somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রীতু আরাশিগে-১

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক

'আপনার এখান থেকে আমি বাংলাদেশে ফোন করতে চাই।'
শ্রীলংকার কুকুলেগংগা জেলার মাতুগামা উপশহরের এক টেলিফোন বুথে ঢুকে ইংরেজিতে এ কথা জিজ্ঞাসা করতেই দশ-বার বছরের কিশোরীটি তার মুখমণ্ডলে একটা অপূর্ব নির্মল মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো।
শ্রীলংকায় উচ্চ এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের সবাই ইংরেজি বলতে পারলেও দরিদ্র জনগণের ভাষা সিনহালা। দরিদ্র-সম্ভবা টেলি-অপারেটর কিশোরী তাই পরদেশী আগন্তুকের ইংরেজি বাচ্য বুঝলো না। কাজেই সে তার নিজস্ব সিনহালা ভাষায় কী যেন বলতে চাইলো, কিন্তু সেই ভাষা মেজর এজাজ রহমান চৌধুরির কাছে পাখির ভাষার মতোই দুর্বোধ্য মনে হলো।
মাত্র দুদিন হয়েছে তাঁরা শ্রীলংকায় এসেছেন। আমেরিকা, বাংলাদেশ, নেপাল, মংগলিয়া ও স্বাগতিক শ্রীলংকার যৌথ অংশ্রগ্রহণে জাতিসংঘ মিশনে শান্তিরক্ষী বাহিনীর কার্যক্রমের ওপর প্রশিক্ষণের উদ্দেশে তাঁদের এখানে আগমন, যদিও সমস্ত ব্যয়ভার খোদ মার্কিন সরকার কর্তৃকই বহন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে আসার সময় মেজর বলে এসেছিলেন কুকুলেগংগায় পৌঁছেই বাসায় ফোন করবেন। কিন্তু এখানে আসার পর দেখা গেলো টেলিসংযোগ স্থাপিত হতে আরো চার-পাঁচ দিনের মতো সময় লাগবে। এতোদিন অপেক্ষা করা যায় না, দেশে পরিবারের সবাই খুব দুশ্চিন্তায় থাকবেন।
যেখানে মার্কিনিদের আগমন সেখানে জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গের প্রাচূর্য সুনিশ্চিত। কিন্তু আয়োজক কর্তৃপক্ষের নানাবিধ সীমাবদ্ধতা ও ব্যস্ততার দরুণ ভিনদেশীগণের কুকুলেগংগায় পৌঁছাবার সংগে সংগেই সেই প্রাচূর্যের সুব্যবস্থা হয় নি, এবং একই কারণে নিজ নিজ দেশে টেলিফোনে যোগাযোগের জন্য কাউকে ক্যাম্পের বাইরে নিকটস্থ শহরে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব হলো না।

পরদেশে প্রবেশের সাথে সাথেই কয়েকটি দরকারি কথা ও-দেশের ভাষায় শিখে নেয়া অত্যন্ত জরুরি। যেমন :
'আপনি কেমন আছেন?'
'আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।'
'একটু দয়া করে আমার কথাটি শুনবেন কি?'
'এই জিনিসটার দাম কতো?'
'আমি কলম্বো যেতে চাই।'
'অনুগ্রহ করে আমাকে ক্যান্ডি যাওয়ার পথ বলে দিন।'

মেজর মেয়েটিকে আবার জিজ্ঞাসা করেন, 'আপনার এখান থেকে কি বাংলাদেশে ফোন করা সম্ভব হবে?'
এ কথা বলার সংগে সংগে তাঁর বোধোদয় হয় যে, মেয়েটি হয়তো তাঁর ইংরেজি বাচন বুঝতে পারে নি। গত দু দিনে দু-একটা ভাঙ্গা-ভাঙ্গা অতি সাধারণ সিনহালা শব্দ ও বাক্য শেখা হলেও টেলিফোন করার কথাটি কিভাবে বলতে হবে তা তাঁর জানা হয় নি, অথচ এখন মনে হচ্ছে এ কথাটি সর্বাগ্রে শেখা জরুরি ছিল।
কিন্তু বুদ্ধিমতী মেয়েটি তার টেলিফোনটি মেজরের দিকে এগিয়ে দিয়ে ইশারায় তার ডান পাশে দেয়ালে ঝোলানো চার্টটির দিকে নির্দেশ করে, সেখানে বাংলাদেশে ফোন করার প্রতিমিনিট কলচার্জ বাবদ ৪৫ রুপি লিপিবদ্ধ আছে।
'এটা ঠিক আছে।' বলে মেজর নিজের দিকে টেলিফোনটি টেনে এনে ডায়াল করতে থাকেন।
অপর প্রান্তে মেজরের আট বছর বয়সী কন্যা আবেগে কেঁদে ফেলে। সে বলে, 'আব্বু, তুমি এতো পরে আমার কাছে ফোন করলে কেন? আমি গত তিন দিন ধরে তোমার কথা শুনতে পাই না। তোমার জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে। আমি তোমাকে খুব...খুউব মিস করছি আব্বু।'
এরপর মেজর তাঁর দশ বছর বয়সী ছেলের সাথে কথা বলেন। সে-ও কিশোর, কিন্তু কনিষ্ঠা ভগ্নির তুলনায় সে নিজেকে সর্বদা অধিকতর ব্যক্তিত্ববান, দায়িত্বশীল ও বোঝবান মনে করে। সে বলে, 'আব্বু, রীতু একটুও বোঝে না। তুমি তো চার সপ্তাহ পরেই চলে আসবে, তাই না আব্বু? তবু সে দিনভর তোমার জন্য কাঁদে। আমি সেজন্য ওকে অনেক বকা দিয়েছি।'
স্ত্রীর সাথে কথা হলে তিনি জানালেন ফোন করতে এতো বিলম্ব হওয়াতে গত দু দিন তিনি খুব দুশ্চিন্তায় কাটিয়েছেন।
ওপরের কথাগুলো দশ মিনিটের মধ্যেই শেষ করে মেজর অত্যন্ত তৃপ্তি ও সুখের সাথে জিন্‌সের পেছন পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করেন। মানিব্যাগের মুখ খুলতে খুলতে তিনি কিশোরীর দিকে তাকান, সে তখন এক পায়ে বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে অপলক চোখে মেজরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে- কী অদ্ভুত সুনির্মল তার হাসিভরা মুখখানি, সমস্ত মুখাবয়ব কী এক করুণ মায়াবী মমতায় ছেয়ে আছে- অকস্মাৎ মেয়েটির চোখের ওপর তাঁর চোখ পড়তেই মেজরের বুকটা হু হু করে ওঠে- ঠিক এ রকম, অবিকল এ রকম একজোড়া চোখ তিনি তাঁর ঘরে সুদূর বাংলাদেশে রেখে এসেছেন, সেই চোখ দুটি এখন তাঁর জন্য দিনরাত অশ্রুতে ভিজে থাকে।
'স্যার...।'
ইউনিভার্সেল এই ইংরেজি সম্বোধনে মেজরের ধ্যানভঙ্গ হয়। তিনি মানিব্যাগ থেকে পাঁচটি এক শ রুপির নোট বের করে কিশোরীর হাতে দিয়ে সংকেতে বোঝাতে চেষ্টা করেন, 'বাড়তি পঞ্চাশ রুপি ফেরত দিতে হবে না। দেশে আমার একটা কন্যা আছে, তার চোখ দুটো তোমার চোখের মতো। তার কথা মনে করে আমি তোমাকে অতিরিক্ত এই পঞ্চাশ রুপি বকশিস দিচ্ছি। তা দিয়ে তুমি চকোলেট কিনে খেয়ো।'
কিন্তু কিশোরী এ সংকেতের কোনো কিছুই বুঝলো না। সে পাঁচটি দশ রুপির নোট মেজরের দিকে বাড়িয়ে দেয়। ততোক্ষণে টেলিফোন বুথে আরো দু-চারজন শ্রীলংকান নাগরিক টেলিফোন করার উদ্দেশে এসে জড়ো হয়েছেন। কিন্তু কেউ তাঁর ইংরেজি বাচন ও সংকেতের অর্থ উদ্ধার করতে পারলেন না। অবশেষে পঞ্চাশ রুপি ফেরত নিয়ে মানিব্যাগে গুঁজলেন এবং কিশোরীর মাথায় দু বার হাত বুলিয়ে গুডবাই বলে বিদায় নিলেন।

