somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খুলনা-বাগেরহাট ভ্রমণ

১৪ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১৯-২১ জানুয়ারি,২০১২)


শীতকাল।জানুয়ারি'র ১৯ তারিখ । রাতের ট্রেনে তিনজন রওনা হলাম।সকাল ৭ টার দিকে আমরা খুলনা স্টেশনে এসে নামলাম । আমাদের receive করার জন্য এক ছোটভাই রাঘিবের আসার কথা । রাঘিবের একটু দেরি হওয়াতে আশপাশের এলাকাটা একটু ঘুরে দেখার সু্যোগ পেলাম ।খুলনা স্টেশন - যেমনটা হবে ভেবেছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশী পুরনো ।


"প্লাটফর্মে যানবাহন উঠানো আইনত দন্ডনীয় অপরাধ"-- এমন নোটিশ'কে তোয়াক্কা না করার ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই ।


জরাজীর্ণ স্টেশন এর মালঘরের সামনে দাড়িয়ে আমার দুই বন্ধু মুরাদ,সনি ।


যাই হোক নাস্তা সেরে , ফ্রেশ হয়ে দ্রুত রওনা হলাম বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে ; লক্ষ্য - খান জাহান আলির ষাট গম্বুজ মসজিদ । রাঘিব আমাদের গাইড । ঘন্টা দুয়ের বাস যাত্রা শেষে আমরা ষাট গম্বুজ মসজিদ এর পাশের বড় রাস্তায় নেমে তো আবাক- সত্যিই তাহলে ষাট গম্বুজ মসজিদ এর দেখা পেলাম ! টিকেট কেটে ঢুকার পর দুটো রাস্তা- বাম দিকে বিশাল মসজিদটা আর ডান দিকে যাদুঘর ।
আমরা প্রথমে মসজিদ দেখব বলে ঠিক করলাম ।

লাল ইটের তৈরী মসজিদের ঢুকার পথে সুন্দর নকশা করা তোরণ আর তার পাশের একটা বড় টিনের বোর্ডে ষাট গম্বুজ মসজিদের ইতিহাস লিখা । ভেতরে ঢুকতেই ৭৭টা গম্বুজ মাথায় নিয়ে দাঁড়ানো ষাট গম্বুজ মসজিদের দেখা পেলাম । খুব সাধারণ কিন্তু আকর্ষণীয় নকশায় মোড়া মজিদের দেয়ালগুল । চারপাশটা একটু দেখে নিয়ে আমরা ভেতরে ঢুকলাম । যে বিরাট-বিরাট পিলার এর উপর ভর করে পুরো স্থাপত্যটি দাঁড়িয়ে আছে তার মধ্যে একটি অন্যগুলর চেয়ে একদমই ভিন্ন গড়নের । সম্ভবত এটিই একমাত্র খান জাহান আলী কর্তৃক নির্মিত ষাট গম্বুজ মসজিদের মূল পিলার , অন্যগুলো পরবর্তীতে সংস্কার কালে পরিবর্তন করা হয় । যে জিনিসটি দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল তা হল পশ্চিম অংশের দেয়াল । এই দেয়ালের যে ঐতিহাসিক টেরাকোটার নক্সা ছিল তার সংস্কার এত আনাড়ি হাতে করা হয়েছে যে তা দেখে রীতিমত বিরক্তিবোধ হয় । উপযুক্ত রক্ষণা-বেক্ষণের অভাবে ভেতরের অংশ তার সৌন্দর্য্য অনেকখানি হারিয়েছে । মেঝে শ্যাঁতশ্যাঁতে , কোথাও আবার মাকড়শা বাসা বেঁধেছে । যাই হোক না কেন তারপরও দেখার মত অনেক কিছুই আছে ।


ষাট গম্বুজের পথে তোরণ ।


ষাট গম্বুজ মসজিদ এর ভেতরর দৃশ্য(রাঘিব,মুরাদ,সানি)


ষাট গম্বুজ মসজিদ ।

ষাট গম্বুজ মসজিদ দেখা শেষ হলে আমরা গেলাম তার ঠিক সামনে যে বিশাল দীঘি আছে তা দেখতে । দীঘি'র নাম 'ঘোড়া দীঘি'।

