কাজী হাসান
হক ভাইকে নিয়ে আমি মুন্সীগঞ্জ গিয়েছি। হক ভাইয়ের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের 'বোস কেবিন' এ চা খেয়েছি। হক ভাইকে নিয়ে মুরাদ পারভেজের 'চন্দ্রগ্রহণ' সিনেমা দেখেছি। পরদিন 'দৈনিক যুগান্তর' এ 'চন্দ্রগ্রহণ' নিয়ে লিখলেন, 'কাজী হাসান এর কারণে 'চন্দ্রগ্রহণ' দেখা হলো...' । বাংলাবাজারে হক ভাই একদিন অনেকগুলো বই কিনলেন, আমি সেগুলো বহন করে তাঁর সঙ্গে বিউটি বোর্ডিং অবধি গিয়েছিলাম। 'বিউটি বোর্ডিং সুধী সংঘ' এক বছর হক ভাইকে সংবর্ধনা দিলো। আমি সংবর্ধনা ফোল্ডারে হক ভাইয়ের বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্মপঞ্জি লিখলাম। একজন সাহিত্যিকের এতো বর্ণাঢ্য লেখালেখি জীবন হয় কী করে!
কবি ইমরুল চৌধুরী বিউটি বোর্ডিংয়ের ওপর একটি বই সম্পাদনা করেছিলেন। বইয়ের নাম 'পূর্ণিমার মধ্যবয়সে বিউটি বোর্ডিং। প্রকাশ করেছিলাম আমি। প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়েছিলো ২০১০ সালের ১৭ এপ্রিল। তাতে প্রধান অতিথির আসন অলঙ্কৃত করেছিলেন সৈয়দ শামসুল হক।
২০১৪ সালের মধ্য জুনে, এক শুক্রবার দুপুরে হক ভাইয়ের গুলশান ১ এর ৬ নম্বর রোডের ৮ নম্বর বাসায় গিয়েছিলাম একটি কাজে। তখন তাঁকে চাষী নজরুল ইসলামের ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার খবর দিই। শুনে হক ভাই মেনে নিতে পারলেন না। বললেন, তুমি আমার মন খারাপ করে দিলে। টগবগে উচ্ছল চাষীর কেনো ক্যানসার হবে? তুমি আজ যাও। কথা বলতে ভালো লাগছে না।
আমি সেখান থেকে বেরিয়ে সোজা কমলাপুরে ৯ জসীমউদদীন রোডে চাষী ভাইয়ের বাসায় চলে যাই।
হক ভাইয়ের সঙ্গে সেই শেষ দেখা! হক ভাই আপনাকেও সেই ক্যানসারই কেড়ে নিলো!!! হক ভাই, আজ আমার ভীষণ মন খারাপ। আর লিখতে ইচ্ছে করছে না!
সেই মন খারাপের রেশ এখনও রয়ে গেছে। ৬ষ্ঠ প্রয়াণবার্ষিকীতে হক ভাইয়ের প্রতি প্রকাশ করছি বিনম্র শ্রদ্ধা!
(লেখাটি ফেসবুক এ লিখেছিলাম সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক ভাইয়ের মৃত্যুর পরদিন। ২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর।
* দ্বিতীয় ছবিটির ক্যাপশান : কবি ইমরুল চৌধুরীর সম্পাদনায় 'সোনারং' এর পক্ষ থেকে ২০১০ সালের ১৭ এপ্রিল আমি প্রকাশ করেছিলাম 'পূর্ণিমার মধ্য বয়সে বিউটি বোর্ডিং' বইটি। প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়েছিল ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিউটি বোর্ডিং প্রাঙ্গণে।
ছবিতে বাম থেকে~অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা আবৃত্তি ও অভিনয়শিল্পী নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলি, কবি ইমরুল চৌধুরী, সব্যসাচী সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হক, প্রাবন্ধিক হায়াৎ মামুদ ও আমি।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৭:০৪