রাতে একটা আশ্চর্য স্বপ্ন দেখলেন মেজর। টেলিফোন বুথের সামনে গিয়ে তিনি অনর্গল মেয়েটির সাথে কথা বলছেন। মেয়েটির ইংরেজি বাচন শুনে তাঁর মনেই হচ্ছে না সে কোনো দরিদ্র ঘরের ইংরেজি না-জানা টেলিফোন অপারেটর।
'তুমি কতোদিন ধরে এখানে আছো, খুকি?'
'তিন মাস হলো।'
'তুমি কি স্কুলে যাও?'
'আমি স্কুলে যাই না। আমার মা-বাবা কেউ জীবিত নেই। এটা আমার এক দূর সম্পর্কীয় খালুর টেলিফোন বুথ। মাসিক মাইনে নেই। পেটে-ভাতে তাঁদের বাসায় থাকি, আর এখানে কাজ করি।'
'আমি খুবই দুঃখিত যে তুমি একটা এতিম বালিকা।'
'আপনাকে ধন্যবাদ, আমার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের জন্য।'
'তোমার নামটা কি আমাকে বলবে, খুকি?'
'নিশ্চয়ই। আমার নাম আরাশিগে।'
নামটি মেজরের কাছে খুব স্পষ্ট হলো না। ভ্রু-যুগল ও কপাল কুঞ্চিত করে মেয়েটির নাম পুনরাবৃত্তি করে বললেন, 'আরিচেগা?'
'না না, আপনি ভুল উচ্চারণ করছেন। আমি কাগজে লিখে দিচ্ছি। Arachchige. উচ্চারণ করুন- আ-রা-শি-গে।'
মেজর মেয়েটির মতো টেনে টেনে উচ্চারণ করলেন, 'আ-রা-শি-গে। হয়েছে?'
'চমৎকার।'
'আচ্ছা আরাশিগে, তুমি কি কখনো বাংলাদেশের নাম শুনেছো?'
'জি না স্যার।'
'স্যার' কথাটি উচ্চারিত হবার সাথে সাথেই তাঁর ঘুম ভেঙ্গে যায়। মানুষ বাস্তবে যা দেখে না বা শোনে না, স্বপ্নেও তা দেখতে কিংবা শুনতে পায় না। কিন্তু 'আরাশিগে' নামটি কিভাবে তাঁর স্বপ্নের মধ্যে ঢুকে গেলো তা তিনি ভেবে পাচ্ছেন না। এখনো মেজরের কানের কাছে মেয়েটির নিজকণ্ঠে উচ্চারিত 'আরাশিগে' নামটি গানের সুরের মতো বাজছে।

মেয়েটির নাম কি সত্যিই আরাশিগে? এ কথা যখন ভাবছেন তখন হঠাৎ করে তাঁর একটা কথা মনে পড়ে যায়- টেলিফোন বুথের দেয়ালে কলচার্জের যে চার্টটি ঝোলানো ছিল, তার ওপরে কলম দিয়ে অসুন্দর ইংরেজি অক্ষরে এই নামটি লেখা ছিল।
কিন্তু এ থেকেই ধরে নেয়া যায় না যে মেয়েটির নাম আরাশিগে। প্রথমত, মানুষের নাম আরাশিগে হতে পারে এটা নিয়েও তাঁর মনে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। দ্বিতীয়ত, এটা যে একটা মেয়ে-নাম তা-ও নিশ্চিত করে বোঝার উপায় নেই।
মেয়েটার নাম জানতে মেজরের খুব ইচ্ছে করতে লাগলো, তার চাইতেও মেয়েটাকে দেখার ইচ্ছেটা তাঁর প্রবল হতে থাকলো।
কিন্তু এর পরের দুটি সপ্তাহ খুব ব্যস্তভাবে কাটলো। ইতোমধ্যে আবাসিক-ক্যাম্প এলাকায় টেলিসংযোগ স্থাপিত হয়েছে। দু-তিন দিন পরপর মেজর বাংলাদেশে পরিবারের সবার সাথে কথা বলেন।