গল্প প্রচলিত আছে যে , যখন কিনা মসজিদ তৈরী শেষ হল তখন খান জাহান আলী একটা দীঘি কাটার কথা ভাবছিলেন । কিন্তু দীঘি'র আয়তন কত হবে ? এ ক্ষেত্রে তিনি অভিনব এক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন । একটা ঘোড়াকে একটি বিশেষ জায়গা থেকে ছেড়ে দিলেন । তারপর ঘোড়াটি ঘুরে আবার ঐ জাইগায় আসতে যতটুকু অংশ নিল তার পুরোটা কেটে তৈরী হল আজকের 'ঘোড়া দীঘি'।
গল্পটা সত্যি বা মিথ্যা যাই হোক না কেন ঘোড়া দীঘি আসলেই বিশাল । আর তার পাড়ে ভিড় করে ফুটে আছে রঙ্গিন শাপলা ফুল ।


ঘোড়া দীঘির শাপলা ফুল।


সিঙ্গাইর মসজিদ


ঘোড়া দীঘি দেখা শেষে আমরা সিঙ্গাইর মসজিদ দেখতে গেলাম । আসলে ষাট গম্বুজ থেকে মাত্র ২৫ মিটার দূরে হল সিঙ্গাইর মসজিদ । যে বড় রাস্তাটা বরিশালের দিকে চলে গেছে ষাট গম্বুজ থেকে সেই রাস্তাটা পার হলেই সিঙ্গাইর , অনেকেই বলে এক গম্বুজ মসজিদ । আকারে অনেক ছোট্ট । অযত্নের শেষ নেই যেন । দেয়ালে শ্যাওলা জমে গেছে , ভেতরের জানালায় কোন গ্রিল নাই,ছাদের অবস্থাও নাজুক ; এই নিয়েই দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটা ।

এরপর আমরা একটা অটো-রিক্সা ভাড়া করে খান জাহান আলীর মাজার শরীফ দেখতে গেলাম । এই জায়গাটাতে মানুষের ভীড় একটু বেশী । দালানগুলোর যত্নআত্তিও বেশী । মনে হয় এগুলো এখনো খান জাহান আলীর ভক্ত-মুরিদদের দখলে আছে । অনেক ফকির-সন্ন্যাসী গোছের লোকের দেখা মেলে । খাবারের দোকান,উপহার সামগ্রীর দোকান ইত্যাদি নানা ব্যবসা চলছে জম্পেশ ! মাজারের ঠিক সামনেই বিশাল আরেকটা দীঘি । উৎসুক লোকজন দীঘির পাড়ে ভিড় করছে । আমরাও বেপারটা দেখতে গেলাম । জানতে পারলাম কুমির পাড়ে উঠেছে ; দীঘিতে কুমির আছে তাহলে! ২ টা কুমির । যার একটা হল খান জাহানের আনা কুমিরগুলরই উত্তরসূরি ।


খান জাহান আলীর মাজারের একটি কুমির ।

কুমির দেখা শেষে আমরা দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সারলাম । তারপর কোথায় যাওয়া যায় ? ঠিক করলাম কোডলা মঠ দেখতে যাব । খান জাহানের মাজার থেকে একটা অটোরিকশা ভাড়া করলাম । আসা-যাওয়া ২৫০ টাকায় চুক্তি হল । আমরা ছুটলাম বাগেরহাটের গ্রামের ভেতর দিয়ে । গ্রামের নাম অযোধ্যা , তাই মঠের নামও অযধ্যার মঠ । ঘন্টা খানেক পর আমরা একটা চারতলা উঁচু দালানের সামনে এসে হাজির হলাম । সংস্কার কাজ চলছে । দেয়াল দেয়া হচ্ছে । আমরা কাছে গেলাম । সত্যিই দেখার মত এই ১৬০০ শতাব্দির স্থাপনাটি । এর কাজগুল অনেক বেশী নিখুঁত আর কাজের পরিমাণও অনেক অনেক বেশী । ক্রমশ ছুঁচালো হয়ে উপরে উঠে গেছে মঠটির চূড়া । মঠের ভেতরের দিক টা এখনও সংস্কার করা হয়নি যদিও বাইরের অনেক জঞ্জাল কেটে ফেলা হয়েছে ইতমধ্যেই । কোডলা বা অযোধ্যার মঠ আমাদের তিন বন্ধুরই অনেক ভাল লেগেছে । এই মঠটির সাথে বেশ সাদৃশ্য খুজে পাওয়া যায় দিনাজপুরের কান্তজির মন্দীরের ।


