আমি আর আমার বন্ধু রিফাত মিলে আমরা নিকুঞ্জ এর একটা বাসায় থাকি ৷ বাড়ির নাম শহর আলী ৷ মালিক ভদ্রলোক মারা গেছেন ৷ আমরা ৫ তলায় থাকি ৷ আমি সারাদিন আমার ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকি ৷ কোনও কাজ নাই ৷ বেকার মানুষ, বেকার হিসাবে যাতে পরিচয় না দিতে হয় সেই জন্যে আমি MBA করছি৷ আমার বন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ MBA করছে ৷ তবে সে বেকার না ৷ গতবারের BCS এর প্রিলিমিনারিতে টিকেছিল ৷ Written এ বাদ পড়ে যায় ৷ এবার আবার দিচ্ছে ৷ সে মহা ব্যস্ত ৷ এর মাঝে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন ব্যাংক এ Viva এর ডাক পেয়েছে ৷ আর আমি ভার্সিটি আসি যাই, দিন কাটাই আমাকে কেউ ভাইভা তে ডাকে না ৷ কয়েকদিন আগে একটা ব্যাংক এ written দিয়েছিলাম, হয় নাই ৷
এখন সকাল ৮ টা আমি এত ভোরে কেন উঠে গেলাম বুঝতে পারছি না ৷ আমার বন্ধুর কোনও সাড়া শব্দ পাচ্ছি না ৷ ও মনে হয় উঠে নাই ৷ আমার এক কাপ কড়া কফি খেলে ভাল হতো ৷ কিন্তু কফি খেতে হলে নিজের বানিয়ে খাওয়া লাগবে ৷ আমার অবশ্য নিজের বানিয়ে খাওয়ার তেমন কোনও ইচ্ছে নাই ৷ রিফাত খেলে ওকে বললে ও বানিয়ে দেয় ৷ যেহেতু ওর কোনও সাড়া শব্দ নাই তাই আপাতত কফি খাওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখছি না ৷ আমি আবার শুয়ে পড়লাম ৷ আরেকটু ঘুমানো যাক ৷ প্রায় তিন ঘণ্টা পড় যখন আমার আবার ঘুম ভাঙ্গল তখন ১১ টার বেশি বাজে ৷ যদিও ১১ টা কে সকাল ধরা হয় আমার এতে যথেষ্ট আপত্তি আছে ৷ আরে ১১ টা তো ভোর ৷ এত ভোরে উঠে আমি সারাদিন কি করব বুঝতে পারছি না ৷ উঠে বসে কান পেতে কোনও সাড়া শব্দ আছে কিনা বোঝার চেষ্টা করে আমি হতাশ হলাম ৷ আজ বোধয় কপালে কফি নাই ৷
আমি যখন আবার ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন আমার ফোন টা বেজে উঠল ৷ ফোনের দিকে তাকিয়ে যখন দেখলাম unknown নাম্বার তখন ফোন ধরার কোনও ইচ্ছা পোষণ করলাম না ৷ যে ব্যাটা ফোন দিয়েছে সে ভীষণ ধৈর্যশীল মানুষ ৷ এক টানা ৮ বার ফোন দিচ্ছে ৷ একটা unanswered call এ ৪৫ সেকেন্ড লাগে ৷ তার মানে সে ৬ মিনিট ধরে চেষ্টা করছে ৷ আমার আনন্দ আরও বহু গুনে বেড়ে গেল ৷ দে দে ইচ্ছা মত ফোন দে ৷ অনিচ্ছা সত্তেও আমি উঠলাম ৷ দাঁত ব্রাশ করতে করতে রুম থেকে বের হলাম ৷ কোথায় যেন পড়েছিলাম হেটে হেটে দাঁত ব্রাশ করলে গুনাহ্ হয় ৷ যদিও আমি নামাজ কালাম পড়ি না পড়তে ইচ্ছা ও হয় না কিন্তু হেটে হেটে দাঁত ব্রাশ করতে মনের ভেতর খচ খচ করছে ৷ ধর্মীয় অনুভূতি অদ্ভুত ! ধর্মের ধ নাই হেটে হেটে ব্রাশ করা নিয়ে আমি চিন্তিত ৷ চিন্তা আরেকটু সম্প্রসারিত হল যখন দেখলাম আমার বন্ধুকে তার রুমে না পেয়ে ৷ তার বাথরুমে ও নাই কিচেন এ ও নাই ৷ সাধারণত রিফাত সকালে বের হয় না ৷ কিচেন থেকে বের হতে হতে ফ্রিজ খুলে দেখলাম ফ্রিজে যথেষ্ট পরিমাণ বাজার সদাই আছে , সুতরাং বাজারে যাওয়ার ও কথা না ৷
হাত মুখ ধুয়ে আমি একটা লিস্ট করা শুরু করলাম কোথায় কোথায় যেতে পারে ৷ আমার লিস্ট টা এরকম
১৷ বাজার এ (যদিও বাজার আছে, তবু যেতে পারে)
২৷ ভার্সিটিতে (যদিও MBA এর ক্লাস রাতে, যেতে পারে)
৩৷ কোথাও চাকর হওয়ার Exam আছে (যদিও আমার দোয়া না নিয়ে সে যায় না, এবং চোদ্দ গুষ্টির, ঘুমিয়ে ছিলাম বলে হয়তো জানি না)
৪৷ বেড়াতে গেছে (বেড়াতে গেছে মানে dating এ গেছে, যদিও সে মেয়েদের থেকে সতর্ক দূরত্ব রাখে, এবং সে ছেলে অতি ভদ্র বাবা মা এর পছন্দেই বিয়ে করবে)
আমার ফোন টা আবার বাজা শুরু করায় আমার চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটল ৷ আমি মনে মনে ভাবতে থাকলাম এটা নিশ্চয়ই রিফাত এর ফোন ৷ ও নিশ্চয়ই কোনও বিপদে পড়েছে ৷ বাইরের কোনও নাম্বার থেকে ফোন দিচ্ছে ৷ সাহায্য দরকার ৷ মনে মনে হাসলাম ৷ খুব ভাল হয়েছে বুঝ ঠেলা ৷ দিতে থাক ফোন আমি ধরছি না ৷ আমি নিচে নামলাম ৷ breakfast এর সন্ধান করতে হবে ৷ breakfast নাকি দিনের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার ৷ তবে এখন ১২ টা বাজে ৷ ইহা breakfast নাকি lunch তা নিয়ে একটি ভাল বিতর্ক হতে পারে ৷ বিতর্কের বিষয় হবে এমন ৷ ঘুম থেকে উঠে বেলা ১২ ঘটিকায় কিছু খেলে সেটি আর break fast বলে গণ্য করা যায় না ৷ এই যুক্তির পক্ষে থাকবে এক দল বিপক্ষে থাকবে এক দল ৷ কোন দলের কে নিজে কি ভাবে তার কিন্তু জানার দরকার নাই ৷ সঞ্চালক তার মনের ইচ্ছে মত আপনাকে ধরিয়ে দিবে আপনি পক্ষে না বিপক্ষে ৷ আপনি এর পর আপনার নিজের কি মনে হয় তা ভাবা বাদ দিয়ে ধুমায়া চাপা বাজি করতে থাকবেন ৷ যে বেশি চাপাবাজি করতে পারবে সেই সেরা বিতার্কিক ৷ তালি !!!
চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:২৩