'রীতু মামণি, তুমি ভালো আছো?'
'আমি ভালো আছি। তুমি?'
'আমিও। তুমি কি এখনো আমার জন্য কাঁদো?'
'কাঁদি। কিন্তু সব সময় না। রাতে ঘুমুবার সময় কাঁদি, আর ভাইয়া যখন আমাকে মারে তখন কাঁদি।'
'তুমি একটুও কেঁদো না। আমি বাড়ি এসে তোমার ভাইয়ার বিচার করে দিব। ঠিক আছে?'
'হুঁম। ওকে কান ধরিয়ে টেবিলের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখবে।'
'আচ্ছা রাখবো।'
'তারপর তিনবার ওঠ্‌-বস্‌ করাবে।'
'করাবো।'
'উঁহু, তিনবার না, দুইবার। তিনবার করালে ও কষ্ট পাবে।'
'আচ্ছা, তুমি যা বলবে তাই করবো।'
'তারপর ওকে বাথরুমে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিবে।'
'হুঁম দিব।'
'আব্বু, আর কতোদিন পর আসবে তুমি?'
'আরো দু সপ্তাহ পরে।'
'দু সপ্তাহে কি চৌদ্দ দিন হয়?'
'হ্যাঁ।'
আমার জন্য কিন্তু চকোলেট আনবে। ভাইয়ার জন্য কিচ্ছু আনবে না।
ঠিক আছে। মামণি শুনতে পাচ্ছো?
শুনছি তো।
এখানে তোমার মতো একটা মেয়েকে দেখেছি।
সে কী করে?
টেলিফোনে কাজ করে।
একদম আমার মতো!
ওর চোখ দুটো তোমার চোখের মতো। তুমি যখন ওর সমান হবে তখন তোমাকে ওর মতোই দেখাবে।
রীতু খিলখিল করে হেসে উঠে বলে, 'তাহলে তো দুটো রীতু হয়ে যাবে।'
হ্যাঁ, তবে ওর নাম কিন্তু রীতু নয়, আরাশিগে।

আরাশিগেকে নিয়ে প্রতিবারই দু-একটা কথাবার্তা টেলিফোনে হয়। মেজরের স্ত্রীও তাকে নিয়ে খুব উৎসাহ প্রকাশ করেন। দেশে ফেরত যাবার সময় আরাশিগের একটা ছবিও সঙ্গে নিতে বলে দিলেন।
একদিন মেজর সামিরা নামক এক শ্রীলংকান অফিসারকে সংগে নিয়ে আরাশিগের টেলিফোন বুথে এলেন বাংলাদেশী মেজর। বুথে ঢোকামাত্র দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানালো মেয়েটি এবং বাংলাদেশী মেজরকে যে সে চিনতে পেরেছে তা সে শ্রীলংকান মেজরের মাধ্যমে জানিয়ে দিল। দ্বিতীয়বারের মতো তার বুথে আগমন করায় সে যারপরনাই গর্বিত ও সম্মানিত বোধ করছে।
আগের বারের মতো আজ পারস্পরিক কথোপকথনে কোনো অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে না, কেননা, মেজর সামিরা আজ দোভাষীর কাজটি করে দিচ্ছেন।
তোমার চোখ দেখলে আমার মেয়ের কথাটি মনে পড়ে যায়।
আপনার মেয়েটির বয়স কতো?
আট বছর।
আমার বয়স বিশ বছর।
মেজর একটু বিব্রত হোন। মেয়েটির বয়স দশ-বারর মতো দেখায়, সেভাবেই এ যাবত তার সাথে আচরণ করছিলেন তিনি।
মেজর বলেন, 'তোমার সাথে আমার মেয়েটির প্রচুর মিল। এতো মিল যে সে যখন তোমার বয়সে পদার্পণ করবে তখন তাকে অবিকল তোমার মতো দেখাবে।'
আরাশিগে সলজ্জ হেসে নিচের দিকে তাকায়।
তুমি কি বাংলাদেশে বেড়াতে যাবে, আমার প্রিয় কন্যা?
আমার বাবার প্রচুর অর্থকড়ি নেই। থাকলে নিশ্চয়ই আপনার মতো আমার আরেকজন বাবার দেশে বেড়াতে যাওয়াটা আমার জন্য বেজায় সুখকর হতো।
তুমি কদ্দূর লেখাপড়া করেছো?
আমি লেখাপড়া করতে পারি নি। আমার আট বছর বয়সে আমার মা মারা যান। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন। তিনি বর্তমানে একজন অকাল-অবসরপ্রাপ্ত পঙ্গু সার্জেন্ট। জাফনা যুদ্ধে তিনি উরুতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।
দুই মেজরই অবাক হোন এবং তার প্রতি সহানুভূতি জানাতে থাকেন।
মেয়েটি বলে, 'পেনশনের টাকার একটা অংশ দিয়ে এই টেলিফোন বুথটি করা হয়েছে। আমাদের চার ভাইবোনের মধ্যে আমিই বড়। বাকিরা লেখাপড়া করছে বলে এ কাজটি আমাকেই করতে হয়।'
তোমার প্রতি আমার অশেষ সহানুভূতি রইলো বাছা। তুমি তোমার মনোবল, পরিশ্রম আর কর্মদক্ষতা দিয়ে তোমাদের সংসারটাকে টিকিয়ে রাখছো, তোমার মতো আর মেয়ে হয় না।
আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ।
তুমি আমার প্রিয়তমা কন্যার মতো। আমি এদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে তোমাকে একটা সামান্য উপহার দিয়ে যেতে চাই। আমি খুবই খুশি হবো যদি তুমি আমাকে তোমার পছন্দের জিনিসটার কথা বলো, আমার আদরের কন্যাটি।
মহোদয়, আপনি আপনার এ মেয়েটিকে একটা উপহার দেয়ার কথা ভেবেছেন, এজন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ এবং আমি আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। তবে দয়া করে আমাকে কিছু দেবার জন্য ব্যস্ত হবেন না, আপনি সারাটি জীবন আমার হৃদয়ে অবস্থান করবেন, ঠিক আমার জন্মদাতা পিতার মতোই।
আমার প্রিয় কন্যা, তোমার কথায় আমি খুবই সন্তুষ্ট হলাম।
নিজ কন্যা কী পেতে ভালোবাসে তা তো তাকে জিজ্ঞাসা করা যায়ই। সলজ্জ বালিকা সবিনয়ে উপহার গ্রহণে অনিচ্ছার কথা জানালেও মেজর মনে মনে স্থির করলেন, দেশে ফেরত যাবার আগে এ মেয়েটিকে তিনি অবশ্যই একটা উপহার প্রদান করে যাবেন এবং কী দিবেন তা-ও তিনি স্থির করে ফেললেন।

