somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কল্পদ্রুম
জ্ঞানিরা বলেন মানুষ জন্মমাত্রই মানুষ নয়,তাকে যোগ্যতা অর্জন করে তবেই মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে হয়।যোগ্যতা আছে কি না জানি না,হয়তো নিতান্তই মূর্খ এক বাঙ্গাল বলেই নিজেকে নির্দ্বিধায় মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফেলি।

অনূদিত গল্পঃ স্যুভেনির || মূল গল্পঃ Souvenir,লেখকঃফিলিপ কিন্ড্রেড ডিক

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"আমরা পৌছে গেছি,স্যার।", যন্ত্রচালকটির কথায় তটস্থ রজার উপরে তাকালো। বুদুবুদাকার মহাকাশযানটি নীরব তড়িৎগতিতে মাটি স্পর্শ করবার পূর্বেই শারীরিক শিথিলতা কাটিয়ে কোটের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ জালকটিকে ঠিকঠাক করে নিলো সে।

রজারের বুকে ধাক্কার মতো লাগলো — এটাই তাহলে "উলিয়ামসনের পৃথিবী"! হারিয়ে যাওয়া এক কিংবদন্তী। তিনশ বছর পর যাকে খুঁজে পাওয়া গেছে — যদিও কাকতালীয়ভাবে। এই শ্যামল-নীল গ্রহটি, যাকে বলা হয় গ্যালাক্টিক সিস্টেমের হলি গ্রেইল — একটি নিয়মিত অনুসন্ধান অভিযানের সময় দৈবক্রমে তাকে খুঁজে পাওয়া। ফ্রাঙ্ক উইলিয়ামসন হলেন প্রথম টেরেনবাসী যিনি আউটার স্পেস ড্রাইভ তৈরি করেন। তিনিই প্রথমবারের মতো সৌরজগতের বাইরের মহাজগতে পাড়ি দেন। কিন্তু আর কখনোই ফিরে আসেননি। তিনি — তাঁর আবিষ্কৃত গ্রহ — তাঁর প্রতিষ্ঠিত মানববসতি — সবকিছুই চিরতরে হারিয়ে যায়। এরপরে কত গুজব, মিথ্যা পথনির্দেশনা, জালিয়াৎ আখ্যান তৈরি হয়েছে কিন্তু শেষমেষ কোনকিছুরই হদিস পাওয়া যায়নি।

" আমি 'অবতরণক্ষেত্র নিরাপদ' সংকেত পাচ্ছি।", নিয়ন্ত্রণ শব্দকলের গ্রহণ ক্ষমতা বাড়াতে বাড়াতে যন্ত্রচালকটি বললো। এরপর "সতর্ক হোন" বোতামটি চেপে দিলো।

"অবতরণক্ষেত্র প্রস্তুত।", ভূমি থেকে আসা ভুতূড়ে গলার স্বর জানালো। " মনে রাখবেন, আপনাদের অবতরণ কৌশল আমাদের কাছে অপরিচিত। কতটা পথ প্রয়োজন? "জরুরি গতিরোধক দেওয়াল" তুলে দেওয়া হয়েছে।" রজারের হাসি পেলো। চালককে বলতে শুনলো তাদের যানের কোন অবতরণ পথের দরকার নেই। তারা নিরাপদে দেওয়াল নামিয়ে রাখতে পারে।

তিনশ বছর! অনেকটা সময় লাগলো "উলিয়ামসনের পৃথিবী"-র খোঁজ পেতে। অনেক সরকার হাল ছেড়ে দিয়েছিলো। কেউ কেউ বিশ্বাস করতো উইলিয়ামসন কখনো অবতরণ করেন নি — মহাশূণ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। খুব সম্ভব "উইলিয়ামসনের পৃথিবী" বলতে আদতে কিছু নেই। খোঁজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য কোন বাস্তবিক প্রমাণও হাতে ছিলো না। ফ্রাঙ্ক উইলিয়ামসন এবং তিনটি পরিবার যেন পথচিহ্নহীন শূণ্যতায় পুরোপুরি মিলিয়ে গেছে। আর কোনদিন যাদের খবর পাওয়া যায়নি।

অন্তত আজকের দিন পর্যন্ত...

তরুণ যুবকটির সাথে রজারের পরিচয় হলো অবতরণক্ষেত্রে। রোগা, পরণে উজ্জ্বল কোন ধাতুর রঙ্গীন পোশাক।

"আপনি কি গ্রহপুঞ্জের প্রচারকেন্দ্র থেকে এসেছেন?"

"ঠিক তাই।" রজারের শুষ্ক জবাব, "আমি এডওয়ার্ড রজার্স।" যুবকটি ওর বাড়ানো হাত ধরলে রজার অপ্রস্তুতভঙ্গীতে ওর হাত ঝাঁকিয়ে দিলো।

"আমি উইলিয়ামসন।", যুবকটি বললো, "জিন উইলিয়ামসন।"

রজারের কানে যেন বজ্রপাত হলো, "তার মানে আপনি..."

ছেলেটি মাথা ঝোঁকালো, তাকানোর ভঙ্গিমায় রাজকীয়তা,"আমি তাঁর পঞ্চম প্রজন্ম। এখানেই তাঁর কবর আছে। চাইলে আপনি দেখতে পারবেন।"

"আমি কেন জানি মনে করেছিলাম হয়তো তার সাথেই আমার দেখা হবে। আসলে তিনি তো আমাদের কাছে অনেকটা ঈশ্বর স্থানীয় মানুষ। সৌরজগতের বেঁড়া ডিঙ্গানো প্রথম ব্যক্তি।"

"আমাদের কাছেও তাঁর সম্মান অনেক।" যুবকটি বললো, "তিনিই আমাদেরকে এখানে নিয়ে এসেছিলেন। বাসযোগ্য একটা গ্রহ খুঁজে পেতে তাঁদের অনেক সময় লেগেছে।" উইলিয়ামসন অবতরণক্ষেত্রের বাইরে বিস্তীর্ণ শহরের দিকে হাত নেড়ে বললো,"শেষপর্যন্ত এখানে এসে সন্তোষজনক ফল পাওয়া গেছে। এটা এই ব্যবস্থাপনার দশম গ্রহ।"



****



রজারের চোখ চকচক করতে লাগলো। ওর পায়ের নীচে উইলিয়ামসনের পৃথিবী। অবতরণক্ষেত্র থেকে নীচে নামার সময় পা দাপিয়ে হাঁটতে লাগলো সে। এই গ্রহপুঞ্জের ক'জন মানুষ এমন স্বপ্ন দেখতে পেরেছিলো যে একদিন তারা উইলিয়ামসনেরই কোন বংশধরকে পাশে নিয়ে উইলিয়ামসনের পৃথিবীতে হাঁটতে পারবে?

