somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ বিমানে একদিন :((:((:((

১৭ ই জুন, ২০১২ দুপুর ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখনো বিকেল।সময়টা ঠিক মনে করতে পারছি নে।আমি গিয়েছি সিঙ্গাপুর পোর্টের ইমিগ্রেশন অফিসে ইমিগ্রেশন ক্লিয়ার করতে।এমন সময় জাহাজের ক্যাপ্টেন আমাকে ওয়াকি টকিতে জানালো আমার ঈদ উল সাইন অফ হয়েছে:D।বুঝা গেলো না তো।দারান বুঝিয়ে দিচ্ছি।আমরা যারা জাহাজে চাকরী করি তাদের কাছে বছরে দুই ঈদ ছাড়াও আরও একটি ঈদের দিন আছে সে দিন টি হল জাহাজ থেকে নামার দিন।এই দিনে আমরা আবার নিজের দেশে এসে পরিবার পরিজনের সাথে মিলতে পারবো এই থেকেই এর নামকরণ ঈদ-উল-সাইন অফ;)।সে যাক খবর শুনে তো দিলাম দুই তিন লাফ।ইমিগ্রেশন ক্লিয়ার করে পারলে দৌড়াতে দৌড়াতে জাহাজে আসলাম।এসেই ক্যপ্টেনের কাছ থেকে ই-টিকেট নিলাম।কিন্তু একি!কোম্পানি যে দুর্যোধনের লেখা পড়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারের টিকেট কেটে ফেলেছে!:((পড়ে জানলাম না আমি চিটাগাং পর্যন্ত টিকেট চেয়েছি বলেই এই ব্যবস্থা।তাই তো বলি সিঙ্গাপুরের কোম্পানির তো দুর্যোধনের কথা জানবার কথা না।জানলে বুঝতাম এটা নিশ্চয়ই বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র।X(সে যাক ফ্লাইট শিডিউল ০১২৫ সিঙ্গাপুর টু ঢাকা।০৯৩০ ঢাকা টু চিটাগং।ব্যগ বচকা নিয়ে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে একখানা ট্যাক্সি নিয়ে সোজা চলে এলাম চাঙ্গি এয়ারপোর্ট টার্মিনাল ১ এ।দেখলাম রাত দশটা বেজে গেছে।কিন্তু একি বিপদ ইলেকট্রনিক বোর্ডে সব গুলো বিমানের কাউন্টার নাম্বার লেখা থাকলেও বাংলাদেশ বিমানের টা অনুপস্থিত। B:-) কিছুক্ষণ ধৈর্য ধরে বসার পর কাউন্টার নাম্বারের দেখা পেলাম।এই কিছুক্ষণ মানে হচ্ছে দুই ঘণ্টা;)।সে যাক বোর্ডিং নিতে যাব এমন সময় কোথা থেকে এক দরদী বাংলা ভাই মানে বাঙ্গালী ভাই এসে আমার খাওয়া হয়েছে কিনা,বাড়ি কোথায় এসব জিজ্ঞাসা করতে লাগলো।আমিও দেশী পোলা;) পেয়ে যারপরনাই খুশি।কিছুক্ষণ কথা বার্তা বলার পর দেশী ভাই আমাকে বলল আপনার কাছে তো মাত্র একটা ব্যগ আমার কিছু মালপত্র যদি একটু নিতেন তাহলে আমার বেশ উপকার হত।আমি বললাম বেশ তো কি জিনিস নিতে হবে?তিনি বললেন দুইটা ক্যমেরা আর পাঁচটা মোবাইল।আমি ধরাক করে বলে বসলাম খাইছে! #:-S দেশী ভাইকে বললাম নিজের ঘরে পাছা থাকতে আমারটা মারার ইচ্ছে হল কেন ভাই? X( তিনি আমাকে বললেন কোন সমস্যা নেই।সমস্যা নেই তো আপনি নিচ্ছেন না কেন?আপনার ব্যগের কানাকুনায় তো অনায়াসে এগুলো গলিয়ে দেওয়া যায়।আমি কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে লাইনে দাড়িয়ে বোর্ডিং পাস নিয়ে নিলাম।