কলম্বোর সর্বাধুনিক 'ম্যাজেস্টিক সিটি' শুধু শ্রীলংকায় তৈরি সামগ্রীর জন্যই বিখ্যাত নয়, বিশ্বের প্রায় সকল উন্নত ব্র্যান্ডের সামগ্রীই এখানে পাওয়া যায়। এসব সামগ্রীর আকাশছোঁয়া মূল্যের কারণে ম্যাজেস্টিক সিটি মূলত শ্রীলংকান উচ্চবিত্ত ও অভিজাত শ্রেণী এবং ধনিক পর্যটকদের 'পারচেজ সেন্টার' হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
ম্যাজেস্টিক সিটিতে গিয়ে নিজ পরিবারের সদস্যদের জন্য মেজর বেশ কিছু দুর্লভ ও আকর্ষণীয় উপঢৌকন ক্রয় করলেন। কিন্তু মনে মনে যা তিনি খুঁজছেন তা কোথাও পাচ্ছেন না। মাঝখানে অবশ্য 'হাউজ অব ফ্যাশন' থেকেও ঘুরে এলেন। হাউজ অব ফ্যাশনকে কলম্বোর সবচাইতে ব্যস্ত শপিং মল বলা যেতে পারে। এখানে নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে সবার জন্যই সর্বাধুনিক ফ্যাশনের পোশাকাদি ন্যায্য মূল্যে পাওয়া যায়।

সন্ধ্যায় ক্যাম্পে ফেরার আগ দিয়ে আরেকবার সেই ম্যাজেস্টিক সিটিতে ঢুকলেন এবং দুটি দোকান পরই আরাশিগের জন্য চমৎকার একটা পোশাক পেয়ে গেলেন, ঠিক যেমনটি তিনি খুঁজছিলেন, যেটি পরলে আরাশিগেকে রাজকুমারীর মতো মনে হবে, রীতু যেদিন বড় হবে সেদিন ঠিক যেরকম তাকে দেখবেন বলে তিনি সর্বদা কল্পনা করেন।

কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে পরের দিনগুলো এতোই ব্যস্তভাবে কাটতে লাগলো যে দম ফেলবার মতো একদণ্ড অবসর পাওয়া গেলো না। বাংলাদেশে ফেরত যাবার দিন কলম্বো বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে কিছুটা ঘুরে মাতুগামা উপশহরে আসা হলো আরাশিগেকে উপহারটা দেয়ার জন্য। কিন্তু আরাশিগের টেলিফোন বুথ তখনো খোলা হয় নি। আশেপাশের দোকানও খোলা ছিল না। কিছুক্ষণ দিগ্বিদিক পায়চারি করার পর জনৈক পথচারীকে জিজ্ঞাসা করতেই জানা গেলো যে, এখানে আজ ছুটির দিন। মেজরের মনটা খুব বেদনার্ত হয়ে ওঠে।
একটা পথ অবশ্য আছে, এর আগে যে শ্রীলংকান মেজরকে নিয়ে এখানে আসা হয়েছিল, সেই মেজর সামিরার কাছে এটা পাঠিয়ে দেয়া যেতে পারে, তিনি এটা ঠিক আরাশিগের কাছে পৌঁছে দেবার সুব্যবস্থা করবেন। এই ভেবে তাঁরা বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন।
মাতুগামা উপশহর পার হয়েই মেজরের মনে পড়লো যে আজও আরাশিগের নাম সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলো না। শেষবার যখন মেজর সামিরাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন তখন কতো কথা হলো মেয়েটার সঙ্গে, অথচ তার নামটাই শুধু জিজ্ঞাসা করা হলো না। আরাশিগে নামটি তাঁর মনের ভিতরে এতোখানিই গেঁথেছিল যে তার সাথে কথা বলার সময় মেজরের মনেই হয় নি- তিনি মেয়েটির নাম জানেন না। সেদিন ক্যাম্পে ফেরত যাবার পর থেকেই মেয়েটির নাম জানার জন্য তাঁর মনের ব্যাকুলতা ক্রমশ বাড়ছিল। তিনি অবশ্য ধরেই নিয়েছিলেন যে ওর নাম আরাশিগে হওয়াটা খুবই সম্ভব- এমনকি টেলিফোন বুথের নামও যদি আরাশিগে শীর্ষক হয় তাহলেও ধরে নেয়া যায় যে আরাশিগের নামের ওপরেই টেলিফোন বুথের নামকরণ করা হয়েছে।

মাঝামাঝি জায়গায় আসার পর একটা উটকো ঝামেলায় পড়তে হলো, জিপ গাড়ির পেছনের একটি চাকা বার্স্ট হয়ে গেছে। ওটি বদলাতে প্রায় মিনিট বিশেকের মতো সময় চলে গেলো। ক্যাম্প থেকে সবাইকে নিয়ে একই কনভয় যোগে সরাসরি রাস্তায় অন্যান্য বাংলাদেশী এবং বাকি দেশগুলোর লোকজন রওনা হয়েছে। কেবল তাঁর জন্য আলাদা একটি জিপ যোগে এই বিশেষ ব্যবস্থাটি করা হয়েছিল, কারণ এখানে আরাশিগে নামক তাঁর একটি মেয়ে আছে এ কথাটি অনেকে জানতে পেরেছিলেন; বিদায়ের দিন সেই মেয়েটির সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হোক কর্তৃপক্ষের জনৈক অফিসারের এই অতিমানবিক সৌজন্যবোধ জাগ্রত হয়েছিল।

