আজ নীলার জন্য খুব আনন্দের একটি দিন হওয়ার কথা ছিল ৷ তাই খুব সকালে নীলা ঘুম থেকে উঠে গেছে ৷ ঘুম থেকে উঠে গেছে বললে হয়তো ভুল ই হবে কাড়ন উত্তেজনায় সারা রাত ঘুমাতেই পারেনি ৷ আর এ এই নির্ঘুম রাতের কাড়ন হচ্ছে ....
সন্ধ্যায় ওর husband দেশে ফিরবে ৷
খুব সকালে উঠেই শশুর শাশুড়ির জন্য নাস্তা বানানোর কাজ টা সেরে নিয়ে আসিফ এর প্রিয় সব ডিশ রান্না করতে শুরু করল নীলা ৷ তখন অনেক ৬ টার মত বাজবে ৷ কিন্তু রান্না করতে যেয়েই বুঝতে পারল মারাত্মক একটা ভুল হয়ে গেছে ৷ রান্না করতে তো তেল লাগবে ৷ কিন্তু তেল তো একেবারেই অল্প আছে ৷ এদিকে বুয়া আসতে ১০ টা বাজবে ৷ তাই অত কিছু না ভেবে নিজেই বেড়িয়ে পড়ল তেল কিনতে ৷
যেহেতু ওর husband আসিফ কানাডায় থাকে তাই বিয়ে করেই আসিফ কিছুদিন পর চলে যায় কানাডা ৷ এর পর নীলা বেশির ভাগ সময় ই মার বাড়ি কাটিয়েছে ৷ তাই এই এলাকা টা ওর তেমন পরিচিত না ৷ বাসার গেট দিয়ে বেরিয়ে কোন দিকে যাবে বুঝতে পারছে না ৷ দোকান পাট কিছু এমনিতেই ওর চেনা নাই ৷ আবার এত সকালে কোনও দোকান খুলেছে কিনা তা ও একটা চিন্তার বিষয় ৷
তবে ভাগ্য ভালই বলতে হবে নীলা দেখল একটা ছোট্ট ছেলে এদিকেই আসছে সাথে তার বাবা ও আছে স্কুল ব্যাগ ঝোলানো কাঁধে নিশ্চই সকাল সকাল স্কুল যাচ্ছে ৷
অত কিছু চিন্তা না করে নীলা লোকটা কে জিজ্ঞেস করল
-excuseme ভাইয়া ঐ দিকে কি কোনও দোকান খুলেছে ?
লোকটা উত্তর দিল
-জি আপা ঐ-তো সামনে , সামনে যেয়ে পাশে যে গলিটা গেছে না ? তার শেষ মাথায় দোকানটা খুলেছে …
নীলা -ওহ, আচ্ছা অনেক যাক বাচা গেল, thnx ভাইয়া
লোক - আচ্ছা আচ্ছা
বলে লোকটা চলে গেল ৷
যেই কথা সেই কাজ ৷ নীলা লোকটা দেখানো পথে চলল ৷ লোকটার কথা মত গলিটা পেল, গলি ধরে হাটতে হাটতে বুঝল দোকান টা বেশ দুরে তবে এটাই আনন্দের বিষয় দোকানটা নীলা পেল ৷
নীলা -ভাই দুই লিটার সয়াবিন তেল দেন তো ,
দোকানী ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে একটা টুল এর উপর উঠে উপরের তাক থেকে দুই লিটার তেল নামাল ৷ বোতলটায় বেশ ধুলো ময়লা ছিল ৷ মুছে দিতে দিতে বলল আপা ২১৮ টাকা ৷
টাকার কথা টা শুনতেই মুখটা কাল হয়ে গেল নীলার ৷ এত তারা হুড়া করতে যেয়ে ভুলে টাকাটাই নিয়ে আসে নি ৷ নীলা কি বলবে ভীষণ লজ্জায় পড়ে গেল ৷
দোকানী খুব বুদ্ধিমান সম্ভবত ৷ সে বুঝতে পারল কোনও একটা সমস্যা হয়েছে ৷ বলল
- আপা পরে দিয়েন, সাত সকালে দুকান খুলেছি , প্রথম customer ই যদি জিনিস ফিরিয়ে দিয়া যায় তাহলে bad luck.
