(১৯-২১ জানুয়ারি,২০১২)
শীতকাল।জানুয়ারি'র ১৯ তারিখ । রাতের ট্রেনে তিনজন রওনা হলাম।সকাল ৭ টার দিকে আমরা খুলনা স্টেশনে এসে নামলাম । আমাদের receive করার জন্য এক ছোটভাই রাঘিবের আসার কথা । রাঘিবের একটু দেরি হওয়াতে আশপাশের এলাকাটা একটু ঘুরে দেখার সু্যোগ পেলাম ।খুলনা স্টেশন - যেমনটা হবে ভেবেছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশী পুরনো ।
"প্লাটফর্মে যানবাহন উঠানো আইনত দন্ডনীয় অপরাধ"-- এমন নোটিশ'কে তোয়াক্কা না করার ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই ।
জরাজীর্ণ স্টেশন এর মালঘরের সামনে দাড়িয়ে আমার দুই বন্ধু মুরাদ,সনি ।
যাই হোক নাস্তা সেরে , ফ্রেশ হয়ে দ্রুত রওনা হলাম বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে ; লক্ষ্য - খান জাহান আলির ষাট গম্বুজ মসজিদ । রাঘিব আমাদের গাইড । ঘন্টা দুয়ের বাস যাত্রা শেষে আমরা ষাট গম্বুজ মসজিদ এর পাশের বড় রাস্তায় নেমে তো আবাক- সত্যিই তাহলে ষাট গম্বুজ মসজিদ এর দেখা পেলাম ! টিকেট কেটে ঢুকার পর দুটো রাস্তা- বাম দিকে বিশাল মসজিদটা আর ডান দিকে যাদুঘর ।
আমরা প্রথমে মসজিদ দেখব বলে ঠিক করলাম ।
লাল ইটের তৈরী মসজিদের ঢুকার পথে সুন্দর নকশা করা তোরণ আর তার পাশের একটা বড় টিনের বোর্ডে ষাট গম্বুজ মসজিদের ইতিহাস লিখা । ভেতরে ঢুকতেই ৭৭টা গম্বুজ মাথায় নিয়ে দাঁড়ানো ষাট গম্বুজ মসজিদের দেখা পেলাম । খুব সাধারণ কিন্তু আকর্ষণীয় নকশায় মোড়া মজিদের দেয়ালগুল । চারপাশটা একটু দেখে নিয়ে আমরা ভেতরে ঢুকলাম । যে বিরাট-বিরাট পিলার এর উপর ভর করে পুরো স্থাপত্যটি দাঁড়িয়ে আছে তার মধ্যে একটি অন্যগুলর চেয়ে একদমই ভিন্ন গড়নের । সম্ভবত এটিই একমাত্র খান জাহান আলী কর্তৃক নির্মিত ষাট গম্বুজ মসজিদের মূল পিলার , অন্যগুলো পরবর্তীতে সংস্কার কালে পরিবর্তন করা হয় । যে জিনিসটি দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল তা হল পশ্চিম অংশের দেয়াল । এই দেয়ালের যে ঐতিহাসিক টেরাকোটার নক্সা ছিল তার সংস্কার এত আনাড়ি হাতে করা হয়েছে যে তা দেখে রীতিমত বিরক্তিবোধ হয় । উপযুক্ত রক্ষণা-বেক্ষণের অভাবে ভেতরের অংশ তার সৌন্দর্য্য অনেকখানি হারিয়েছে । মেঝে শ্যাঁতশ্যাঁতে , কোথাও আবার মাকড়শা বাসা বেঁধেছে । যাই হোক না কেন তারপরও দেখার মত অনেক কিছুই আছে ।
ষাট গম্বুজের পথে তোরণ ।
ষাট গম্বুজ মসজিদ এর ভেতরর দৃশ্য(রাঘিব,মুরাদ,সানি)
ষাট গম্বুজ মসজিদ ।
ষাট গম্বুজ মসজিদ দেখা শেষ হলে আমরা গেলাম তার ঠিক সামনে যে বিশাল দীঘি আছে তা দেখতে । দীঘি'র নাম 'ঘোড়া দীঘি'।
গল্প প্রচলিত আছে যে , যখন কিনা মসজিদ তৈরী শেষ হল তখন খান জাহান আলী একটা দীঘি কাটার কথা ভাবছিলেন । কিন্তু দীঘি'র আয়তন কত হবে ? এ ক্ষেত্রে তিনি অভিনব এক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন । একটা ঘোড়াকে একটি বিশেষ জায়গা থেকে ছেড়ে দিলেন । তারপর ঘোড়াটি ঘুরে আবার ঐ জাইগায় আসতে যতটুকু অংশ নিল তার পুরোটা কেটে তৈরী হল আজকের 'ঘোড়া দীঘি'।
