□
১৭ জানুয়ারী ২০০৫
বাস্তবতায় কত্ত অমিল ছবির গল্পগুলো
চলছে এখন যেমন করে স্মৃতির পিঠে ধুলো ।
কথাগুলো আমার কোন বন্ধুর বলা কোন কবিতার লাইন । আমি লতা , আফিফা নূর লতা । লতা নামটা আমার মায়ের রাখা । এই নাম নাকি রাখা হয়েছিলো বড় হয়ে আমি ঠান্ডা মেজাজী হওয়ার জন্য । কি বোকা মহিলা ! লতা নামে একটা মানুষ ঠান্ডা থাকতে পারে ? আম গাছ ,জাম গাছ , তাল গাছ রাখতে পারতেন । ওহ তাল গাছের ছায়াতো আবার সামান্য থাকে । যাইহোক ফ্রিজ ও রাখতে পারতেন । এই থিওরিগুলো পুরনো দিনের মানুষ গুলো পেত কি করে আল্লাহ জানেন । এই থিওরিগুলো যদি কাজে দিত তবে মানুষের নাম কত্ত অদ্ভুত হতো ভেবেই গাঁ ছমছম করে । হয়তো আমার বাবার নাম হতো পুকুর নূর , মায়ের নাম মাটি বানু । কিংবা রহিমা খালার নাম হতো কলতলা বিবি । হিহি , আমি কি অদ্ভুত রকমের চিন্তা করতে পারি ! অদ্ভুত কল্পনার জন্য পুরষ্কার এর ব্যাবস্থা থাকলে আমার বাবাকে অভার টাইম ডিউটি করতে হতো আমার পুরষ্কার রাখার সেলফ বানানোর জন্য ।
পৃথিবীতে শ্যাম বর্ণের মেয়েদের জন্য আলাদা করে একটা জায়গা রাখা উচিৎ ছিলো । সেই জায়গায় শুধুই থাকবে শ্যাম বর্ণের মেয়েরা । তাদের ভেতরে কম্পিটিশন থাকবে কে কার থেকে কত্ত বেশী শ্যাম বর্ণ ধারণ করতে পারে । সেখানে শ্যাম বর্ণ ধারণ করার জন্য আলাদা করে কসমেটিক্স তৈরী হতো । টেলিভিশনে সেই প্রোডাক্টগুলোর বিজ্ঞাপন দিত । সবাই বিভিন্ন ব্রান্ড এর কসমেটিক্স ব্যাবহার করে শ্যাম বর্ণ ধারণ করতো । সেই জায়গায় স্কুল কলেজ সবই থাকতো । আমিও সেই দেশে থাকতাম । কলেজে যেতাম । আর রাফি আমাকে দেখে ইশারায় চুখ টিপতো ।
রাফি ! আমদের ক্লাশের সব থেকে পপুলার ছেলে । পপুলার কারণ রাফি সবার থেকে হ্যান্ডসাম ছেলে । যেমন হাইট তেমন ওয়েট ,আর তার সাথে তার গাঁয়ের রঙ পুরো রাজপূত্রদের মতো । আমি কখনো রাজপূত্র দেখিনি , গল্প শোনেছি । ছোটবেলায় দাদী রাজপূত্রে গল্প বলতো । তাদের গাঁয়ের রঙ নাকি দুধে আলতা । আলতার রঙ গাঢ় লাল , দুধের রঙ পকপকা সাদা । দুধে আলতা দেয়া হলে সেই দুধের রঙও লাল হয়ে যাবে । মানুষের রঙ কি কখনো লাল হয় ? ছোটবেলা একবার মা আমাকে এক কাপ দুধ খেতে দিয়েছিলো । আমি সেই দুধে আমার লাল রঙের রঙ কলমের কালি ঢেলে দিয়েছিলাম দুধে আলতা রঙ কিভাবে হয় দেখার জন্য । সেই রঙ আমি দেখতে পারিনি । তার আগেই মা আমাকে ধরে সে কি পিঠুনী দিলো । তার কিছুদিন পর দাদী আমাকে দেখিয়েছিলো রাজপূত্রদের রঙ কিরকম । আমার বাবার পেটের রঙ এর মতো । অবশ্য রোদে পোড়া শরীরে মধ্যে বাবার পেটই ছিলো একমাত্র জায়গা যেখানে আমি রাজপূত্র দেখতে পেতাম । সেই রাজপূত্রের রঙের মধ্যে আমি প্রতিদিন ঘুমিয়ে পড়তাম , পরম ভালোলাগার আবেশ নিয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়তাম । রাফি রাজপূত্র কি না জানিনা , তবে তার গাঁয়ের রঙ বলে দেয় সে রাজপূত্র থেকে অনেক বড় কিছু । রাফির ব্যাপারে ক্লাসের ছাত্রীদের মধ্যে বেশ কানাঘুসা চলে । বিশেষ করে রাফি যেইদিন যেই ব্যাঞ্চ এ বসে সেই ব্যাঞ্চ এর ঠিক ডানপাশের ব্যাঞ্চ এ যারাই থাকে সেই বালিকাদের মধ্যে । সেইদিন সামান্য চাপা হাসির সাথে অনেক ফিশফিশ শব্দ শোনা যায় । মাঝেমাঝে ইচ্ছে হয় ওদের গিয়ে বলি ‘ তোমরা কি নিয়ে ফিশফিশ করছো , আমাকে তোমাদের সাথে যোগ করবে ? ‘ কিন্তু বলি না । মানুষ তার একান্তই গোপন কথা আর ফিশফিশিয়ে বলা কথা শুধুই তার বেছে নেয়া মানুষদের সাথেই করে । এখানে অন্য কারো উপস্থিতে সেই বিষয়ের ও পরিবর্তন ঘটে ।
রাফির সাথে মাঝেমধ্যেই এটা সেটা নিয়ে কথা বলা হয় ক্লাসের ফাঁকেফাঁকে । মাঝেমাঝে আমি এটা সেটা নিয়ে অনেক প্রশ্ন করি । অনেক সময় সে যখন বলে ‘ উফ লতা তুই এত্ত প্রশ্ন করিস ! ‘ আমার মনে হয় যেন মা বোধ হয় লতা নামটা রাফির ডাকার জন্যই রেখেছিলেন । এত্ত মধুর করে লতা ডাক আমি আর কখনো শোনিনি । কেউ আমাকে এত্ত মধুর করে ডাকতে পারে নি । মাঝেমাঝে মনে হয় রাফির কন্ঠে মধুর ডিপো বসানো আছে । যখনই লতা ডাকে তখন সেই ডিপো থেকে এক গ্যালন মধু এসে কন্ঠের সাথে মিশে যায় । না এক গ্যালন না , এই মধুর কোন পরিমাপ নেই । এক গ্যালন থেকে অনেক বেশী পরিমাপে ঝড়ে তখন ।
আমার বাবা খুবই আময়িক মানুষ । মধ্যবৃত্ত পরিবারের কিছু মানুষ থাকে যারা অত্যাধিক আময়িক থাকে । আমার বাবা তাদের মধ্যে একজন । আমি বাবার সাথে সব কিছুই শেয়ার করি । শুধু রাফির বিষয়টা ছাড়া । কেন জানি যতবার বাবা কে রাফির বিষয়ে বলতে গেছি একটা জড়তা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে । কখনো রাফির বিষয়ে বাবাকে কিছুই বলতে পারিনি । আচ্ছা এমনটি কেন হয় ? আমি কি তবে রাফিকে ভালোবাসি ?
( চলব .....)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:২৯