বিভিন্ন দিক থেকে তোলা অযোধ্যা মঠের ছবি ।


অনেক্ষণ থাকার পর আমরা ফেরার জন্য রওনা হলাম । আসার পথে বেশ কিছু জায়গায় থামলাম , কোথাও আবার ছবি তুল্লাম । ছোট-ছোট খাল জালের মত পুরো বাগেরহাটে যেন ছড়িয়ে আছে । গ্রাম , নদী , খাল , শীতকালীন নানা শাক-সবজির ক্ষেত এসব দেখতে দেখতে শেষ বিকেলে আমরা ফিরে আসলাম আবার পুরনো ঠিকানায় ; ষাট গম্বুজ মসজিদ সংলগ্ন রাস্তায় । খুলনার একটা বাস পেয়ে যাওয়াতে দ্রুত উঠে পড়লাম বাসে ; ঠিক বাসে না - বাসের ছাদে !



বাগেরহাট জেলার অযোধ্যা গ্রামের পথে পথে ।

সূর্যটা যখন প্রায় ডুবু-ডুবু তখন আমরা রূপসা ব্রিজ পার হচ্ছিলাম । বাস থেকে নেমে পড়লাম ।
কারণ রূপসা ব্রিজ থেকে সূর্যাস্ত দেখার মজা সত্যি অসাধারণ ! অনেক্ষণ ছিলাম আমরা সেখানে । রাত নেমে এলে পুরো এলাকাটা উৎসবের মত নানা আলোয় সেজে উঠল । তারপর রাতের বেলা ক্লান্ত শরীরে শহরটা একটু ঘুরে দেখলাম ।


রূপসা ব্রীজে রাঘিব,মুরাদ,সানি।




পরদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেল , আগের দিন তো কম পরিশ্রম হই নি ! প্রায় ১১টার দিকে আমরা মংলা যাব বলে ঠিক করলাম । মংলার বাস যেখান থেকে ছেড়ে যায় সেই বাস টারমিনালে রাঘিব আসল । আজ আর ওর যাওয়া হচ্ছে না । আমরা তাই তিনজন নিজেদের সবকিছু নিয়ে রওনা হলাম মংলার উদ্দেশ্যে । একটা যাচ্ছে-তাই বাস এর একেবারে শেষকটা সিটে বসে । যাই হোক , নানা ঝামেলা শেষে মংলা পৌছুলাম যখন , তখন প্রায় দুপুর ২ টা ! এই শীতকালেও বেশ গরম একটা ভাব । আমাদের হাতে সময় খুব একটা নেই কারণ ওইদিনই আমাদের ঢাকা ফিরে পরদিন সকালের ক্লাস করতে হবে । মংলা পৌঁছে জানতে পারলাম সুন্দরবনের করমজাল পয়েন্টটা মংলা থেকে খুব একটা বেশী দূরে নয় । আমরা ঠিক করলাম সুন্দরবনেই যাব । কিন্তু এখানেও আরেক ঝামেলা । কেননা করমজাল ঘুরে আসতে যে ট্রলার ভাড়া করতে হবে তা আমাদের তিন জনের পক্ষে বহন করা সম্ভব হলেও বিশাল অপচয় হয়ে দাঁড়াবে ।
শেষ পর্যন্ত আরও চারজন লোককে খুজে পাওয়া গেল যারা আমাদের সাথে কিছুটা পথ যাবে এবং খরচও অনেকটা বহন করবে ।

দুপুরের খাওয়া সেরে আমরা দ্রুত ট্রলার এ চড়ে বসলাম । সাথে চার আগন্তুক । ট্রলার চলছে ।মাথার উপর কড়া রোদ । আমরা কিছুক্ষণ ট্রলারের শেড এর নিচে বসলাম । একটুপর যখন খুব বাতাস বইতে লাগল ত্তখন আমরা ট্রলারের ছাদ এ উঠে বসলাম । কিছুক্ষণ পর এ ট্রলারটা নদীর পাড় ঘেঁষে যেতে লাগল । আর পাড়ে যা দেখলাম তার গল্প অনেক শুনলেও কখনো দেখার সুযোগ হয় নি । জায়গাটা অনেক বিখ্যাত - বানিয়াসান্তা । আমরা তিনজন অবাক হয়ে দেখছি - সারি সারি ঘর , অনেক মেয়ে মানুষ , তারা সবাই ক্যাট-ক্যাটে রঙের জামা কাপড়ে পরে আছে । নানা বয়সের ছেলে-পুরুষ মানুষের সাথে মেয়েগুল হাতাহাতি করছে , রঙ করে কথা বলছে , হাসছে । আর চারিদিকে যত কথা শোনা যায় তার প্রায় অর্ধেকটাই নানা অশ্রাব্য গালি । হঠাৎ আমাদের আরও অবাক করে দিয়ে আমাদের চার আগন্তুক সহযাত্রী সেই বানিয়াসান্তা ঘাটে নেমে গেল !