"ওরা সবাই এখানে আসতে চাইবে।", ওর মনের কথা বুঝতে পেরেই কি না উইলিয়ামসন বললো। "এদিকে ওদিকে ঘুরে বেঁড়ান। যাওয়ার সময় কিছু মাটি নিয়ে যাবেন।" উইলিয়ামসন সন্ত্রস্ত হেসে বললো, "প্রচার কেন্দ্র নিশ্চয়ই ওদের নিয়ন্ত্রণ করবে।"

"অবশ্যই।", রজার ওকে আশ্বস্ত করলো।

অবতরণ ঢালের নীচের দিকে এসে রজার থমকে দাঁড়ালো। প্রথমবারের মতো ওর সামনে এই গ্রহের শহর।


"কোন সমস্যা?", জিন উইলিয়ামসনের মুখে সুক্ষ্ম হাসির রেখা।

ব্যাপারটা যদিও খুব আশ্চর্য হওয়ার মত নয়। এরা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিলো। এরা যে গুহায় বসবাস করে কাঁচা মাংস খাচ্ছে না সেটাই ঢের! কিন্তু উইলিয়ামসন বরাবরই উন্নতির সমার্থক ছিলো। তার সময়ের অন্য মানুষের তুলনায় সে বরাবরই এগিয়ে ছিলো। এটা সত্যি যে আধুনিক মাপকাঠির তুলনায় তার মহাশূণ্য ভ্রমণ নিতান্ত সেকেলে, স্রেফ কৌতূহলপ্রসূত। তবুও মূলমন্ত্রটা এখনো ঠিক একই আছে ; উইলিয়ামসন একজন পথপ্রদর্শক ও আবিষ্কারক। একজন কারিগর। তবুও এই শহরটি গ্রামের চেয়ে খুব বেশি কিছু নয়। কয়েক ডজন বাড়ি, কিছু গণ ভবন এবং সীমানার দিকে ছড়িয়ে থাকা কিছু কারখানা। শহরের বাইরে সবুজ মাঠ, পাহাড়, বিস্তীর্ণ তৃণভূমি। মাটিতে চলা ভূ-যানগুলো আলসেভাবে সরু রাস্তা বেয়ে চলছে। অধিকাংশ নাগরিকের চলাচল পায়ে হেঁটে৷ এ যেন অতীত থেকে উঠে আসা আশ্চর্যজনকভাবে কালবেমানান সমাজ।

" আমি গ্রহপুঞ্জের সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত।", রজার বললো, "প্রচারকেন্দ্র সবখানে একই রকম কৌশলগত এবং আদর্শিক মাত্রা ধরে রাখে। এরকম আমূল পরিবর্তিত একটি সমাজ ব্যবস্থায় খাপ খাওয়ানো কঠিন। তবে আপনাদের তো সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিলো।"

"বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিলো?", উইলিয়ামসনের প্রশ্ন।

"প্রচারকেন্দ্র থেকে। আপনাদের কোনরকম সাহায্য ছাড়াই উন্নতি করতে হয়েছে।"

ওদের সামনে একটি ভূ-যান এসে দাঁড়ালো। গাড়ির চালক নিজের হাতে দরজা খুলে দিলো।

"এসব ব্যাপার বুঝতে পারছি বলে আমি এখন হয়তো মানিয়ে নিতে পারবো।", রজার আশ্বাস দিয়ে বললো।

"আসলে ঘটনা উলটো", উইলিয়ামসন গাড়িতে উঠতে উঠতে বললো, "গত একশো বছর ধরেই আপনাদের সাংকেতিক প্রচারণা আমরা পাচ্ছিলাম।" হাতের ইশারা করলেন রজারকে পাশে বসার জন্য।

রজার বিভ্রান্ত হয়ে বললো, "আমি বুঝতে পারছি না। তার মানে আপনি বলছেন, আপনারা জালকে যুক্ত থাকার পরেও যোগাযোগ করার চেষ্টা..."

"আমরা আপনাদের নির্দেশনা পেয়েছি।", উইলিয়ামসন বললো,"কিন্তু আমাদের নাগরিকরা সেগুলো মানতে আগ্রহী নন।"

বিকট রক্তিম পাহাড়-চক্রের পাশ দিয়ে ভূ-যানটি দ্রুতবেগে মহাসড়কে ছুটে চললো। শ্রীঘ্রই পেছনে পড়ে গেল শহরটি — সূর্যালোকের আবছায়া প্রতিবিম্ব। সড়কের পাশে গাছপালা ও ঝোঁপজঙ্গল। সটান উঠে যাওয়া গাঢ় লালরঙ্গা রুক্ষ অনস্পর্শিত পাহাড়ের দেওয়াল।

"চমৎকার সন্ধ্যা," উইলিয়ামসন বললো। রজার মাথা নেড়ে সহমত জানালেও আসলে সে চিন্তিত। উইলিয়ামসন জানালা নামিয়ে দিলে শীতল বাতাস আসতে লাগলো গাড়ির ভিতরে৷ সাথে কিছু ধানীপোকা। বহু দূরে, ছোট ছোট দুটি ছায়ামূর্তি জমি চাষ করছে। একজন মানুষ, অন্যটি কাঠ কাটার এক দানবযন্ত্র।

"আমরা পৌছাবো কখন?" রজার জিজ্ঞেস করলো।

"কিছুক্ষণের মধ্যেই। আমরা বেশিরভাগই শহরের বাইরে থাকি। স্বয়ং সম্পূর্ণ কৃষি খামারে। মধ্যযুগীয় জামিদারির মতো।"

"তারমানে আপনারা একেবারেই মৌলিক জীবিকার ব্যবস্থার করেছেন। প্রতি খামারে কত জন থাকেন?"

