ভুমিকাঃ
পিয়াজ একটি নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য। ভোজন বিলাসী বাঙালির রন্ধনের স্বাদের বৈচিত্র্যের সাথে এটি সুপ্রসিদ্ধ। তাই রসনা বিলাসী প্রতিটি বাঙালীর গৃহিণীদের কাছে পিঁয়াজ একটি কাঙ্খিত শব্দের নাম। মাছ মাংসের তরকারি, ডাল, সব্জি, পোলাও, কোরমা, বিরিয়ানী, কাবাব, সালাদ, পিঁয়াজু এমন কি পান্তা ভাতের সাথেও পিঁয়াজের একটি নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান।
ইতিহাস ঐতিহ্য ঃ
খৃষ্টের জন্মের ৬০০ বছর আগে বিখ্যাত ভারতীয় চিকিৎসক চক্র সংহিতা প্রথমে পিঁয়াজকে শরীরের জন্য উপকারী ঔষধ হিসেবে বর্ণনা করেন। যদিও ভারতে পিঁয়াজের ইতিহাস প্রায় ৫০০০ বছরের। মিশরে ৫৫০০ বছরের। সুমেরীয়তে ৪৫০০ বছরের। ঐতিহাসিকদের মতে পিঁয়াজের প্রথম নিবাস আরো আগে মধ্য এশিয়া, ইরান এবং পাকিস্তানের পশ্চিমাংশে।পরে তা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।
ক্রম বিকাশঃ
একটা সময় ছিল যখন এ উপমহাদেশে পিঁয়াজ অর্থের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হত এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে ব্যবহৃত হত। প্রাচীন মিশরীয়দের কাছে পিঁয়াজ অত্যন্ত সম্মানিত ছিল। মৃত্যুর পর তারা মৃতের কফিনে পেঁয়াজ দিয়ে দিত। রাজা চতুর্থ রেমেসিসের কফিনে পেঁয়াজ পাওয়া যায়। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী পেঁয়াজ উ্ৎপাদিত হয় চীন ভারত এবং আমেরিকায়। সবচেয়ে বেশী পেঁয়াজ খেয়ে থাকে লিবিয়ার মানুষ। বৌদ্ধদের অনেকেই পিঁয়াজ এবং রসুন খায় না। বাইবেলে পেঁয়াজের ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়। আবার আমাদের প্রিয় নবী হয়রত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মত অনেকেই পিঁয়াজ খেতেন না দুর্গন্ধের কারণে।একটা সময় আমাদের দেশের হিন্দুরা মনে করতো মুসলমানদের অতিরিক্ত রাগের কারন এই পিঁয়াজ ভক্ষণ। যদিও পিঁয়াজের স্বাদ এখন আর তাদেরও অজানা নয়। পিঁয়াজের দাম বাড়ার সাথে সাথে রাঁধুনির টেনশন তরকারীতে স্বাদ না হলে ডিসক্রেডিট আর খাদকের টেনশন স্বাদ না হলে কি খাওয়া যায়!!!
চাহিদা ও উৎপাদনঃ
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২৫ লক্ষ টন পিঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। ১৯৯০ সাল নাগাদ দেশের উৎপাদিত পিঁয়াজ থেকেই এর চাহিদা পুরন করা হতো। বর্তমানে মোট চাহিদার বিপরিতে দেশে ১৬ লক্ষ টন পিঁয়াজ উৎপাদন হয়। বাকী ৮ লক্ষ টন পিঁয়াজ ভারত, মিয়ানমার, মিশর, তুরস্ক এবং পাকিস্তান থেকে আমদানি করা হয়।
পিঁয়াজের সামাজিক ও ব্যবসায়িক গুরুত্বঃ
রন্ধনে বাঙালীর জিহ্বার স্বাদ পিঁয়াজের সাথে অঙ্গাংগী ভাবে জড়িত। পিঁয়াজ ছাড়া আমাদের গৃহিনীদের রান্নার জাদু না-ই হয়ে যায় বললেই চলে। তাই আমাদের রান্নার স্বাদ আর পিঁয়াজ একে অপরের পরিপুরক। দেশের মানুষের এই আবেগ আর স্বাদের চাওয়াকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর অসৎ ব্যবসায়ীগন সুযোগ পেলেই বিভিন্ন অজুহাতে পিঁয়াজের বাজার দর নিয়ে অধিক মুনাফার ফাঁদ পেতে ভানুমতির খেলায় মেতে উঠে। রাষ্ট্রের উদাসীনতা এমনকি কখনও কখনও রাষ্ট্রযন্ত্রের লুটেরা নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এমনটা ঘটে। অতি সম্প্রতি দেশে পিঁয়াজের মূল্যে এক তেলপসমাতি কান্ড ঘটে গেছে। বর্তমানে দেশে এক কেজি পিঁয়াজ ২৫০ টাকারও বেশী। যা মূল্যের দিক দিয়ে- পৃথিবীর যে কোন দেশের, যে কোন সময়ের সর্বকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড। পিঁয়াজের এই দূর্গতির কথা চিন্তা করে দেশের প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই তার রন্ধন শিল্পিকে তার রান্নায় পিঁয়াজ না ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে সারা বিশ্বের কাছে তার নোবেল পাওয়ার দাবীকে দৃঢ় করেছেন। পিঁয়াজ মন্ত্রীও এই মূল্য তার নিয়ন্ত্রনে রয়েছে বলে ঘোষনা দিয়ে তার বিনা- ভোটে নির্বাচিত হওয়ার যৌক্তিকতা প্রমাণ করে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করেছেন। আর অসহায় জনগন কাতর চিত্তে পিঁয়াজ ব্যবহারের জন্ম নিয়ন্ত্রনে আওয়াজ তুলেছেন, " রান্নায় একের অধিক পিঁয়াজ নয়-
অর্ধেক হলে ভালো হয়।"
উপসংহারঃ
পিঁয়াজকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই দেশের রাজা- ধীরাজরা গত এক মাসে চার হাজার কোটি টাকা লুটের মহোৎসব করতে সক্ষম হয়েছে। তাই পিঁয়াজ নাটকের সুদূর প্রসারী- শৈল্পিক চেতনার গুরুত্ব বিবেচনা করে বিনাভোটে নির্বাচিত মিডনাইট শাসক গোষ্ঠীকে অর্থনীতিতে নোবেল প্রদানের পাশাপাশি, অভিনয়ের জন্যও অস্কার প্রদানের দাবী এখন সময়ের চাহিদা।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:২৮