গল্পটা সত্যি বা মিথ্যা যাই হোক না কেন ঘোড়া দীঘি আসলেই বিশাল । আর তার পাড়ে ভিড় করে ফুটে আছে রঙ্গিন শাপলা ফুল ।
ঘোড়া দীঘির শাপলা ফুল।
সিঙ্গাইর মসজিদ
ঘোড়া দীঘি দেখা শেষে আমরা সিঙ্গাইর মসজিদ দেখতে গেলাম । আসলে ষাট গম্বুজ থেকে মাত্র ২৫ মিটার দূরে হল সিঙ্গাইর মসজিদ । যে বড় রাস্তাটা বরিশালের দিকে চলে গেছে ষাট গম্বুজ থেকে সেই রাস্তাটা পার হলেই সিঙ্গাইর , অনেকেই বলে এক গম্বুজ মসজিদ । আকারে অনেক ছোট্ট । অযত্নের শেষ নেই যেন । দেয়ালে শ্যাওলা জমে গেছে , ভেতরের জানালায় কোন গ্রিল নাই,ছাদের অবস্থাও নাজুক ; এই নিয়েই দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটা ।
এরপর আমরা একটা অটো-রিক্সা ভাড়া করে খান জাহান আলীর মাজার শরীফ দেখতে গেলাম । এই জায়গাটাতে মানুষের ভীড় একটু বেশী । দালানগুলোর যত্নআত্তিও বেশী । মনে হয় এগুলো এখনো খান জাহান আলীর ভক্ত-মুরিদদের দখলে আছে । অনেক ফকির-সন্ন্যাসী গোছের লোকের দেখা মেলে । খাবারের দোকান,উপহার সামগ্রীর দোকান ইত্যাদি নানা ব্যবসা চলছে জম্পেশ ! মাজারের ঠিক সামনেই বিশাল আরেকটা দীঘি । উৎসুক লোকজন দীঘির পাড়ে ভিড় করছে । আমরাও বেপারটা দেখতে গেলাম । জানতে পারলাম কুমির পাড়ে উঠেছে ; দীঘিতে কুমির আছে তাহলে! ২ টা কুমির । যার একটা হল খান জাহানের আনা কুমিরগুলরই উত্তরসূরি ।
খান জাহান আলীর মাজারের একটি কুমির ।
কুমির দেখা শেষে আমরা দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সারলাম । তারপর কোথায় যাওয়া যায় ? ঠিক করলাম কোডলা মঠ দেখতে যাব । খান জাহানের মাজার থেকে একটা অটোরিকশা ভাড়া করলাম । আসা-যাওয়া ২৫০ টাকায় চুক্তি হল । আমরা ছুটলাম বাগেরহাটের গ্রামের ভেতর দিয়ে । গ্রামের নাম অযোধ্যা , তাই মঠের নামও অযধ্যার মঠ । ঘন্টা খানেক পর আমরা একটা চারতলা উঁচু দালানের সামনে এসে হাজির হলাম । সংস্কার কাজ চলছে । দেয়াল দেয়া হচ্ছে । আমরা কাছে গেলাম । সত্যিই দেখার মত এই ১৬০০ শতাব্দির স্থাপনাটি । এর কাজগুল অনেক বেশী নিখুঁত আর কাজের পরিমাণও অনেক অনেক বেশী । ক্রমশ ছুঁচালো হয়ে উপরে উঠে গেছে মঠটির চূড়া । মঠের ভেতরের দিক টা এখনও সংস্কার করা হয়নি যদিও বাইরের অনেক জঞ্জাল কেটে ফেলা হয়েছে ইতমধ্যেই । কোডলা বা অযোধ্যার মঠ আমাদের তিন বন্ধুরই অনেক ভাল লেগেছে । এই মঠটির সাথে বেশ সাদৃশ্য খুজে পাওয়া যায় দিনাজপুরের কান্তজির মন্দীরের ।
বিভিন্ন দিক থেকে তোলা অযোধ্যা মঠের ছবি ।
অনেক্ষণ থাকার পর আমরা ফেরার জন্য রওনা হলাম । আসার পথে বেশ কিছু জায়গায় থামলাম , কোথাও আবার ছবি তুল্লাম । ছোট-ছোট খাল জালের মত পুরো বাগেরহাটে যেন ছড়িয়ে আছে । গ্রাম , নদী , খাল , শীতকালীন নানা শাক-সবজির ক্ষেত এসব দেখতে দেখতে শেষ বিকেলে আমরা ফিরে আসলাম আবার পুরনো ঠিকানায় ; ষাট গম্বুজ মসজিদ সংলগ্ন রাস্তায় । খুলনার একটা বাস পেয়ে যাওয়াতে দ্রুত উঠে পড়লাম বাসে ; ঠিক বাসে না - বাসের ছাদে !
