somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানভূমের ভাষা আন্দোলন

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবিভক্ত বিহারের মানভূম জেলার পাকবিড়া গ্রামের মাঠ থেকে শুরু হয়ে, টানা ১৬ দিন পথ হেঁটে একটি মিছিল পৌঁছেছিল কলকাতায়। মিছিলের হাজার খানেক বাঙালির দাবি বলতে ছিল বাংলায় আলাপ করতে চাওয়া। বাংলায় লিখতে চাওয়া। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্কুল কলেজে হিন্দির বদলে তাঁদের ছেলেমেয়েরা বাংলায় পড়াশোনা করুক। আবুল বরকত, আব্দুল জব্বার, আবদুস সালামদের রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারি মনে রাখলেও, মানভূমের সেই পথ হাঁটা মনে রেখেছেন ক’জন?
মনে রেখেছেন। আজ, জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে শোনা যেতে পারে মানভূমের ভাষা আন্দোলনের গান। ফি বছর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দফতর। জেলার বর্তমান তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক মানসী মণ্ডল সদ্য দায়িত্ব পাওয়ার পরই জানিয়েছিলেন, এ বছরের অনুষ্ঠানে মানভূমের ভাষা সৈনিকদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। সেই প্রতিশ্রুতি মতো, অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেলেন লোকসেবক সঙ্ঘের সচিব-সহ কয়েক জন সদস্য।
স্বাধীনতার পরে তৎকালীন মানভূম জেলা বিহারের অন্তর্ভুক্ত হয়। কংগ্রেসের জেলার শীর্ষ নেতারা জাতীয় স্তরের নেতাদের কাছে সেই সময় আবেদন জানিয়েছিলেন, মানভূমের বাংলাভাষী মানুষজনকে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত করা হোক। কিন্তু সেই প্রস্তাব নিয়ে টালবাহানা চলতে থাকায় কংগ্রেসে ভাঙন ধরে। জেলা স্তরের অধিকাংশ নেতা কংগ্রেস ছেড়ে গঠন করেন লোকসেবক সঙ্ঘ। ১৯৪৮ সাল থেকেই শুরু হয়ে যায় ভাষা ভিত্তিক প্রদেশ গঠনের দাবিতে আন্দোলন। তারপর ১৯৫৬ সালের ২০ এপ্রিল সেই ঐতিহাসিক মিছিল শুরু হয়। বাঁকুড়া, বেলিয়াতোড়, সোনামুখী, পাত্রসায়র, খণ্ডঘোষ, বর্ধমান, পান্ডুয়া, মগরা, চুঁচুড়া, চন্দননগর, হাওড়া হয়ে মে মাসের ৬ তারিখ প্রায় হাজার খানেক মানুষ পৌঁছন কলকাতায়। অবশেষে ওই বছর ১ নভেম্বর মানভূমের কিছু এলাকা পুরুলিয়া জেলা নাম নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভূক্ত হয়।
আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তিতে, ২০০৬ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পুঞ্চার পাকবিড়রা সেই মাঠে এসে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন ভাষা সৈনিকদের। কিন্তু, পুরুলিয়ার মানুষের খেদ ছিল, ২১ ফেব্রুয়ারির আন্দোলন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেও পুরুলিয়ার ভাষা আন্দোলন তার প্রাপ্য মর্যাদা পায়নি। সেই আক্ষেপে এত দিন পলি পড়ল। লোকসেবক সঙ্ঘের বর্তমান সচিব সুশীল মাহাতো বলেন, ‘‘তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের ২১ ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে এই প্রথম ডাক পেলাম। সুযোগ পেলে সেই মঞ্চ থেকে মানভূমের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরব।’’ ওপার বাংলার ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আব্দুল গফফর চৌধুরীর ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি।
সুশীলবাবু জানান, মানভূমের ভাষা আন্দোলনের অন্যতম হাতিয়ার ছিল দু’টি টুসু গান— পুরুলিয়ার প্রথম সাংসদ ভজহরি মাহাতোর লেখা, ‘শুন বিহারি ভাই, তরা রাখতে লারবি ডাং দেখাই। ...এক ভারতের ভাইয়ে ভাইয়ে মাতৃভাষায় রাজ্য চাই’ এবং অরুণ ঘোষের ‘আমার বাংলা ভাষা প্রাণের ভাষা রে।’ এ বারের অনুষ্ঠান মঞ্চে মিলে যেতে পারে দুই বাংলার আন্দোলনের সেই সুর।
তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের এ বারের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছেন ভাষা সৈনিক বোরো থানার রাঙ্গামেট্যা গ্রামের নকুল মাহাতো এবং কেন্দা থানার পানিপাথর গ্রামের নারায়ণ মাহাতোরা। তাঁরা বলেন, ‘‘মানভূমের ভাষা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে কেউ শহিদ হননি। কিন্তু আন্দোলনে যোগ দিয়ে ঘর ছাড়া হয়েছেন অনেকে। অনেককে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে, চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। সেই আন্দোলন ২১ ফেব্রুয়ারির পাশে স্বীকৃতি পাওয়ায় ভাল লাগছে।’’
সূত্র আনন্দবাজার
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:১৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×