"নারী পুরুষ মিলিয়ে শ'খানেক হবে হয়তো।"

"একশো জন মানুষের পক্ষে সেলাই, রঙ করা আর কাগজ তৈরির চেয়ে জটিল কিছু করা সম্ভব না।"

"আমাদের বিশেষ শিল্পউৎপাদন বিভাগ আছে। এই গাড়িটা আমাদের সক্ষমতার একটি ভালো উদাহরণ। আমাদের যোগাযোগ ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা, চিকিৎসা কেন্দ্র আছে। প্রযুক্তিগতভাবে আমরা টেরার সমকক্ষ।"

"একবিংশ শতাব্দির টেরার সমকক্ষ।" রজার আপত্তি জানিয়ে বললো, "যেটা আজ থেকে তিনশো বছর আগের কথা। আপনারা ইচ্ছাকৃতভাবে একটা সেকেলে সমাজব্যবস্থা বজায় রাখছেন প্রচারকেন্দ্রের নাকের ডগার উপর। এসবের কোন মানেই হয় না।"

"হয়তো এমনটাই আমাদের বেশি পছন্দ।"

"কিন্তু আপনারা যথেচ্ছা অনুন্নত একটা সংস্কৃতি বেছে নিতে পারেন না। সব সংস্কৃতিকেই একটা বিশ্বজনীন প্রথা মানতে হয়। প্রচারকেন্দ্র সামগ্রিক উন্নতির ভিতরে সামঞ্জস্য বজায় রাখে। প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো টিকিয়ে রাখে। বাকীদের বাতিল করে দেয়।"

ওরা খামারের কাছাকাছি চলে এসেছে। জিন উইলিয়ামসনের "জমিদারি"। মহাসড়কের পাশে ক্ষেত আর তৃণভূমি দিয়ে ঘেরা নীচু জমিতে জড়সড় হয়ে থাকা কিছু গড়পড়তা বাড়ি৷ গাড়িটা পাশের সরু রাস্তায় ঢুকে সাবধানে এঁকে বেঁকে নামতে লাগলো। নীচের দিকের বাতাস আরো গাঢ়। গাড়ির ভিতরে ঠান্ডা বাতাসের প্রবাহ। চালক হেডলাইট জ্বালিয়ে দিলো।

"কোন রোবট নাই?" রজার জিজ্ঞেস করলো।

"না। আমরা নিজেদের কাজ নিজেরাই করি।"

"আপনারা একদম খামোখা এই বৈষম্য করছেন।" রজার যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করলো, "রোবট একটা যন্ত্র। আপনি চাইলেই যন্ত্রকে বাদ দিতে পারবেন না। এই যে গাড়িটা — এইটাও একটা যন্ত্র।"

"সত্য।", উইলিয়ামসন স্বীকার করে নিলো।

"যন্ত্র উন্নতির পথে সহায়ক মাত্র।",রজার বলে চললো, " কুঠার একটি যন্ত্র। একটি লাঠি একটি সাধারণ যন্ত্র হয়ে ওঠে যখন সেটা একজন মানুষের হাতে পড়ে নতুন একটা কিছু তৈরিতে কাজে লাগে। একটা যন্ত্র একাধিক যন্ত্রাংশের সমষ্টি যেটা মূল যন্ত্রাংশগুলোর ক্ষমতাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। মানুষ মাত্রই যন্ত্রকারিগর। মানবজাতির ইতিহাস হলো যন্ত্র তৈরির ইতিহাস। আরো মহৎ, আরো প্রভাবশালী যন্ত্র কিভাবে বানানো যায় তাই নিয়েই মানুষের কাজ। যন্ত্রকে অস্বীকার করার অর্থ হলো মানব জীবনের অতি প্রয়োজনীয় চালিকাশক্তিকেই অস্বীকার করা।"

"এই যে পৌছে গেছি।", গাড়িটি থেমে গেলে চালক দরজার খুলে দিলো। অন্ধকারে জ্বলে ওঠা তিন চারটি বাড়িতে কিছু মানবাকৃতি ছায়ার চলাচল।

"রাতের খাবার তৈরি হয়ে গেছে।" উইলিয়ামসন বাতাসে গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে বললো, "আমি ঘ্রাণ পাচ্ছি।"

তারা মূল বাড়িতে প্রবেশ করলো। বেশ ক'জন নারী পুরুষ একটা লম্বা প্রাচীন টেবিলে বসে আছে। তাদের সামনে খাবার ও থালা পরিবেশিত। তারা সকলেই উইলিয়ামসনের জন্য অপেক্ষা করছে।

"ইনি হলেন এডওয়ার্ড রজার।", উইলিয়ামসন পরিচয় করিয়ে দিলে সবাই তাকে কৌতূহল নিয়ে লক্ষ্য করলো। তারপর মনোযোগ ফিরে গেলো খাবারের দিকে।

"এখানে বসুন।", গভীর কালো চোখের একটি মেয়ে আবদার করে বললো, "আমার পাশে।"

টেবিলের শেষ প্রান্তে ওরা রজারের জন্য জায়গা করে দিলে ও সেদিকে যেতে উদ্যত হলো। উইলিয়ামসন তাকে থামিয়ে বললো, "ওখানে নয়। আপনি আমার মেহমান। রেওয়াজ অনুযায়ী আপনি আমার পাশে বসবেন।"

মেয়েটি তার সঙ্গিনীসহ হেসে উঠলো। রজার বোকা বোকা চেহারা নিয়ে উইলিয়ামসনের পাশে গিয়ে বসলো। বসার বেঞ্চটা বেশ শক্ত। সে হাতে বানানো একটা কাঠের পেয়ালা পরীক্ষা করে দেখলো৷ বিরাট কাঠের বোলের উপর খাবার ঢিপ করে রাখা৷ মাংসের ঝোল, সালাদ এবং অফুরন্ত রুটি৷

"আমরা চৌদ্দশ শতকে ফিরে যেতে পারি।" রজার বললো।

"ঠিক।" উইলিয়ামসন একমত হলো,"জমিদারি প্রথা রোমান সাম্রাজ্য এবং ক্লাসিক্যাল যুগে চালু ছিলো। গলস, ব্রিটনস..."

"এঁরা কারা? ওঁরা কি..."