বাগেরহাট জেলার অযোধ্যা গ্রামের পথে পথে ।
সূর্যটা যখন প্রায় ডুবু-ডুবু তখন আমরা রূপসা ব্রিজ পার হচ্ছিলাম । বাস থেকে নেমে পড়লাম ।
কারণ রূপসা ব্রিজ থেকে সূর্যাস্ত দেখার মজা সত্যি অসাধারণ ! অনেক্ষণ ছিলাম আমরা সেখানে । রাত নেমে এলে পুরো এলাকাটা উৎসবের মত নানা আলোয় সেজে উঠল । তারপর রাতের বেলা ক্লান্ত শরীরে শহরটা একটু ঘুরে দেখলাম ।
রূপসা ব্রীজে রাঘিব,মুরাদ,সানি।
পরদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেল , আগের দিন তো কম পরিশ্রম হই নি ! প্রায় ১১টার দিকে আমরা মংলা যাব বলে ঠিক করলাম । মংলার বাস যেখান থেকে ছেড়ে যায় সেই বাস টারমিনালে রাঘিব আসল । আজ আর ওর যাওয়া হচ্ছে না । আমরা তাই তিনজন নিজেদের সবকিছু নিয়ে রওনা হলাম মংলার উদ্দেশ্যে । একটা যাচ্ছে-তাই বাস এর একেবারে শেষকটা সিটে বসে । যাই হোক , নানা ঝামেলা শেষে মংলা পৌছুলাম যখন , তখন প্রায় দুপুর ২ টা ! এই শীতকালেও বেশ গরম একটা ভাব । আমাদের হাতে সময় খুব একটা নেই কারণ ওইদিনই আমাদের ঢাকা ফিরে পরদিন সকালের ক্লাস করতে হবে । মংলা পৌঁছে জানতে পারলাম সুন্দরবনের করমজাল পয়েন্টটা মংলা থেকে খুব একটা বেশী দূরে নয় । আমরা ঠিক করলাম সুন্দরবনেই যাব । কিন্তু এখানেও আরেক ঝামেলা । কেননা করমজাল ঘুরে আসতে যে ট্রলার ভাড়া করতে হবে তা আমাদের তিন জনের পক্ষে বহন করা সম্ভব হলেও বিশাল অপচয় হয়ে দাঁড়াবে ।
শেষ পর্যন্ত আরও চারজন লোককে খুজে পাওয়া গেল যারা আমাদের সাথে কিছুটা পথ যাবে এবং খরচও অনেকটা বহন করবে ।
দুপুরের খাওয়া সেরে আমরা দ্রুত ট্রলার এ চড়ে বসলাম । সাথে চার আগন্তুক । ট্রলার চলছে ।মাথার উপর কড়া রোদ । আমরা কিছুক্ষণ ট্রলারের শেড এর নিচে বসলাম । একটুপর যখন খুব বাতাস বইতে লাগল ত্তখন আমরা ট্রলারের ছাদ এ উঠে বসলাম । কিছুক্ষণ পর এ ট্রলারটা নদীর পাড় ঘেঁষে যেতে লাগল । আর পাড়ে যা দেখলাম তার গল্প অনেক শুনলেও কখনো দেখার সুযোগ হয় নি । জায়গাটা অনেক বিখ্যাত - বানিয়াসান্তা । আমরা তিনজন অবাক হয়ে দেখছি - সারি সারি ঘর , অনেক মেয়ে মানুষ , তারা সবাই ক্যাট-ক্যাটে রঙের জামা কাপড়ে পরে আছে । নানা বয়সের ছেলে-পুরুষ মানুষের সাথে মেয়েগুল হাতাহাতি করছে , রঙ করে কথা বলছে , হাসছে । আর চারিদিকে যত কথা শোনা যায় তার প্রায় অর্ধেকটাই নানা অশ্রাব্য গালি । হঠাৎ আমাদের আরও অবাক করে দিয়ে আমাদের চার আগন্তুক সহযাত্রী সেই বানিয়াসান্তা ঘাটে নেমে গেল !
