somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারীকে অবরুদ্ধ করে রাখার সকল অপচেষ্টা রুখে দাঁড়াও।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য প্রতিবাদী নারী গণসমাবেশের প্রচার লিফলেট:

----------------------------------------------------------

নারীকে অবরুদ্ধ করে রাখার সকল অপচেষ্টা রুখে দাঁড়াও

প্রতিবাদী নারী গণসমাবেশ
২৭ এপ্রিল । বিকাল ৩টা
তোপখানা রোড(পল্টন মোড়)



আজ থেকে প্রায় দেড় শতাধিক বছর আগে ১৮৫৭ সালের ৮ই মার্চ নিউইয়র্ক শহরে সেলাই কারখানার নারী শ্রমিকরা বিপদজনক ও অমানবিক কর্ম পরিবেশ, স্বল্প মজুরী ও দৈনিক ১২ ঘণ্টা শ্রমের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছিল। এই দিনটিই পালিত হয় বিশ্ব নারী দিবস হিসেবে। আর ২০১৩ সালে এসে বাংলাদেশের নারীদেরকে জীবন-জীবিকা-শিক্ষা গ্রহণ তথা মুক্তভাবে চলাফেরা করার অধিকার সমুন্নত রাখতে রাজপথে নামতে হচ্ছে। এ যেন উল্টো রথযাত্রা।
যখন এদেশের নারীরা হিমালয়ের সর্বোচ্চ বিন্দুকে পদানত করছে, মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ছেলেদের চাইতে মেয়েরাই অধিকতর ভাল ফলাফল অর্জন করছে, সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মাধ্যম গার্মেন্ট শিল্পে ৮০ শতাংশ নারী নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছে এবং ’৭১ এ হত্যা-ধর্ষণ-লুণ্ঠনের সাতে জড়িত যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে নারীরাই ঠিক সেসময়ই একটি মহল থেক দাবি উঠল “......প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ” বন্ধ করতে হবে, বাতিল করতে হবে নারীনীতি।

নারী বিদ্বেষী দাবির নেপথ্যে:
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামাত শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনে নারীদের অসামান্য ভূমিকা এবং একেবারে সামনে থেকে অকুতোভয় নেতৃত্ব দেয়াই কি এমন দাবির মূল কারণ নয়? প্রজন্ম চত্বরের অগ্নিকণ্যাদের সাথে লাখ লাখ মানুষ দেশদ্রোহীদের উদ্দেশ্যে স্লোগান তুলেছে ‘...... তুই রাজাকার-তুই রাজাকার।’ স্লোগানে স্লোগানে দেশপ্রেমিক জনতার সেই রণ হুঙ্কার রাজাকার-দেশদ্রোহীদের অন্তরাত্মায় কাঁপন ধরিয়ে দেয়। তাই শুরু থেকেই নারীদের চরিত্র হননের হীন প্রচেষ্টা চালায় জামাত-শিবির। কিন্তু প্রজন্ম চত্বরের অগ্নিকণ্যাদের প্রেরণায় আছেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম,ঘাতক-দালালের বিচারের দাবিতে গণ-আদালত গঠন করায় জামাত-শিবির ‘জাহান্নামের ইমাম’ আখ্যা দিয়েও দামাতে পারেনি যাঁকে। আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ঠেকাতে না পেরে শুরু হল ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহারের সর্বোচ্চ অপচেষ্টা। ধর্মাবননার অভিযোগ তুলে সমগ্র গণ-জাগরণ মঞ্চকে ‘নাস্তিক-ধর্মদ্রোহী’ আখ্যা দিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা। দৃশ্যপটে হাজির হয় ‘হেফাজতে ইসলাম’। এই সরকার আমলে প্রণীত নারী-নীতির বিরোধিতা করে যারা কিছু দিন আলোচনায় ছিল। ধর্মকে গণ-জাগরণ মঞ্চের ‘নাস্তিক’দের হাত থেকে রক্ষা করার ব্রত নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সংগঠনটি, যার আড়ালে আশ্রয় নেয় যুদ্ধাপরাধী সংগঠন ও তাদের সহায়ক সকল শক্তি। নাস্তিকদের ফাঁসি, নারীদের অবাধে চলাফেরা বন্ধ করাসহ দেশকে তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত করতে ১৩ দফা দাবিতে উত্থাপন করে। তাদের স্বপ্নের তালেবানি রাষ্ট্রের একটি নিদর্শনও তারা প্রদর্শন করে। হেফাজতে ইসলামের ‘সম্পূর্ণ নারীমুক্ত’ সমাবেশে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হেফাজত কর্মীদের নারকীয় হামলার শিকার হন নারী সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন, জাকিয়া আহমেদ। “পুরুষের সমাবেশে নারী সাংবাদিক কেন?’’– এমন প্রশ্ন তুলেই আক্রমণের শুরু। আর নাদিয়া শারমিনের ভাষ্যমতে, “কোনো ধরনের উসকানি থেকে নয়, ক্ষোভ থেকে নয়, তারা আমাকে মেরেছে শুধু নারী বলে|” যদিও নারী নেতৃত্বাধীন দলের প্রত্যক্ষ সমর্থনে এবং ঐ দলের নেতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণে নারী বিদ্বেষী এই সমাবেশ আয়োজিত হয়।