উইলিয়ামসন সম্মতিসূচক মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, "আমার আত্মীয়। ঐতিহ্যবাহী পিতৃতান্ত্রিক প্রথা অনুযায়ী আমরা কয়েকটি গোত্রে বিভক্ত। আমি বড় সন্তান। তিতুলার গোত্রের প্রধান।"

মানুষগুলোর খাওয়ার গতি বেশ দ্রুত। ফ্লোরোসেন্ট বাতির আলোয় আলোকিত ঘরে সকলেই খাবারের ভিতরে নিমগ্ন — মাংসসিদ্ধ, সবজি খাবলা মেরে তোলা মাখন মাখানো রুটি দুধ দিয়ে মুখের ভিতরে ঠেসে ঢুকাচ্ছে।


"অবাক কান্ড!" রজার বিড়বিড় করে বললো, "আপনারা এখনো ইলেক্ট্রিক বাতি ব্যবহার করেন?"

"হ্যাঁ। এই গ্রহে অনেকগুলো ঝর্ণা আছে। আমরা যে গাড়িতে এসেছি ওটাও ইলেক্ট্রিক। ব্যাটারিতে চলে।"

"এখানকার বয়স্ক পুরুষরা কোথায়?" বেশ ক'জন জরাজীর্ণ বয়স্ক মহিলা রজারের চোখে পড়েছে। কিন্তু উইলিয়ামসনই এখানে সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষ। তার বয়স তিরিশের বেশি হবে না।

"যুদ্ধ।" উইলিয়ামসন হাত নেড়ে বললো।

"কিসের যুদ্ধ?"

"গোত্রের ভিতরে যুদ্ধ আমাদের সংস্কৃতির একটা বড় অংশ।" উইলিয়ামসন টেবিলের বাকীদের দিকে মাথা নেড়ে বললো, "আমরা খুব বেশি দিন বাঁচি না।"

"গোত্রযুদ্ধ? কিন্তু—"

"আমাদের যার যার পতাকা এবং প্রতীক আছে। অনেকটা প্রাচীন স্কটিশদের মতো।"

সে কব্জিতে বাঁধা উজ্জ্বল পাখির প্রতীকটিতে আঙ্গুল বোলালো, "প্রত্যেকেরই নিজস্ব রঙ ও প্রতীক আছে। আমরা এগুলোর জন্য যুদ্ধ করি। উইলিয়ামসন পরিবার এখন আর এককভাবে এই গ্রহ নিয়ন্ত্রণ করে না। এখানে কেন্দ্রীয় সংগঠন বলতে কিছু নেই। বড় বড় বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমরা গণভোটের আয়োজন করি। এই গ্রহের প্রতিটি গোত্রের একটি করে ভোটাধিকার আছে।"

"আমেরিকার ইন্ডিয়ানদের মতো?"

উইলিয়ামসন সম্মতি জানিয়ে বললো, "এটা গোত্রীয় পদ্ধতি। নিকট ভবিষ্যতেই আমরা হয়তো সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন জাতিতে আলাদা হয়ে যাবো। এখনো আমরা একটা সাধারণ ভাষায় কথা বলি। কিন্তু আমরা তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ছি। প্রত্যেক গোত্রের নিজস্ব জীবন পদ্ধতি, আচরণবিধি আর প্রথা তৈরি হচ্ছে।"

"আপনারা কি নিয়ে লড়াই করেন?"

উইলিয়ামসন অনিশ্চিতভাবে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, "কিছু সত্যিকারের জিনিস। যেমন জমি ও নারী। কিছু আবার কাল্পনিক৷ এই যেমন ধরুন সম্মান। যখন সম্মান হারানোর প্রশ্ন ওঠে তখন জনসম্মুখে আনুষ্ঠানিকভাবে অর্ধবার্ষিক যুদ্ধের আয়োজন করা হয়। প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন সেরা যোদ্ধা পুরুষ তার অস্ত্র নিয়ে অংশ নেয়।"

"মধ্যযুগীয় মল্লযুদ্ধের মতো?"

"আমরা সব জাতির কাছ থেকেই কিছু না কিছু শিখেছি। বলতে গেকে সম্পূর্ণ মানবজাতির ঐতিহ্য থেকেই নেওয়া।"

''সব গোত্রের নিজস্ব দেবতাও আছে না কি?"

উইলিয়ামসন হাসতে হাসতে বললো, "না। আমরা সবাই কোন না কোনভাবে প্রকৃতিপূজারি। চলমান বিশ্বের সর্বজনীন পরম জীবন শক্তির আরাধনা।" উইলিয়ামসন একটা রুটির টুকরো তুলে ধরলো, "সকল ধন্যবাদের অধিকারী।"

"যেগুলো আপনারাই ফলান।"

"সেটা এই পৃথিবীরই বুকে।" উইলিয়ামসন চিন্তমগ্ন অবস্থায় রুটিতে কামড় দিলো, "পুরাতন নথিপত্র বলে মহাকাশযানটি প্রায় শেষই হয়ে গেছিলো। ফুয়েল প্রায় শেষ — একটার পর একটা ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো। পুরো অভিযাত্রাটাই বরবাদ হয়ে যেত যদি না এই গ্রহটা সামনে পড়তো।"

"সিগার?" খালি পেয়ালাগুলো ঠেলে দেওয়ার পর উইলিয়ামসন জানতে চাইলো। "ধন্যবাদ," রজার নিরাসক্তভাবে একটা নিলো। উইলিয়ামসন নিজেরটা ধরিয়ে দেওয়ালে হেলান দিলো কোন ভণিতা ছাড়াই জিজ্ঞেস করলো, "আপনি কতক্ষণ থাকবেন?"

"বেশিক্ষণ নয়।",

"আপনার জন্য বিছানা তৈরি।",উইলিয়ামসন জানালো। "আমরা তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ি। তবে তার আগে কিছু নাচ গান আর নাটকের আয়োজন আছে। এসব নাটক পরিচালনা এবং প্রযোজনার জন্য আমরা বেশ পরিশ্রম করি।"

"আপনারা তাহলে মানসিক উন্নতির জন্য কাজ করছেন?"

"আমরা কিছু একটা বানিয়ে আর করে আনন্দ পাই। আপনি যদি সেটাই বুঝাতে চান।"


রজার তার আশেপাশে নজর বুলালো। দেওয়ালগুলো অমসৃণ কাঠের রঙ্গিন নকশায় ঢাকা। "তাই তো দেখছি।" রজার বললো, "আপনারা কি মাটি এবং ফল থেকে সরাসরি রঙ তৈরি করেন?"