বানিয়াসান্তা - ঘাটে ভিড় করেছে নানা রকম মানুষের নৌকা, (নিচে) পতীতাদের ব্যস্ততা !
যাই হোক , আমরা আবার পশুর নদীতে নৌকা ভাসালাম । যখন অনেকটা পথ চলে এসেছি তখন দূরে দেখলাম মংলা বন্দর । আরেকটু এগুতেই দেখতে পেলাম কয়েকটা ছোট জাহাজ থেকে মাল নামাচ্ছে আরও ছোট কিছু যান্ত্রিক নৌকা ( ! ) আস্তে আস্তে আমরা একটা ঘাটের দিকে এগুতে লাগলাম । সেখানে আরো কিছু ট্রলার , ছোট লঞ্চ ভিড় করে আছে । আমরা পাড়ে উঠলাম । টিকেট কেটে এলাকাটা ঘুরে দেখলাম । এখানে ছোট-খাটো একটা চিড়িয়াখানার আয়োজন চলছে বলা যায় । খাঁচার ভেতর হরিণসহ আরও কিছু প্রাণী আছে , যা মেজাজ খারাপ করার জন্য যথেষ্ট ! এখানকার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল - কৃত্রিম কুমির চাষ প্রজনণ কেন্দ্র । সেখানে নানা বয়সের অসংখ্য কুমির আছে । মানুষ তা দেখছে , মজা পাচ্ছে । চারপাশে অনেক গাছপালা । এসবের মাঝখানে কয়েকটা বাংলো । বাংলোগুলোর পাশ দিয়ে একটা কাঠের সেতুর মত করে বানানো রাস্তা চলে গেছে বনের ভেতরের দিকটায় । লোকজন খুব আগ্রহ নিয়ে সে পথ দিয়ে যাচ্ছে আর গোমড়া মুখ করে ফিরে আসছে ; এই দেখে আমরা আর ঐ পথে বেশিদূর গেলাম না ।
করমজাল পয়েন্টের ঠিক পাশ দিয়ে একটা সরু খালের মত নালা পশ্চিমের দিকটায় ছলে গেছে । আমরা সেখানে যাওয়ার কথা ভাবছিলাম । কিন্তু ওইদিন নাকি কারো সেপথে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছিলনা । আমাদের মধ্যে মুরাদ একটু তুলনামূলক কম বোকা ! ও গিয়ে কর্তব্যরত কর্মকর্তার সাথে বেশ আলাপ জমিয়ে দিল । অদ্ভুত ব্যাপার হল কিছুক্ষণের মাঝে আমরা দেখলাম উনি আমদের আরেক বন্ধুর দুলাভাই । ভদ্রলোক ব্যস্ততার মাঝেও আমদের সাথে বসে নাস্তা করলেম । আর ভেতরের দিকটা ঘুরে দেখার অনুমতি মিলতেও দেরি হল না ! আমাদের পরে আরও একটা স্পীডবোটকেও দেখলাম ঐ দিকটাতে আসছে । ( যদিও স্পিডবোটটাতে অল্প কিছু সময় পরই সমস্যা দেখা দেয় )
(উপরে) করমজাল পয়েন্ট থেকে দেখা সুন্দরবন , (নিচে)মংলা বন্দরে ভীড় করা ছোট জাহাজ।
এবার ফেরার পালা । আমাদের ছোট ট্রলারটা একটা জায়গায় গিয়ে উল্টো দিকে মোড় নিল । তারপর আবার যে পথে এসেছি সে পথে চলতে লাগল । আবার সেই জাহাজ , নির্জীব পাড় , বানিয়াসান্তা । বানিয়াসান্তায় এসে আমাদের থামতে হল । চুক্তি অনুযায়ী ঐ চার যাত্রীকেও নিয়ে যেতে হবে ট্রলারচালকের । আমরা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম কিন্তু তারা এল না । এদিকে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসছিল । শেষে মাঝি নিজে গিয়ে তাদের খুঁজতে লাগল । তারও অনেকপরে সবাই ফিরে এলো , আর চার যাত্রী মাতাল । তারা এসে মাতলামি করল , মজা করল , আমরা দেখলাম , মজা নিলাম । আমাদের ছবি তোলা দেখে একজন বল্ল
" আমাদের একটা ছবি তুলে দাও না ।"
কি আর করা !