মাতুগামা উপশহরে যেতে বাড়তি রাস্তা অতিক্রম করতে হবে এটা কর্তৃপক্ষ জানতেন, কিন্তু কনভয়বিহীন মাত্র একটি জিপ যোগে দ্রুততর গতিতে গাড়ি চালিয়ে মূল কনভয়ের আগেই বিমানবন্দরে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব হবে বলে সকলের ধারণা ছিল। কিন্তু গাড়ির চাকা পাংচার ও বদলিসংক্রান্ত সময়ক্ষেপণের জন্য বিমান উড্ডয়নের পূর্ব-সময়টুকু মনে হতে লাগলো দ্রুত সংক্ষিপ্ত হয়ে আসছে। সঙ্গী শ্রীলংকান অফিসার সহ মেজরের মনে টেনশন বাড়তে থাকে।
বিমানবন্দরে পৌঁছে দেখেন যাবতীয় ফর্মালিটি সম্পন্ন করে সবাইকে ভিতরে পৌঁছে দিয়ে অত্যন্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় কনভয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্নেল তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁকে দেখেই অফিসারের মুখাবয়ব উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সামনে এগিয়ে এসে সহাস্যে জিজ্ঞাসা করেন, 'হ্যালো মেজর, আশা করি আপনার কন্যার সাথে শেষ সাক্ষাৎটি খুব মধুময় হয়েছে।'
'দুঃখিত কর্নেল, তার দেখা মেলে নি। তার দোকান বন্ধ ছিল, ঐ মার্কেটে আজ পূর্ণ ছুটির দিন কিনা।'
'ওউফ, ভেরি স্যাড।'
এ অবস্থায় তাঁর প্রতি কর্নেলের অপ্রসন্ন অভিব্যক্তির পরিবর্তে অসাধারণ সৌজন্য প্রকাশে বাংলাদেশী মেজর খুব মুগ্ধ হলেন। কিন্তু সময় খুবই সংক্ষিপ্ত, সঙ্গী সেনা-জোয়ানরা ধরাধরি করে ব্যস্তভাবে তাঁর মালামাল নামাচ্ছেন, মেজর নিজেও তাঁদের সাথে যোগ দিলেন।

বিমান উড্ডয়নের সঙ্গে সঙ্গে মেজরের মনে পড়লো যে ভুলবশত এবং ব্যস্ততার জন্য আরাশিগের জন্য কেনা উপহারটা তাঁর সঙ্গেই চলে এসেছে।

এর পরের বছরখানেক সময় খুব হাসি-আনন্দে কেটে যেতে লাগলো মেজর পরিবারে। প্রথম-প্রথম খুব বিচ্ছিন্নভাবে তাঁদের আলোচনায় আরাশিগের নাম উচ্চারিত হতো। এরপর আরাশিগে তাঁদের আলোচনায় এমনই একটা স্থান জুড়ে নিল যে মনে হতে পারে আরাশিগে এই পরিবারেরই একটা অতি আদরণীয় কন্যা, যে তার পিতামাতা ও কনিষ্ঠ ভাইবোনকে ছেড়ে দ্বীপদেশীয় শ্রীলংকায় প্রবাসী হয়েছে।
আরাশিগের জন্য কেনা ঝলমলে পোশাকের প্যাকেটটা একদিন খোলা হয়েছিল। শখ করে রীতুকে যখন পরানো হলো তখন সে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো। আরাশিগে যদিও বয়সে তার চেয়ে বার বছরের বড়, কিন্তু তার শারীরিক কোষ বৃদ্ধির হার আরাশিগের চেয়ে বেশি এবং তজ্জন্য পরবর্তী বছর তিনেকের মধ্যেই সে আরাশিগের সমান শারীরিক গঠন অর্জন করতে সক্ষম হবে বলেই মেজর মনে করেন।

রীতুকে পরানোর পর পোশাকটি পুনরায় প্যাকেটবন্দি করে রাখা হয়েছে। শ্রীলংকা থেকে প্রতি বছর অসংখ্য সেনা অফিসার বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে আসেন। এমনকি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতেও কমিশন লাভের জন্য বহু শ্রীলংকান জেন্টলম্যান ক্যাডেট প্রশিক্ষণরত আছেন। তাঁদের যে কোনো একজনের মাধ্যমে এই প্যাকেটটি শ্রীলংকায় মেজর সামিরার কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে। তিনি অবশ্যই আরাশিগের কাছে ওটি পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করবেন।
কিন্তু বিভিন্ন ব্যস্ততার দরুণ অতি সহসাই কোনো শ্রীলংকান সেনাসদস্যের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হলো না। ঠিক এমন সময়ে মেজর পরিবারে এক বিষাদময় ও হৃদয়বিদারক কাহিনীর সূচনা হতে থাকলো। এবং পরবর্তী দু বছর সময়টাতে সৃষ্টি হলো তাঁদের পরিবারের করুণতম ইতিহাস।



দুই

পনর বছর পরের কথা।

শ্রীলংকান সরকারের আমন্ত্রণে শ্রীলংকায় এসেছেন মেজর জেনারেল এজাজ রহমান চৌধুরি। এদেশে এখনো তামিল টাইগারদের সাথে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে নি। বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয়দের সাথে সফল শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন পৃথিবীর ইতিহাসে একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এল.টি.টি.ই.দের সাথে কিভাবে সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত করা যায় সে ব্যাপারে কলম্বোয় একটি সিম্পোজিয়ম অনুষ্ঠিত হবে। নরওয়ে, ভারত, আমেরিকা ও বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় দশটি দেশের প্রতিনিধিগণ এই সিম্পোজিয়মে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রিত হয়েছেন। বাংলাদেশের ওপরও একটি বিশেষ কেইস স্টাডি থাকবে যাতে মেজর জেনারেল এজাজ রহমান চৌধুরি তাঁর বিশেষজ্ঞ মতামত উপস্থাপন করবেন।
তিনদিনব্যাপী সিম্পোজিয়মের প্রাত্যহিক কর্মসূচিতে দম ফেলবার ফুরসত নেই। ইতোমধ্যে তিনি মেজর সামিরার অনুসন্ধান করেছেন। পনর বছর আগের কথা, তাঁরও এতোদিনে মেজর জেনারেল হয়ে যাওয়ার কথা, নিদেনপক্ষে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। বয়স ও চাকরির ক্ষেত্রে অবশ্য সামিরা এজাজ রহামন চৌধুরির চেয়ে জ্যেষ্ঠ ছিলেন। সেই হিসেবে অবশ্য এমনও হতে পারে যে এতোদিনে তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন।
মেজর সামিরার খোঁজ নিতে কর্তৃপক্ষ প্রচুর তৎপরতা প্রদর্শন করলেন। একই নামে আরো বহু অফিসার আছেন। কোন্‌ মেজর সামিরা পনর বছর আগে কুকুলেগংগায় বহুজাতিক সামরিক শান্তিরক্ষী প্রশিক্ষণে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তার হদিস মিললো না।

