কাজী হাসান
আমি বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এর বই পড়ি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন সময় থেকে। তাঁর লেখা ছোট ছোট বাক্যের ঝরঝরে গদ্যকে আমার কাছে পানির মতো সরল মনে হয়েছে সব সময়। তাঁর বইয়ের ঘটনার ভেতরে অজস্র আকর্ষণীয় ঘটনার চিত্রন বইয়ের শেষ পাতা পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়। শেষ না করে ওঠা দায়। এখানে তাঁর লেখার সাহিত্য মান নিয়ে বিশ্লেষণ করা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার উপলব্ধির কথা বলছি শুধু। তাঁর লেখা অশ্লীলতা দোষে দুষ্ট নয়। পরিবারের সবাই পড়তে পারে। আপনাদের জানামতে হুমায়ূন আহমেদ এর এমন কোনও লেখা আছে, যেটা অশ্লীলতার দায়ে আপনি বাতিল করে দিতে পারেন? আপনার সন্তানদের পড়তে মানা করতে পারেন?
আমরা `সোনারং তরুছায়া পাঠাগার` গড়েছি বছরও পেরোয়নি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠাভ্যাস গড়ার জন্য নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছি আমরা। ক্ষেত্রবিশেষে বাসায় নিয়ে পড়ারও সুযোগ দিচ্ছি আমরা। কিছুদিন আগে নবম শ্রেণির একজন ছাত্রী বাড়িতে পড়তে নিয়ে যাবার জন্য একটি বই চায় আমার কাছে। কী জাতীয় বই নেবে জানতে চাইলে সে বলে `প্রেমের উপন্যাস`। আমি তাকে প্রেমনির্ভর উপন্যাস না দিয়ে হুমায়ূন আহমেদ এর `নন্দিত নরকে` পড়ার জন্য দিই। মাস দেড়েক পার হয়ে যায়, সেই বই সে আর ফেরত দেয় না। এক সময় সে আসাও বন্ধ করে দেয়। পরে জানতে পারি তার মা বাজে বই মনে করে `নন্দিত নরকে` বইটি ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে।
তিনি কিন্তু তেমন শিক্ষিত নন। আমার মনে হয়েছে তার সিদ্ধান্তটা অর্বাচীনদের মতো হয়েছে। তার পূর্ণ অধিকার রয়েছে সিদ্ধান্ত নেয়ার, তার সন্তানকে কী বই পড়তে দেবেন বা দেবেন না। কিন্তু অপছন্দ হয়েছে বলে একটি পাঠাগারের বই কি তিনি ছিঁড়তে পারেন? তিনি বইটি তার সন্তানকে দিয়ে ফেরত পাঠাতে পারতেন, যে সন্তান আমাদের কার্যক্রম থেকে আট নয় হাজার টাকার আর্থিক সুবিধা ছাড়াও অনেক গাছের চারা গ্রহণ করেছে।
কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এর প্রথম উপন্যাস `নন্দিত নরকে`র ভূমিকা লিখেছিলেন ভাষাবিদ, মনীষী আহমদ শরীফ। যে বইয়ের কাহিনী থেকে নাটক ও চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। যে উপন্যাস লিখে হুমায়ূন আহমেদ বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন, যে বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন কালজয়ী চিত্রশিল্পী কাইয়ূম চৌধুরী, সেই বই অশ্লীলতার দায়ে বাতিল করে দিলেন একজন অর্বাচীন অভিভাবক! আমার ধারণা তিনি শিক্ষার্থী জীবনে পড়াশোনায় ফাঁকি দিয়েছেন। পাঠ্যবই তো ঠিকমতো পড়েনই নি, সাহিত্য তো দূরের কথা!
আমি সাধারণত নেতিবাচক কোনও কিছু নিয়ে লিখি না। বই অপছন্দ হলে কেউ তা ছেঁড়ার মতো উন্মাদনা দেখাতে পারেন, এটা আমার ভাবনারও বাইরে ছিলো। বিষয়টি চেপে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ভেতরের অবদমিত চাপা ক্ষোভ খোঁচাচ্ছিলো খুব। তাই কিছুটা হালকা হওয়ার জন্য আপনাদের সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করলাম।
[email protected]
www.facebook.com/kazihasan0