এবার শুরু হল ম্যগি কমেডি কমেডি খেলা। :-P হঠাৎ দেখি ইলেকট্রনিক বোর্ডে বাংলাদেশ এয়ারলাইন রি-টাইমড।আমার সাথে আরও যারা বাঙালি ভাইয়েরা আছেন গতিক দেখে মনে হল এটা খুব ই স্বাভাবিক ঘটনা।তাঁরা মনের সুখে বসে বসে ঝিমাচ্ছেন।আমি কাউন্টারে গিয়ে জানলাম শিডিউল পরিবর্তন হয়ে ২টা ৩০ এ গিয়ে দারিয়েছে।আমি ও মনের দুঃখে বসে বসে ঝিমতে আরম্ভ করলাম।কখন যে ঘুমিয়ে গেছি ঠিক খেয়াল হয় নি।হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে ঘড়িতে দেখি ৩ টা বাজে।হায় হায় ফ্লাইট মিস করলাম নাকি? B:-) আশেপাশে তাকিয়ে দেখি দেশী ভাইয়েরা যে যেখানে আছে সেভাবেই দিব্যি ঘুমাচ্ছে।আশস্ত হলাম।দৌড়ে ইলেকট্রনিক বোর্ডের সামনে গিয়ে দারাতে দেখি এখনো রি-টাইমড।ভিতরে গিয়ে জানতে পারলাম ফ্লাইট ৩ টা ৩০ এ।বহু জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আসলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ।সব কিছু পেছনে ফেলে প্লেনে উঠতে যাব এমন সময় মনে হল ভুল করে অন্য কোথাও উঠছি নাতো।বিশিষ্ট বৃদ্ধা নানী টাইপ বিমান বালার;) কাছে শুনে নিলাম এইটায় বাংলাদেশ বিমান তো।তিনি আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললেন জি এইটায় বাংলাদেশ বিমান।কেন?আমি বললাম না মানে আমি ভেবেছিলাম এইটা গাবতলী টু সায়েদাবাদ গামী ৮ নাম্বার বাস।;)তিনি আমাকে বললেন যান নিজের জায়গায় গিয়ে বসুন।আমি নিজের জায়গায় এসে বসলাম।আমি এ পর্যন্ত যতগুলো বিমানে ট্রাভেল করেছি তাদের সব গুলো বিমানবালায় বেশ হাসিখুশি এবং এনারজেটিক শুধু বাংলাদেশ বিমানের চিত্রটায় দেখলাম ভিন্ন।/:)বিমানবালা গুলো এমন ভাবে প্যসেঞ্জার দের সাথে ব্যবহার করছে যেন প্যসেঞ্জার গুলো সারভেন্ট আর ওরাই প্যসেঞ্জার।X(কোন এক পর্যায়ে আমি একজন বিমানবালা কে চা দিতে দেখে বললাম আমি তো চা খাইনা আমার জন্য একটু প্লেইন ওয়াটার হবে কি?তিনি বললেন অপেক্ষা করুন যখন আবার পানি নিয়ে আসব তখন পাবেন।আমি বললাম কখন আপনি পানি নিয়ে আসবেন তিনি বললেন ১ ঘণ্টা পর।আমি কিছুক্ষণ বিস্মিত হয়ে চেয়ে রইলাম।এরা নিজেদের ভাবে কি?যারা সিঙ্গাপুরে কাজ করতে যায় তাঁরা কি মানুষ নয়।বিশ্বাস করুন আর নাই করুন আমি ঐদিন পানি পাই নি:((।যাই হোক সকালে এসে পৌঁছলাম ঢাকা এয়ারপোর্টে।সাড়ে নটায় বোর্ডিং পাস নিয়ে ডোমেস্টিক ফ্লাইট এ উঠে দেখি বিমান বাংলাদেশের বাসে উঠে বসে আছি B:-) ।কিছুক্ষণ পড়ে বুঝলাম এই বাস আমাদের গন্তব্যের বিমানের কাছে নিয়ে যাবে।হঠাৎ খেয়াল করলাম একজন ভদ্রমহিলা সিটের অভাবে দাড়িয়ে আছেন।তারই সামনে আমার বয়সী ছেলেগুলো বসে বসে গেজাচ্ছে।