সিম্পোজিয়মে এক কর্নেলের সাথে আলাপ প্রসঙ্গে মেজর সামিরার কথা তুলতেই তিনি উজ্জ্বল হয়ে বলে উঠলেন, হ্যাঁ, তিনি ঐ মেজর সামিরাকে চিনেন। ঐ সময় তিনি ক্যাপ্টেন ছিলেন, তাঁর নাম কালনা, মেজর সামিরার অধীনে থেকেই তিনি ঐ সময় মহড়ায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তবে দুঃখের বিষয়টি হচ্ছে সামরিক মহড়ার পরের বছরই মেজর সামিরা জাফনায় এক দুর্ধ্বর্ষ যুদ্ধের সময় বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রেই প্রাণ হারান।
জেনারেলের মন খারাপ হয়। একজন পুরনো বন্ধুর পনর বছর আগেকার স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করলেন। সেসব এখন কেবলই দুঃখ দিয়ে যায়।

তৃতীয় দিন বেলা এগারটায় সিম্পোজিয়মের সমাপনী অধিবেশন শেষ হলো। একই দিন রাত দশটায় জেনারেলের ফিরতি ফ্লাইট। বাসস্থান থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ বের হয়ে যেতে হবে, তার আগের সাত-আট ঘণ্টা সময় সম্পূর্ণ তাঁর নিজের, পুরোটা সময় তাঁর অখণ্ড অবসর।
কিন্তু প্রকৃত অর্থেই তা অখণ্ড অবসর ছিল না। দেশ থেকেই তিনি কিছু পরিকল্পনা করে এসেছেন। এতোটুকু সম্পূর্ণ নিজস্ব সময় হাতে পেলেই তিনি সেই পরিকল্পনা মতো কাজটি করতে বেরুবেন- কলম্বো শহর থেকে সড়কপথে প্রায় আড়াই ঘণ্টা যাত্রার পর সেই মাতুগামা উপশহরে যাবেন, পনর বছর আগে সেখানে তিনি তাঁর আরাশিগেকে দেখে গেছেন, তাকে পুনর্বার আরেক নজর দেখবার জন্য সেই কতোকাল থেকে তাঁর বুকটা অবিরাম হাহাকার করছে।

কিন্তু মাতুগামা অনেক বদলে গেছে। ছোট উপশহরটি এখন চারদিকে বহুদূর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে। অত্যাধুকি অট্টালিকা গড়ে উঠেছে, সারি সারি বিলাশবহুল এ্যাপার্টমেন্ট, ফ্যাশনেবল দোকানপাট, রাস্তাঘাট- সবকিছু বদলে গেছে, উন্নত হয়েছে।
আরাশিগের টেলিফোন বুথটি ঠিক কোন জায়গায় ছিল তা ঠাওর করা গেলো না। সেদিনের আরাশিগেকে আজও এখানে অবিকল সেদিনের মতোই পাবেন- তিনি অবশ্য আদৌ এতোখানি আশা করেন নি। অবশ্য তার টেলিফোন বুথটিও যে খুঁজে পাওয়া যাবে এ ব্যাপারেও তিনি সুনিশ্চিত ছিলেন না। তবে একটা ব্যাপারে তিনি সুনিশ্চিত ছিলেন, আরাশিগে তাঁকে দেখামাত্রই চিনতে পারবে, কখনো কোথাও এ রকম হয় কিনা বা হয়েছে কিনা তা তিনি জানেন না, তিনি খুব সুনিশ্চিত ছিলেন যে আরাশিগেও তাঁকে দেখার জন্য অন্তপ্রাণ হয়ে উঠেছিল। সেই পনর বছর আগের দেখা, কিন্তু তাঁকে দেখামাত্রই সে টেলিফোন বুথ থেকে লাফিয়ে ছুটে এসে জেনারেলের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়বে।

প্রায় ঘণ্টাখানেক খোঁজাখুঁজির পর ক্ষুদ্র একটা তথ্য পাওয়া গেলো- তা হলো, বহুদিন আগে শহরের মাঝামাঝি স্থানে বেশ কয়েকটা টেলিফোন বুথ ছিল, যার একটির নাম ছিল 'আরাশিগে টেলিফোন সেন্টার'।
কিন্তু শহরের মাঝামাঝি জায়গা, পনর বছর আগে যা উপশহরের প্রান্ত থেকেও কিছুটা দূরে অবস্থিত ছিল, আজ বড় বড় দালান-কোঠায় ভরে গেছে।
এমন কি হতে পারে না যে এসব দালানের একটির মালিক আরাশিগে নিজে? সময় তো বদলায়, যে কারোরই।
কিন্তু আরাশিগের সন্ধান মিললো না।
মাত্র কিছুক্ষণ জেনারেল ভাবলেন। তারপর তাঁর সঙ্গী অফিসারকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'তোমাদের দেশে কি বৃক্ষরোপণের কোনো প্রচলন আছে?'
শ্রীলংকায় এ ধরনের প্রচলন গড়ে ওঠে নি। কারণ, আমাদের পুরো দেশটাই বৃক্ষে পরিপূর্ণ। প্রাকৃতিকভাবেই এখানে সব গাছ জন্মায় ও বড় হয়।
কিন্তু তবুও আমি একটা গাছ রোপণ করতে চাই।
এটা করার জন্য সর্বদাই আপনাকে স্বাগতম।

শ্রীলংকায় বটগাছের সংখ্যা কেমন তা জেনারেলের জানা নেই। তাঁর ইচ্ছে ছিল একটা বটবৃক্ষের চারা রোপণ করবেন। কিন্তু বটবৃক্ষ কেন, অন্য কোনো গাছের চারা সংগ্রহ করাও সহজ নয়, কেননা, এখানে কোনো নার্সারি নেই।
তীক্ষ্ণ প্রত্যুৎপন্নমতি সম্পন্ন সঙ্গী অফিসার ত্বরিত জেনারেলকে সঙ্গে নিয়ে শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে এলেন। স্থানীয় এক লোকের সাহায্যে রাস্তার ধার থেকে একটা অজানা চারাগাছ উত্তোলন করলেন।
'আমি এটা কোথায় রোপণ করতে পারি?' জেনারেল জিজ্ঞাসা করেন তাঁর সঙ্গী অফিসারকে।
'মাতুগামা সবচাইতে উপযুক্ত স্থান হয়', সঙ্গী অফিসার বলেন। 'কিন্তু সেখানে এটা রোপণ করবার জন্য কোনো পতিত জায়গা খুঁজে পাওয়া যাবে না।'
জেনারেল আর কিছু বলেন না। চারাটি সমেত গাড়িতে উঠে কলম্বোর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করতে বলেন।

