somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফুরুস : যে ফুলকে ভুল নামে চেনে অনেকে

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




কাজী হাসান

দৃষ্টিকাড়া সৌন্দর্যের ফুল ‘ফুরুস’কে অনেকে নিজের অজান্তে বা লোক মুখে শুনে শুনে ‘চেরি’ নামে চেনেন, ডাকেন। যেমন ‘মধুমঞ্জরী’ ফুলকে অনেকে ‘মাধবীলতা’ নামে চেনেন। তবে আমাদের অঞ্চলে চেরি ফোটা সম্ভব না। চেরি শীতপ্রধান দেশের ফুল। এশিয়ার মধ্যে কোরিয়া, চীন, জাপানে মনোহর চেরি ফুল ফোটে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে।

চেরি ফুল নিয়ে কিছু কথা বলি, ১৯০০ সালের প্রথম দশকের গোড়ার দিকে জাপান সরকার বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চেরি ফুল গাছের ২০০০ চারা উপহার দিয়েছিলো। যা রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে লাগানো হয়েছিলো। ১৯১০ সালে কি এক রোগে আক্রান্ত হয়ে সেই গাছগুলো মারা গেলে জাপান ১৯১২ সালে আবার ৩০২০টি চেরি ফুল গাছের চারা পাঠায় আমেরিকায়। সেগুলো রোপণের পরে কয়েক বছরের মধ্যে চেরি ফুলে হেসে ওঠে ওয়াশিংটন ডিসি নগরীতে। অথচ সেই আমেরিকায় এক সময় চেরি ফুল গাছ ছিলো না। এখন সেখানে প্রতি বসন্তে ‘ন্যাশনাল চেরি বøজম ফেস্টিভ্যাল’ নামে চেরি পুষ্প উৎসব উদ্যাপিত হয়। এ বছর ২০ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত চলে সেই উৎসব। উৎসব চলাকালীন চতুর্দিক থেকে বহু দেশি বিদেশী পুষ্পপ্রেমী উৎসবে অংশ নিতে আসেন। সেই সময়টা চেরি উৎসবকে কেন্দ্র করে আনন্দ উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে ওয়াশিংটন ডিসির চেরি ফুলের বাগানগুলি।

অথচ সেই আমেরিকা কী করলো! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষার্ধে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট স্থানীয় সময় ৮টা ১৫মিনিটে আমেরিকান বিমানবাহিনী হিরোশিমাতে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। পৃথিবীতে পারমানবিক বোমার প্রথম বিস্ফোরণ সেটি। এর তিনদিন পরে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় নাগাসাকি শহরে। এতে হিরোশিমাতে প্রায় ১৪০,০০০ লোক মারা যায়। নাগাসাকিতে মারা যায় প্রায় ৭৪,০০০। এই ধ্বংসযজ্ঞ যৌক্তিক না অযৌক্তিক ছিলো কিনা সেই বিতর্কে যাবো না। তবে এতোটা হত্যাযজ্ঞ কোনও শান্তির সূচনা ঘটাতে পারে না।

আবার ফুরুস ফুল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। আমি প্রথম ফুরুস ফুল দেখি আশির দশকের শুরুর দিকে। তখন এই ফুলের নাম জানতাম না। আমার নানা কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার ইস্কাটন গার্ডেনে ‘সমকাল’ নামে একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নানাকে দেখার জন্য আব্বা এক সকালে আমাদের নিয়ে আসলেন সেই হাসপাতালে। সেখানে উপস্থিত আত্মীয় পরিজন সেদিন বেশ বিমর্ষ ছিলেন। আমার আব্বা ছিলেন ভীষণ রাগী মানুষ। যখন তখন ধমক টমক দিয়ে বসতেন। তার সঙ্গে যে কোনও ভ্রমণ ছিলো আমার জন্য নিরানন্দ ও আতঙ্কের। তাই পারতপক্ষে তার সঙ্গে কোথাও যেতে চাইতাম না। সেদিন ভীষণ বিষণœ মনে ফিরে আসি। তবে একটি বিষয় আমাকে সেদিন আন্দোলিত ও মুগ্ধও করেছিলো। সেই হাসপাতালের লনজুড়ে ফুটে থাকা রাশি রাশি বর্ণাঢ্য ফুরুস ফুলগুলো। ফুলের নাম কিন্তু জানি না। পরে সেই নাগরিক ফুলকে আমি নানা সময়ে ঢাকা শহরের পথে পথে, সুরম্য ভবন বা বাড়ির বাগান ও লনে কতো যে খুঁজেছি! পেয়েছিও। তবে এর নাম জেনেছি বছর দশেক আগে। ২০১১ সালে আমাদের ভাড়া বাসার ছাদ বাগানে এই ফুলের একটি গাছ আমি টবে রোপণ করেছিলাম। তখন এর নাম জানতাম ‘চেরি’। সেই গাছটি ২০১২ সালের ১৪ জুলাই আমাদের ‘সোনারং তরুছায়া’য় রোপণ করাই। ২৪ জুলাই ফুল ফুটলে ফেইসবুক এ ছবিসহ পোস্ট দিই ‘চেরি ফুল ফুটেছে’। নিসর্গবিদ মোকারম হোসেন তা দেখে প্রকৃত নামটি আমাকে জানিয়ে দেন। এরপরে ঢাকার পুরানাপল্টন থেকে প্রেসক্লাব হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত সড়কদ্বীপে সারি সারি ফুরুস ফুল গাছ দেখেছি। দেখেছি আলো ছড়িয়ে সাদা ও গোলাপী রঙের ফুরুস ফুটে থাকতে। যদিও গাছগুলো এখন আর নেই।
সাধারণত গ্র্রীষ্মের শেষে বৃষ্টির পরশ পেয়ে ফুরুস গাছে কলি আসতে শুরু করে। ফুল তখন থেকে ফুটে শরৎ অবধি মুগ্ধতা ছড়ায়। এখন আমাদের ‘সোনারং তরুছায়া’য় লাল, সাদা ও গোলাপী রঙের ফুরুস ফুটে আছে। বিভিন্ন রঙের ঢঙে এই ফুলের থোকা বাগানে সৌন্দর্যের মাত্রা বাড়ায় বহুগুণে।

ফুরুস গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Lagerstroemia indica. এটি Lythraceae পরিবারের উদ্ভিদ। ইংরেজিতে (crape myrtle) ক্রেপ মার্টল নামে পরিচিত। এর আদি নিবাস চীন। উদ্ভিদটি প্রায় ৪ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এরা শক্ত, ডালপালা ভরা পত্রমোচী গাছ। কাণ্ড বাদামি ও মসৃণ। পত্রবিন্যাস একান্তর বা ঘূর্ণিত ধরনের। সাধারণত তিনটি রঙে এই ফুল আমাদের দেশে বেশ পরিচিত। সাদা, গোলাপি ও বেগুনি। সম্প্রতি কিছু টকটকে লাল রঙের ফুরুসও দেখা যায়।

জারুলের জ্ঞাতিভাই হলেও এর আবেদন আজকাল ছাদবাগানিদের কাছে বেশি দেখা যায়। অতিমারিকবলিত সময় কাটানোর পরে অনেক ছাদবাগানি নতুন করে বাগান সাজানোর কাজে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এই সময়ে ছাদে ফুরুস ফুলের ঝোপালো আয়োজনে মন ভরে উঠবে সবার। এ সময়ের বাগানের মধ্যমণি ‘ফুরুস’ ফুল।

ছবি : কাজী হাসান


[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৮:০৭
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×