!

দূর থেকে এক অবয়ব ভেসে এল। দৃপ্তভঙ্গীতে হেটে আসছে। সে কে? কে সে?

যিনি চপস্টিক দিয়ে পানি খেতে পারেন,
যিনি অসীম পর্যন্ত গুনতে পারেন অবলীলায়,
যিনি হাচি দিতে পারেন চোখ খোলা রেখে,
মাছ’কে যিনি পানিতে চুবিয়ে মারতে পারেন, কিম্বা
ঈশ্বর পর্যন্ত চমকে উঠে যার নাম উচ্চারন করেন;
সে কে? তিনি; রজনীকান্তের ফর্সা ভার্সন, দ্যা চাক নরিস !!!!

এসেছে সকল মুরুব্বী, ছেড়ে দিতে হবে স্থান
তারপর বুড়া বয়সে ভীমরতি ধরায়, বুড়া হাড়ের ভেলকি দেখাতে; দুনিয়ার মুরুব্বী এক হও – এই স্লোগান দিয়ে বিমান নিয়ে সোজা শত্রুদূর্গে হামলা। আর্থ্রাইটিস, বাতের ব্যাথা, চোখে ছানি, কোমরের হাড় লুজ হয়ে যাওয়া, হাত কাপাকাপি – এইসব রোগের মুখে ছাই দিয়ে ঝাপিয়ে পড়লেন এই হলিউডি বয়োবৃদ্ধরা।

Forty is the old age of youth; fifty the youth of old age. – Victor Hugo

এই শেষ বয়সে এসে মুরুব্বিদের দৌড় ঝাপ, ঘুষা ঘুষী, লাফালাফি দেখে এই যুগের তরুণ দের রাণীক্ষেতাক্রান্ত মুরগী মনে হোল! যাইহোক, সবশেষে চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী গোলাগুলি, মারামারি, খুন খারাপি আর রক্তপাত শেষে দুষ্টের পতন, মুরুব্বীদের পাতন।

গুরুজনে ভক্তি
স্ট্যালোন, সোয়ার্জেনিগার, ব্রুস উইলিস, চাক নরিস, ভ্যানড্যাম, জেট লি, লুন্ডগ্রান আর স্ট্যাথামের মত সুপারস্টার আর লিজেন্ড দের একসাথে একই স্ক্রীণে একশনে দেখাও একটা অভিজ্ঞতা।

ছবির গল্প প্রথম পর্বের মতো এবারো ভুয়া। সাইমন ওয়েস্টের পরিচালনাও একেবারেই গড়পড়তা, যদিও তার কন এয়ার আর দ্যা জেনারেলস ডটারের মত ছবি পরিচালনার অভিজ্ঞতা ছিল। । এর কারন হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে, স্টার কাস্টের স্টারডমে অতিরিক্ত খরচা পাতি হয়ে যাওয়ায়; স্টোরী রাইটার আর পরিচালক’কে দেয়ার মত সম্মানজনক অবশিষ্ট কিছু ছিল না।

প্রথম একশনের পর জেট লি গায়েব হয়ে যাওয়ায় তার অভাববোধ হয়েছে পুরো ছবিতে। আর খুচরা টিমের এসাইনমেন্টের সাথে স্ট্যাপল করে দেয়া অপ্রয়োজনীয় চরিত্র চিকি মাঙ্কি’ কে মানায় নি মোটেও (সুন্দরী কাউকে নিলে নিশ্চিত মানাতো)।
It`s not how old you are, it`s how you are old.
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:১০
৮২টি মন্তব্য ৮২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×