somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ও তথাকথিত অবস্থান

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাষ্ট্রধর্ম প্রসঙ্গে সেক্যুলারদের একটা কমন প্রশ্ন হলো, "রাষ্ট্রের আবার ধর্ম কী?"

আমাদের ইসলামপন্থী ভাইবোনেরা এর জবাবে বলে থাকেন — "রাষ্ট্রের ভাষা (রাষ্ট্রভাষা) থাকলে কেন ধর্ম থাকবে না?" যুক্তি হিসেবে এটা বেশ দুর্বল। কারণ ভাষা ও ধর্মের প্রকৃতি এক না। ভাষা হলো মাধ্যম আর ধর্ম হলো বিধায়ক।

একটা রাষ্ট্রের হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান হবার দরকার নেই কিন্তু তার প্রশাসনিক কাজকর্মে ভাষার প্রয়োগ আবশ্যক। তাই রাষ্ট্রভাষা বাংলা থাকা এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকাকে যুক্তিগতভাবে এক পাল্লায় মাপা স্থূলতা।

তাহলে কি আমি সেক্যুলারদের প্রশ্নের বৈধতা দিচ্ছি? মোটেই না। কেবল বলতে চাচ্ছি মুসলিম হিসেবে আমরা কী জবাব দেব। তা এই যে, রাষ্ট্রধর্ম থাকার প্রয়োজন নেই একথাটা আসলে প্র্যাক্টিক্যালি অসম্ভব ব্যাপার কারণ প্রতিটি রাষ্ট্র আবশ্যকভাবে রাষ্ট্রধর্ম তৈরি করে ফেলে, কিন্তু সবাই তা ঘোষণা করে না। বাংলাদেশেরও রাষ্ট্রধর্ম আছে এবং সেটা নিশ্চিতভাবে ইসলাম না। বাহাত্তরের সংবিধানের প্রধান চারটি মূলনীতি হলো- গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ এবং সমাজতন্ত্র। এ চারটি হলো বাংলাদেশের রাষ্টধর্ম। কারণ এগুলো প্রতিটিই আদর্শ এবং সেগুলো দিয়ে একটি রাষ্ট্রের আচরণ নির্ধারিত হয়।

ধর্ম কী?

যে বিশ্বাস ও চেতনা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের চিন্তা ও কর্মের গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে। ধর্ম মানে কেবল স্রষ্টাকেন্দ্রিক আচার নয়। যদি তা-ই হতো তাহলে বৌদ্ধধর্ম কখনো ধর্ম হিসেবে গণ্য হতো না।

একটি রাষ্ট্র তার নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগত্যশীল রাখতে তাদের মধ্যে একটা সাধারণ চেতনার সৃষ্টি করে। যেমন টেকনাফের কিশোরি মেয়েটি কোন যুক্তিতে এতকাছের বার্মিজ মানুষকে আপন না ভেবে সুদূর তেতুলিয়ার হাড় জিরজিরে অচেনা বৃদ্ধটিকে আপন ভাববে? কারণ উভয়েই 'বাংলাদেশী'। এজন্য রাষ্ট্রগুলো জাতীয়তাবাদের চাষ করে। ঠিক যেমনিভাবে আমরা ইসলামিক চেতনা থেকে সুদানের মোটা ঠোঁটের মিশকালো যুবকটিকে নিজেদের ভাই ভাবতে পারি, কেননা উভয়ে এক রবের উপাসনা করে।

ধর্ম তার অনুসারীদের মধ্যে মুক্তির একটা রাস্তা বাতলে দেয়। আমরা মুসলিমরা সমস্যায় পড়লে রবের দুয়ারে সিজদায় পড়ে মুক্তি খুঁজি। তেমনি আওয়ামী ও বামপন্থী সেক্যুলারগণ দেশের সকল সমস্যার মুক্তির পথ হিসেবে "বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়া"কে মনে করেন।

ধর্মের যেমন কিছু রিচুয়াল থাকে, রাষ্ট্রেরও তেমনি কিছু রিচুয়াল থাকে। জাতীয় সঙ্গীত, দিবস পালন, প্রভাতফেরি, প্রথম প্রহরে পুষ্পস্তবক অর্পণ — এগুলো তার সামান্য কিছু নিদর্শন।

সুতরাং সকলবিচারেই রাষ্ট্রের ধর্ম থাকে এবং সেটা তার আচরণে স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেমন সংবিধানের চারটি মূলনীতি। এ মূলনীতিগুলোর সাথে ইসলামের সংঘর্ষ আছে, যেমনি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্ট-ইহুদি ধর্মের সাথে আছে। গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের সাথে ইসলামিক রাষ্ট্রনীতির কিছু সামঞ্জস্যও আছে, যেমন খ্রিষ্ট ও ইহুদিধর্মের সাথে ইসলামের কিছু মিল আছে। মিল থাকলেও তারা প্রত্যেকেই যেমন আলাদা ধর্ম, তেমনি রাষ্ট্রনীতিতে সেক্যুলারিজম ও ইসলাম থাকা আলাদা বিষয়।

কাজেই রাষ্ট্র পরিচালনার ঐ চারটি মূলনীতি রাখা আবার রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে ঘোষণা করা বেশ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে কি রাষ্ট্রধর্ম বাতিল হয়ে গেলেই ভালো? তা নয়। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখা দরকার এজন্য যে, এটা বাতিল হওয়া সেক্যুলারদের খুশি করবে। এরপর আস্তে আস্তে ইসলামকেন্দ্রিক অন্যান্য সংশ্লিষ্টতা দূরীকরণে তারা সাহস পাবে।

যেমন রাষ্ট্রধর্ম বাতিলের উদ্যোগ যখন নেওয়া হয়েছিল তখনই সেক্যুলারদের একটি অংশ দাবি জানিয়েছিল মাদ্রাসা বন্ধ করতে, ধর্মভিত্তিক শিক্ষা বন্ধ করতে। এর আগে শাহবাগে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি উঠেছিল। তাদের এ চাওয়ার শেষ নেই, যতক্ষণ না গোটা দেশের মানুষ সেক্যুলারিজমকে ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করে।

এই পোস্টের মূল বক্তব্য কী?

মূল বক্তব্য হলো সেক্যুলারদের ন্যারেটিভ ও যুক্তিগুলো প্রায়ক্ষেত্রেই সেলফ কনট্রাডিকটরি হয়, আমাদের কাজ হবে এই কনট্রাডিকশনগুলো স্পষ্টভাবে মানুষের সামনে প্রকাশ করা।

আর এই কাজে দুর্বল যুক্তিতর্কের ব্যবহার বন্ধ করা, যাতে বোঝা যায় কথা বলতে আমরাও জানি।

কৃতজ্ঞতায়ঃ মোহাম্মদ যুবায়ের।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৩৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×