বানিয়াসান্তা - ঘাটে ভিড় করেছে নানা রকম মানুষের নৌকা, (নিচে) পতীতাদের ব্যস্ততা !

যাই হোক , আমরা আবার পশুর নদীতে নৌকা ভাসালাম । যখন অনেকটা পথ চলে এসেছি তখন দূরে দেখলাম মংলা বন্দর । আরেকটু এগুতেই দেখতে পেলাম কয়েকটা ছোট জাহাজ থেকে মাল নামাচ্ছে আরও ছোট কিছু যান্ত্রিক নৌকা ( ! ) আস্তে আস্তে আমরা একটা ঘাটের দিকে এগুতে লাগলাম । সেখানে আরো কিছু ট্রলার , ছোট লঞ্চ ভিড় করে আছে । আমরা পাড়ে উঠলাম । টিকেট কেটে এলাকাটা ঘুরে দেখলাম । এখানে ছোট-খাটো একটা চিড়িয়াখানার আয়োজন চলছে বলা যায় । খাঁচার ভেতর হরিণসহ আরও কিছু প্রাণী আছে , যা মেজাজ খারাপ করার জন্য যথেষ্ট ! এখানকার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল - কৃত্রিম কুমির চাষ প্রজনণ কেন্দ্র । সেখানে নানা বয়সের অসংখ্য কুমির আছে । মানুষ তা দেখছে , মজা পাচ্ছে । চারপাশে অনেক গাছপালা । এসবের মাঝখানে কয়েকটা বাংলো । বাংলোগুলোর পাশ দিয়ে একটা কাঠের সেতুর মত করে বানানো রাস্তা চলে গেছে বনের ভেতরের দিকটায় । লোকজন খুব আগ্রহ নিয়ে সে পথ দিয়ে যাচ্ছে আর গোমড়া মুখ করে ফিরে আসছে ; এই দেখে আমরা আর ঐ পথে বেশিদূর গেলাম না ।

করমজাল পয়েন্টের ঠিক পাশ দিয়ে একটা সরু খালের মত নালা পশ্চিমের দিকটায় ছলে গেছে । আমরা সেখানে যাওয়ার কথা ভাবছিলাম । কিন্তু ওইদিন নাকি কারো সেপথে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছিলনা । আমাদের মধ্যে মুরাদ একটু তুলনামূলক কম বোকা ! ও গিয়ে কর্তব্যরত কর্মকর্তার সাথে বেশ আলাপ জমিয়ে দিল । অদ্ভুত ব্যাপার হল কিছুক্ষণের মাঝে আমরা দেখলাম উনি আমদের আরেক বন্ধুর দুলাভাই । ভদ্রলোক ব্যস্ততার মাঝেও আমদের সাথে বসে নাস্তা করলেম । আর ভেতরের দিকটা ঘুরে দেখার অনুমতি মিলতেও দেরি হল না ! আমাদের পরে আরও একটা স্পীডবোটকেও দেখলাম ঐ দিকটাতে আসছে । ( যদিও স্পিডবোটটাতে অল্প কিছু সময় পরই সমস্যা দেখা দেয় )



(উপরে) করমজাল পয়েন্ট থেকে দেখা সুন্দরবন , (নিচে)মংলা বন্দরে ভীড় করা ছোট জাহাজ।


এবার ফেরার পালা । আমাদের ছোট ট্রলারটা একটা জায়গায় গিয়ে উল্টো দিকে মোড় নিল । তারপর আবার যে পথে এসেছি সে পথে চলতে লাগল । আবার সেই জাহাজ , নির্জীব পাড় , বানিয়াসান্তা । বানিয়াসান্তায় এসে আমাদের থামতে হল । চুক্তি অনুযায়ী ঐ চার যাত্রীকেও নিয়ে যেতে হবে ট্রলারচালকের । আমরা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম কিন্তু তারা এল না । এদিকে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসছিল । শেষে মাঝি নিজে গিয়ে তাদের খুঁজতে লাগল । তারও অনেকপরে সবাই ফিরে এলো , আর চার যাত্রী মাতাল । তারা এসে মাতলামি করল , মজা করল , আমরা দেখলাম , মজা নিলাম । আমাদের ছবি তোলা দেখে একজন বল্ল
" আমাদের একটা ছবি তুলে দাও না ।"
কি আর করা !


