এখন বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনের বাজারে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কতো রঙের, কতো বাহারের বিজ্ঞাপন। কোনটা জিঙ্গেল বেইজড, কোনটা গল্প বেইজড। কতো মডেল, কতো স্মার্ট তারা। কিন্তু আমার মনে পড়ে গেল ম্যানোলার সেই বিজ্ঞাপন,
ম্যানোলা মানে টলমল শিশিরের লাবণ্য
ম্যানোলা মানে কমোলীন সুরভী অনন্য।
আহা! কেন যেন মনে হয় সেই মডেলের মতো সৌন্দর্য্য হাল আমলের মডেলরা ধারণ করে না।
এখন শুরু হয়েছে গল্পভিত্তিক বিজ্ঞাপন নির্মাণের ধুম। ভালোই লাগে। অথচ কেন জানি সেরা মনে হয় সেই ফিলিপসের বিজ্ঞাপন,
ও মানিক কি বাত্তি লাগাইলি ..
... মাছের রাজা ইলিশ, বাত্তির রাজা ফিলিপস।
অথবা জীবনবীমার সেই বিজ্ঞাপন। দুটো বুড়োবুড়ি পার্কে হাঁটছে। আহা, কে কবে বানাতে পেরেছে এমন প্রেমের অপরূপ দৃশ্যরূপ।
এখনকার বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনের মডেলদের হাসি প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। হয়তো বা। কিন্তু এই হাসি শেল হয়ে বুকে বিঁধতে পারত যদি ব্যবহার করতেন দাঁতের মাজন। সুরে সুরে পড়ে দেখুন মনে করতে পারেন কিনা,
এপি দশন চূর্ণ সেরা দাঁতের মাজন
দাঁতের মাড়ি শক্ত, করে দশন চূর্ণ
মাড়ির ব্যথায় আরাম দেবে
এপি দশন চূর্ণ
... এপি দশনচূর্ণ এখন থেকে ব্রাশেও ব্যবহার করা যাচ্ছে।
ক্রিকেটাররা এখন কমান্ডো ট্রেনিং নিল। মডেলিংও করে আজকাল। ক্রিকেটের চাপে আজকের ফুটবলের এই তথৈবচ অবস্থা ফুটবলার সালাহউদ্দিন কি তখন ভাবতে পেরেছিলেন গোসল করার সময়?
স্বাস্থ্যকে রক্ষা করে লাইফবয়
লাইফবয় যেখানে, স্বাস্থ্যও সেখানে
লাইফবয়-য়-য়-য়
অথবা সেই টাচি জিঙ্গেল,
টাচ টাচ টাচ ... গ্যাকোটাচ ...
আজ কই গেল সেই রেক্সোনা অথবা হৃদয় খিঁচে নেয়া ঠোঁট সুরু করে বলা সেই মেয়েটি ইটস কুল...ইটস ফ্রেশ...সুপার লেমনডিউ
ডিটারজেন্টের যুগ তখন ছিল না। কিন্তু মা-দের আত্মবিশ্বাস ছিল ওই জিঙ্গেলে,
এক ঘষাতে অনেক কাচে
কোন সাবান কোন সাবান
নিরালা নিরালা, নিরালা বল সাবান
তাতেও মা-দের মন ভরে না। স্কুলশার্ট আরো শাদা করার জন্য মা-দের কি প্রচেষ্টা। ভাগ্যিস তখন ছিল ওই বিজ্ঞাপনটি,
শেষ হয় না কাপড় ধোয়া
যদি না হয় নীলের ছোঁয়া
রবিন লিকুইড ব্লু
আজকাল এনিমেটেড বিজ্ঞাপনের অভাব নেই। কিন্তু ছাড়িয়ে যেতে পেরেছে কি ওই বিজ্ঞাপন, যেখানে রাজকন্যার দীর্ঘ চুল বয়ে নিয়ে যাচ্ছে সখীরা। নেপথ্যে বাজছে,
রূপবতী সখী তোরে
কেশবতী করে দিল
এপি পনেরো কেশতেল
অথবা ইভটিজিংয়ের সেই বিজ্ঞাপনটি ?