এই হল সেই ফরিদপুর থেকে আগত চার সহযাত্রী ।
আগেরদিনের মত এই দিনটাতেও অসম্ভব সুন্দর একটা সূর্যাস্ত দেখলাম । পশূর নদীতে যেন রক্তের স্রোত বয়ে যাছিল , আর আকাশ জুড়ে কমলা-হলুদ-লালের হোলি খেলা ! চারপাশ ভীষণ নিস্তব্ধ । নৌকাগুলো চলছে নিঃশব্দে । আমরাও হঠাৎ গল্প করার কিছু খুজে পেলাম না । পাড়ে নেমে মুরাদ নদীর পানির উচ্চতা বাড়ানোর একটা ছোট উদ্যোগ নিল । তারপর ঢাকা ফেরার গল্প !
পশুর নদীতে সূর্যাস্ত (উপরে)।
মংলা ট্রলার ঘাট (নিচে) ।
মংলা থেকেই কিছু বাস সরাসরি ঢাকা ছেড়ে যায় নিশ্চিত হওয়ার পর আমাদের মনটা ভাল হয়ে গেল । শুধুশুধু আর খুলনা ফিরে যাওয়া লাগল না ভেবে । রাত ৮ টার বাস এ আমরা চড়ে বসলাম । কপাল মন্দ এখানেও সেই পেছনের ৩ সিট পেলাম আমরা । কী আর করা সকালের ক্লাস ধরতে হবে , তাই সময়টাই মূখ্য । বেশ বাজে প্রজাতির বাস । বসতে কষ্ট হলেও শীতের রাত ছিল বলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুম চলে আসল । ঘুম ভাঙ্গার পর দেখি বাস জ্যামে আটকা পড়ে আছে । জানতে পারলাম এটা ঠিক জ্যাম না । বাসগুলো ফেরিতে উঠার জন্য লাইনে ধরেছে , রাতের খাবারটা এই সুযোগেই সারতে হবে । দ্রুত নেমে খেয়ে এলাম । বাস নিশ্চল । যখন তন্দ্রায় ছিলাম তখন বুঝতে পারছিলাম বাস চলতে শুরু করেছে । ঢাকা দেখার আশা নিয়ে দুচোখে গভির ঘুম নেমে আসল ।
যখন ঘুম ভাঙল তখন দেখি বাস থেমে আছে । অনেক রাত হয়েছে । মানুষের কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে বাইরে ।ভীষণ কুয়াশা পড়ছে । জানালার বাইরে অনেকগুল বাস গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছে !কোথায় আমরা ?
যখন জানতে পারলাম কুয়াশার কারণে আমদের ফেরিটা পদ্মা'র ঠিক মাঝখানে আঁটকে আছে , তখন একটা ভয় নিজের মধ্যে নড়েচড়ে বসল । একটানা অনেকক্ষণ বসে রইলাম , অপেক্ষা করছি কখন বাসটা ছাড়বে । ঘুম আসছে না । কিছু না করার পেয়ে দুই বন্ধুকে জাগালাম । ওরাও বিরক্ত । তারপর কিছু না করার পেয়ে নিচে নেমে হাটতে লাগলাম । সময় একদমই কাটছে না । বিরক্তি আর খুধায় একাকার অবস্থা ! এমন অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে চার ঘণ্টা কাটানোর পর সকাল হল , কুয়াশা কেটে গেলো , ফেরি চলতে শুরু করল । এমন দারুণ একটা ট্যুর'কে পুরো তিক্ত অভিজ্ঞতায় পরিণত করল কুয়াশা ! যাই হোক সকালে যখন ঢাকা পৌঁছুলাম তখন আর ক্লাস করার তেমন সুযোগ ছিল না ।
ছবিগুলো সব আমদেরই হাতে তোলা।আর , এই ট্রিপটা আমাদের অনেক কম খরচে হয়েছে,মাত্র ১৫০০ টাকা।ট্রেনে ভ্রমণ করার সুবিধাটাই হল এটা,যদিও একটু সময় সাপেক্ষ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১২ রাত ২:১৬