"ঠিক তা নয়।" উইলিয়ামসন উত্তর দিলো, "আমাদের রঙের বড় কারখানা আছে। আগামী কাল আপনাকে আমাদের চুল্লীটা দেখাবো। সেখানে আমরা অনেক কিছুই পোঁড়াই। আমাদের সেরা কিছু কাজ হলো সূতা এবং কাঠের।"

"আশ্চর্য একটা কেন্দ্রবিমুখ সমাজ! যারা ক্রমান্বয়ে আদিম গোত্রপ্রথায় ফিরে যাচ্ছে। একটি সমাজ সরাসরি গ্রহপুঞ্জের উন্নত কৌশলগত এবং সাংস্কৃতিক সুবিধা অস্বীকার করতে চাইছে। তাই তারা স্ব-ইচ্ছায় মানবজাতীর বাকী অংশ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে রাখছে। "

"কেবল মাত্র একক প্রচারকেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত সমাজ থেকে।" উইলিয়ামসন জোর দিয়ে বললো।

"আপনি কি জানেন প্রচারকেন্দ্র কেন এই সর্বজনীনতা বজায় রেখেছে?" রজার জিজ্ঞেস করলো। "আমি বলছি আপনাকে। দুটো কারণে। প্রথম, মানুষ যে পরিমাণ জ্ঞান অর্জন করেছে তাতে দেখা গেছে যে একই পরীক্ষা বারবার করার কোন অর্থ হয় না। এত সময় আমাদের হাতে নেই। যখনই একটা কিছু আবিষ্কৃত হচ্ছে তখন মহাবিশ্বের অসংখ্য গ্রহে সেই একই বিষয় নিয়ে কাজ করার আর কোন মানেই হয় না। হাজারটা গ্রহের ভিতরে একটা গ্রহে কিছু আবিষ্কৃত হলে সেটা তৎক্ষণাৎ প্রচারকেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেখান থেকে সারা মহাজগতে ছড়িয়ে পড়ে। প্রচারকেন্দ্র সমস্ত অভিজ্ঞতা বিচার বিশ্লেষণ করে এবং একটি যুক্তিপূর্ণ,কার্যকরী প্রক্রীয়ায় বিতর্কিত তথ্যগুলোর সাথে তুলনা করে। মানবজাতির সামগ্রিক অভিজ্ঞতাকে একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ কাঠামো দান করে।"

"আর দ্বিতীয় কারণ?"

"যদি একটা একক সংস্কৃতি মেনে চলা হয়, সবকিছু একটা কেন্দ্রীয় সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তাহলে আর কখনো যুদ্ধ হবে না।"

"সত্য।" উইলিয়ামসন স্বীকার করে নিলো।

"আমাদের এখানে যুদ্ধকে বিলুপ্ত করা হয়েছে সোজা সাপ্টা ভাষায়। আমাদের সমাজব্যবস্থা প্রাচীন রোমের মত একক সংস্কৃতির। সমগ্র মানবজাতির জন্য একটাই সাধারণ সংস্কৃতি। সমগ্র গ্রহপুঞ্জ জুড়ে এটাই মেনে চলা হয়। সবগুলো গ্রহ সমানভাবে এটাতে যুক্ত। এখানে কেউ পিছিয়ে নেই৷ ফলে হিংসা,ঘৃণার সুযোগ নেই।"

"মানে আমাদের মতো।"

রজার ধিরে ধিরে শ্বাস ছেড়ে বললো,"হ্যাঁ। আপনারা আমাদের এক অদ্ভুত পরিস্থিতে ফেলে দিয়েছেন। আমরা উইলিয়ামসনের পৃথিবীকে তিনশো বছর ধরে খুঁজে বেড়িয়েছি৷ আমরা একে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি। একটা অসাধারণ দুনিয়া। বাকী সভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন। হয়তো এর বাস্তব অস্তীত্ব নেই। হয়তো ফ্রাঙ্ক উইলিয়াম ব্যর্থ হয়েছিলেন।"

"কিন্তু তিনি সেটা হননি।"

"তিনি হননি। উইলিয়ামসনের পৃথিবী নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে টিকে আছে। সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নভাবে। নিজস্ব জীবন আর মূল্যবোধ নিয়ে। এখন যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। আমাদের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। গ্রহপুঞ্জের সব মানুষ জেনে যাবে যে উলিয়ামসনের পৃথিবী খুঁজে পাওয়া গেছে। আমরা এখন সৌরজগতের বাইরে প্রথম মানব বসতিকে গ্রহপুঞ্জের সংস্কৃতিতে তার উপযুক্ত স্থান দিতে পারবো।"

রজার তার কোটের ভিতরে হাত বাড়িয়ে একটা ধাতবমোড়ক বাইরে বের করে আনলো। ভিতরে একটি পরিষ্কার, তাজা কাগজের দলিল।

"এটা কি?" উইলিয়ামসন জানতে চাইলো।

"আপনাদের গ্রহপুঞ্জের সংস্কৃতিতে যুক্ত করার জন্য " অধিকরণ আইন"। আপনাদের স্বাক্ষর প্রয়োজন।"

উইলিয়ামিসনসহ ঘরের বাকী সবাই নীরব। কেউ কিছু বলছে না। সবার নজর কাগজের দিকে।

"বেশ?" রজার উত্তেজিত হয়ে কাগজটা উইলিয়ামসনের দিকে ঠেলে দিয়ে বললো, "এই নিন।"

উইলিয়ামসন এপাশ ওপাশ মাথা নেড়ে বললো, "দুঃখিত।" রজারের দিকে কাগজটা দৃঢ়ভাবে সরিয়ে দিয়ে বললো,"আমরা ইতোমধ্যে গণভোট নিয়েছি। আপনাকে হতাশ করার জন্যে দুঃখিত। আমরা যুক্ত হচ্ছি না। এটাই আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।"




-----------------------------------------------------------------------------



প্রথম শ্রেণীর যুদ্ধযানটি উইলিয়ামসনের পৃথিবীর অভিকর্ষজ বলয়ের বাইরের কক্ষপথে অবস্থান নিলো।

কমান্ডার ফেরিস প্রচারকেন্দ্রে যোগাযোগ করলেন, "আমরা প্রস্তুত। পরবর্তী পদক্ষেপ কি?"