এই হল সেই ফরিদপুর থেকে আগত চার সহযাত্রী ।


আগেরদিনের মত এই দিনটাতেও অসম্ভব সুন্দর একটা সূর্যাস্ত দেখলাম । পশূর নদীতে যেন রক্তের স্রোত বয়ে যাছিল , আর আকাশ জুড়ে কমলা-হলুদ-লালের হোলি খেলা ! চারপাশ ভীষণ নিস্তব্ধ । নৌকাগুলো চলছে নিঃশব্দে । আমরাও হঠাৎ গল্প করার কিছু খুজে পেলাম না । পাড়ে নেমে মুরাদ নদীর পানির উচ্চতা বাড়ানোর একটা ছোট উদ্যোগ নিল । তারপর ঢাকা ফেরার গল্প !



পশুর নদীতে সূর্যাস্ত (উপরে)।
মংলা ট্রলার ঘাট (নিচে) ।

মংলা থেকেই কিছু বাস সরাসরি ঢাকা ছেড়ে যায় নিশ্চিত হওয়ার পর আমাদের মনটা ভাল হয়ে গেল । শুধুশুধু আর খুলনা ফিরে যাওয়া লাগল না ভেবে । রাত ৮ টার বাস এ আমরা চড়ে বসলাম । কপাল মন্দ এখানেও সেই পেছনের ৩ সিট পেলাম আমরা । কী আর করা সকালের ক্লাস ধরতে হবে , তাই সময়টাই মূখ্য । বেশ বাজে প্রজাতির বাস । বসতে কষ্ট হলেও শীতের রাত ছিল বলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুম চলে আসল । ঘুম ভাঙ্গার পর দেখি বাস জ্যামে আটকা পড়ে আছে । জানতে পারলাম এটা ঠিক জ্যাম না । বাসগুলো ফেরিতে উঠার জন্য লাইনে ধরেছে , রাতের খাবারটা এই সুযোগেই সারতে হবে । দ্রুত নেমে খেয়ে এলাম । বাস নিশ্চল । যখন তন্দ্রায় ছিলাম তখন বুঝতে পারছিলাম বাস চলতে শুরু করেছে । ঢাকা দেখার আশা নিয়ে দুচোখে গভির ঘুম নেমে আসল ।



যখন ঘুম ভাঙল তখন দেখি বাস থেমে আছে । অনেক রাত হয়েছে । মানুষের কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে বাইরে ।ভীষণ কুয়াশা পড়ছে । জানালার বাইরে অনেকগুল বাস গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছে !কোথায় আমরা ?


যখন জানতে পারলাম কুয়াশার কারণে আমদের ফেরিটা পদ্মা'র ঠিক মাঝখানে আঁটকে আছে , তখন একটা ভয় নিজের মধ্যে নড়েচড়ে বসল । একটানা অনেকক্ষণ বসে রইলাম , অপেক্ষা করছি কখন বাসটা ছাড়বে । ঘুম আসছে না । কিছু না করার পেয়ে দুই বন্ধুকে জাগালাম । ওরাও বিরক্ত । তারপর কিছু না করার পেয়ে নিচে নেমে হাটতে লাগলাম । সময় একদমই কাটছে না । বিরক্তি আর খুধায় একাকার অবস্থা ! এমন অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে চার ঘণ্টা কাটানোর পর সকাল হল , কুয়াশা কেটে গেলো , ফেরি চলতে শুরু করল । এমন দারুণ একটা ট্যুর'কে পুরো তিক্ত অভিজ্ঞতায় পরিণত করল কুয়াশা ! যাই হোক সকালে যখন ঢাকা পৌঁছুলাম তখন আর ক্লাস করার তেমন সুযোগ ছিল না ।

ছবিগুলো সব আমদেরই হাতে তোলা।আর , এই ট্রিপটা আমাদের অনেক কম খরচে হয়েছে,মাত্র ১৫০০ টাকা।ট্রেনে ভ্রমণ করার সুবিধাটাই হল এটা,যদিও একটু সময় সাপেক্ষ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১২ রাত ২:১৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×