somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লতানো ডায়েরি , পর্বঃ ১

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১৭ জানুয়ারী ২০০৫

বাস্তবতায় কত্ত অমিল ছবির গল্পগুলো
চলছে এখন যেমন করে স্মৃতির পিঠে ধুলো ।

কথাগুলো আমার কোন বন্ধুর বলা কোন কবিতার লাইন । আমি লতা , আফিফা নূর লতা । লতা নামটা আমার মায়ের রাখা । এই নাম নাকি রাখা হয়েছিলো বড় হয়ে আমি ঠান্ডা মেজাজী হওয়ার জন্য । কি বোকা মহিলা ! লতা নামে একটা মানুষ ঠান্ডা থাকতে পারে ? আম গাছ ,জাম গাছ , তাল গাছ রাখতে পারতেন । ওহ তাল গাছের ছায়াতো আবার সামান্য থাকে । যাইহোক ফ্রিজ ও রাখতে পারতেন । এই থিওরিগুলো পুরনো দিনের মানুষ গুলো পেত কি করে আল্লাহ জানেন । এই থিওরিগুলো যদি কাজে দিত তবে মানুষের নাম কত্ত অদ্ভুত হতো ভেবেই গাঁ ছমছম করে । হয়তো আমার বাবার নাম হতো পুকুর নূর , মায়ের নাম মাটি বানু । কিংবা রহিমা খালার নাম হতো কলতলা বিবি । হিহি , আমি কি অদ্ভুত রকমের চিন্তা করতে পারি ! অদ্ভুত কল্পনার জন্য পুরষ্কার এর ব্যাবস্থা থাকলে আমার বাবাকে অভার টাইম ডিউটি করতে হতো আমার পুরষ্কার রাখার সেলফ বানানোর জন্য ।

পৃথিবীতে শ্যাম বর্ণের মেয়েদের জন্য আলাদা করে একটা জায়গা রাখা উচিৎ ছিলো । সেই জায়গায় শুধুই থাকবে শ্যাম বর্ণের মেয়েরা । তাদের ভেতরে কম্পিটিশন থাকবে কে কার থেকে কত্ত বেশী শ্যাম বর্ণ ধারণ করতে পারে । সেখানে শ্যাম বর্ণ ধারণ করার জন্য আলাদা করে কসমেটিক্স তৈরী হতো । টেলিভিশনে সেই প্রোডাক্টগুলোর বিজ্ঞাপন দিত । সবাই বিভিন্ন ব্রান্ড এর কসমেটিক্স ব্যাবহার করে শ্যাম বর্ণ ধারণ করতো । সেই জায়গায় স্কুল কলেজ সবই থাকতো । আমিও সেই দেশে থাকতাম । কলেজে যেতাম । আর রাফি আমাকে দেখে ইশারায় চুখ টিপতো ।