"একটি ওয়ারিং দল পাঠান। তাদের অবতরণের সাথে সাথে আমাদের জানান।"

দশ মিনিট পরে কর্পোরাল পিট ম্যাটসন প্রেসারাইজড গ্রাভিটি স্যুটে যান থেকে নেমে পড়লো এবং আস্তে আস্তে নীচের নীল শ্যামল গ্রহের দিকে ভেসে যেতে লাগলো। মাটিতে নেমে বার কয়েক লাফিয়ে নড়ে চড়ে পায়ের উপর স্থির হলো। আপাতদৃষ্টিতে সে একটা জঙ্গলের শেষপ্রান্তে এসে পড়েছে৷ বৃহদাকার গাছের ছায়ায় নিজের ক্রাশ-হেলমেট খুলে ফেললো। তারপর ব্লাস্ট রাইফেলটা শক্ত হাতে চেপে ধরে অতি সাবধানে গাছের সারির ভিতর দিয়ে এগোতে শুরু করলো।

কানের বার্তাযন্ত্র জীবন্ত হয়ে উঠলো, "কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে?"

"না। কমান্ডার।" ম্যাটসনের প্রতিউত্তর।

"তোমার ডান পাশে একটা গ্রাম পড়তে পারে। লোকজনের ব্যাপারে খেয়াল রেখো। চোখ কান খোলা রেখে সামনে এগিয়ে যেতে থাকো। দলের বাকী সদস্যরা এখনই অবতরণ করবে। পরবর্তী নির্দেশনা তোমার প্রচার-জালকে পেয়ে যাবে।"

"চোখ কান খোলাই রাখবো।" প্রতিশ্রুত ম্যাটসন হাতের ব্লাস্ট রাইফেলটা দূরের একটি পাহাড়ে নিশানা করে ট্রিগার চেপে ধরলো। নিমিষে সেটি ধূলায় গুঁড়িয়ে গিয়ে বিদ্ধস্ত টুকরোগুলোর উড়তি স্তম্ভে পরিণত হলো। একটা খাঁড়া পাহাড়ে উঠে ম্যাটসন কপালের উপরে হাত দিলো — দূরে ছোট্ট একটি গ্রাম। যেন টেরার কোন এক মফস্বল শহর। বেশ কৌতূহল উদ্দীপক। মুহূর্ত কয়েক দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগে সে পাহাড় থেকে নেমে এসে হাঁটা শুরু করলে। উদ্দেশ্য ঐ গ্রাম। সতর্ক নমনীয় শরীর, হাতে উদ্ধত রাইফেল। ইতোমধ্যে মাথার উপরের প্রথম শ্রেণীর যুদ্ধযান থেকে দলের আরো সদস্য মন্থর গতিতে এই গ্রহের বুকে নেমে আসতে শুরু করেছে। প্রত্যেকের মুঠোয় মারণাস্ত্র।


রজার শান্ত ভঙ্গীতে "অধিকরণ দলিল" নিজের কোটের ভিতরে চালান করতে করতে জিজ্ঞেস করলেন, "আপনি কি বুঝতে পারছেন আপনারা কি করছেন?"

পুরো ঘরে কবরের নিস্তব্ধতা। উইলিয়ামসন মাথা নাড়িয়ে বললেন, "জ্বি নিশ্চয়ই। প্রচার কেন্দ্রে আমরা যুক্ত হতে চাই না। এটাই।"

রজার নিজের যোগাযোগ জালকে স্পর্শ করলে সেটি জীবন্ত হয়ে উঠলো। "ব্যাপারটা জেনে খারাপ লাগলো।"

"এটা কি অপ্রত্যাশিত ছিলো?"

"আসলে না। প্রচারকেন্দ্র আমাদের স্কাউটদের প্রদত্ত তথ্য কম্পিউটারে পাঠিয়ে দিয়েছে। এরকম পরিস্থিতির সম্ভাবনা সবসময় ছিলো বলে আমাকেও সেভাবেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।"

"কি আপনার সেই নির্দেশনা?"

রজার নিজের হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো ," আমাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের ছয় ঘন্টা সময় দেওয়া হলো। নাহলে আপনাদের সম্পূর্ণ গ্রহকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে।" ক্ষীপ্র গতিতে সে উঠে দাঁড়ালো, "আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে অবস্থা শেষ পর্যন্ত এখানে এসে দাঁড়িয়েছে। উইলিয়ামসনের পৃথিবী আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান। কিন্তু তাই বলে গ্রহপুঞ্জের ঐক্য কিছুতেই নষ্ট করা যাবে না।''

উইলিয়ামসন উঠে দাঁড়ালো। তার শুভ্রমুখে মৃত্যুর ছায়া। মুষ্ঠিবদ্ধ হাত বারংবার খুলছে, বন্ধ হচ্ছে।

"আমরা লড়াই করবো।"

"তাতে কিছু যায় আসে না। আপনারা আমাদের প্রচার তথ্যগুলো অনেকদিন ধরে পেয়ে আসছেন। আমাদের যুদ্ধযানের ক্ষমতা আপনাদের অজানা নয়।"

ঘরের বাকী সদস্যরা আড়ষ্ট ভঙ্গীতে প্লেটের দিকে তাকিয়ে বসে রইলো। কারোর ভিতরে কোন চঞ্চলতা নেই।

"এর কি আসলেই কোন দরকার আছে?"

"মহাবৈশ্বিক শান্তি বজায় রাখার জন্য সাংস্কৃতিক বৈচিত্র‍্য অবশ্যই ধ্বংস করতে হবে।" রজার দৃঢ় কন্ঠে বললেন।

"কেবল যুদ্ধ এড়ানোর জন্যই আমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চান?"

