এক) অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম।
ছোট এক ক্ষুধার্ত শিশু কেকের ছোট একটা টুকরো কুড়িয়ে পেয়ে খুব খুশি। অর্ধেক সে খায় আর বাকি অর্ধেক আরেক শিশুকে খাওয়ায়।
আর দুতলায় অন্য আরেকটা শিশু ভরা পেটে কাঁদছে। কারণ- তার কেকের সাতটি টুকুরো থেকে একটা টুকরো খোয়া গেছে।
দুই) একজন লোক উচ্চ শিক্ষিত হয়েছেন। বড় চাকুরি করেন। সমাজে মর্যাদাবান ব্যক্তি। নামাজ পড়ার আগে ওযু করছেন। এমন সময়- ঘুষের প্যাকেট নিয়ে মক্কেল হাজির। শিক্ষিত অফিসার রেগে গিয়ে বলছেন-আপনার কি এতোটুকু বিবেকবোধ নেই। ওযু করার সময় কেউ কি ঘুষের টাকা স্পর্শ করে? যান, অফিসের ড্রয়ারে রেখে যান।
আরেক ছেলে- পথশিশু। নিরক্ষর। রেলে মানুষের কাছে পানি বিক্রি করে। সেই পানি বিক্রি করা টাকায় খাবার কিনে। অর্ধেক নিজে খায়। বাকি অর্ধেক পথের কুকুরকে খাওয়ায়।
এই দুজনের মাঝে আসলে শিক্ষিত কে ? মর্যাদা কার বেশি হওয়ার কথা ?
তিন) ইসলামে ধনী, গরীব এবং বর্ণবাদের কোনো স্থান নাই।
কথাটি ইসলামের জন্য শতভাগ সত্য। মুসলমানের জন্য সিংহভাগ মিথ্যা।
একটা বিশাল মসজিদ থাকার পরও দুই ভিআইপির পরষ্পর রেষারেষির কারণে অল্প দূরত্বে আরো নতুন দুটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে । দুই ইমামের ঠিক পেছনে এখন দুজন দুই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। হযরত ওমর রাঃ এর পাশে দাঁড়িয়ে মেষ রাখাল নামাজ আদায় করতে পারলেও - এই দেশের অনেক মসজিদে ভিআইপির জন্য নির্দিষ্ট জায়গা বরাদ্দ থাকে।
সব পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার পরও কালো মেয়েটি পত্রিকার পাতায় যখন হন্য হয়ে চাকুরির বিজ্ঞাপন খুঁজে। শুধুমাত্র গায়ের রং ফর্সা হওয়ার কারণে ক্লাসের ডাম্ব সুন্দরী মেয়েটি স্বামীর সাথে সুইজারল্যান্ডে বসে চাপান করে।
"কনে দেখতে গেলে মুখ না দেখে ভালো করে পা দেখো। কারণ পা দেখলেই মেয়ের আসল রং বুঝা যায় "।
-যে সমাজে এইসব কথা এবং ঘটনার প্রচলন আছে সেই সমাজেতো বর্ণবাদ প্রতিটি রন্দ্রে রন্দ্রে আছে।
চার) আমি জিপিএ ফাইভ পেয়েছি- এটার ইংরেজি বলতে না পারা টা কি শিক্ষার্থীর দোষ। নাকি সিস্টেমের দোষ। শিক্ষার্থীর দোষ হলে- সে জিপিএ ফাইভ পায় কেমন করে? তাই, জনসম্মুখে লজ্জাটা কাকে দিবেন-শিক্ষার্থীকে নাকি সিস্টেমকে। দয়া করে ভাবেন।
মাটি দিয়ে মূর্তি বানিয়ে সে যদি মানুষের মতো কথা না বলে- তবে দোষ কার। মূর্তির নাকি মূর্তির কারিগরের?
পাঁচ) পীথাগোরাসের সূত্র জেনেই বা লাভ কি? দুনিয়ার সব নলেজ হজম করে যিনি বিসিএস ক্যাডার হবেন- উনাকেইতো আবার কনস্টিটিউশন আর পার্লামেন্ট বানান করতে গিয়ে যার ত্রাহিমধুসুদন অবস্থা - তারই প্রটৌকল দিবেন।
ছয়) জমজমের পানি সবচেয়ে পবিত্র এবং বিশুদ্ধ- এটা বলে এবং প্রচার করে আপনার লাভ টা কি? আপনি নিজে পবিত্রতো!
ঘুষ খেয়ে, দূর্নীতি করে, সবরকমের অসত কাজ করে হজ্বে গিয়ে জমজমের পবিত্র পানি পান করলেই কি মানুষও পবিত্র হয়ে যায়?
আপনার দাদা দরবেশ ছিলেন। এটা আপনি প্রচারও করেন আবার আপনি চুরিও করেন, ঘুষও খান। এতে কি দাদার মর্যাদা বাড়ে নাকি কমে ?
সাত) জর্জ ফ্লয়েডকে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলাটাই শুধু ভায়োলেন্স না। প্রতিটি ঘুষ, প্রতিটি দূর্নীতি, প্রতিটি ভাঙ্গা রাস্তা, প্রতিটি মেয়ের রাতে নিরাপদে ঘরে ফিরতে না পারার ভয়, বেকারের কর্ম নিশ্চিত করতে না পারার ব্যর্থতা, মেছোবাঘ পিটিয়ে মেরে ফেলার উল্লাস, চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাওয়া, কাউকে মালাউন বলে গালি দেয়া, কারো মাথায় সিঁদুর, কারো মুখে হিজাব পরা নিয়ে কটাক্ষ করা ইত্যাদির সবকিছুই একেকটা বায়োলেন্স।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২০ ভোর ৪:৩৪