মাতুগামা থেকে বের হয়ে মিনিট দশেক গাড়ি চালাবার পর রাস্তার এক ধারে একটা ফাঁকা জায়গা পাওয়া যায়। সেখানে গাড়ি থামাতে বললেন জেনারেল।
'আমি যদি ঐ মাঠের মাঝখানটায় এই চারাগাছটি রোপণ করি তাহলে কেমন হয়?' জেনারেল জিজ্ঞাসা করেন।
'উত্তম প্রস্তাব। আমার মনে হয় এটা পতিত জায়গা। এখানে আগামী পঞ্চাশ বছরেও বসতি গড়ে উঠবার কোনো আশঙ্কা নেই।' সঙ্গী অফিসার বলেন।
'তাহলে অনুগ্রহ করে এখানে এটা রোপণ করবার ব্যবস্থা করুন।'
গ্রামবাসীদের সহায়তায় অজানা বৃক্ষের চারাটি ওখানে রোপণ করে কলম্বোর উদ্দেশে পুনরায় গাড়িতে উঠে বসলেন।

সমস্ত রাস্তা অত্যন্ত করুণ নীরবতার মধ্য দিয়ে পার করে নিজ কক্ষে ফেরত এলেন জেনারেল। বিমানবন্দরে যাওয়ার আগে আরো ঘণ্টা দুয়েক সময় অবশিষ্ট আছে। ইচ্ছে করলে তিনি শহরে বেরুতে পারেন। কিন্তু বেরুবেন না। ঘোরাঘুরির অভ্যাস তাঁর আগে ছিল। তাঁর ছেলেমেয়েরা যখন ছোট ছিল স্ত্রীসহ তাদের নিয়ে তিনি প্রচুর ঘুরতে বেরুতেন। প্রায় বছর খানেক ভোগান্তির পর যে বছর রীতুর ক্যান্সারে মৃত্যু হলো মূলত সে-বছর থেকেই তিনি অনেক গুটিয়ে গেছেন- বহুদিন পর্যন্ত তাঁর কেবলই মনে পড়তো, তিনি গোসল সেরে বাইরে বেরিয়েছেন, রীতু দৌড়ে ছুটে এসে তাঁর শরীর শুঁকছে আর বলছে, 'আব্বু, তোমার শরীরে কী যে ঘ্রাণ! এতো ঘ্রাণ কি সাবানে হয়? আমার হয় না কেন?'
রীতুর মৃত্যুর পরের বছর যখন তাঁদের ছেলেটাও চলন্ত বাসের তলায় পিষ্ট হয়ে মারা গেলো- তার পর থেকে তিনি অন্তরে অন্তরে শুষ্ক ধুধু মরুভূমি হয়ে আছেন। তাঁর কিছুই ভালো লাগে না। ছোট একটা মেয়েকে দত্তক নিয়েছেন। মেয়েটির আসল নাম পাল্টে তার নাম রেখেছেন রীতু আরাশিগে। রীতু আরাশিগে খুব অদ্ভুত মেয়ে। রীতুর মতোই বড্ড জেদী। এতোটা জেদী ও বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে সে দিনে দিনে যে মাঝে মাঝেই সে উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে বলে ওঠে, 'আমার নাম রীতু আরাশিগে রেখেছো কেন, আমার নাম রেহানা।'

জেনারেলের তন্দ্রা ছুটে যায়। আসলে রীতু আরাশিগে কখনোই বলে নি, 'আমার নাম রীতু আরাশিগে রেখেছো কেন, আমার নাম রেহানা।' এ কথাটি তিনি তন্দ্রার মধ্যে স্বপ্নে শুনেছেন।
তিনি আজকাল খুব নিষ্ঠুরও হয়ে উঠেছেন। ই-মেইল, ফোন, ইত্যাদি কতো সুবিধাদি আছে, অথচ দেশে একবারও ফোন করেন নি- এ কথা মনে হতেই তাঁর মন খুব খারাপ হয়ে যায়। হঠাৎ বোধোদয় হয়, হাতের কাছেই টেলিফোন, তিনি ডায়াল করতে থাকেন।
জেনারেলের স্ত্রী অপর প্রান্ত থেকে বলে ওঠেন, 'কী ব্যাপার, এতো ঘন ঘন ফোন করছো কেন? এরই মধ্যে দুবার হয়ে গেলো। খুব খারাপ লাগছে?'
না না, খারাপ লাগছে না। রীতু আরাশিগের হাতে দাও। ওর জন্য কী কী আনবো জেনে নিই।
রীতু আরাশিগে কে?
ঐ যে আমাদের দত্তক মেয়েটা!
'তুমি যে কী! রীতু আরাশিগে সেই কবে চলে গেছে না? আর ওর নাম তো রীতু আরাশিগে ছিল না, ওর নাম ছিল আরিশেগা। এখনো তুমি ওর কথা মনে রেখেছো? এসব কথা কেন তুমি এতো মনে করো? এসব ভাবতে ভাবতেই তুমি শেষ হয়ে গেলে। তুমি আর ফোন করো না লক্ষ্মীটি, চোখ বন্ধ করে সারাক্ষণ শুধু আল্লাহ্‌র নাম জপবে, বুঝেছো? তবেই দেখবে তোমার ঠিক সামনে আমি দাঁড়িয়ে আছি।'