"যুদ্ধের বদলে যে কোন কিছুকে ধ্বংস করতে আমরা রাজি আছি। আপনাদের গোত্রের মতো আমাদের সমাজও টুকরো টুকরো বিভক্ত হয়ে পড়ুক আমরা তা কখনোই অনুমোদন করবো না। আমাদের ভিতরে কোন বৈচিত্র‍্য নাই বলেই আমরা আজ প্রতিষ্ঠিত। আমাদের অভিন্নতা বজায় রাখতে হবে। বিচ্ছিন্নতাকে উৎসাহ দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি এই আদর্শ গোপন থাকতে হবে।''

উইলিয়ামসন ভাবালু স্বরে বললেন, "আপনার কি ধারণা এসব গোপন রাখতে পারবেন? এতো এতো ভাষায় আন্তঃসম্পর্ক, ইঙ্গিত,শব্দসংকেত। আমাদের নিশ্চিহ্ন করে ফেললেও, কোথাও না কোথাও এই কথা প্রকাশ পাবেই।"

"সেটা না হয় পরে দেখা যাবে",রজার দরজার দিকে চললেন,"আমি আমার মহাকাশযানে অপেক্ষায় থাকবো। আপনারা আরো একবার গণভোট নিতে পারেন। হয়তো আমরা কতদূর যেতে পারি এটা জেনে আপনাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হতে পারে।"

"আমার সন্দেহ আছে।"

রজারের জালক হঠাৎ ফিসফিসিয়ে উঠলো, "প্রচারকেন্দ্র থেকে নর্থ বলছি।"

প্রতিউত্তরে রজারের আঙ্গুল ছুঁয়ে দিলো জালকের উপরে।

"প্রথম শ্রেণীর একটি যুদ্ধযান পৌছে গেছে। একটি দল ইতোমধ্যে অবতরণ করেছে। আপনি দলটি ফিরে না আসা পর্যন্ত মাটিতেই থাকুন। দলটিকে ফিশন-মাইন টার্মিনালগুলো স্থাপন করতে বলা হয়েছে।"

রজার কিছুই বললো না। তার আঙ্গুল জালকের চারপাশে শক্ত করে খামচে ধরলো।

"কি হয়েছে?" উইলিয়ামসনের প্রশ্ন।

"কিছু না।" রজার দরজা ঠেলে খুললো, "আমাকে তাড়াতাড়ি মহাকাশযানে ফিরতে হবে। চলুন যাই।"


রজারের মহাকাশযানটি উইলিয়ামসনের পৃথিবীর বুক থেকে উড়ে যাওয়ার পর মুহুর্তে কমান্ডার ফেরিস তার সাথে যোগাযোগ করলেন।

"নর্থ জানালো আপনি ওদেরকে সবকিছু অবহিত করেছেন।" ফেরিস বললো৷

"হ্যাঁ। নর্থ সরাসরি আপনার দলের সাথেও যোগাযোগ করেছে। আক্রমণের জন্য তৈরি হোন।"

"আমি অবগত আছি। ওদের কত সময় দিয়েছেন?"

"ছয় ঘন্টা।"

"ওরা কি নতি স্বীকার করবে? আপনার কি মনে হয়?"

"আশা করি। তবে নিঃসন্দেহ নই।"

নীল-শ্যামল নদীবনসমুদ্র নিয়ে উইলিয়ামসনের পৃথিবী ধিরে ধিরে ঘুরতে থাকে। টেরাও হয়তো এক সময় এমনই দেখতে ছিলো। প্রথম শ্রেণীর যুদ্ধযানটিকে দেখা যায় গ্রহটির চারপাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করছে। কিংবদন্তিতূল্য এই গ্রহটি খুঁজে পাওয়া গেলো। এখন সেটি ধ্বংসও হয়ে যাচ্ছে। সে সর্বোতভাবে চেষ্টা করেও ভবিতব্যকে ঠেকাতে ব্যর্থ হলো। গ্রহপুঞ্জের সংস্কৃতিকে অস্বীকার করার পর উইলিয়ামসনের পৃথিবীর ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়ে — এই নিষ্ঠুর পরিণতিই তাদের জন্য স্বতঃসিদ্ধ। একদিকে উইলিয়ামসনের পৃথিবী অন্যদিকে গ্রহপুঞ্জ — বৃহত্তরকে টিকিয়ে রাখতে ক্ষুদ্রতরকে বলিদান। রজার আরাম করে দৃশ্যপর্দার সামনে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো।

ছয় ঘন্টা পর একসারি কালো বিন্দু গ্রহের বুক থেকে উঠে প্রথম শ্রেণীর যুদ্ধযানের দিকে আসতে লাগলো। সে সহজেই চিনতে পারলো জিনিসগুলোকে। সেকেলে জেট চালিত রকেটযান। একদল প্রাচীন যুদ্ধযান যুদ্ধ করতে এগিয়ে আসছে। গ্রহটি মত অপরিবর্তিত রেখে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরা মরতে ইচ্ছুক। তবুও নিজের পথ বদলাবে না। কালোবিন্দুগুলো দ্রুত আকারে বড় হতে হতে প্রবলভাবে গর্জনরত ধাতব চাকতির আকার নিতে থাকলো। খুবই হতাশাজনক দৃশ্য। আক্রমণের জন্য জেট চালিত যানগুলোকে বিভক্ত হতে দেখে রজার অদ্ভুত আলোড়ন অনুভব করলো। প্রথম শ্রেণীর যুদ্ধযানটি নিজের কক্ষপথ নিশ্চিত করে শান্ত ও দক্ষতার সাথে বৃত্তাংশ বরাবর এদিকে ওদিকে দুলছে। এর এনার্জি-টিউব আক্রমণকে প্রতিহত করার জন্য ধিরে ধিরে উপরে উঠতে থাকে।

হঠাৎ প্রাচীন যানগুলো নীচু হয়ে ছড়িয়ে পড়ে এলোপাথারি গুলি করতে থাকলো। প্রথম শ্রেণী যানের টিউব তাদের অনুসরণ করলো। প্রাচীন যানগুলো আবার দ্রুত একত্রিত হয়ে দ্বিতীয় আক্রমণের দুর্বল চেষ্টা করলে একটা বেরঙা শক্তির রেখা ঝলসে উঠে নিশ্চিহ্ন করে দিলো আক্রমণকারী পুরো দলটিকে।

কমান্ডার ফেরিস রজারের সাথে যোগাযোগ করলেন, "নির্বোধ হতভাগা।" কমান্ডার ফেরিসের মুখ মলিন, "এগুলো সম্বল করে তারা যুদ্ধ করতে এসছিলো।"

"কোন ক্ষতি হয়েছে?"