X(বুঝলাম সম-অধিকারের যুগে ঐ ছেলেগুলো ভদ্রতা ভুলে গেছে।সম-অধিকার বলুন আর নারী অধিকার যাই বলুন একজন ভদ্রমহিলাকে আর দশটা পুরুষের মাঝে দাড়িয়ে যেতে দেখার মত আধুনিক এখনো ঠিক হয়ে উঠি নি বিধায় দাড়িয়ে ভদ্রমহিলাকে আমার সিটটি ছেড়ে দিলাম।আর মনে মনে গালি দিলাম কাকে দিলাম?নিজেকে,আমার চারপাশের মানুষকে নাকি এই ঘুনে ধরা সমাজকে তা ঠিক নিজেই বুঝে উঠতে পারলাম না।সে যাক বিমানের কাছে আসতেই লাফিয়ে বিমানে উঠলাম কিন্তু একি বিমানের মধ্যে এত গরম কেন?:|জানলাম এয়ার কুলার নিচে কাজ করে না আকাশে উঠলে কাজ করে।X(এরকম এয়ারকুলার আমার বাপের জন্মে শুনিনি ইচ্ছা ছিল যে বিমানবালা এ কথাটি বলছেন তাকে একটু ঝাঁকানোর কিন্তু তিনি কোন সুযোগ না দিয়েই পর্দার আরালে চলে গেলেন।যাই হোক দেশে আসার সুবাদে সবার সব ভুল ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে লাগলাম।প্লেন থেকে নেমে ব্যগের জন্যে অপেক্ষা করছি।সবার সব ব্যগ চলে আসলেও আমারটার কোন খোঁজ দেখলাম না।হঠাৎ দেখি এক্সেলেটরে শুধু একটা ভাঙ্গা ব্যগ ঘুরে বেরাচ্ছে আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম ব্যগটা আমারই!আর একটু হলেই ভিতরের সব জিনিস বাইরে বেরিয়ে আসত আর কি? X( B:-) :-* মনের দুঃখে এয়ারপোর্ট থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখি আরেক নাটক।কোন ট্যাক্সি আগ্রাবাদ পর্যন্ত ১০০০টাকার নিচে যাবে না।যারা চিটাগং এসছেন তাদের নিশ্চয়ই বুঝার কথা।এবার আসলাম সি এন জি র কাছে।অনেক বুঝিয়ে একটাকে ৪০০ টাকায় রাজি করালাম।বাসা পর্যন্ত এসে তিনি আমার ৫০০ টাকার নোটের পুরোটা পকেটে রাখতে রাখতে বললেন ভাই পুরটায় রেখে দিলাম। আমি বললাম পুরোটা রাখবেন মানে?তিনি বললেন আপনি বিদেশ থেকে এসছেন আর মাত্র ১০০ টাকার জন্য এমন করতেছেন?ভাবখানা এমন বিদেশে আমাকে বসিয়ে বসিয়ে বেতন দেয়।X(আমি অনেক জোর করলেও টাকা টা আদায় করতে পারলাম না।নিরুপায় হয়ে বাসার দিকে হাটা ধরলাম আর নিজেকে প্রমদ গুনলাম বাচ্চু দেশে এসে পরেছ অতএব সাবধান!কলিংবেল বাজাতেই কারো দৌড়ে দরজার কাছে এসে দাঁড়ানোর শব্দ পেলাম।ভিতর থেকে বলল কে? আমি বললাম আমি।দরজা খুলে দিতেই দেখি কোন এক মায়াবী নারী চোখ ভরা জলে আমার দিকে তাকিয়ে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ার সবুজ সংকেতের অপেক্ষা করছে।;)আমি মুখটা হাসি হাসি করে সবুজ সংকেত টা দিয়েই দিলাম।পরক্ষণেই টের পেলাম আমার বুকের ভিতর টা অজানা এক সুখে ভরে উঠছে।এই সুখেই কি না কে জানে ঘটে যাওয়া সব কষ্ট ভুলে সবাই কে ক্ষমা করে দিলাম।:D:D:D
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×