জেনারেলের আজকাল যেন কিছুই মনে থাকে না। তাঁর কি মাথায় কিছু ঘটেছে? হয়েছে? তাঁর হাতে সর্বদাই একটা মোবাইল থাকে। বাসা থেকে স্ত্রী ফোন করেন, এখান থেকে তিনি। প্রতিদিনই তিনি দু-একবার করে স্ত্রীর সাথে কথা বলছেন, কিন্তু এখন তাঁর সেসব কিছুই মনে পড়ছে না। তাঁর কী হয়েছে? মাতুগামায় গেলেন, আরাশিগেকে খুঁজলেন, চারা রোপণ করলেন, সব মনে পড়ে, কিন্তু তারপরেও মনে হচ্ছে তাঁর মাথায় সবকিছু জট পাকিয়ে আসছে। মদ্যপান করলে মানুষের এমন হয় অপরাপর বন্ধুদের কাছে তিনি শুনেছেন, নিজে যদিও জীবনে এক ফোঁটা মদ চেখে দেখেন নি। তিনি ভেবেই পাচ্ছেন না তাঁর এরূপ স্মৃতিভ্রম হচ্ছে কেন। তিনি কি খুবই ক্লান্ত?
অতি সত্বর বিশ্রাম নেয়া দরকার, অতি শীঘ্র। জেনারেল মনে মনে ভাবেন।

দরজায় টোকা দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সঙ্গী অফিসার কক্ষে প্রবেশ করেন। বলেন, মহোদয়, আপনার জন্য কি সামান্য চা-নাস্তার ব্যবস্থা করবো?
নো নো ইয়াং ম্যান, আরেকটু পরে তো ডিনারই করবো। তুমি বরং একটু বসো, তোমাকে আমি একটা কাজ দিতে চাই, আশা করি হাসি মুখে তা করবে।
নিশ্চয়ই মহোদয়। দয়া করে আপনার কাজের কথাটি আমাকে বলুন।
আজ যেখানে আমি চারাটি রোপণ করে এলাম, তুমি আরেকবার সেখানে যাবে। কিন্তু তার আগে আরেকটা কাজ করবে। আমি এ কাগজটায় লিখে দিচ্ছি, একটা টিনবোর্ড বা অন্য যে কোনো উপযুক্ত বোর্ডের ওপর সুন্দর করে এ কথাগুলো লিখাবে। তারপর গাছটির গোড়ার সন্নিকটে বোর্ডটা পুঁতে দিবে। আর এজন্য যাবতীয় খরচ বাবদ তোমাকে সামান্য এই রুপি ক'টা দিচ্ছি।
আমি এর সবই করবো মহোদয়, এগুলো সুসম্পন্ন করতে পারাটা আমার জন্য অনেক আনন্দের হবে, তবে এ সামান্য কাজটুকুর জন্য আমি কোনো রুপি গ্রহণ করতে রাজি নই, প্রিয় মহোদয়।
অবশ্যই তুমি রুপি গ্রহণ করবে।
কিন্তু এ তো প্রচুর রুপি!
খরচের পর যা অবশিষ্ট থাকবে তা দিয়ে তুমি চকোলেট খাবে, প্রিয় বালক, কেমন? তোমরা তো বিশ্ববিখ্যাত চকোলেট প্রস্তুত করো, তাই না?
জি মহোদয়। আপনাকে বলছি, আমার চেয়ে আমার স্ত্রীই চকোলেট অধিক পছন্দ করেন।
আমার ভুল হয়ে গেছে, আমার উচিত ছিল তোমার স্ত্রীর জন্য একটা উপহার প্রদান করা।
মহোদয়, আপনার অসামান্য বদান্যতা যে আপনি এতোখানি সৌজন্য প্রকাশ করছেন। আমি অবশ্যই অখরচকৃত সবগুলো রুপি দিয়ে ব্যাগভর্তি চকোলেট কিনে আমার স্ত্রীর জন্য নিয়ে যাবো, তাঁকে বলবো এক বাংলাদেশী সহৃদয় ও মহৎ জেনারেল এগুলো তোমার জন্য উপঢৌকন স্বরূপ পাঠিয়েছেন। তাতে আমার স্ত্রী যে কী পরিমাণ আহ্‌লাদিত হয়ে উঠবে তা আপনাকে আমি বোঝাতে পারবো না।
তোমাকে বাছা আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
দেশে ফেরত গিয়ে অবশ্যই মহোদয়াকে আমার সালাম ও শুভেচ্ছা জানাবেন।
তুমিও তোমার স্ত্রীকে আমার ভালোবাসা আর মমতা পৌঁছে দিও।
অবশ্যই মহোদয়।
একবার আমার দেশে তোমার বউকে নিয়ে বেড়াতে এসো। বাংলাদেশ পৃথিবীর সুন্দরতম দেশগুলোর একটি, যেমন তোমার দেশটিকেও আমার আমৃত্য ভালো লাগবে।
সুজলা-সুফলা শস্যশ্যামলা আপনার বাংলাদেশ, আমি এ কথা জানি মহোদয়। আপনারা বীরের জাতি। মাতৃভাষার দাবিতে শহীদ-হওয়া জাতি আপনারা। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য হাসি মুখে আত্মাহুতি দেয়া জাতি আপনারা। এমন একটি দেশের মানুষের সঙ্গে আমি কিছুদিন কাটালাম, এ আমার সারা জনমের গৌরবোজ্জ্বল প্রাপ্তি। আপনার দেশে ভ্রমণে যাবার সুযোগ পেলে স্বর্গলাভের চেয়েও তা হবে শ্রেয়তর। অবশ্যই যাবো এবং আপনার আতিথেয়তা গ্রহণ করবো।

বিমান উড্ডয়নের পর জেনারেল লক্ষ্য করেন তাঁর পকেটে এক টুকরো কাগজ পড়ে আছে। ওটা বের করে এনে চোখের সামনে ধরেন :

One Arachchige, My Beloved Daughter
Once I Met Her Here.

এখানে একদিন আরাশিগে নামক একটা মেয়ের সাথে দেখা হয়েছিল
যে ছিল আমার প্রিয়তমা কন্যার মতো।

তত্ত্বাবধায়ক সঙ্গী অফিসারের হাতে কি কাগজের টুকরোটা দেয়া হয় নি তাহলে? ভালো করে চোখ বুলান তিনি। না, ভুল দেখেছেন। এটাতে সেই সঙ্গী অফিসারের ঠিকানা লেখা রয়েছে। ঠিকানা লেখার জন্য আগে ছোট নোটবই ব্যবহার করতেন। আজকাল ছোট ছোট কাগজের টুকরো ও ভিজিটিং কার্ড দিয়ে মানিব্যাগ ভরে ফেলেন। ভুলবশত মানিব্যাগ থেকে মাঝে মধ্যে টাকা ঝরে পড়ে যায়, ঠি
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×