পৃথিবী ধনসম্পদে সুপরিকল্পিত ভাবে গড়ে তোলা এক গ্রহ হলেও এতে অধিকাংশের কাছেই বহু আকাংখিত সেই সুখের দেখা নেই। কি সেই সুখ? প্রতিটা মানুষ অহর্নিশ পাগলের মত ছুটছে এই দুই বর্ণের শব্দটার পেছনে। কত যুদ্ধ, মারামারি,কাটাকাটি, ষড়যন্ত্র, কন্সপিরেসি থিওরী এলো আর গেল যুগ যুগ ধরে। সেই সাথে এলো মানুষ, ঝাঁকে ঝাঁকে বোকা মানুষ। অতি অল্প কয়েকটা দিনকে সাজাতে কি আপ্রাণ চেষ্টা সবার! কত কত কথার ফুলঝুরি আর অভিনয়- প্রতি অভিনয়ের পালা! তারপর একসময় টুপ টুপ করে ঝরে পড়া।
খুব অল্প কিছু মানুষই গভীরে যেতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে এই মহাজাগতিক আয়োজনের লক্ষ্য কি? উদ্দেশ্য কি? কেউ হয়তো অর্ধেক পথ হেঁটেই থেমে গেছে, জাগতিক ক্লান্তি এসে ভর করেছে তাদের মনের দু’চোখে কিংবা কেউ হাঁটতে হাঁটতে চলে গেছে ভুল পথে। অন্যদিকে ভীষণ আলাদা কিছু মানুষ ভেবে গেছেন, খুঁজে গেছেন অবিরত, আন্তরিক হয়ে... এই কল্পনাতীত বিশাল সৃষ্টির পেছনের সত্ত্বাকে, তাঁর উদ্দেশ্যকে।
স্রষ্টা সম্মানিত করেছিলেন তাঁদের, বানিয়ে দিয়েছিলেন রুক্ষ এই পৃথিবীর সুখের গল্পকার... খুব সত্য গল্প।
তাঁরা সরল ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, পৃথিবীর ক্ষুদ্র জীবনের সুখই সব পাওয়া নয় হে মানুষ! তোমরা আরো অনেক অনেক বেশী সম্ভাবনাময় প্রাণ।সরল পথ অনুসরণ করো হে মানুষ! তবেই সুখ আসবে।
কিন্তু...বাকী অধিকাংশ মানুষ? তারা বড় অদ্ভুত। সরলতা ফেলে কুটিলতা তাদের বড় প্রিয়। সবকিছুতেই বড্ড তাড়াহুড়ো, যেন পৃথিবীর এই শতবর্ষের ছোট্ট অঙ্কে মিলিয়ে ফেলবে তাদের সব হিসেব!
দুঃখের গভীরে গেলে দেখি তা কেবল না পাওয়ার পুরনো সব গল্প... অর্থ, সম্পদ, সম্মান কিংবা সুখ। প্রতিটা দুঃখ ভীষণ রকম প্রাগৌতিহাসিক, প্রকৃতিগত ভাবে বর্তমানের, নিকট অতীতের আর সেই প্রস্তর যুগের দুঃখ গুলোর মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই।
প্রতিটা মানুষের মাঝে শুধু বোকা এক প্রতিযোগিতা খেলা করে, অর্থে-বিত্তে আর সম্মানে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। কীর্তিমান হয়ে অন্য সবার সামনে গর্বে বুক ফুলিয়ে দাঁড়ানোতেই যেন সব সুখ আর প্রাপ্তি! জৈবিক সব প্রয়োজন মিটিয়েও তাই মানুষের চাহিদারেখা ভেংচি কাটে অর্থনীতির সূত্রগুলোকে।
প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে সভ্যতার অগ্রসরতার মাপকাঠি বানিয়ে নিয়েছে মানুষ আর সেই সাথে তার খাতা থেকে মুছে দিয়েছে নৈতিকতা ও মানবতাকে,পৃথিবীতে তার আগমনের হেতু অনুসন্ধানের প্রচেষ্টাকে।
আজ তাই স্রষ্টার খোঁজে থাকা, তাঁর অনুগ্রহের খোঁজে থাকা কাউকে দেখে প্রগতিবাদী সুসভ্য মানুষ হাসে অবজ্ঞার হাসি!
আজ কর্পোরেট শাস্ত্র সুচতুরভাবে পাল্টে দিয়েছে নৈতিকতা আর মানবতার সংজ্ঞা।
মাঝে মাঝে একটা দেশ কল্পনা করি, যেখানে পাশাপাশি অনেকগুলো ছোট ছোট কুঁড়েঘর। মানুষগুলো ঠিক ততটুকু প্রযুক্তিই ব্যবহার করে যেটা অতি আবশ্যিক, যেখানে বাহুল্য নেই।অনেক জানে আর অনেক বুঝে সেই মানুষগুলো, তাঁদের মাঝে অন্য এক প্রতিযোগিতা... সৎ জ্ঞানচর্চায়, ভালো কাজে, সহযোগিতায় আর সৎ চিন্তায় একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার! তাঁরা জানে জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য কি, তাঁদের জীবনটা সরল, খুব সরল!
হ্যাঁ, ২০১২ সালের চোখে এইসব চিন্তা বোকামীই।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