ও কেশবতী কন্যা,
ফুল নেবে গো ফুল ... নেও না চাঁপা ফুল
চুলে আমার চাঁপা মাখা ... চাই না চাঁপা ফুল
ইউরোপে এসে ইটালির বিখ্যাত চামড়ার জুতা ব্যবহার করি। কিন্তু মন টানে ওই জিঙ্গেল,
রূপসা রূপসা রূপসা
নরম নরম হাওয়াই চপ্পল রূপসা
আচ্ছা প্রথম জিঙ্গেল বেইজড বিজ্ঞাপন কোনটি? অনেকে বলে থাকে মডেল তানিয়ার ইকোনোর সেই বিজ্ঞাপনটি,
লোনলি ডেজ ... লোনলি নাইটস
ইউ আর ফার এওয়ে
আবার অনেকে বলেন সেই বিজ্ঞাপনের কথা যেখানে ওড়না ছাড়া মিতানূরকে দেখে নিয়ত শিউরে উঠতাম,
আলো আলো ... বেশি আলো
শব্দ শব্দে ... মন মাতানো
অলিম্পিক অলিম্পিক ব্যাটারি
কিন্তু আমি মনে করি প্রথম জিঙ্গেলবেইজড বিজ্ঞাপন হলো, অবিস্মরণীয় সেই বিজ্ঞাপন যা টিভি পর্দায় আসলে আমরা লজ্জা পেতাম।
এই মায়া বড়ি খেলে
হবে সুন্দর, ছোট সংসার
মায়া আছে এ জীবনে আপন হয়ে
জীবনের সবটুকু সুখ হয়ে
হায়। আজকের কলমের বিজ্ঞাপনে বলা হয় না ইকোনো লেখে চমৎকার ... এক কলমে মাইল পার। পায়ে নেই জাম্প, জাম্প, জাম্প, জাম্প কেডস। আমাদের বোনেরা ফর্সা হয় না হেনো হেনো লাক্স.....কমপ্লেকশন ক্রীম মেখে। লন্ডনের শীতে আমি পড়তে পারব না আজ ও আগামীকালের পোষাক ... পিয়ারসন্স। কোনো ক্লাবে, পাবে, পার্টিতে আমার স্যুট হয় না সেঞ্চুরি....দ্যাটস হোয়াট আই লাইক-এর। ডি5 টুথপেস্ট-এর সেই চেরী মুখে নেয়া নওরীনের মতো কোনো প্রিয়া আজো হাতটা চেপে ধরল না।
মনে পড়ে যায় মা কতো জোর করত 'অস্ট্রেলিয়া থেকে সরাসরি আমদানীকৃত ... রেডকাউ' খাওয়াতে। ভাবির বাচ্চা হয়েছে, ভাই বাসায় ফিরেই গেয়ে উঠত 'উলে উলে পাপ্পা ... সোনাজাদুমনি লে।' ব্যাগ থেকে উপহার বের করে বাচ্চার সামনে নাচায় আর বলে, 'চোখে পড়লে চোখ জ্বলে না, কান্নাও পায় না ... মেরিল বেবি শ্যাম্পু।' আমার মনে পড়ে যায় দোকানে বাকি করতাম 'যতো খাও ততো মজা ... রিং চিপস'-এর জন্য।
লন্ডনে কতো সুন্দরি ঘোরাফেরা করে। কেউ একবার ফিরে তাকায় না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে স্বান্ত্বনা দিই, 'এগুলো বড়দের খাবার ... তোমাদের জন্য সেরেল্যাক।' চোখের সামনে কোমর জড়িয়ে চলে যায় কোনো ছেলে, যেন মনে মনে আওড়ায়, 'আমি তো এমনি এমনি খাই ... হরলিকস'
তারপরও রঙের দুনিয়ায় গেয়ে উঠি,
দেখো দেখো দেখোরে
রঙ্গের বাহার
দেখো রোমানার বাহার।
অথবা,
রং রং রং রং রং
পেইলাক মনের মতো রঙ
আপনাদের কি মনে পড়ে মৌসুমীর কথা? শাড়ি পরে কোমরে বিছার আছড়ে পড়া সেই অবিস্মরণীয় দৃশ্য?
প্রিয় প্রিয় প্রিয়
সুন্দরি সুন্দরি সুন্দরি
প্রিয় প্রিয় সুন্দরি
সুন্দরি প্রিন্ট শাড়ি।
অনেক তো হলো। যাওয়ার আগে সুরে সুরে আপনাদের মনে করিয়ে যাই,
কোনো কোনো মা-বোনেরা কয়
শাকসব্জী খাইলে নাকি পেটের ব্যারাম হয়।
... একদম বাজে কথা।
শাক ভালো করে ধুয়ে রান্না করলে বাচ্চাদের পেটের অসুখ হয় না।