সংবিধানের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক দাবি :
১৩ দফা দাবির চতুর্থ দফায় ‘ব্যক্তি ও বাক স্বাধীনতার নামে প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ বন্ধ করা’র দাবি জানানো হয়েছে। অথচ সংবিধানের তৃতীয় ভাগে ২৮(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন। এবং তৃতীয় ভাগে, ৩৬তম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা, ইহার যেকোনো স্থানে বসবাস ও বসতি স্থাপন এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃ প্রবেশ করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে’।
পঞ্চম দফায় সরকার প্রণীত নারী-নীতিকে ‘ইসলামবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে। অথচ আমাদের সংবিধানের তৃতীয় ভাগে ২৮(৪) অনুচ্ছেদে আছে, ‘নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান-প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না’। সে অনুযায়ী, নারীদের অগ্রগতির জন্য বিশেষভাবে নারীনীতি আইন প্রণয়ন সংবিধান অনুসারেই হয়েছে। এবং এই নারী-নীতিকে যদি ‘ইসলামবিরোধী’ বলা হয়, সে ক্ষেত্রে সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদ আবারও দ্রষ্টব্য, যেখানে বলা হয়েছে, সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আইনগুলোকেই বরং বাতিল বলে গণ্য করা হবে।

নারী শ্রমিকরা কি বলছে:
“নিজে ইনকাম করি বলে পরিবারের সবার কাছে আমার একটা দাম (মূল্যায়ন) আছে। স্বামী, ছেলে-মেয়ে সবাই আমার কথার দাম দেয়। হুজুররা বললেই তো হবে না। ওনারা তো আর ঘরে খাওন পৌঁছায় দিবেন না।”- জুলেখা খাতুন, গার্মেন্ট শ্রমিক।
“তারা (হেফাজত) কারখানাগুলাতে কাজ করা হাজার হাজার মানুষের পরিবারের দায়িত্ব নেক। তাইলে সবাই বাসায় বসে থাকব,” - আশফিয়া বেগম,গার্মেন্ট শ্রমিক।

নারী ধর্ষিত হলে এরা নারীর পোশাকের দিকে আঙ্গুল তোলে। কিন্তু ৯ বছরের শিশুটিও কেন ধর্ষিত হয়- এই প্রশ্নের উত্তর এরা দিতে পারবে না। ধর্ষিত হবার অপরাধে(!) ধর্ষিতাকে দোররা মেরে এরা সমাজের মুখ রক্ষা(!) করে। এদের পূর্বসূরিদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই নারীদের শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমৃত্যু লড়ে গিয়েছিলেন বেগম রোকেয়া। তাঁর দেখানো পথে বাংলার নারীরা সকল ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে মোকাবেলা করবে। প্রয়োজনে রাজপথে নেমে আসবে, বারুদ ঝরা কণ্ঠে স্লোগান তুলবে সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে, এগিয়ে নেবে দেশকে। সর্বোপরি নারী নিশ্চিত করবে মানুষ হিসবে তার বেঁচে থাকার ন্যায্য অধিকার। নারী বেঁচে থাকবে মানুষ হিসেবে, শুধু নারী হিসেবে নয়।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।
২২ এপ্রিল,২০১৩
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:০০
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×