লোকটার কথা শুনে নীলা ভীষণ অবাক হল ৷ নীলা ভাবল লোকটা ওকে চিনে না জানে না অথচ ২১৮ টাকা বাকি দিয়ে দিবে ? লোকটার কথা শুনে নীলার মনটা ভীষণ ভাল লাগল ৷ নীলা বলল
-না ভাই আমি এটা রাখেন আমি ভুলে টাকা না নিয়ে চলে আসছি, আমার বাসা এখানেই আমি টাকা টা নিয়ে এসে নিয়ে যাচ্ছি ৷
দোকানী - না আপা আরে আপনি এটা নিয়ে চিন্তা করেন না, আপনি এদিকে আসা যাওয়ার পথে এক সময় দিয়ে যায়েন ৷ আপনি নেন তো, কোনও সমস্যা নাই ৷ বলে অমায়িক একটা হাসি দিল দোকানী যেন কত দিন এর পরিচয় ৷ এমন ভাবে কথা টা বলল যে নীলা না করতে পারল না ৷ তেল টা নিয়ে ভাবল বুয়া আসলে তাকে দিয়ে টাকা টা পাঠিয়ে দিবে ৷
কিন্তু ঐ যে তারা হুড়া হুরুস্থুল কোনটা রেখে কোনটা করবে , কি খেতে পছন্দ করে আসিফ এই সব চিন্তা আর কাজের চাপে নীলা ভুলেই গেল দোকানী কে টাকাটা পৌঁছে দিতে ৷
নীলার husband যখন লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে এল তখন রাত ৮ টার কাছা কাছি সময় হবে ৷ ভীষণ আনন্দে জড়িয়ে ধরল ও আসিফ কে ৷ আসিফ ও ভীষণ খুশি ৷ বিয়ের পর মাত্র ১ মাস এর মত ছিল দেশে ৷ এবার অনেক বড় ছুটি নিয়ে এসেছে ৷ নীলা কে নিয়ে যাওয়ার প্লান ও আছে ৷
ফেরার পথে সেই দোকানটার সামনে দিয়েই ওদের গাড়ি যাচ্ছিল নীলার হঠাৎ মনে পড়ল ভীষণ একটা ভুল হয়ে গেছে ৷
দ্রুত গাড়ী থামিয়ে আসিফকে বলল একটু বোস আমি আসছি ৷
আসিফ বলল আরে আরে কই যাও দাড়াও আমিও আসছি ৷
দুজনই বের হল ৷ দোকানিকে তার টাকা বুঝিয়ে দিয়ে দেরি হয়ে যাওয়ার জন্য খুব করে ক্ষমা চাইল ৷ দোকানি বলল ছি আপা কি বলেন এটা কোনও ব্যাপার না ৷
চলে আসবে নীলা এমন সময় আসিফ বলল এই দাড়াও , নীলা অবাক হল কি ?
আসিফ দোকানীকে বলল এই দুই প্যাকেট ব্যানসন দে তো ,
আসিফের কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল নীলার, না ব্যানসন চেয়েছে বলে না ৷ আসিফ smoke করে এটা নীলা জানে ৷ এবং ছেলেরা এমন এক আধটু করে বলে মেনেও নিয়েছে সে ৷ নীলার মন খারাপ হল লোকটাকে তুই তুকারি করায় ৷ অনেকেই হয়তো করে তখন হয়তো নীলার খারাপ লাগে না কিন্তু আজ হঠাৎ খুব খারাপ লাগল,
এসব ভাবছিল নীলা আসিফ এমন করল , লোকটা কত সদয় ছিল হয়তো লোকটা নিজেও কিছু মনে করে নি , হঠাৎ ঠাস করে একটা শব্দ শুনল নীলা , আঁতকে উঠল নীলা দোকানে তার বাম হাতটা তার গালে দিয়ে রেখেছে, দোকানীর চোখ টল মল করছে, কিন্তু মুখে সেই হাসি , sorry sir i am extremely sry আমি পাল্টে দিচ্ছি ...
আসিফ - এই শালা_ পু_ তুই আমার সাথে ইংলিশ ফুটাস খা_ _র পো_ (কিছু শব্দ দেওয়া হয়নিপাঠক বুঝে নিবেন) বলে আবার হাত টা উঁচু করতেই নীলা ধরে ফেলল আসিফের হাত ৷ বলে টেনে টেনে নিয়ে আগিতে উঠল ৷ ড্রাইভার কে বলল ভাই যাও ৷
আসিফ নীলার দিকে বিরক্তির সুরে বলল what nonsense, rubbish, just rubbish এই সব দোকানি ড্রাইভারদের ভাই, আপনি এই সবের মানে কি ? যত্তসব third class attitude practice করার কোনও মানে হয়না, for god sake কিছুদিন পর আমার সাথে তুমি কেনাডা (কানাডা) যাবে, be smart! come on, বলে খুব তাচ্ছিল্যের একটা ভঙ্গী প্রকাশ করল আসিফ ৷
এখন রাত প্রায় চার টা , অনেক আনন্দ হয়েছে পুরো বাসায়, নিকট সব আত্মীয় স্বজন সবাই এসেছে , নীলার বাবা মা ও এসেছে ৷ সবাই আজ খুব খুশি ৷ Celebration শেষে ক্লান্ত হয়ে আসিফ ঘুমাচ্ছে ৷ বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে আজকের সকালটা শুরু হয়েছিল কিন্তু আজকে রাতটা নীলার জন্য মন খারাপ করা রাত ৷ আজকের ঘটনা গুলো বার বার ওর চোখের সামনে ভেষে উঠছে ৷ ভীষণ খারাপ লাগছে ওর ৷ গত তিন বছর নীলা কত স্বপ্ন দেখেছে ও ৷ দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলল নীলা , ওর রুমের জানালা দিয়ে সুন্দর বাতাস আসছে , আকাশ টা ও দেখা যায় ওর জানালা দিয়ে ৷ আজকের রাতের আকাশে মেঘ নেই অনেক তারা দেখা যাচ্ছে ৷ অনেক রাত এমন তারা দেখেই কাটিয়ে দিয়েছে নীলা ৷ কত রাত আসিফ ওর পাশে শুয়ে থাকবে আসিফ এর বুকে মাথা রেখে দুজন মিলে তারা দেখবে বলে স্বপ্ন বুনেছে নীলা!