"একদমই না৷" কমান্ডার ফেরিস কম্পমান হাতে কপাল মুছতে মুছতে বললেন,"আমাদের একদমই কোন ক্ষতি হয় নি।"

"এখন কি হবে?" রজার ভারি গলায় জিজ্ঞেস করলো।

"মাইন অপারেশন চালাতে আমি অস্বীকার করেছি। এর ক্ষমতা প্রচারকেন্দ্রের উপর ন্যস্ত করেছি। যা করার সেটা ওদের করতে হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই এর প্রভাব..."

নীল সবুজ রঙের গ্রহটি বিচ্ছিন্ন হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো৷ নীরবে নির্ঝঞ্ঝাটে ভেঙ্গে পড়া গ্রহটির বিচ্ছিন্নাংশ ও ধ্বংসাবশেষ একটি উজ্জ্বল প্রজ্বলিত আগুনের শুভ্র শিখায় ঢাকা পড়ে গেল। কয়েক মুহূর্ত সেটা যেন মহাশূণ্যে ছোট্ট সূর্য হয়ে রইলো। তারপরে পরিণত হলো ছাইয়ে।

রজারের যানের পর্দা সচল হয়ে উঠলো। ছুটে আসা টুকরোগুলোকে রশ্মির সাহায্যে গুড়ো করে ফেলা হলো।

"বেশ", ফেরিস বললেন, "সব শেষ। নর্থ রিপোর্ট দেবে যে প্রথম স্কাউটের রিপোর্ট ভুল ছিলো। উইলিয়ামসনের পৃথিবী কখনোই খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিংবদন্তি আজীবন কিংবদন্তি হিসেবেই থাকুক।"

রজার ধ্বংসাবশেষের শেষ টুকরো পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকলো। যতক্ষণ পর্যন্ত সব রঙহীন ছাইয়ে পরিণত হয়। তারপর তার পর্দা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে গেলো। তার ডানে প্রথম শ্রেণীর যুদ্ধযানটি ইতোমধ্যে গতি তুলে রিগা সিস্টেমের দিকে যাত্রা শুরু করেছে৷

উইলিয়ামসনের পৃথিবী পুরোপুরি ধ্বংস করা হলো। গ্রহপুঞ্জের সংস্কৃতি রক্ষা পেলো। ভিন্ন প্রথার, ভিন্ন পথের ভিন্ন সংস্কৃতির ধ্যান ধারণা সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতিতে বাতিল করা হলো।

"ভালো করেছো৷" যোগাযোগ জালকটি ফিসফিসিয়ে বললো। নর্থ সন্তুষ্ট। "মাইনগুলো নিঃখুতভাবে বসানো হয়েছিলো। আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।"

"না", রজার উত্তর দিলো, "আর কিছুই নেই।"




-----------------------------------------------------------------------------



একান ওকান জুড়ে হাসি নিয়ে কর্পোরাল পিট ম্যাটসন দরজা ঠেলে ঢুকলো, "প্রিয়তমা! সারপ্রাইজ!''

"পিট!" গ্লোরিয়া ম্যাটসন ছুটে এসে স্বামীকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরলো।

"তুমি এই সময়ে?"

"বিশেষ ছুটি৷ আটচল্লিশ ঘন্টার।" পিট বিজয়ীর উচ্ছ্বাসে এক দিকে স্যুটকেসটা ছুড়ে দিয়ে বললো। "হাই! বাবু।"

তার একমাত্র পুত্র লাজুকভাবে জবাব দিলো, "হ্যালো!"

পিট উবু হয়ে বসে স্যুটকেস খুলতে লাগলো, "কি অবস্থা এই দিকের? স্কুল কেমন চলছে?"

"ওর আবারো ঠান্ডা লেগেছিলো", গ্লোরিয়া বললো, "মাত্রই সেরে উঠলো। কিন্তু কি হয়েছে? ওরা কেন..."

"মিলিটারি সিক্রেট।" পিট স্যুটকেস ঘাটতে লাগলো, "এই যে।" কিছু একটা তার ছেলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,"তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি। একটা স্যুভেনির।"


একটা কাঠের তৈরি পানপাত্র। ছেলেটি আড়ষ্টভাবে সেটা নিলো এবং বিস্ময়কর কৌতূহল নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জিনিসটা দেখতে লাগলো। "স্যুভেনির কি?"

জটিল বিষয়টাকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ম্যাটসনকে বেশ বেগ পেতে হলো, "এটা ধরো এমন একটা জিনিস যা তোমাকে অন্য কোন জায়গার কথা মনে করিয়ে দেবে৷ তুমি যেখানে এখন আছো সেখানে এই জিনিসটা পাওয়া যায় না। এই আর কি।" ম্যাটসন পাত্রে টোকা দিয়ে বললো, "এটা দিয়ে পান করা যায়। আমাদের প্লাস্টিক কাপের মতো না, সেরকম কি?"

"না।" ছেলেটি জবাব দিলো।

"এই দেখো গ্লোরিয়া।" ম্যাটসন স্যুটকেস থেকে বিভিন্ন রঙের ছাপ মারা একটা ভাঁজ করা কাপড় বের করে আনলো, "সস্তায় পেয়ে গেলাম। এইটা দিয়ে একটা শার্ট বানাতে পারবে। তুমি কি বলো? দেখেছো এরকম কিছু এর আগে?"

"না", গ্লোরিয়া অবাক হয়ে বললো, "আমি দেখিনি।" তার আঙ্গুল কাপড়ের গায়ে সম্ভ্রমের স্পর্শ দিতে লাগলো।

ম্যাটসন উজ্জ্বল চোখে দেখতে লাগলো তার স্ত্রী এবং ছেলের মুঠোয় তার এনে দেওয়া স্যুভেনির — অতি দূরবর্তী ভিনদেশী জায়গায় তার অভিযানের স্মারকচিহ্ন।

"ওয়াও", ছেলেটি বার বার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পানপাত্রটিকে দেখতে লাগলো। দু'চোখে একটা অদ্ভুত আলো। " ধন্যবাদ বাবা স্যুভেনিরের জন্য।"

সেই অদ্ভুত আলো ধিরে ধিরে আরো বাড়তে থাকলো।





মূলগল্পঃ Souvenir (1954)
লেখকঃ Philip K Dick






সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:০১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×