সম্মানবায়ু-
১ম কিস্তি।
একটি পাদিক লেখা।
প্রথমে ‘সম্মানবায়ু’ শব্দটিকে সংজ্ঞায়ীত করা যাক। এই শব্দটি সমাসজাত শব্দ। সম্মানের সাথে সম্পর্কিত বায়ু সম্মানবায়ু। এটি বহুব্রিহী সমাস। যেহেতু এটি বহুব্রিহী সমাস তাই অনুমান করে নেয়া যাচ্ছে যে সম্মান এবং বায়ু ভিন্নার্থে সম্পর্কিত। সম্পর্কটা বুঝা যাবে সঙজ্ঞায়। সম্মানবায়ুর সঙজ্ঞা দেয়া যাক। সম্মানবায়ুর সঙজ্ঞা একটি সহজতম সঙজ্ঞা।
তার আগে আমাদের ব্যাকরণের চিরায়ত সঙজ্ঞাটি অসংখ্যবার পড়া থাকলেও দ্বিতীয়বার পড়ে নিতে হবে।
‘যে শাস্ত্র পাঠ করিলে ভাষাকে শুদ্ধরূপে লিখিতে পড়িতে ও বলিতে পারা যায় তাকে ব্যাকরণ বলে।‘
সঙজ্ঞার একটি প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেলো যা আমাদের সম্মানবায়ুর সঙজ্ঞা বুঝতে সাহায্য করবে।
সঙজ্ঞা বুঝা না গেলে শব্দটিকে বুঝাও যাবে না অনুধাবনও করা যাবে না।
পৃথিবীতে কোনো শব্দের সঙজ্ঞাই চিরন্তন নয় সব সঙজ্ঞাই সময়ের সাথে পরিবর্তিত পরিবর্ধিত পরিমার্জিত হয়েছে। কেননা আমাদের জানা আছে যে ভাষা নিয়ত পরিবর্তনশীল মাধ্যম। আজকে যে শব্দের অর্থ একভাবে আমরা জানি সে শব্দটি অতীতে হয়ত অন্যরকম ছিলো। যেমন, পাদ। এই শব্দটি আমাদের চর্যাপদে ব্যহৃত হয়েছে পদের রচয়িতা অর্থে, যেমন কাহ্নাপাদ লুইপাদ কুক্কুরীপাদ। কিন্তু। কিন্তু বর্তমানে এই ‘পাদ’ শব্দটি অতীতের সম্মান হারিয়ে সম্মানহানীর সাথে জড়িয়ে পড়েছে তীব্রভাবে।
এই শব্দে সমাজ আজ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে আছে, যেমন একদল, পাদ দিচ্ছে আরেকদল তার গন্ধ নিয়ে নাকসিটকাচ্ছে। আরেকটি ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে তারা কিছুক্ষণ পরপরই দল পালটাচ্ছেন। এখন যে পাদ দিল কিছুক্ষন পরই সে নাকসিটকানোর দলে ভিড়ে যাচ্ছে। এখানে ব্যক্তির দ্বিমুখী আচরণ প্রকাশ হয়ে পড়ছে।
এই দ্বিমুখি আচরণে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এই দ্বন্দ্ব সংঘাতে গড়ায়। এই দ্বন্দ্ব ভয়াবহ সংঘাতে গড়ানোর ইতিহাস আমাদের জানা আছে। পানিপথের প্রথম যুদ্ধ হয়েছিল জহিরউদ্দিন মুহম্মদ বাবর এবং হিমুর মধ্যে। এই যুদ্ধের বীজ উপ্ত হয়েছিল যে কারণে তার মূলকারণ ছিলো এই ‘পাদ’। এই ‘পাদ’ নিয়ে যদি সমাজে স্বচ্ছ ধারণা থাকতো থাকত একে অপেরের সাথে বুঝাপড়া, সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ , সহমর্মিতা, এবং সর্বোপরি থাকতো উদাসীনতা কিংবা “পরপাদসহিষ্ণুতা” তবে ইতিহাসের সেই রক্তপিপাসু মর্মঘাতী হৃদয়বিদারক পানিপথের প্রথম যুদ্ধ সংঘঠিত হত না। রবীন্দ্রনাথও লিখতেন না,
“কী সুখে দাও পাদ হে গুণী
ভুলিয়া দিন ও রজনী।”