কোথাও কেউ নেই
ট্রেন থেকে নেমে দেখি ষ্টেশন চত্বর ফাকা।
শফিকুলের ক্যান্টিনে খুনসুটিতে মেতে উঠা
রফিক ,রতন,আজিজ, সন্তোষ ,কমরেড মাহবুব
প্রেমিক সুজন কাউকে পেলাম না।
আমায় দেখে শফিকুল
মুচকি হেসে বলে" মামা ওরা আর কেউ নেই"
কোথায় আছে?
ও জানেনা।
হেটে হেটে কলেজর মাঠে বকুলতলায় এলাম
রেশমা সুমি বকুল সুজনেরাও সেখানে নেই।
সাহেব পাড়ায় এসে দেখি মিলিদের বাড়ীতে
অন্যভাড়াটিয়া উঠেছে
ওরা কোথায় আছে কেউ জানেনা।
নাগলিঙ্গমের গাছটাও ঝড়ে পড়ে গেছে
যে ছিল আমার ছেলেবেলার ইশ্বর ।
মায়ের মৃত্ব্যর পর যার কাছে আমার সব দুঃখ কষ্টের
কথা শোনাতাম সেই গাছটাও এখন নেই।
ষ্টেশন চত্বর থেকে সিপি স্কুল হয়ে আলোরুপা মোড়
কোথাও খুঁজে পেলাম না আমার শৈশব কৌশরের সুনশান
লাল ইটের মফস্বলের শহরটাকে।
যন্ত্র,হাইরাইজ বিল্ডিং আর অপরিচিত মানুষে
ভরে গেছ আমার ছেলেবেলা,
এখানে আমি যেন এক আগন্তুক।
অনেক গলিপথ খুঁজে আজিজের দেখা পেলাম
যে একদিন মঞ্চ কাঁপিয়ে
বলেছিল"কমরেড পরিবর্তনের জন্য বিপ্লব অনিবার্য"
সে এখন মস্তবড় ক্যাপিটালিস্ট।
ওর মুখেই শুনলাম রফিক ক্রস ফায়ারে মারা গেছ,
রতনের খবর কেউ জানে না,
কমরেড মাহবুব এখন আমেরিকায় সেটেল্ড,
সন্তোষেরা সপরিবারে জলপাইগুড়ি চলে গেছ।
আর রেশমা এখন কোথায়?
ওর স্বামী নাকি ঢাকায় কোন অফিসের বড় বাবু,
সুমি আসিফের সাথে ডির্ভোসের পর
শহর ছেড়ে নিরুদ্ধেশ
প্রেমিক সুজন এখন কোরিয়ায়।
লালপতাকওয়ালা আলমের
লাশ পাওয়া গিয়েছিল ইটখোলায়,
ওর ছেলেটা নাকি ওপার থেকে
গরু আনতে গিয়ে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলেছিল।
ফেরার পথে আরেক বার মিলিদের বাড়ীর সামনে
এসে দাড়ালাম লাল ইটের বাড়ীটা আগের মত আছে
ডালিম গাছটায় দুটো শালিক বসে আছে,
শুধু নেই ওদের ঝুল বারান্দার সোনলী রুপালী আলোটুকু
আর নেই আমার প্রথম চাঁদের হাসি
হারিয়ে গেল কোথায় ,কোন চন্দ্রভূক অমাবশ্যায়?
ট্রেনের সময় ঘনিয়ে এসেছে
যেতে হবে আমায়।
হারিয়ে গিয়েছে আমার ছেলেবেলা
আর কোথাও কেউ নেই!
আমিও একদিন হারিয়ে যাবো
সেদিন হয়তো আমাকে খোঁজার কেউ থাকবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:২৩