হাটতে হাটতে বনানী রেল স্টেশন এ চলে এলাম ৷ রেল স্টেশন কোনও কারনে আমার প্রিয় যায়গা গুলোর একটা ৷ নানা রকম মানুষ ৷ কেউ আসছে কেউ যাচ্ছে ৷ কারো মুখে আনন্দ, কারো বিষাদ ৷ কোনও কারনে আজকে ষ্টেশন টা ও খালি পরে আছে ৷ খালি প্রায় একটি ট্রেন মন খারাপ করে দারিয়ে আছে ৷ তার যাত্রীদের জন্যে অপেক্ষা করছে ৷ আমি কাউন্টার এর পাশ থেকে দু কাঁপ কফি নিয়ে এসে একটা বেঞ্চ এ বসলাম৷ সকাল থেকে হাটতে হাটতে ক্লান্ত লাগছে ৷ কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে মনে হল সারা জীবন এখানেই কাটিয়ে দেওয়া যেত ? আমার পাশে এসে একজন যুবক বসল ৷ তার কাঁধে বিশাল বড় একটা ব্যাক প্যাক ৷ তার মনটা ভীষণ খারাপ বলে মনে হচ্ছে ৷ বিষর্ম , ঠোট মুখ শুকিয়ে আছে ৷ আমি আমার অপর কাপটা তার দিয়ে বাড়িয়ে দিলাম ৷ সে প্রথমে হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল ৷ কিন্তু কোনও কথা বলল না ৷ আমি বললাম নিন, সে নিল ৷ বেশ সময় নিয়ে সে কফি টা খেল ৷ আমি জিজ্ঞেস করলাম আরেক কাপ খাবেন ? সে মাথা নেড়ে না করল ৷ আমি তাকে অভয় দিয়ে বললাম , - দেখুন, জীবনে চলার পথে মাঝে মধ্যে এমন বিব্রত কর পরিস্থিতি তে পরতে হয় ৷ বন্ধু বান্ধব জিনিষ টা দারুণ, তবে এটাও সত্যি মানুষ চেনা খুব কষ্টের ব্যাপার ৷ যেই বন্ধুর জন্যে জীবন দিয়ে দিতে নিবেন দেখবেন তারাই সামান্য ব্যাপার এ বিট্রে করবে
- কি বলতে চাআমি তার কথা থামিয়ে দিয়ে বলে গেলাম
- এত কষ্ট করে টিকিট গুলো কিনেছেন, দেখে দেখে গরীব মানুষ গুলকে টিকিট গুলো দিয়ে দেন ৷ দেখবেন মনটা ভাল লাগছে ৷
- তার পর সোজা যেয়ে একটা বাসের টিকেট কিনুন, কক্সবাজার এর ৷ একা একা অনেক যায়গাতেই ঘুরতে যাওয়া যায়না ৷ কিন্তু আপনি যত একটা হবেন দেখবেন বঙ্গোপসাগর আপনাকে তত আপন করে বুকে টেনে নিয়েছে ৷ বিশ্বাস রাখতে পারেন ৷
- আপনি কি বলছেন এসব ৷
আমি মনে মনে একটু হাসলাম ৷ তার কথার উত্তর না দিয়ে আমার ঠান্ডা হয়ে যাওয়া কফিটায় চুমুক দিতে দিতে সামনের ট্রেন টাতে উঠে গেলাম ৷ সেই দিনটার কথা মনে পড়ছে ৷ আমার জীবনেও এমন একটা দিন ছিল ৷ বন্ধু বান্ধব নিয়ে থাকতাম ৷ তাদের জীবনের সব মনে করতাম ৷ একবার সারাদিন কষ্ট করে নিজের পকেটের পয়সা দিয়ে ৬ টা এসি কামড়ার টিকিট কিনেছিলাম ৷ উদ্দেশ্য ছিল উত্তর বঙ্গ ৷ সময় মত কেউ আসে নি ৷ তখন আমার পকেটে মাত্র অল্প কিছু টাকা কাড়ন সব টাকা আমি টিকিট কেনাতেই শেষ করে ফেলেছি ৷ ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম ভীষণ ৷ আমি বুঝতে পারলাম আমার দু চোখে জল টল মল করছে ৷ রিফাত এর কি হল একটা খোজ নেওয়া দরকার ৷ ওর বাবাকে আবার ফোন দিলাম ৷
চলবে..