রাফি ! আমদের ক্লাশের সব থেকে পপুলার ছেলে । পপুলার কারণ রাফি সবার থেকে হ্যান্ডসাম ছেলে । যেমন হাইট তেমন ওয়েট ,আর তার সাথে তার গাঁয়ের রঙ পুরো রাজপূত্রদের মতো । আমি কখনো রাজপূত্র দেখিনি , গল্প শোনেছি । ছোটবেলায় দাদী রাজপূত্রে গল্প বলতো । তাদের গাঁয়ের রঙ নাকি দুধে আলতা । আলতার রঙ গাঢ় লাল , দুধের রঙ পকপকা সাদা । দুধে আলতা দেয়া হলে সেই দুধের রঙও লাল হয়ে যাবে । মানুষের রঙ কি কখনো লাল হয় ? ছোটবেলা একবার মা আমাকে এক কাপ দুধ খেতে দিয়েছিলো । আমি সেই দুধে আমার লাল রঙের রঙ কলমের কালি ঢেলে দিয়েছিলাম দুধে আলতা রঙ কিভাবে হয় দেখার জন্য । সেই রঙ আমি দেখতে পারিনি । তার আগেই মা আমাকে ধরে সে কি পিঠুনী দিলো । তার কিছুদিন পর দাদী আমাকে দেখিয়েছিলো রাজপূত্রদের রঙ কিরকম । আমার বাবার পেটের রঙ এর মতো । অবশ্য রোদে পোড়া শরীরে মধ্যে বাবার পেটই ছিলো একমাত্র জায়গা যেখানে আমি রাজপূত্র দেখতে পেতাম । সেই রাজপূত্রের রঙের মধ্যে আমি প্রতিদিন ঘুমিয়ে পড়তাম , পরম ভালোলাগার আবেশ নিয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়তাম । রাফি রাজপূত্র কি না জানিনা , তবে তার গাঁয়ের রঙ বলে দেয় সে রাজপূত্র থেকে অনেক বড় কিছু । রাফির ব্যাপারে ক্লাসের ছাত্রীদের মধ্যে বেশ কানাঘুসা চলে । বিশেষ করে রাফি যেইদিন যেই ব্যাঞ্চ এ বসে সেই ব্যাঞ্চ এর ঠিক ডানপাশের ব্যাঞ্চ এ যারাই থাকে সেই বালিকাদের মধ্যে । সেইদিন সামান্য চাপা হাসির সাথে অনেক ফিশফিশ শব্দ শোনা যায় । মাঝেমাঝে ইচ্ছে হয় ওদের গিয়ে বলি ‘ তোমরা কি নিয়ে ফিশফিশ করছো , আমাকে তোমাদের সাথে যোগ করবে ? ‘ কিন্তু বলি না । মানুষ তার একান্তই গোপন কথা আর ফিশফিশিয়ে বলা কথা শুধুই তার বেছে নেয়া মানুষদের সাথেই করে । এখানে অন্য কারো উপস্থিতে সেই বিষয়ের ও পরিবর্তন ঘটে ।

রাফির সাথে মাঝেমধ্যেই এটা সেটা নিয়ে কথা বলা হয় ক্লাসের ফাঁকেফাঁকে । মাঝেমাঝে আমি এটা সেটা নিয়ে অনেক প্রশ্ন করি । অনেক সময় সে যখন বলে ‘ উফ লতা তুই এত্ত প্রশ্ন করিস ! ‘ আমার মনে হয় যেন মা বোধ হয় লতা নামটা রাফির ডাকার জন্যই রেখেছিলেন । এত্ত মধুর করে লতা ডাক আমি আর কখনো শোনিনি । কেউ আমাকে এত্ত মধুর করে ডাকতে পারে নি । মাঝেমাঝে মনে হয় রাফির কন্ঠে মধুর ডিপো বসানো আছে । যখনই লতা ডাকে তখন সেই ডিপো থেকে এক গ্যালন মধু এসে কন্ঠের সাথে মিশে যায় । না এক গ্যালন না , এই মধুর কোন পরিমাপ নেই । এক গ্যালন থেকে অনেক বেশী পরিমাপে ঝড়ে তখন ।

আমার বাবা খুবই আময়িক মানুষ । মধ্যবৃত্ত পরিবারের কিছু মানুষ থাকে যারা অত্যাধিক আময়িক থাকে । আমার বাবা তাদের মধ্যে একজন । আমি বাবার সাথে সব কিছুই শেয়ার করি । শুধু রাফির বিষয়টা ছাড়া । কেন জানি যতবার বাবা কে রাফির বিষয়ে বলতে গেছি একটা জড়তা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে । কখনো রাফির বিষয়ে বাবাকে কিছুই বলতে পারিনি । আচ্ছা এমনটি কেন হয় ? আমি কি তবে রাফিকে ভালোবাসি ?


( চলব .....)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:২৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সচীবদের সম্পর্কে এখন কিছুটা ধারণা পাচ্ছেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২০ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৭



সামুর ব্লগারদের মাঝে ১ জন সচীব আছেন,(বর্তমানে কর্তব্যরত ) তিনি বর্তমানে লিখছেন; আধামৃত সামুতে তিনি বেশ পাঠক পচ্ছেন; উৎসাহের ব্যাপার! এরচেয়ে আরো উৎসাহের ব্যাপার যে, তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×