আর কয়েক ঘন্টা পরেই এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হবে। প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের পর যাদের রেজাল্ট ভালো হয়- তারা আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন। এই খুশী স্বাভাবিক। যারা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন- তাদের মন বিমর্ষ হয়। এটাও স্বাভাবিক। এর পাশাপাশি কিছু সাংবাদিক , রিপোর্টার আছেন যারা শিক্ষার্থীদের নানা রকম প্রশ্ন করে- কেউ যদি কোন ভুল জবাব দেয় সেটা জনসম্মুখে প্রচার করে ব্যাপক আনন্দ পান। এরকম রিপোর্ট প্রকাশ করে মনে করেন দেশের সব সমস্যার সমাধান করে দেশ উদ্ধার করে ফেলেছেন। কয়েক বছর আগে এরকম একটা ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়। এবং সেই ভাইরাল হওয়া কিশোরদের একজন সুইসাইড করে মারা যায়। তাই, জনসম্মুখে আর একজন শিক্ষার্থীকেও নাজেহাল করে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়ার আগে দয়া করে নীচের বিষয়গুলো ভেবে দেখবেন।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশানের একটা ভয়াবহ রিপোর্ট- প্রতিবছর প্রায় ১ মিলিয়ন লোক সুইসাইডে মারা যায়। তারচেয়ে আরো ভয়াবহ হলো -এ্যাটেম্পট হয় প্রায় ২০ মিলিয়ন। যা কিনা পৃথিবীব্যাপি হোমিসাইড, মার্ডার আর ওয়ারের চেয়েও বেশী। অথচ ওয়ার, সমরাস্ত্র ইত্যাদির পেছনে বিলিয়ন ডলার খরচ আর নানা চিন্তা,ভাবনা, পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলেও মানুষের মনো উন্নয়নে তেমন কিছুই করা হয়না। বরং পারিবারিক, সামাজিক, পারিপার্শ্বিক ইত্যাদি নানাভাবে এই সুইসাইডে প্ররোচিত করা হয়। সুইসাইডের অন্যতম কারণ হলো- কারো কাছ থেকে অবহেলা পাওয়া। সেটা ভালোবাসা ঘটিত হতে পারে, পারিবারিক হতে পারে, সামাজিক মর্যাদাহানি হতে পারে। তাই, লোক সম্মুখে কাউকে অবমাননা করা ক্রিমিনাল এ্যাক্ট। এই সমস্ত এক্টিভিটিস আইন কর্তৃক শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
একজন খুনি , অপরাধী, সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে যখন মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করা হয় তখন তাদের চেহারাটা ঢেকে দেয়া হয়। কারণ তাদেরও একটা জীবন আছে। সমাজে যেন অপদস্ত না হয়-সেজন্য চেহারাটা ঢেকে রাখা হয়। কিন্ত পরীক্ষার রেজাল্টের পরপরই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নানা রকমের প্রশ্নবানে জর্জরিত করে যেভাবে নাজেহাল করা হয়, এর ফলে জীবনের প্রতি প্রবল ঘৃণা নিয়ে এদের একজনও যদি আত্মাহুতির পথ বেছে নেয়-এর দায়ভারটা কে নিবে?শিক্ষার গুরুত্ব কিংবা অবনতি বুঝাতে যদি সম্মানিত সাংবাদিক , রিপোর্টার ভাইরা কোনো রিপোর্টি করে থাকেন-তবে সেটা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রেরণ করবেন। দয়া করে, সোসাল মিডিয়ায় প্রচার করে কোনো শিক্ষার্থীকে আত্মহননের পথে প্ররোচিত করবেন না। আর যদি করেন, তবে মনে রাখবেন, আপনারা একটা ভয়াবহ রকমের শাস্তিযোগ্য অপরাধই করছেন।
পীথাগোরাসের বাড়ি কই সেটা আমরা কয়জনে জানি। সাতজন বীরশ্রেষ্ঠে নাম-বুকে হাত দিয়ে বলেন- কয়জনে বলতে পারবেন? রবীন্দ্রনাথের একটি গল্প কেউ বলতে না পারলে তাকে নিয়ে হাসি তামাশা করার কোনো দরকার নাই। তার সাহিত্য ভালো লাগেনা। ব্যস। সমস্যা কি? ওরা একটা পারেনি, আপনি দয়া করে পাঁচটি ছোটগল্পের নাম বলুনতো। আমাদের অহঙ্কার মুস্তাফিজ ইংরেজী জানেনা- কিন্তু সেরা খেলোয়াড় কি হয়নি? প্রয়োজনে ওরাই বাংলা শিখেছে। সবাই কি সাহিত্যিক হবে, ম্যাথমেশিয়ান হবে, সেক্সপীয়ার হবে? কেউ কি মুস্তাফিজ হবেনা? কেউ কি একেবারে কমপড়ালেখা জানা আবুল কোম্পানীর মতো একটা বড় কোম্পানীর মালিক হবেনা? যেখানে হাজারো গ্র্যাজুয়েটরা চাকুরি করে। পীথাগোরাস যে জারজ সন্তান ছিলেন- সেটা কি জানেন? তাকেও যদি শৈশবে এভাবে টিটকারি করা হতো তবে হয়তো আত্মাহুতি দিতেন। আজকের পীথাগোরাসই পেতাম না। কারণ-সন্তান কোনোদিনই জারজ হয়না, জারজ হয় সন্তানের বাবা-মা। অথচ,কী দুর্ভাগ্য আমরা অবৈধভাবে যাকে জন্মদিলাম-তাকেই জারজ বলি। তার জন্মদাতাকে নয়!!!অতএব, বিচার করলে, হাসিতামাশা করলে -কাকে নিয়ে করবেন একটু চিন্তা করে দেখেন। ব্যর্থতার দোষটা শুধু ওদের না, দোষটা আমাদেরই। কারণ, আমরাইতো ওদেরকে তৈরি করছি। আমরা নিজেরা যদি প্রশ্নপত্র ফাঁস না করি, তবে শিক্ষার্থীর কাছে প্রশ্নপত্র যায় কেমন করে? এখানে জারজ কে? শিক্ষার্থী নাকি সিস্টেম???
মাটি দিয়ে মূর্তি বানিয়ে আমরা যদি মনে করি এরা মানুষের মতো কথা বলবে- তবে সেই দোষটা কার? মাটির মূর্তির নাকি মূর্তির কারিগরের?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০২০ সকাল ১০:৩৮