সে বহু বহু বছর আগের কথা। যখন ১০ টাকায় এক কেজি পেয়াজ পাওয়া যাইত, ৫ টাকা প্রদান করিলে রিকশাওয়ালা খুশী হইয়া বিদায় লইত, সিএনজি মামুরা রূঢ় ব্যাবহার করিত না – সেই তখন আমি একখানা আরামদায়ক চাকুরী করিতাম; ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া ছিল যাহার অফিস। সন্ধ্যায় আড্ডা মারিতাম, রাতে ভাত খাইয়া জননীকে উদ্ধার করিয়া সিনেমা দেখিতে বসিতাম আর আপিসে ব্লগ লেখার ফাকে ফাকে কিছু কাজ কর্ম করিয়া বস’কে উদ্ধার করিয়া দিতাম।
সেই তখন সামু ব্লগে আমার অকিঞ্চিতকর লেখাগুলি কাকতালিয় ভাবে বেশ হিট খাইয়া গেল, লাইক আর কমেন্টের বন্যায় আমি ভাসিয়া গেলাম, যাহার ফলে আমি সিনা ফুলাইয়া গর্বের সহিত মাটি হইতে সাড়ে তিন ইঞ্ছি উপ্রে দিয়া চলাফেরা শুরু করিলাম।
যাই হোক, যত হাসি, তত কান্না – রাজেশ খান্না’র সেই অমর বাণী আমার জীবনে সত্য হইয়া দেখা দিল। প্রথমত একখানা আন্তর্জাতিক মানের ঢাকাস্থ চাকুরী আসিয়া আমার কপালে জুটিল। তখন - ঘুমিয়ে আছে ফ্লাইওভার, যাত্রাবাড়িরই অন্তরে !! আট/দশ ঘন্টা আফিস আর পাচ/ছয় ঘন্টা জার্নি করিয়া যখন রাতে বারোটা/একটায় বাসায় ঢুকিতাম, তখন আমার টাই’এর সাথে জিহবাও বাহির হইয়া ঝুলিতে থাকিত !
দ্বিতীয়ত – যত্রতত্র চড়িয়া বেড়াইয়া ঘাস খাওয়ার অপ্রাধে আমার গলার দড়িতে খুটী লাগানোর বন্দোবস্ত হইল। মুখ ব্যাজার, কিন্তু অন্তরে লাফাইতে; লাফাইতে আমি বিবাহ বসিয়া গেলাম এক সুন্দোরী কর্পোরেট কণ্যার সহিত। ব্যাস, যাহা ঘটিবার তাহাই ঘটিল ! আমার তিন টেরাবাইটের হার্ডডিস্ক স্ত্রীর সতীন হিসাবে চিহ্নিত হইল। আর আমি বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব হইতে বিবাহিত হইয়া গেলাম।
বছরখানের পরেই আমাদের নিস্তরংগ জীবনে উথাল পাথাল ঘটাইয়া আমার পুত্র আবির্ভূত হইল। সে তার আজ অব্দি আড়াই বছরের জীবনে মাত্র ছয় মাস বাপ মা’র ঘাড়ে শুইয়া বইসা খাইল আর হিশু করিল। যখন হইতে সে হামাগুড়ি দেয়া শিখিল – সে কর্মক্ষেত্রে নামিয়া পড়িল। গভীর রাতে যখন সে তার কর্মযজ্ঞ শেষ করিয়া ঘুমায়, তখন আমাদের হাটুতে আর জোড় থাকেনা। আমরা হামাগুড়ি দিয়া বিছানায় উঠি।
এইরূপে বহু বছর পার হইয়া গেল। নতুন ব্লগ লেখা তো দূরের কথা, সামুতেও ঢোকার সময় পাইনা। কমেন্টগুলো পড়িয়া থাকে উত্তরের অপেক্ষায়। সহব্লগার রা ভাবে – এই দুঃষ্কৃতিকারীর ভাব বাড়িয়াছে ! আসল কথা হইল – আমার কীবোর্ডে মরিচা পড়িয়া গিয়াছে।
কীবোর্ডের যৌবনকালে হিন্দী ছিঃনেমা গুলোকে আচ্ছামতন ধোলাইতাম। যাহার ফলশ্রুতিতে সেই ধোলাই পরবর্তী যুগে বেশ কিছু কালোক্তীর্ণ হিন্দী সিনেমা নির্মিত হইয়াছিল। যেই আমি অবসরে গেলাম, ব্যাস আবার সেই দাবাং যুগ যেন ফিরিয়া আসিল ! দূর্যোধনের উপ্রে খেপিয়া গিয়া যে হিন্দী সিনেমা কচলানো শুরু করিয়া ছিলাম, তাহা শুরু করা আজ যেন সময়ের দাবী !! বহু দিন, বহু হিন্দী ছিঃনেমা দেখিয়া দেখিয়া শুধু খিচ খাইতে ছিলাম – আজ “যাব হ্যারি মেট সেজাল” দেখিয়া সকল বাধ ভাঙ্গিয়া গেল। বহুদিন পর কী বোর্ড হাতে তুলিয়া লইলাম।
কালা মনের ধলা মানুষ – ইজ ব্যাক। (এট লিস্ট; ফর দ্যা টাইম বিং হাহাহাহা)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৪